প্রতিটি ৫০-৫০ সিদ্ধান্ত আমাদের বিপক্ষে গেছে: ব্র্যাথওয়েট

ভুলের জন্য আম্পায়ারদের প্রতি প্রতারণার অভিযোগ আনছেন না কার্লোস ব্র্যাথওয়েট। তবে ওয়েস্ট ইন্ডিজের টি-টোয়েন্টি অধিনায়কের দাবি, ওয়ানডে সিরিজ থেকেই প্রতিটি ৫০-৫০ সিদ্ধান্ত গেছে বাংলাদেশের পক্ষে। তার মতে তাই মাঠে প্রতিবাদ করা ও দলের পাশে দাঁড়ানো ছিল জরুরি। 

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Dec 2018, 06:04 PM
Updated : 22 Dec 2018, 06:04 PM

সিরিজ নির্ধারণী তৃতীয় টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৫০ রানে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে আর সবকিছু ছাপিয়ে আলোচনায় আম্পায়ারের ভুল। বাংলাদেশের রান তাড়ায় চতুর্থ ওভারে ওশান টমাসের দুটি ডেলিভারিতে নো বল ডাকেন আম্পায়ার তানভীর আহমেদ। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, নো ছিল না একটিও। দুটির পরেরটিতে মিড অফে ক্যাচ দেন ব্যাটসম্যান লিটন দাস।

রিপ্লে দেখে মাঠের বাইরে থেকে ক্যারিবিয়ানদের যখন জানানো হয় বলটি নো ছিল না, তখনই প্রতিবাদ করেন তারা। অধিনায়ক ব্র্যাথওয়েট ছিলেন অগ্রণী। মাঠের আম্পায়ারদের সঙ্গে আলোচনা, মাঠের বাইরে রিজার্ভ আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারির সঙ্গে কথা বলা মিলিয়ে খেলা বন্ধ থাকে অন্তত ৮ মিনিট।

প্রথম ৪ ওভারে ৬২ রান তুললেও বাংলাদেশ পথ হারায় ওই বিরতির পরই। পরের ৩১ রানের মধ্যে হারিয়ে ফেলে ৭ উইকেট।

ম্যাচ শেষে ব্র্যাথওয়েটের সংবাদ সম্মেলনের প্রায় পুরোটায় থাকল নো বল বিতর্ক। ওই ঘটনা নিয়ে প্রথম প্রশ্নেই ক্যারিবিয়ান অধিনায়ক টানা কথা বললেন প্রায় ৬ মিনিট। তাতে ক্ষোভ, আক্ষেপ, বিশ্লেষণ, মিশে থাকল সবই।

“দ্বিতীয় ম্যাচের পরই আমি ম্যাচ রেফারির কাছে গিয়েছিলাম। ওয়ানডে সিরিজের সময় সৌভাগ্যবশত আমি এখানে ছিলাম। বলতেই হবে, ৫০-৫০ সিদ্ধান্তগুলো একটিও আমাদের পক্ষে আসছিল না। এ রকম প্রতিটি সিদ্ধান্ত ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে গেছে।”

“আমি কখনো কোনোমতেই কারও বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনতে চাই না। তারাও পেশাদার। আমি মনে করি না তারা পক্ষপাতিত্ব করতে বা প্রতারণা করতে মাঠে নামে। আমি তাদের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনিনি কিন্তু নিজের বক্তব্য আমি ম্যাচ রেফারির কাছে স্পষ্ট করেছি যে ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি সিরিজে প্রতিটি ৫০-৫০ সিদ্ধান্ত আমাদের বিপক্ষে গেছে। আমরা অবশ্যই ভালো ক্রিকেট খেলতে পারিনি, লাল বল হোক বা সাদা। তবে আমি দেখেছি যে যতবার আমি ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে খেলেছি, এই সিদ্ধান্তগুলো আমাদের বাধাগ্রস্ত করেছে।”

“চতুর্থ ওভারে ওই বলের আগেও একবার এই ঘটনা ঘটেছে। তো সেটি তুলে ধরা জরুরি ছিল। দলটা তরুণ। আমি ওদেরকে এই লড়াইয়ে ঠেলে দিতে পারি না। যদি কিছু ফিরে আসে, সেটি আমার ওপরই আসা উচিত। আমিই জাহাজের নাবিক। আমি স্রেফ ছেলেদেরকে বলেছি শান্ত থাকতে, দল হিসেবে একসঙ্গে থাকতে, ফোর্থ আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারিকে আমি দেখছি। অবশ্যই আমি একটু আগ্রাসী ও আবেগী ছিলাম। সেটি হতেই পারে। আমরা দেশের জন্য লড়ছিলাম। তবে চেষ্টা করেছি সবার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে। স্রেফ আইনটি জিজ্ঞেস করছিলাম।”

“আইন হলো, নো বল ডাকা হলে সেটিতে রিভিউ করা বা বদলানো যায় না। কিন্তু ডাকা না হলে ভিডিও দেখে বদলানো যায়। মাঠে সবাই দেখেছে সেটি নো বল ছিল না। ওশান টমাসের মতো তরুণ ও অনভিজ্ঞ একজন ছিল ভুক্তভোগী। শেষ পর্যন্ত সে একটি উইকেট পেল, কিন্তু সেটিতে উল্টো সেটিতে ফ্রি হিট হলো, বাড়তি বল করতে ও রান গুনতে হলো। তার মানসিক অবস্থাই এলোমেলো করে দিয়েছিল সিদ্ধান্তটি।”

“অধিনায়ক হিসেবে আমার দায়িত্ব ছিল দলের পাশে দাঁড়ানো। শুধু নিজের জন্য নয়, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেটের জন্যই আমাকে একটি শক্ত অবস্থান নিতেই হতো। ... আজকের ম্যাচ দেখিয়েছে যে আমরা যদি আবেগ দিয়ে মাঠে সঠিক কাজগুলো করতে পারি, অনেক কিছুই পক্ষে আসে। স্রেফ আমাদের যা প্রাপ্য, ম্যাচ অফিসিয়ালদের তা আমাদেরকে দিতে হবে।”

“আবারও, আমি বলছি না, ম্যাচ অফিসিয়ালরা প্রতারণা করেছে। কারণ আমি মনে করি তারা পেশাদার। কিন্তু যা দেখেছি, সেটি নিয়ে বলতে পারি আমি। প্রাপ্যটা আমরা না পেলে, অধিনায়ক হিসেবে তা আমি বলবই। ম্যাচ রেফারিকে জানাবই।”

“শক্ত কিছু করার পরে ব্যাপারটির সমাধান হয়েছে। আমরা এত পরিশ্রম করেছি যে মাঠ ছেড়ে চলে আসতে পারি না বা ম্যাচ ও সিরিজ ওদের হাতে তুলে দিয়ে আসতে পারি না। সিদ্ধান্ত ছিল মাঠে থাকা, লড়াই করে শেষ পর্যন্ত দেখা।”

“তবে সে সময় আমি ম্যাচ রেফারির কাছে ৫ মিনিট সময় চেয়েছিলাম যেন ছেলেদের শান্ত করতে পারি, বিতর্ক ভুলে মাঠে মনোযোগ ফেরাতে পারি। যা হয়েছে, তা ভুলে পরের ১৬ ওভার শেষ করতে পারি। ধন্যবাদ জানাতে হবে, সময়টা আমাদের দেওয়া হয়েছে। আমি সুযোগ পেয়েছি সতীর্থদের সঙ্গে কথা বলার। ব্যাপারটি ছিল আমরা বনাম বাকি সবাই। একসঙ্গে বৃত্তে দাঁড়িয়ে একমাত্র আমিই কথা বলেছি। তার পর সবাই সাড়া দিয়েছে, সবাই বলেছে এই ম্যাচ আমাদের জিততেই হবে। এরপর দেখেছেন, ম্যাচে কি হয়েছে।”

তার প্রতিবাদ বা আচরণের কারণে যদি শাস্তি পেতে হয়, সেটি নিয়েও দুর্ভাবনা নেই ব্র্যাথওয়েটের।

“শাস্তি তো আসবে-যাবে। কিন্তু কোনো কিছুর জন্য না দাঁড়ালে, সবকিছুই ভেঙে পড়বে। এটির কারণে শাস্তি হলে আমি হাসি মুখে মেনে নেব। সতীর্থদের পাশে দাঁড়ানো জরুরি ছিল এবং অধিনায়ক হিসেবে সেটি আমারই দায়িত্ব। আজ যেমন করেছি, ভবিষ্যতেও করব। আমি জানি না ম্যাচ রেফারি কি করবেন। তবে যেমনটি বলেছি, আমার সতীর্থ, দেশ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের মানুষের জন্য আজকেও যেমন দাঁড়িয়েছি, ভবিষ্যতেও দাঁড়াব।”