আফ্রিদির ব্যাটে কুমিল্লার দারুণ জয়

এক প্রান্ত আগলে রেখে দলকে টানছিলেন তামিম ইকবাল। কিন্তু রান আউট হয়ে গেলেন শহিদ আফ্রিদির সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে। ম্যাচটিও কি হাত থেকে ফসকে হয়ে গেল? এ সেই বিরল দিন, যে দিন ঝড়ো কিন্তু দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে আফ্রিদি দলকে নিয়ে গেলেন জয়ের ঠিকানায়। দারুণ জয়ে বিপিএল শুরু করল কাগজে-কলমে টুর্নামেন্টের অন্যতম সেরা দল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Jan 2019, 08:27 AM
Updated : 6 Jan 2019, 11:14 AM

বল হাতে একটি উইকেট নিয়েছিলেন আফ্রিদি। পরে সাতে নেমে খেলেছেন ২৫ বলে ৩৯ রানের অপরাজিত ইনিংস। সিলেট সিক্সার্সকে ৪ উইকেটে হারিয়েছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স।

এবারের আসরে দুই দলের প্রথম ম্যাচ তো বটেই, বিপিএলের সীমানা ছাড়িয়ে এই ম্যাচ ছিল স্টিভেন স্মিথ ও ডেভিড ওয়ার্নারের লড়াই। বল টেম্পারিং বিতর্কে অস্ট্রেলিয়ান ক্রিকেটে নিষিদ্ধ, পদচ্যুত অধিনায়ক ও সহ-অধিনায়ক বিপিএলে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দুই দলকে। প্রথম দেখায় হাসলেন অধিনায়ক স্মিথ।

মিরপুরে রোববার শুরুতে ধুঁকলেও নিকোলাস পুরানের সৌজন্যে ২০ ওভারে ১২৭ রান তুলতে পেরেছিল সিলেট। কুমিল্লা মাত্র ১ বল বাকি রেখে জিতলেও আফ্রিদি ছিলেন বলেই ম্যাচের ফল নিয়ে সংশয় জাগেনি খুব একটা।

উইকেট যদিও ছিল মন্থর, কুমিল্লার শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপের জন্য তবু ১২৮ রান খুব কঠিন হওয়ার কথা ছিল না। কিন্তু রান তাড়ার শুরুটা ভালো করতে পারেনি তারা। আগ্রাসী এভিন লুইস আল আমিন হোসেনকে তুলে মারতে গিয়ে ফেরেন ৫ রানে। তিনে নেমে শূন্য রানেই মোহাম্মদ ইরফানের বলে বোল্ড ইমরুল কায়েস।

রান রেটের চাপ ছিল না। তাই ঠাণ্ডা মাথায় ব্যাট করে দলকে টেনে নিয়েছেন তামিম। মিডল অর্ডারে স্টিভেন স্মিথ ও শোয়েব মালিকের মতো ভরসার নাম ছিল। কিন্তু দুজনই ফিরে গেছেন খানিকটা সময় তামিমকে সঙ্গ দিয়ে।

বাজে শটে উইকেট বিলিয়ে এসেছেন এনামুল হক। বিপিএল অভিষেকে দারুণ বোলিংয়ে কুমিল্লাকে চাপে ফেলেন সিলেটের নেপালি লেগ স্পিনার সন্দিপ লামিচানে।

শেষ ৫ ওভারে কুমিল্লার দরকার ছিল ৪৫ রান। মন্থর উইকেটে কাজটি সহজ ছিল না। তবে আফ্রিদি দেখালেন, ক্যারিয়ারের পড়ন্ত বেলায়ও ব্যাটের ধার অবশিষ্ট আছে কিছু।

স্বদেশি দীর্ঘদেহী পেসার মোহাম্মদ ইরফানকে বিশাল ছক্কায় আফ্রিদি আছড়ে ফেললেন গ্যালারিতে। পরের বলেই তামিম রান আউট। কিন্তু এক বল পরই আফ্রিদির ব্যাটে চার। পরের ওভারে তাসকিন আহমেদকে মারলেন ছক্কা ও চার।

এমন পরিস্থিতিতে অনেকবারই অতি আগ্রাসী হয়ে উইকেট হারিয়ে এসেছেন আফ্রিদি। কিন্তু এবার দায়িত্ব নিয়ে টিকে থাকলেন শেষ পর্যন্ত। দুই বলে যখন প্রয়োজন দুই রান, অলক কাপালিকে সুইপ করে বাউন্ডারিতে জেতালেন দলকে।

কুমিল্লার শুরুর মতোই ছিল সিলেটের ব্যাটিংয়ের শুরু। মন্থর উইকেটে ধুঁকেছে টপ অর্ডার। রান এসেছে পরের দিকে।

দ্বিতীয় ওভারেই অফ স্পিনার মেহেদি হাসানকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে আউট হয়েছেন লিটন দাস। সেই মেহেদিকেই এক ওভারে তিন চার মেরে হাত খোলার চেষ্টা করেছিলেন ওয়ার্নার। কিন্তু বিতর্কিত রান আউট থামায় সিলেট অধিনায়ককে।

রান নেওয়ার সময় তৌহিদ হৃদয়ের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতেই দুজনই চলে যান এক প্রান্তে। টিভি রিপ্লে দেখে দেখা গেছে ওয়ার্নার ক্রিজ ছুঁয়েছেন আগে, কিন্তু তৃতীয় আম্পায়ার আউট দেন তাকেই।

টি-টোয়েন্টি অভিষেকে তিনে নেমে বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়ক হৃদয় তিনে ২৪ বলে ৮ রান করে দলকে ফেলে যান বিপদে।

১০ ওভার শেষে সিলেটের রান ছিল ৪ উইকেটে ৪৬। একটি বিশাল ছক্কা মারার পর বিদায় নেন সাব্বির রহমানও।

সিলেটের থমকে যাওয়া ইনিংসে দম দেন নিকোলাস পুরান। ৫ চার ও ২ ছক্কায় ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যান খেলেন ২৬ বলে ৪১ রানের ইনিংস। ১৯ রান করে তাকে সঙ্গ দেন অলক কাপালি। সিলেট পায় লড়ার মতো রান।

সেই রানে লড়াই হলো বটে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্যবধান গড়ে দিলেন আফ্রিদি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

সিলেট সিক্সার্স: ২০ ওভারে ১২৭/৮ (লিটন ১, ওয়ার্নার ১৪, হৃদয় ৮, আফিফ ১৯, সাব্বির ৭, পুরান ৪১, অলক ১৯, তাসকিন ৪, লামিচানে ১*, আল আমিন ১*; আবু হায়দার ২-০-১০-০, মেহেদি ৪-০-২৪-২, মালিক ৪-১-২০-০, শহিদ ৩-০-২২-২, আফ্রিদি ৪-১-২৯-১, সাইফ ৩-০-১৩-২)।

কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স: ১৯.৫ ওভারে ১৩০/৬ (তামিম ৩৫, লুইস ৫, ইমরুল ০, স্মিথ ১৬, মালিক ১৩, এনামুল ৫, আফ্রিদি ৩৯*, সাইফ ৫*; তাসকিন ৪-০-৩১-০, ইরফান ৪-০-১৯-১, আল আমিন ৪-০-২৭-২, আফিফ ১-০-৭-০, অলক ২.৫-০-২৪-০, লামিচানে ৪-০-১৬-২)।

ফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ৪ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: শহিদ আফ্রিদি

..............................

ট্যাগ: বিপিএল, বাংলাদেশ, ম্যাচ রিপোর্ট, আফ্রিদি