‘কালো অধ্যায়’ পেরিয়ে আলোয় ইয়াসির
আরিফুল ইসলাম রনি, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published: 20 Jan 2019 03:08 PM BdST Updated: 20 Jan 2019 03:10 PM BdST
‘এ’ দলের দুটি সিরিজ তখন সামনে। রোমাঞ্চ নিয়ে অপেক্ষায় ইয়াসির আলি চৌধুরী রাব্বি। হঠাৎই সব রোমাঞ্চ বিষাদে রূপ নেয় একটি সড়ক দুর্ঘটনায়। পায়ে মারাত্মক আঘাত পাওয়ায় ক্যারিয়ারই পড়ে যায় অনিশ্চয়তায়। তার নিজের কাছে যেটি ‘কালো অধ্যায়’। তবে চার মাস মাঠের বাইরে থেকে ফিরে আসেন নতুন উদ্যমে। ধারাবাহিক পারফরম্যান্সেই ২২ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান আবার উঠে এসেছেন আলোচনায়।
বিপিএলে সিলেট পর্বের শেষ ম্যাচে শনিবার চিটাগং ভাইকিংসের রান পাহাড়ে ওঠায় বড় অবদান ছিল ইয়াসিরের। তিনে নেমে খেলেছেন ৩৬ বলে ৫৪ রানের ইনিংস।
এবার প্রথম দুই ম্যাচে একাদশের বাইরে ছিলেন ইয়াসির। সেই দুই ম্যাচে ব্যর্থ মোহাম্মদ আশরাফুলের জায়গায় সুযোগ পেলেন তৃতীয় ম্যাচে। মাঠে নেমেই খেললেন ৩৪ বলে ৪১ রানের ইনিংস। পরের ম্যাচে চার রানে ফেরার পর করলেন এই ফিফটি।
বিপিএলে শুরুর এই সাফল্য গত কিছুদিনে তার নিয়মিত পারফরম্যান্সেরই ধারাবাহিকতা। বিপিএলের ঠিক আগে শেষ হওয়া বিসিএলে ৫ ইনিংসে দুটি করে সেঞ্চুরি ও ফিফটিতে ৪১৬ রান করেছেন ১০৪ গড়ে।
বিসিএলের মাঝপথে বাংলাদেশের হয়ে পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় খেলতে গিয়েছিলেন ইমার্জিং টিমস এশিয়া কাপে। চার ইনিংসে রান ছিল ২০, ৪৫, ৫৬ ও ৬৬। বৃষ্টিবিঘ্নিত জাতীয় লিগে ৫ ম্যাচে কেবল ৬টি ইনিংস খেলতে পেরেছিলেন। ২৬১ রান করেছিলেন ৫২.২০ গড়ে।

পরিবারের সবার মানসিক সমর্থন আর নিজের দৃঢ়প্রতিজ্ঞায় আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছেন। অক্টোবরে জাতীয় লিগের প্রথম ম্যাচে খেলতে পারেননি। পরের রাউন্ডে মাঠে নেমেই করলেন ৮৪ রান। সেখান থেকেই চলছে সফল মৌসুমের পথচলা। চট্টগ্রামের ছেলে এখন বিপিএলে আলো ছড়াচ্ছেন চিটাগংয়ের হয়েই।
এই রোশনাইয়ের মাঝে ইয়াসির ফিরে তাকালেন সেই অন্ধকার সময়টায়। কাছের মানুষদের কৃতজ্ঞতা জানালেন তাকে লড়াইয়ের প্রেরণা জোগানোর জন্য।
“আসলে কি বলব, ওই দুর্ঘটনাটা আমার জীবনের একটা কালো অধ্যায় বলতে পারেন। চার মাস বাইরে থেকে অনেক বড় একটা গ্যাপ হয়ে গিয়েছিল। তখন আমি ভেঙে পড়েছিলাম। ভাবছিলাম, কী হবে! ‘এ’ দলের দুটো সিরিজ ছিল। শ্রীলঙ্কা বাংলাদেশে এসেছিল, আমাদের আয়ারল্যান্ড ট্যুর ছিল। যেহেতু ভালো খেলছিলাম, আশা করছিলাম থাকবই দলে। কিন্তু মিস করেছি দুটোই।”
“ওই সময়ে আমাকে মানসিক শক্তি দিয়েছেন আমার বাবা-মা। তারা সবাই আমাকে বারবার বলতেন যে, ‘কিছুই হয়নি। কয়েকটা মাসই কেবল গেছে। সামনে অনেক খেলা আছে।’ পরে আমি আবার ট্র্যাকে ফিরেছি।”
‘ট্র্যাকে’ ফেরার এই লড়াই তার চলছে অনেক দিন ধরেই। ২০১৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে খেলেছেন বাংলাদেশের হয়ে। সেই দলের লিটন দাস, মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোসাদ্দেক হোসেন, আবু হায়দার, সাদমান ইসলামরা আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের স্বাদ পেয়েছেন। অনেকে এগিয়ে গেছেন অনেক দূর। ইয়াসির এখনও লড়ছেন জাতীয় দলের জন্য বিবেচিত হতে।

পরিসংখ্যানের চেয়ে বেশি উন্নতির ছাপ অবশ্য ব্যাটিংয়ের ধরনে। বাংলাদেশের উঠতি ব্যাটসম্যান হিসেবে টেকনিক বেশ আঁটসাঁট। বল নির্বাচন ও টেম্পারামেন্টও বেশ ভালো। ইনিংস গড়তে পারেন। সিঙ্গেল নিতে পারেন যেমন, বড় শটও খেলতে পারেন যথেষ্ট। সব মিলিয়ে সুঠামদেহী এই ব্যাটসম্যানের ব্যাটিং দাবি মেটাতে পারে তিন সংস্করণেরই। হাই পারফরম্যান্স, ইমার্জিং ও ‘এ’ দলে খেলছেন, মানে জাতীয় নির্বাচকদের নজরেও আছেন।
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের জন্য নিজেকে তৈরি মনে করেন কিনা, সেই মূল্যায়নের ভার ইয়াসির তুলে রাখলেন নির্বাচকদের জন্য। জানালেন, তিনি নিজের কথা বলতে চান ব্যাট দিয়েই।
“যখন, যেখানে খেলি, নিজের সেরাটা দিয়ে খেলি। মনের মধ্যে তাগিদ থাকে, সেটা যেখানেই হোক। হোক সেটা বিসিএল, এনসিএল, কিংবা পাড়ার লিগ, সব সময় চাই ভালোটাই খেলি। নিজের সেরাটা দেওয়ারই চেষ্টা থাকে।”
“(জাতীয় দলের জন্য তৈরি কিনা) ব্যাপারটি আমার পারফরম্যান্সই বলবে। আমার ব্যাটিং বলবে। যখন আমার ব্যাট ভালো করবে, তখন নির্বাচকরা যদি মনে করেন, অবশ্যই হবে সুযোগ।”
সর্বাধিক পঠিত
- পাঁচটি প্রিয় বিকাশ নম্বরে ‘সেন্ড মানিতে’ খরচ নেই
- আমাকে ফাঁসানো হয়েছে: সামিয়া
- অনন্য মামুনের ‘মেকআপ’ প্রদর্শনযোগ্য নয়: সেন্সর বোর্ড
- বার্সেলোনার সাবেক সভাপতি বার্তোমেউ ‘আটক’
- ভিনিসিউসের শেষের গোলে রক্ষা রিয়ালের
- বার্সেলোনায় যাচ্ছে গার্সিয়া: গুয়ার্দিওলা
- ‘এত বড় দেশে কোথাও জায়গা হল না’
- এশিয়া কাপ পেছানোর ভাবনা
- বিদেশিদের উদ্বেগ ‘তাজ্জবের’ ব্যাপার: পররাষ্ট্রমন্ত্রী
- খুলনায় এক লাখ ৩০ হাজার টাকায় একটি কৈবল মাছ বিক্রি