শেলডন কটরেলের দারুণ বোলিংয়ের পর শেই হোপের টর্নেডো ইনিংসে প্রথম টি-টোয়েন্টিতে ৮ উইকেটে জিতে তিন ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। বাংলাদেশের দেওয়া ১৩০ রানের লক্ষ্য ৫৫ বল বাকি থাকতে ছুঁয়ে ফেলে কার্লোস ব্র্যাথওয়েটের দল।
শঙ্কা কাটিয়ে খেললেন সাকিব। দারুণ ফিফটিতে দলকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিলেন অধিনায়ক। তবে দলকে টানলেন কেবল তিনিই। বাজে ব্যাটিংয়ে লড়াইয়ের পুঁজি পেল না বাংলাদেশ, খেলতে পারল না পুরো ২০ ওভার। সিলেট আন্তর্জাতিক ত্রিকেট স্টেডিয়ামে সোমবার টস জিতে ব্যাট করতে নেমে ১৯ ওভারে ১২৯ রানে গুটিয়ে যায় স্বাগতিকরা।
সাকিবের পঞ্চাশ ছোঁয়া ইনিংসের পাশে নেই তেমন কোনো স্কোর। নেই তেমন কোনো জুটি। আছে উইকেট ছুড়ে আসার অংসখ্য উদাহরণ।
সাকিবের ব্যাটে শুরু থেকেই আসছিল রান। তাই পাওয়ার প্লেতে পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলে বাংলাদেশ। ভীষণ ঝুঁকিপূর্ণ সিঙ্গেল নিতে গিয়ে রান আউট হয়ে ফিরে যান মুশফিকুর রহিম। ভাটা পড়ে রানের গতিতে।
সাকিব-মাহমুদউল্লাহর ব্যাটে ছিল প্রতিরোধের চেষ্টা। সেটাও খুব একটা সফল হয়নি। ১৯ বলে ১ চারে ১২ রান করে সহ-অধিনায়ক কট বিহাইন্ড হলে ভাঙে ২৫ রানের জুটি।
আরিফুল হক খানিকটা সঙ্গ দিতে পারেন সাকিবকে। ষষ্ঠ উইকেটে নিজেদের সেরা জুটি পায় বাংলাদেশ। সেটিও মাত্র ৩০ রানের। বাঁহাতি স্পিনার ফ্যাবিয়ান অ্যালেনকে স্লগ সুইপে উড়ানোর চেষ্টায় সীমানায় আরিফুল ধরা পড়লে ভাঙে জুটি।
দারুণ বোলিং করা কটরেল ভাঙেন সাকিবের প্রতিরোধ। শর্ট বলে তাকে ফিরতি ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় অধিনায়কের ৬১ রানের ইনিংস। সাকিবের ৪৩ বলের ইনিংস গড়া ৮ চার ও দুই ছক্কায়। তার বিদায়র পর বেশিদূর এগোয়নি বাংলাদেশের ইনিংস।
ছোট পুঁজি নিয়ে লড়াইও করতে পারেননি স্বাগতিক বোলাররা। এলোমেলো লাইন-লেংথের মাশুল দেন একের পর এক খরুচে ওভারে। মাত্র ৩.১ ওভারে পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ।
ঝড়ের শুরুর মেহেদী হাসান মিরাজের করা দ্বিতীয় ওভার দিয়ে। হোপ তিন ছক্কা হাঁকান তরুণ অফ স্পিনারকে। সেই ওভার থেকে আসে ২৩ রান।
দুই বাঁহাতি পেসার আবু হায়দার ও মুস্তাফিজুর রহমান নিজেদের একমাত্র ওভারে দেন ১৫ রান করে। সাইফ উদ্দিন ১৩ রান দিয়ে বিদায় করেন এভিন লুইসকে। ঠিক মতো টাইমিং না করতে পেরে লং অফে আরিফুলের হাতে ধরা পড়ে শেষ হয় এই ওপেনারের ১৮ রানের ইনিংস।
ষষ্ঠ ওভারে ফিরে আবার হোপের ঝড়ের মুখে পড়েন মিরাজ। এক চার আর দুই ছক্কায় তুলে নেন ১৮ রান। দ্বিতীয় ছক্কায় মাত্র ১৬ বলে হোপ তুলে নেন ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি। টি-টোয়েন্টিতে এটি ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্রুততম আর সব মিলিয়ে তৃতীয় দ্রুততম ফিফটি।
পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ তুলে ফেলে ১ উইকেটে ৯১ রান টি-টোয়েন্টিতে যা যৌথভাবে সর্বোচ্চ।
ক্রিস গেইলকে (১৭) পেছনে ফেলে ওয়েস্ট ইন্ডিজের হয়ে দ্রুততম ফিফটির রেকর্ড গড়া হোপকে থামান মাহমুদউল্লাহ। অফ স্পিনারের ফুল লেংথ বল উড়ানোর চেষ্টায় ডিপ এক্সট্রা কাভারে ধরা পড়েন হোপ। ২৩ বলে খেলা তার ৫৫ রানের ইনিংসটি গড়া ছয় ছক্কা আর তিন চারে।
হোপ ফিরলেও ঝড় থামেনি। প্রমোশন পেয়ে চারে নেমে ১৪ বলে তিন ছক্কা আর এক চারে অপরাজিত ২৮ রানের বিস্ফোরক এক ইনিংসে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়েন পল। ১৭ বলে তিন চারে ২৩ রানে অপরাজিত থাকেন নিকোলাস পুরান।
দারুণ বোলিংয়ে সুরটা বেঁধে দেওয়া কটরেল জেতেন ম্যাচ সেরার পুরস্কার।
টেস্ট ও ওয়ানডে সিরিজ জেতা বাংলাদেশ ব্যাটিং-বোলিং ব্যর্থতায় টি-টোয়েন্টি সিরিজ শুরু করল বিব্রতকর হার দিয়ে। আগামী বৃহস্পতিবার মিরপুরে হবে দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টি।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ১৯ ওভারে ১২৯ (তামিম ৫, লিটন ৬, সৌম্য ৬, সাকিব ৬১, মুশফিক ৫, মাহমুদউল্লাহ ১২, আরিফুল ১৭, সাইফ ১, মিরাজ ৮, আবু হায়দার ১*, মুস্তাফিজ ০; টমাস ১/৩৩, কটরেল ৪/২৮, পল ২/২৩, ব্র্যাথওয়েট ১/১৩, অ্যালেন ১/১৯, পাওয়েল ০/৭)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ১০.৫ ওভারে ১৩০/২ (লুইস ১৮, হোপ ৫৫, পুরান ২৩*, পল ২৯*; সাকিব ০/৩৩, মিরাজ ০/৩৭, আবু হায়দার ০/১৫, সাইফ ১/১৩, মুস্তাফিজ ০/১৫, মাহমুদউল্লাহ ১/১৩)
ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৮ উইকেটে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: শেলডন কটরেল