বাবা-মার মুখের দিকে তাকিয়ে নিজেকে শুধরেছি: সাব্বির

নাটকীয়ভাবে সাব্বির রহমানের জাতীয় দলে ফেরা নিয়ে চলছে তুমুল আলোচনা-সমালোচনা। চলছে বিতর্ক। নিষেধাজ্ঞা শেষ হওয়ার এক মাস আগেই তাকে ফেরানো হয়েছে। মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে অবশ্য স্পর্শ করছে না সে সব। এবার অন্য মানুষ হয়ে ফেরার প্রত্যয় তার কণ্ঠে। সিলেট সিক্সার্সের হয়ে বিপিএলে খেলা সাব্বির চট্টগ্রামে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন, নিজের মূল্যবান উপলব্ধির কথা। নিকট অতীতের নিদারুণ কঠিন বাস্তবতার কথা। দিলেন ভুলের পুনরাবৃত্তি না করার প্রতিশ্রুতি।

অনীক মিশকাতঅনীক মিশকাতবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 29 Jan 2019, 03:12 PM
Updated : 29 Jan 2019, 03:48 PM

আপনার দলে ফেরা নিয়ে হচ্ছে অনেক কথা। বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান এবারের ফেরাকে দেখছেন আপনার জন্য শেষ সুযোগ হিসেবে। আবার বিতর্কে জড়ালে শেষ হয়ে যেতে পারে ক্যারিয়ার। সব মিলিয়ে নিজের কাছে কেমন লাগছে?     

সাব্বির রহমান: বিসিবি সভাপতি যে কথাটা বলেছেন সেটা কিন্তু প্রত্যেক ক্রিকেটারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ। সেটা হল, সবাইকে সুশৃঙ্খল থাকতে হবে, শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। মাঝখানে হয়তো আমার শৃঙ্খলা নষ্ট হয়ে গিয়েছিল। এজন্য আমি শাস্তি পেয়েছি। আমার ভুল নিজেই উপলব্ধি করতে পেরেছি। গত এক বছরে আমি বুঝেছি, কিছু কিছু কাজ করা আমার উচিত হয়নি। অনেকের কাছে আমি একজন আইকন। অনেক শিশু-কিশোর আমাকে অনুসরণ করে। তো সব মিলিয়ে আমি বুঝতে পেরেছি সে সব কাজ করা আমার মোটেও উচিত হয়নি। যে কাজগুলো করেছি সেগুলো আর কখনও আমি করব না তার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি আবারও। এমনকি কাউকে আমাকে নিয়ে কথা বলারও কোনো সুযোগ করে দেব না তার প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি।

আপনার ফেরা নিয়ে এই এতো যে প্রশ্ন উঠছে তাকে কী নিজের ওপর বাড়তি চাপ অনুভব করছেন? 

সাব্বির: না, চাপের কিছু না। এবারের বিপিএল আমার জন্য অনেক বড় মঞ্চ ছিল। হয়তো আমি তেমন কিছু করতে পারিনি। তবে আমি চেষ্টা করেছি প্রত্যেকটা সুযোগ কাজে লাগাতে। কখনও কখনও ভালো শুরুটা কাজে লাগাতে পারিনি, দুর্ভাগ্যজনকভাবে আউট হয়ে গেছি। দুইটা ম্যাচে আমি ভালো করেছি। রংপুরের বিপক্ষে একটা ম্যাচে ভালো করেছি। খুলনার বিপক্ষে শেষ ম্যাচে ভালো ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলাম। চার নম্বরে ভালো করেছি, ওপেনিংয়েও খারাপ করিনি। প্রাথমিক পর্বে আমাদের আরও দুইটা ম্যাচ আছে। সেই দুইটা ম্যাচে এভাবেই খেলে যেতে চাই।

প্রথম আট ম্যাচে ভালো করতে পারিনি। নিজের কাছে খুব খারাপ লাগছিল, হতাশ হয়ে পড়ছিলাম। ঢুকতে পারব কি পারব না এ নিয়ে শঙ্কায় পড়ে গিয়েছিলাম। এই সময়ে আমাকে (সিলেট সিক্সার্স) কোচ, ম্যানেজমেন্ট অনেক সহায়তা করেছে। জাতীয় দলের সিনিয়র ক্রিকেটাররা এই সময়ে অনেক সহায়তা করেছেন। তারা বলেছিলেন, ‘হতাশ হবি না। একটা-দুইটা ভালো ইনিংস খেলতে পারলে তুই বিবেচনায় আসতে পারিস।’ আমি সেই চেষ্টাই করে গেছি। সবার প্রতি কৃতজ্ঞ যে আমি দলে ফিরতে পেরেছি।

ওয়ানডে দলের অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা আপনাকে নিউ জিল্যান্ড সফরের দলে চেয়েছিলেন। আপনার সামর্থ্যে আস্থা থাকার কথা অনেকবারই বলেছেন তিনি। আস্থার প্রতিদান কিভাবে দিতে চান?  

সাব্বির: তিনি যে আমার প্রতি এতটা আস্থা রেখেছেন সেজন্য তার প্রতি আমি কৃতজ্ঞ। অধিনায়ক মাশরাফি ভাইসহ আমাদের সিনিয়র ক্রিকেটারদেরও ধন্যবাদ আমার পাশে সব সময় থাকার জন্য। মাশরাফি ভাই জাতীয় দলে আমার প্রথম অধিনায়ক। উনি ছোটবেলা থেকে আমাকে দেখছেন। তার নেতৃত্বে আমি অনেক ম্যাচ খেলেছি। আন্তর্জাতিক অভিষেকে উনিই আমাকে টুপি পরিয়ে দিয়েছিলেন। তার সঙ্গে আমার খুব ভালো একটা বন্ধন আছে। তিনি আমাকে হয়তো খুব ভালো বোঝেন। ২০১০ সালে অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলার সময় (মিনহাজুল আবেদীন) নান্নু স্যার আমার কোচ ছিলেন। উনি আমাকে ভালোভাবে চেনেন। হাবিবুল বাশার ভাই আমাকে ভালো করে চেনেন। তারা আমার ওপর যে আস্থা রেখেছেন তার জন্য আমি গর্বিত। অবশ্যই তাদের এই আস্থার প্রতিদান দিতে আমি নিজেকে উজাড় করে দেব। অতীতে যে কাজগুলো হয়েছে, তার পুনরাবৃত্তি যেন না হয় তার জন্য আমি সব সময় সচেষ্ট থাকব। আগের যে ভুলগুলো করেছি সেখান থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেকে আমি সংশোধন করে নিয়েছি।

শাস্তি কমলো, জাতীয় দলেও ফিরলেন, ব্যাটে ছন্দের আভাস। বাজে সময় পেছনে ফেলেছেন বলে মনে হচ্ছে?

সাব্বির: একটা বছর খুব খারাপ গেছে। তবে প্রত্যেকটা মানুষ আমাকে এই দুঃসময়ে খুব সহায়তা করেছে। আমি এই সময়ে দেখেছি, ভালো কোনটা, খারাপ কোনটা। একটা নেতিবাচক সময় গেছে এই সময়ে। পরিবারের সদস্যরা খুব হতাশ ছিল। আমি নিজেও খুব হতাশ ছিলাম। ভালো ব্যাপার হলো এই সময়ে কোনো বাজে কাজ আমাকে দিয়ে হয়নি। অনেক সময় হয় না, একজন খেলোয়াড় এই পরিস্থিতির মধ্যে দিয়ে গেলে অন্য দিকে মনোযোগী হয়ে যায়। এমনটা আমার ক্ষেত্রে হয়নি। আমার পরিবার আমাকে খুব সহায়তা করেছে এই কঠিন সময়ে। আমার সতীর্থরা আমাকে খুব সহায়তা করেছে। সব কিছু মিলে, এই মুহূর্তে খুব ভালো আছি। যেটা হয়, ভালো সময়ে সবাই পাশে থাকে, খারাপ সময়ে কেউ থাকে না। এটাই স্বাভাবিক। এখান থেকেই নিজেকে বুঝে নিতে হবে। আমি চার বছর খেলেছি জাতীয় দলে, ভালো সময়-খারাপ সময় তখন বুঝতে পারিনি। এই একটা বছর আমি খুব ভালো করে বুঝেছি খারাপ সময় কোনটাকে বলে। মানুষ যখন উপেক্ষা করে তখন কেমন লাগে। মানুষের চরিত্র কিভাবে পরিবর্তন হয় আমি খুব ভালোভাবে বুঝতে পেরেছি। আমি সেভাবেই নিজেকে গড়ে তোলার চেষ্টা করেছি। মানসিকভাবে ইতিবাচক থেকে নিজেকে গড়ে তুলেছি।

নিষিদ্ধ হওয়ার পর বাড়ি ফিরে মায়ের মুখোমুখি হওয়া কতটা কঠিন ছিল?

সাব্বির: ক্রিকেট খেলার কারণে অনেক ছোট থেকেই মা-বাবার কাছ থেকে দূরে থাকি। সব সময় ঢাকাতেই থাকতাম, রাজশাহী যেতে চাইতাম না। মাঝে সাড়ে চার বছর রাজশাহী যাইনি। এই এক বছরের মধ্যে আমি অন্তত পাঁচমাস ছিলাম রাজশাহীতে। মা-বাবা আমাকে খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছিলেন। সেখানে আমার বন্ধু-স্বজন যারা ছিলেন তারাও খুব ভালোভাবে গ্রহণ করেছিলেন। আমার মা-বাবা আমাকে বুঝতে দেননি যে আমি অনিশ্চিত জীবন কাটাচ্ছি। তাদের সাথে আমার সম্পর্ক বন্ধুর মতো। আমি তাদের সবকিছু খুলে বলেছিলাম। তারা বলেছিলেন, ‘খারাপ সময় সবার যায়। সামনে তোরও ভালো সময় আসবে। এটা নিয়ে এতো চিন্তা করিস না। আর চেষ্টা কর নিজেকে শোধরানোর জন্য।’ আমি তাদের কথা অনুযায়ী অনেক কিছু বাদ দিয়েছি। তাদের কথা অনুসরণ করেছি। তাদের মুখের দিকে তাকিয়ে আমি নিজেকে শুধরে নিয়েছি।

কঠিন সময়ে কী উপলব্ধি হলো?

সাব্বির: আমি মনে করি, প্রত্যেকটা মানুষের সুশৃঙ্খল হওয়া উচিত। একজন ক্রিকেটার কিংবা একজন পেশাদার মানুষেরই কেবল সুশৃঙ্খল হতে হবে ব্যাপারটা এমন নয়। ব্যক্তিগত জীবনে প্রত্যেকটা মানুষের শৃঙ্খলা মেনে চলতে হবে। সাড়ে চার বছরে আমাকে হয়তো কেউ কখনও বলেনি, ভালো কোনটা, খারাপ কোনটা। আমি নিজের মতো করে চলাফেরা করেছি। এই একটা বছরে আমি বুঝতে পেরেছি, জীবনটা কতটা সংগ্রামের। এই সংগ্রাম যারা করে তারা এই ব্যাপারগুলো বুঝতে পারে। আমি নিজের জন্য ক্রিকেট খেলছি, আমার পরিবারের জন্য খেলছি, দেশের জন্য খেলছি। আমি মনে করি, দেশকে আমার অনেক কিছু দেওয়ার আছে। আমার শাস্তি কমেছে, আমি জাতীয় দলে ফিরেছি। সবাই আমার ওপর আস্থা রেখেছে, আমি অবশ্যই এর প্রতিদান দেওয়ার চেষ্টা করব। আমি সর্বোচ্চ চেষ্টা করব দেশকে ভালো কিছু উপহার দিতে।

এশিয়ান গেমসে দেশের জন্য স্বর্ণ পদক জিতেছেন। রাজশাহীর হয়েও স্বর্ণ পদক জয়ের অভিজ্ঞতা আছে। বাজে সময়ে স্থির থাকতে সেই অর্জনগুলো কতটা সহায়ক ছিল?

সাব্বির: এটা আমার দ্বিতীয় জীবন। অতীত এখন অতীত। সে সব নিয়ে এখন আর ভাবতে চাই না। আমার ক্যারিয়ারের প্রথম টার্নিং পয়েন্ট ছিল এশিয়ান গেমস। আর এবারের বিপিএল হচ্ছে আমার দ্বিতীয় জীবনের প্রথম টার্নিং পয়েন্ট। গত এক বছরে অনেক কিছু শিখেছি। সেটা ধরে রেখে সামনে ভালো কিছু করার চেষ্টা করব। আমার ক্যারিয়ারে তিনটা গোল্ড মেডেল আছে। এখন ব্যক্তিগত জীবনে গোল্ড মেডেল জেতার লক্ষ্য নিয়ে নেমেছি।

দলে ফেরার পর কোচ স্টিভ রোডস, অধিনায়ক মাশরাফি আর অন্য ক্রিকেটারদের সঙ্গে কী কথা হলো?

সাব্বির: কোচের সঙ্গে যেদিন কথা হয় সেদিন ২৯ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত ছিলাম। উনি আমাকে বলছিলেন, ‘এটাই তোমার কাজ। সামনের দুই-তিনটা ম্যাচ আছে। তুমি এভাবেই চালিয়ে যেতে থাকো। কয়েকটা ম্যাচে রান পেলে নিজের আত্মবিশ্বাসের জন্য ভালো হবে, দলের জন্যও ভালো হবে।’ এই ধরনের কথা হয়েছিল।

আমার মনে হয়, আমাকে সাত নম্বরে ব্যাট করতে হবে। ফিনিশারের ভূমিকায় আমাকে খেলতে হবে। তিনি আমাকে সে কথাই বলছিলেন। ‘তোমাকে ফিনিশার হিসেবে খেলতে হবে। তুমি আজকে যেভাবে খেলেছ তোমাকে সেভাবেই খেলতে হবে। আজকের চেয়ে কঠিন পরিস্থিতিতে পড়তে হতে পারে, পরিস্থিতি এর চেয়ে সহজ হতে পারে। তবে শেষ পর্যন্ত খেলার চেষ্টা করতে হবে।’ তো এই পর্যন্তই কথা হয়েছে।   

মাশরাফি ভাইয়ের সঙ্গে দেখা হয়েছে, কথা হয়েছে। উনিও একই কথা বলেছেন। ‘তোর জায়গা ৬/৭ নম্বরে। ওই খানে তোর ভূমিকা হবে ফিনিশারের। তুই তোর কাজটা পুরোপুরি করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করবি।’ তার কথা আমাকে অনেক উৎসাহ যোগাচ্ছে। 

সাকিব ভাই, তামিম ভাই, মুশফিক ভাই আর রিয়াদ ভাইয়ের সাথে সব সময় দেখা হয় বা কথা হয় এমন না। তবে যখনই দেখা হয় কিংবা কথা হয় তারা আমাকে ভালো পরামর্শ দেন। তাদের মূল বার্তা হল, ‘নিজের জীবন পরিবর্তন কর। সব কিছু বাদ দে। নিজের দিকে খেয়াল রাখ। অনুশীলন কর ঠিক মতো। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে। চেষ্টা কর পেশাদার জীবনটা ঠিক রেখে বাকি কাজগুলোও ঠিকঠাকভাবে করার।’ উনারা সব সময় আমাকে সমর্থন করেছেন। তাদের অসংখ্য ধন্যবাদ।

আসন্ন সফর প্রসঙ্গে আসা যাক। নিউ জিল্যান্ড সফর নিয়ে কী ভাবছেন?

সাব্বির: ২০১৬ সফরে গিয়েছিলাম। ২০১০ সালে সেখানে যুব বিশ্বকাপ খেলেছিলাম। সেখানে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। ভারতের বিপক্ষে ওদের চলমান ওয়ানডে সিরিজটা দেখছি। ওদের উইকেট কেমন আচরণ করছে দেখছি। আবহাওয়া, উইকেট সব কিছু সম্পর্কে আমাদের ধারণা আছে। হয়তো বিপিএলের জন্য আমরা সেভাবে প্রস্তুতি নিতে পারব না। তবে যদি সেখানে গিয়ে মানসিকভাবে দ্রুত মানিয়ে নিতে পারি তাহলে ভালো করা সম্ভব। চট্টগ্রামে রাতের ম্যাচে যে উইকেট হয়, সেটা প্রায় নিউ জিল্যান্ডের উইকেটের মতো। কেবল বাউন্স একটু কম। তবে দুই উইকেটে বল স্কিড করে একই রকম। সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে রান। আপনি যদি এখানে রান করে যেতে পারেন সেই আত্মবিশ্বাস সেখানে আপনাকে বেশ সহায়তা করবে।

আপনার ক্যারিয়ারের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ টুর্নামেন্ট ছিল এবারের বিপিএল। প্রথম ম্যাচটা খেলার সময় কেমন লাগছিল?

সাব্বির: রান করাটা গুরুত্বপূর্ণ। একই সঙ্গে আত্মবিশ্বাসও গুরুত্বপূর্ণ। এবারের বিপিএলে প্রথম ম্যাচটা যখন খেলি সিরিয়াসলি আমার হাত-পা কাঁপছিল। তখন যে কেমন লাগছিল বলে বোঝানো যাবে না। প্রথম যে ছয়-সাত বল খেলতে খুব অস্বস্তি লেগেছিল। তার মাঝে একটা ছক্কাও মেরে দিয়েছিলাম সাহস নিয়ে। তারপরে আমি ধীরে ধীরে ঠিক হয়েছি। বিপিএলের এই ম্যাচগুলো আমাকে স্নায়ুচাপ সামলাতে সহায়তা করেছে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার আগে বিপিএলের ম্যাচগুলো আমাদের জন্য অনুশীলন ম্যাচের মতো। এখানে আত্মবিশ্বাস গড়ে উঠবে, আমার ক্ষেত্রে যা হয়েছে। নার্ভাসনেস একেবারেই কেটে গেছে। এখন দেখা যাক নিউ জিল্যান্ডে গিয়ে কী হয়।

সিলেট সিক্সার্সে সতীর্থ হিসেবে পেয়েছিলেন ডেভিড ওয়ার্নারকে। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে নিষেধাজ্ঞা কাটাচ্ছেন অস্ট্রেলিয়ার এই ক্রিকেটার। তার কাছ থেকে কতটা নিতে পারলেন?

সাব্বির: তা বলে শেষ করতে পারব না। ও গ্রেট একজন ক্রিকেটার। ওর কাছ থেকে অনেক কিছু নেওয়ার আছে। যতটুকু পেরেছি ওর কাছ থেকে নিয়েছি। ও অনেক মজার একটা মানুষ। তবে ও এক ধরনের, আমি অন্য ধরনের। আবার অনেক কিছু মিলেও। আমরা দুইজনই মাঠে আগ্রাসী। মাঠের বাইরে ও অনেক ভালো। ওর মতোই ভালো হওয়ার চেষ্টা করব। ওর যে অভিজ্ঞতা আমার সঙ্গে শেয়ার করেছে চেষ্টা করব মাঠে তা কাজে লাগানোর।

২৫ বলে অপরাজিত ৪৪ রানের ছোট্ট কিন্তু কার্যকর ব্যাটিংয়ে আপনার আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শুরু। ঠিক এই ধরনের কিছুর সামর্থ্য আছে বলেই নেওয়া। বিশ্বকাপে আট নম্বরে নেমে ফিফটি আছে। সেই সাব্বিরকে ফেরত চায় বাংলাদেশ, কতটা সম্ভব?

সাব্বির: সাড় চার বছর আগের সাব্বির ছিল অপরিণত। আজকের সাব্বির অনেক পরিণত। এই সাব্বির যে কোনো পরিস্থিতিতে দলের প্রয়োজন অনুযায়ী খেলার সামর্থ্য রাখে। আমি সেভাবেই অনুশীলন করে নিজেকে প্রস্তুত করেছি। আশা করি, নতুন সাব্বিরের মাঝেও পুরান সাব্বিরের সেই ব্যাটিংয়ের ঝলক খুঁজে পাবেন।

প্রথম ছয় ইনিংসে তিনটা টেস্ট ফিফটি। শেষ পাঁচ ইনিংসে যেতে পারেননি দুই অঙ্কে। ক্যারিয়ার গ্রাফ নিম্নমুখী। নানামুখী জটিলতার প্রভাব নাকি মাঠের খেলার প্রভাব পড়েছে ব্যক্তিগত জীবনে?

সাব্বির: ব্যক্তিগত জীবনে যদি কোনো সঙ্কট আসে তা পেশাদার জীবনে একটু হলেও তো প্রভাব ফেলেই। এমন কিছু হলে মনোযোগ নড়ে যাওয়া অস্বাভাবিক নয়। আমার মনে হয়, তখন ব্যাপারগুলো আমার মনের কোথাও ছিলই। হয়তো নেতিবাচক মাইন্ডসেটে ছিলাম। তখন রান করা দরকার ছিল কিন্তু রান করতে পারছিলাম না। অনেক সময় ব্যর্থ হয়েছি। অনেক সময় ৬০/৭০ এর ঘরে গিয়ে আউট হয়ে গেছি। অনেক সময় ৩০/৩৫ রান করার পর আউট হয়ে গেছি। সেই রানটা বড় করে কিভাবে সেঞ্চুরি করা যায় সে সব নিয়ে কাজ করছি। কিভাবে নিজের দলকে শেষ পর্যন্ত খেলায় রাখা যায় মানসিকভাবে নিজেকে সেভাবে তৈরি করছি।

নিজের কঠিন সময়ে যা শিখলেন তা থেকে তরুণ ক্রিকেটার আর ভক্তদের কোনো বার্তা দেবেন?

সাব্বির: যারা ক্রিকেটার হতে চায় সেই তরুণ শিশু-কিশোরদের প্রতি আমার বার্তা একটাই, মন দিয়ে নিজের কাজটা করে যাও। আমি তাদের বলতে চাই, ব্যক্তিগত জীবন আর পেশাদার জীবন সম্পূর্ণ আলাদা ব্যাপার। আমাকে যারা আইডল  ভাবতো তারা হয়তো এই মুহূর্তে একটু নিরাশ। তবে একটা কথা বলতে পারি, আমি ইচ্ছে করে তাদের কষ্ট দিইনি। অনেক সময় ভুলবশত এমনটা হয়ে যায়। ভুল তো হয়েই যায়। তবে সেখান থেকে যে বের হয়ে আসতে পারে সেই ইতিবাচক মানুষ। আমি চেষ্টা করব আগে যেভাবে চলাফেরা করেছি তার চেয়ে অনেক ভালোভাবে চলাফেরা করার জন্য।