লুইসের সেঞ্চুরি, ওয়াহাবের হ্যাটট্রিকে কুমিল্লার সহজ জয়

চোট কাটিয়ে ফেরা এভিন লুইস বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে করলেন সেঞ্চুরি। ক্যারিবিয়ান ওপেনারকে সঙ্গ দিলেন ইমরুল কায়েস ও শামসুর রহমান। তিন ব্যাটসম্যানের ঝড়ো ব্যাটিংয়ের পর ওয়াহাব রিয়াজের হ্যাটট্রিকে সহজেই খুলনা টাইটানসকে হারাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Jan 2019, 09:41 AM
Updated : 28 Jan 2019, 11:50 AM

বিপিএলে সোমবারের প্রথম ম্যাচে ৮০ রানে জিতেছে কুমিল্লা। ২৩৮ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ১৮ ওভার ৫ বলে ১৫৭ রানে গুটিয়ে যায় খুলনা।

৫ উইকেটে করা কুমিল্লার ২৩৭ রানের চেয়ে বিপিএলে বড় সংগ্রহ আছে কেবল একটি। গত শুক্রবার চট্টগ্রামেই চিটাগং ভাইকিংসের বিপক্ষে ২৩৯ রান করেছিল রংপুর রাইডার্স।

সহজাত আক্রমণাত্মক ব্যাটিংয়ে লুইস ৪৯ বলে ১০ ছক্কা ও পাঁচ চারে অপরাজিত থাকেন ১০৯ রানে। বিপিএলে এটি তার দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। ক্রিস গেইলের পর কেবল তিনিই এই টুর্নামেন্টে একাধিক সেঞ্চুরি করলেন।

১৯তম ওভারে পরপর তিন বলে ডেভিড ভিসা, তাইজুল ইসলাম ও মোহাম্মদ সাদ্দামকে ফিরিয়ে খুলনাকে থামিয়ে দেন ওয়াহাব। এবারের আসরে দ্বিতীয় বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করলেন পাকিস্তানের বাঁহাতি এই পেসার।

চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে তামিম ইকবালের সঙ্গে ৫৮ রানের জুটিতে দলকে ভালো শুরু এনে দেন লুইস। এক প্রান্তে শুরু থেকে লুইসের ব্যাট ছিল উত্তাল, অন্য প্রান্তে টাইমিং করতে ভুগছিলেন তামিম।

রানের গতি বাড়ানোর চেষ্টায় ফিরেন তামিম। মাহমুদউল্লাহকে লং অফ দিয়ে উড়ানোর চেষ্টায় ভিসার হাতে ধরা পড়েন বাঁহাতি এই ওপেনার। ২৯ বলে খেলা তার ২৫ রানের ইনিংস গড়া পাঁচটি চারে।

তামিমকে ফেরানোর পরের বলে এনামুল হককে বিদায় করেন মাহমুদউল্লাহ। তার হ্যাটট্রিক ঠেকিয়ে দেওয়া ইমরুল শুরু থেকেই চড়াও হন বোলারদের ওপর। ৭ ওভারে লুইসের সঙ্গে গড়েন ৯৭ রানের জুটি।

শরিফুল ইসলামের বলে এলবিডব্লিউর সফল রিভিউয়ে ইমরুলকে ফেরায় খুলনা। কুমিল্লা অধিনায়ক ২১ বলে চারটি ছক্কা ও দুটি চারে করেন ৩৯ রান। থিসারা পেরেরা ও শহিদ আফ্রিদিকে দ্রুত ফিরিয়ে দেন কার্লোস ব্র্যাথওয়েট।

অবিচ্ছিন্ন ষষ্ঠ উইকেটে শামসুর রহমানের সঙ্গে ৪ ওভারে ৫৯ রানের জুটিতে দলকে ২৩৭ পর্যন্ত নিয়ে যান লুইস। ৩১ বলে পঞ্চাশ ছোঁয়া বাঁহাতি এই ওপেনার তিন অঙ্কে যান ৪৭ বলে। 

বিপিএলে এবারের আসরে প্রথমবারের মতো খেলতে নামা সাদ্দামের এক ওভার থেকে চারটি ছক্কায় ২৮ রান নেন লুইস। তার ঝড়ের মুখে পড়া সাদ্দাম ৪ ওভারে দেন ৫৯ রান। বিপিএলের ইতিহাসে এটাই সবচেয়ে খরুচে বোলিং। এবারের আসরেই সিলেট সিক্সার্সের দুই পেসার আল আমিন হোসেন ও মেহেদী হাসান রানার ৫৭ রান ছিল আগের রেকর্ড।

দলের মূল বাঁহাতি স্পিনার তাইজুলকে বোলিংই দেননি অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। 

প্রথম ১০ ওভারে ৭৭ রান সংগ্রহ করা কুমিল্লা শেষ ১০ ওভারে যোগ করে ১৬০ রান!

বড় রান তাড়ায় জুনায়েদ সিদ্দিকের সঙ্গে ৫৫ রানের উদ্বোধনী জুটিতে দলকে ভালো শুরু এনে দিয়েছিলেন ব্রেন্ডন টেইলর। ভালো শুরুটা কাজে লাগাতে পারেননি জুনায়েদ। দাভিদ মালান ও মাহমুদউল্লাহকে দ্রুত ফিরিয়ে খুলনাকে চাপে ফেলে দেন আফ্রিদি।

পঞ্চাশ ছোঁয়ার পর পাকিস্তানের এই লেগ স্পিনারকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে টেইলর ফিরে গেলে বড় একটা ধাক্কা খায় খুলনা। জিম্বাবুয়ের কিপার ব্যাটসম্যান ৩৩ বলে পাঁচ চার ও এক ছক্কায় ফিরেন ৫০ রান করে।

ব্র্যাথওয়েট, নাজমুল হোসেন শান্ত পারেননি দলকে টানতে। দুই জনই ছক্কা হাঁকানোর চেষ্টায় ফিরে যান সহজ ক্যাচ দিয়ে। তাদের বিদায়ের পর বেশি দূর এগোয়নি খুলনার ইনিংস। দলটি শেষ ৬ উইকেট হারায় ১৪ রানে।

আঁটসাঁট বোলিংয়ে বাঁহাতি পেসার ওয়াহাব ৩ উইকেট নেন ১৪ রানে। লেগ স্পিনার আফ্রিদি ২৭ রানে নেন তিনটি।

দারুণ সেঞ্চুরিতে দলকে বড় সংগ্রহ এনে দেওয়া ক্যারিবিয়ান পেসার ওপেনার লুইস জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।

নয় ম্যাচে ষষ্ঠ জয় পেল কুমিল্লা। ১১ ম্যাচে নবম হারে খুলনার তলানিতে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করা নিশ্চিত হয়ে গেল।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ২০ ওভারে ২৩৭/৫ (তামিম ২৫, লুইস ১০৯*, এনামুল ০, ইমরুল ৩৯, থিসারা ১১, আফ্রিদি ১, শামসুর ১৫; শরিফুল ৪-০-৫৩-১, সাদ্দাম ৪-০-৫৯-০, ভিসা ৪-০-৪৯-০, মাহমুদউল্লাহ ৪-০-৩২-০, ব্র্যাথওয়েট ৪-০-৪২-২)

খুলনা টাইটানস: ১৮.৫ ওভারে ১৫৭ (টেইলর ৫০, জুনায়েদ ২৭, মালান ১৩, মাহমুদউল্লাহ ১১, ব্র্যাথওয়েট ২২, শান্ত ১৪, ভিসা ৮, আরিফুল ২, তাইজুল ১, শরিফুল ০*, সাদ্দাম ০; সাইফ ৩-০-২৯-১, মেহেদি ৪-০-২৮-১, শহীদ ২-০-২৪-০, ওয়াহাব ২.৫-০-১৪-৩, আফ্রিদি ৪-০-২৭-৩, থিসারা ৩-০-২৮-১)

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৮০ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: এভিন লুইস