শেষ টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশকে ৫০ রানে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তিন ম্যাচের সিরিজ ক্যারিবিয়ানরা জিতে নিয়েছে ২-১ ব্যবধানে।
এভিন লুইসের বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে এক পর্যায়ে দুইশ ছাড়ানো স্কোরের আশায় ছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের বোলাররা দারুণ ভাবে ফিরে আশায় ক্যারিবিয়ানরা আটকে যায় ১৯০ রানে। কিন্তু রান তাড়ায় আগুনে শুরুর পরও পথ হারায় বাংলাদেশ, তিন ওভার বাকি থাকতেই গুটিয়ে যায় ১৪০ রানে।
দ্বিতীয় ওভারে তামিম ইকবালকে রান আউটে হারালেও বাংলাদেশের রান এক পর্যায়ে ছিল ৪ ওভারে ৬২। কিন্তু চতুর্থ ওভারেই সেই আম্পায়ারিং বিতর্ক। ওশান টমাসের দুটি বলে ‘নো’ ডাকেন বাংলাদেশের আম্পায়ার তানভীর আহমেদ। যার পরেরটিতে ক্যাচ দিয়েছিলেন লিটন দাস। দুবারই টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, পেসার টমাসের সামনে পায়ের অংশ ছিল দাগের পেছনে।
ক্যারিবিয়ানরা প্রতিবাদ জানায় তখনই। মাঠে নেমে আসতে হয় রিজার্ভ আম্পায়ার ও ম্যাচ রেফারিকে। তাদের হস্তক্ষেপে আবার খেলা শুরু হয় ৮ মিনিট পর।
৩ ছক্কা ও ১ চারসহ টমাসের ওই ওভার থেকে এসেছিল ৩০ রান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে যা এক ওভারে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ রান।
কিন্তু বিরতির পরের ওভার থেকেই পালা বদলের শুরু। বাঁহাতি স্পিনার ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে তুলে মারতে গিয়ে লং অনে ক্যাচ দেন সৌম্য সরকার। পরের বলে সম্মোহিতের মতো সৌম্যকে অনুসরণ করেন সাকিব। প্রায় একই বলে একই ধরনের শটে লং অনেই ক্যাচ দেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।
লোয়ার অর্ডারদের সৌজন্যে এরপর কমেছে ব্যবধান। তার পরও টি-টোয়েন্টিতে ৫০ রানে হার মানে অনেক বড় ব্যবধানেই হার।
দারুণ জয়ের ভিত ক্যারিবিয়ানরা গড়েছিল ম্যাচের শুরুর ভাগেই। খেলা শুরু হতেই শুরু হয় এভিন লুইসের টর্নেডো ব্যাটিং। বাঁহাতি ওপেনার এলোমেলো করে দেন বাংলাদেশের বোলিং আক্রমণ।
আব হায়দারের প্রথম ওভারে দুটি চারে শুরু। এই বাঁহাতি পেসারের পরের ওভারেই লুইস ছক্কা মারেন চারটি। চারটিই ছিল ফুল লেংথ বল, চারটিই উড়িয়ে মারেন লং অফ দিয়ে। প্রথমটি ১০৪ মিটার লম্বা!
পরে অবশ্য নিজেকে ছাড়িয়ে ১০৭ মিটার লম্বা ছক্কাও মারেন লুইস। আরেকপাশে টুকটাক স্ট্রাইক পেয়ে শেই হোপও খেলছিলেন শট। ৩.১ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পর্শ করে ফিফটি। বোলিংয়ের তুলোধুনো হয়ে আবু হায়দার ফিল্ডিংয়েও ছেড়ে বসেন লুইসের ক্যাচ, তখন তার রান ছিল ৪৮। ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন তিনি ১৮ বলেই।
লুইসের ছক্কা-ঝড় শেষ পর্যন্ত থামান বাংলাদেশের ‘গোল্ডেন আর্ম’ মাহমুদউল্লাহ। আরও একবার দলের প্রয়োজনে উইকেট এনে দেন এই অফ স্পিনার। নিজের প্রথম ওভারেই বোল্ড করে দেন লুইসকে। আধ ডজন চার ও ৮ ছক্কায় তার নামের পাশে রান তখন ৩৬ বলে ৮৯।
১০ ওভার শেষে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ছিল ১২৩। মাহমুদউল্লাহর দারুণ বোলিংয়ের পাশাপাশি শেষ দিকে রাশ টেনে ধরেন সাকিব ও মুস্তাফিজ। তিন বোলারই নেন তিনটি করে উইকেট। নিকোলাস পুরানের ২৪ বলে ২৯ ছাড়া পরের দিকে আর সেভাবে রান করতে পারেননি কেউ। দারুণ অবস্থানে থেকেও ক্যারিবিয়ান খেলতে পারেনি পুরো ২০ ওভার। ৩১ রানের মধ্যে শেষ ৬ উইকেট তুলে নেয় বাংলাদেশ।
বোলিংয়ের মোমেন্টাম সঙ্গে নিয়েই বাংলাদেশ নেমেছিল ব্যাটিংয়ে। দুইশর নিচে লক্ষ্য তাড়া শিশির ভেজা মাঠে ছিল খুবই সম্ভব। শুরুটায় ছিল সেই সম্ভাবনারই প্রতিফলন। আম্পায়ারিং ভুলের পর সেই মোমেন্টাম হাওয়া। ক্রমে মিলিয়ে গেল বাংলাদেশের স্বপ্নও।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১৯.২ ওভারে ১৯০ (লুইস ৮৯, হোপ ২৩, পল ২, পাওয়েল ১৯, হেটমায়ার ০, পুরান ২৯, ব্র্যাথওয়েট ৮, রাদারফোর্ড ২, অ্যালেন ৮, কটরেল ২*, টমাস ০; আবু হায়দার ২-০-৩৯-০, সাইফ ৪-০-৩৬-০, মিরাজ ২-০-২৬-০, সাকিব ৪-০-৩৭-৩, মুস্তাফিজ ৪-০-৩৩-৩, মাহমুদউল্লাহ ৩.২-০-১৮-৩)।
বাংলাদেশ: ১৭ ওভারে ১৪০ (তামিম ৮, লিটন ৪৩, সৌম্য ৯, সাকিব ০, মুশফিক ১, মাহমুদউল্লাহ ১১, মিরাজ ১৯, আরিফুল ০, সাইফ ৫, আবু হায়দার ২২*, মুস্তাফিজ ; কটরেল ৪-০-৩১-১, টমাস ৩-০-৫৮-০, অ্যালেন ৪-০-১৯-২, পল ৪-০-১৫-৫, ব্র্যাথওয়েট ২-০-১৫-১)।
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫০ রানে জয়ী
সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: এভিন লুইস
ম্যান অব দা সিরিজ: সাকিব আল হাসান