লিটন-ওয়ার্নারের ব্যাটিং তাণ্ডবে সিলেটের জয়

ক্যারিয়ার সেরা ব্যাটিংয়ে দলকে উড়ন্ত সূচনা এনে দিলেন লিটন দাস। অধিনায়ক ডেভিড ওয়ার্নার তুললেন ঝড়। বাঁহাতি ব্যাটসম্যান চমকে দিলেন ডানহাতি ব্যাটিংয়ে চার ও ছক্কা মেরে। নিকোলাস পুরান খেললেন ছোটো কিন্তু কার্যকর ইনিংস। নিজ শহরের মাঠে সিলেট সিক্সার্স বড় রানের চাপায় পিষ্ট করল রংপুর রাইডার্সকে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 16 Jan 2019, 02:33 PM
Updated : 16 Jan 2019, 04:44 PM

আগের দিনের হতাশা পেছনে ফেলে বুধবার ঘরের দর্শকদের দারুণ জয় উপহার দিয়েছে সিলেট সিক্সার্স। বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের হারিয়েছে তারা ২৭ রানে।

৪৩ বলে ৭০ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেছেন লিটন। ওয়ার্নারের ব্যাট থেকে এসেছে ৩৬ বলে ৬১। ২০ ওভারে সিলেট তোলে ১৮৭ রান। রান তাড়ায় বাজে শুরুর পর রংপুর ঘুরে দাঁড়ালেও শেষ পর্যন্ত করতে পারে ২০ ওভারে ১৬০ রান।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা সিলেট এদিন পরিবর্তন আনে ব্যাটিং অর্ডারে। লিটনের সঙ্গে ইনিংস শুরু করেন সাব্বির রহমান। ওয়ার্নার নেমে যান তিনে।

ওপরে উঠে এসেও সাব্বির ছিলেন বলতে গেলে দর্শক হয়ে। লিটন দেখিয়েছেন খেলা। মাশরাফি ও শফিউলকে প্রথম দুই ওভারে দুটি বাউন্ডারিতে শুরু করেন। আরও ঝড় তোলেন তৃতীয় ওভারে। মাশরাফিকে মারেন তিনটি বাউন্ডারি।

স্পিন আক্রমণে এনেও লাভ হয়নি। সোহাগ গাজীও লিটনের ব্যাটে হজম করেন চার-ছক্কা। অফ স্পিন পেয়ে সাব্বিরও বিশাল ছক্কায় বল ফেলেন গ্যালারিতে। পাওয়ার প্লে ৬ ওভারে সিলেট তোলে ৬১ রান।

৭৩ রানের জুটি ভাঙে সাব্বিরের বিদায়ে। বেনি হাওয়েলের স্লোয়ারে আউট হন ২০ বলে ২০ করে। তবে রংপুরের স্বস্তি আসেনি, বরং বিপদ বাড়ে আরও। ওয়ার্নার আসার পর আক্রমণ শুরু হয় দুই পাশ থেকেই!

দ্বিতীয় স্পেলে এসেও মাশরাফি পড়েন তোপের মুখে। লিটনের ব্যাটে প্রথম বলে বাউন্ডারির পর ওয়ার্নার মারেন ছক্কা ও দুটি চার। ওভার থেকে আসে ১৯ রান।

মাশরাফির কাটার ধরেনি। লাইন-লেংথও ছিল না খুব ভালো। এখনও পর্যন্ত আসরের সফলতম বোলার এ দিন ৩ ওভারে গুনেছেন ৪৩ রান, বিপিএলে তার সবচেয়ে খরুচে বোলিং।

লিটন ফিফটি স্পর্শ করেন ২৯ বলে। এগিয়ে যাচ্ছিলেন তার পরও। শেষ পর্যন্ত রান আউট হয়ে যান ৯ চার ও ১ ছক্কায় ৪৩ বলে ৭০ রান করে। টি-টোয়েন্টিতে তার আগের সর্বোচ্চ ছিল ৬৪।

ওয়ার্নারকে থামানো যায়নি। অফ স্পিনার ক্রিস গেইলের বলে বাঁহাতি ব্যাটিংয়ে খুব বেশি শট খেলতে পারছিলেন না বলেই হয়তো গার্ড নিলেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান হিসেবে। প্রথম বলেই মাথার ওপর দিয়ে ছক্কা। পরের বলে সুইপ করে চার, পরের বলে চার সুইচ হিটে!

ফর্মে থাকা পুরান খেলেন ১৬ বলে ২৬ রানের ইনিংস। ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৬১ রানে অপরাজিত থেকে যান ওয়ার্নার।

রংপুরের রান তাড়া হোঁচট খায় শুরুতেই। বড় রান তাড়ায় প্রয়োজন ছিল টপ অর্ডারের জ্বলে ওঠা। ক্রিস গেইল তো ছিলেনই, রবি বোপারার বদলে একাদশে ফিরেছিলেন অ্যালেক্স হেলস। বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ের সামর্থ্য আছে দুজনের। তবে দলকে হতাশায় ডুবিয়েছেন দুজনই।

মৌসুমের প্রথম ও ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি খেলতে নেমে মেহেদি হাসান রানা নিজের প্রথম ওভারেই নিয়েছেন দুই উইকেট। এই বাঁহাতি পেসারের বলে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন মেহেদি মারুফ, এক্সট্রা কাভারে হেলস।

পরের ওভারে ক্রিস গেইলকে ফিরিয়ে দেন সোহেল তানভির। তৃতীয় ওভারে রংপুরের রান ৩ উইকেটে ১১।

শুরুর বিপর্যয়ের পরও রংপুরের আশা জিইয়ে রাখেন রাইলি রুশো ও মোহাম্মদ মিঠুন। পাল্টা আক্রমণে ৮৯ রানের জুটি গড়েন দুজন। রংপুরের জয়ও অসম্ভব মনে হচ্ছিল না এক সময়।

তবে রান রেটের সঙ্গে তাল মেলাতে গিয়ে সম্ভব হয়নি টিকে থাকা। তাসকিন আহমেদের নিচু হওয়া এক বলে পুল করতে গিয়ে বোল্ড হয়ে যান রুশো। এবারের আসরের সফলতম ব্যাটসম্যান এদিন করেছেন চার ছক্কায় ৩২ বলে ৫৮।

২৯ বলে ৩৫ রান করা মিঠুনকেও ফেরান তাসকিন। রংপুরের হার এরপর ছিল কেবল সময়ের ব্যাপার। মাশরাফির ২৭ বলে ৩৩ রানের ইনিংস কমিয়েছে ব্যবধান।

এই হারে আরও কঠিন হয়ে গেল রংপুরের পথচলা। ছয় ম্যাচ বর্তমান চ্যাম্পিয়নদের এটি চতুর্থ পরাজয়। খুব সুবিধায় নেই সিলেটও। পাঁচ ম্যাচে তাদের এটি দ্বিতীয় জয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

সিলেট: ২০ ওভারে ১৮৭/৫ (লিটন ৭০, সাব্বির ২০, ওয়ার্নার ৬১*, পুরান ২৬, আফিফ ৬, জাকের ০, অলক ০*; মাশরাফি ৩-০-৪৩-০, শফিউল ৪-০-৩১-৩, সোহাগ ৪-০-৩৮-০, হাওয়েল ৩-০-২২-১, ফরহাদ ২-০-৯-০, গেইল ৩-০-৩৫-০, নাহিদুল ১-০-৭-০)।

রংপুর রাইডার্স: ২০ ওভারে ১৬০/৬ (গেইল ৭, মারুফ ৩, হেলস ০, রুশো ৫৮, মিঠুন ৩৫, মাশরাফি ৩৩*, হাওয়েল ১৩, নাহিদুল ৫*; তানভির ৪-০-২২-১, রানা ৪-০-৪০-২, তাসকিন ৪-০-৩৪-২, আফিফ ১-০-২২-০, লামিচানে ৪-০-১৮-১, অলক ৩-০-২৩-০)।

ফল: সিলেট সিক্সার্স ২৭ রানে জয়ী