উইন্ডিজকে গুঁড়িয়ে বাংলাদেশের সিরিজ জয়

বোলাররা বেঁধে দিয়েছিলেন সুর। সেই তাল মিলিয়েই ব্যাটসম্যানরা গাইলেন জয়গান। দাপুটে বোলিং ও ব্যাটিংয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে উড়িয়ে বাংলাদেশ জিতে নিল সিরিজ।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 14 Dec 2018, 05:36 AM
Updated : 14 Dec 2018, 04:30 PM

দাপুটে জয়

লক্ষ্য খুব কঠিন ছিল না এমনিতেও। তামিম ও সৌম্যর ব্যাটিংয়ে সেটি হয়ে গেল আরও সহজ। বোলারদের গড়ে দেওয়া ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে এই দুজনের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে বাংলাদেশ জিতল ৮ উইকেটে। সিরিজ জিতে নিল ২-১ ব্যবধানে।

তামিম ও লিটন দলকে এনে দিয়েছিলেন মোটামুটি ভালো সূচনা। দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ও সৌম্যর ১৩১ রানের জুটিতে বাংলাদেশ এগিয়ে যায় জয়ের পথে। সৌম্য ৮০ রান করে ফিরলেও বাংলাদেশের জয় ধরা দিল ৬৯ বল বাকি রেখেই।

আগের ম্যাচে ফিফটি করে বাজে শটে আউট হওয়া তামিম এ দিন ফিরেছেন দলের জয় সঙ্গে নিয়ে। অপরাজিত ছিলেন ১০৪ বলে ৮১ রান করে। জয়ের সময় উইকেটে তার সঙ্গী ছিলেন মুশফিক, অপরাজিত ছিলেন ১৪ বলে ১৬ করে।

এক সময়ের প্রবল পরাক্রমশলী ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে বাংলাদেশের এটি চতুর্থ সিরিজ জয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ১৯৮/৯ (হেমরাজ ৯, হোপ ১০৮*, ব্রাভো ১০, স্যামুয়েলস ১৯, হেটমায়ার ০, পাওয়েল ১, চেইস ৮, অ্যালেন ৬, পল ১২, রোচ ৩, বিশু ; মুস্তাফিজ ০/৩৩, মিরাজ ৪/২৯, সাকিব ২/৪০, মাশরাফি ২/৩৪, সাইফ ১/৩৮, মাহমুদউল্লাহ ০/১৪)।

বাংলাদেশ: ৩৮.৩ ওভারে ২০২/২ (তামিম ৮১*, লিটন ২৩, সৌম্য ৮০, মুশফিক ১৬*; রোচ ০/১৬, চেইস ০/৩২, পল ২/৩৮, স্যামুয়েলস ০/২৫, বিশু ০/৪৮, অ্যালেন ০/২২, পাওয়েল ০/২১)

থামল সৌম্যর ঝড়

ফিফটির পর যেন ঝড় তুলেছিলেন সৌম্য। জাগিয়েছিলেন এমনকি সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও। শেষ পর্যন্ত অবশ্য বোল্ড হয়ে গেলেন ৮০ রানে।

কিমো পলের ফুল লেংথ বল ক্রস ব্যাটে খেলতে গিয়ে লাইন মিস করেন সৌম্য। বাতাসে ডিগবাজি খায় লেগ স্টাম্প। ৫টি করে চার ও ছক্কায় ৮১ বলে ৮০ করে ফিরলেন সৌম্য। ৩৫.২ ওভারে বাংলাদেশের রান ২ উইকেটে ১৭৬।

জুটির শতরান

দাপুটে ব্যাটিংয়ে তামিম ও সৌম্যর জুটি পেরিয়ে গেল শতরান। দ্বিতীয় উইকেটের দুজনের জুটির সেঞ্চুরি হয়েছে ১২৬ বলে। এ নিয়ে মাত্র ২৭ ইনিংসেই চারটি সেঞ্চুরি জুটি গড়লেন এই দুজন।

সৌম্যর পঞ্চাশ

টপ অর্ডারে জায়গা ফিরে পেয়ে যেন নিজেকেও ফিরে পেলেন সৌম্য। দারুণ খেলে ফিফটি স্পর্শ করলেন ৬২ বলে। ৩ চারের পাশে ইনিংসে আছে ২টি ছক্কা। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের এটি সপ্তম ফিফটি।

রোচের ম্যাচ শেষ

হ্যামস্ট্রিংয়ে টান লাগায় ইনিংসের পঞ্চম ওভার শেষে মাঠ ছেড়েছিলেন কেমার রোচ। আর ফিরতে পারেননি মাঠে। ফিরতে পারবেন না পরেও। ছিটকে গেছেন ম্যাচ থেকে।

তামিমের ফিফটি

বিশুর বলে সুইপ খেলে বাউন্ডারি, তামিম পৌঁছে গেলেন ফিফটিতে। বাংলাদেশের সফলতম ব্যাটসম্যান টানা দ্বিতীয় ফিফটি স্পর্শ করলেন ৬২ বলে।

জুটির ফিফটি, দলের সেঞ্চুরি

দ্বিতীয় উইকেটে তামিম ও সৌম্যর জুটিতে ফিফটি এসেছে ৫৪ বলে। খানিক পর স্যামুয়েলসের বলে সৌম্যর ৮৯ মিটার লম্বা ছক্কায় দল পেরিয়েছে একশ। ২০.৫ ওভারে এসেছে দলের শতরান।

সৌম্যর শঙ্কা ও স্বস্তি

লিটনকে হারানোর ধাক্কা সামলে দারুণ ভাবে এগিয়ে যাচ্ছে দল। তামিম খেলছেন নির্ভরতায়। সৌম্যর শুরুটা হয়েছে দুর্দান্ত।

মুহূর্তের জন্য অবশ্য শঙ্কায় পড়েছিলেন সৌম্য। মারলন স্যামুয়েলসের শর্ট বলে পুল করেছিলেন। মিড উইকেটে বদলি ফিল্ডার কার্লোস ব্র্যাথওয়েট ছিলেন ক্যাচের আশায়। তবে লাফিয়েও বল হাতে জমাতে পারেননি দীর্ঘদেহী ব্র্যাথওয়েট। বল তার হাত ছুঁয়ে হয় ছক্কা।

বাজে শটে লিটনের বিদায়

শুরুটা দারুণ করেও লিটন দাস আরও একবার ফিরলেন প্রতিপক্ষকে উইকেট উপহার দিয়ে। আউট হলেন ৩৩ বলে ২৩ করে।

৫টি চার মেরেছেন ইনিংসে, সবকটিই ছিল দৃষ্টিনন্দন। খেলছিলেন কোনো অস্বস্তি ছাড়াই। কিন্তু কিমো পলের অফ স্টাম্পের বাইরের বল পুল করতে গিয়ে টাইমিংয়ে গড়বড়। সহজ ক্যাচ দিলেন মিড অনে।

১০.১ ওভারে বাংলাদেশের রান ১ উইকেটে ৪৫। তামিম খেলছেন ২২ রানে।

মাঠ ছাড়লেন রোচ

এমনিতেই পুঁজি বড় নয়। তার ওপর ওয়েস্ট ইন্ডিজের জন্য বড় ধাক্কা হয়ে এলো কেমার রোচের চোট।

ইনিংসের পঞ্চম আর নিজের তৃতীয় ওভারে পঞ্চম বলটি করার পর ডানপায়ে হ্যামস্ট্রিংয়ে হাত চেপে দাঁড়িয়েছিলেন রোচ। ওভারের শেষ বলটি করার সময় টান লাগে আবার। ওভার শেষে বাইরে চলে যান ক্যারিবিয়ানদের মূল স্ট্রাইক বোলার।

সতর্ক শুরু

প্রথম ওভারেই দৃষ্টিনন্দন দুটি বাউন্ডারিতে শুরু করেছিলেন লিটন দাস। তবে মন্থর উইকেটে রানের উড়ন্ত গতি ধরে রাখা যায়নি। বড় রান তাড়ার চাপ নেই। বাংলাদেশও তাই শুরু করেছে সাবধানী ব্যাটিংয়ে। ৫ ওভারে রান বিনা উইকেটে ২১।

হোপের সেঞ্চুরিতেও দুইশর নিচে উইন্ডিজ

এক প্রান্তে উজ্জ্বল শেই হোপ, আরেক প্রান্তে বিবর্ণ সতীর্থরা। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের গল্পটি আগের ম্যাচের মতোই। অসাধারণ সেঞ্চুরিতে বলতে গেলে একাই দলকে টানলেন হোপ। ব্যাট করলেন ইনিংসের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত। এর পরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ছুঁতে পারল না দুইশ। ৫০ ওভারে তুলতে পেরেছে তারা ৯ উইকেটে ১৯৮ রান।

আগের ম্যাচে ৫০ ওভার কিপিং করার পর প্রায় ৫০ ওভার ব্যাটিং করে হোপ অপরাজিত ছিলেন ১৪৬ রানে। এ দিনও দলের অর্ধেকের বেশি রান একাই করেছেন হোপ। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত খেলে অপরাজিত ১৩১ বলে ১০৮ রান করে। দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান ছিল স্যামুয়েলসের ১৯!

উইকেট যথেষ্ট মন্থর। বাউন্সও অসমান। অনেক বলই নিচু হয়েছে বিপজ্জনকভাবে। এরপরও এই রান তাড়া খুব কঠিন হওয়ার কথা নয় বাংলাদেশের জন্য।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ১৯৮/৯ (হেমরাজ ৯, হোপ ১০৮*, ব্রাভো ১০, স্যামুয়েলস ১৯, হেটমায়ার ০, পাওয়েল ১, চেইস ৮, অ্যালেন ৬, পল ১২, রোচ ৩, বিশু ৬*; মুস্তাফিজ ০/৩৩, মিরাজ ৪/২৯, সাকিব ২/৪০, মাশরাফি ২/৩৪, সাইফ ১/৩৮, মাহমুদউল্লাহ ০/১৪)। 

ছক্কায় সেঞ্চুরিতে হোপ

একের পর এক সতীর্থকে হারিয়ে সেঞ্চুরি ছোঁয়া নিয়েও ছিল শঙ্কা। সেই শঙ্কা শেই হোপ দূর করলেন ছক্কায়। ৯৪ থেকে সাকিবকে মাথার ওপর দিয়ে উড়িয়ে স্পর্শ করলেন টানা দ্বিতীয় সেঞ্চুরি।

আগের ম্যাচে শুরু থেকে শেষ ওভার পর্যন্ত খেলে অপরাজিত ছিলেন ১৪৬ রানে। এ দিনও শুরু থেকেই খেলেছেন দারুণ। ব্যাটিংয়ে ছিল না একটুও অস্বস্তি। ১২১ বলে সেঞ্চুরি করেন ইনিংসের ৪৮তম ওভারে। ওয়ানডেতে তার চতুর্থ সেঞ্চুরি।

মাশরাফির দ্বিতীয় শিকার রোচ

নিজের পরপর দুই ওভারে মাশরাফি নিলেন দুই উইকেট। কিমো পলের পর এবার বাংলাদেশ অধিনায়কের শিকার কেমার রোচ।

এই উইকেটও অফ কাটারে। ভেতরে ঢোকা বলে ফ্লিকের মতো খেলতে চেয়েছিলেন রোচ। টাইমিং হয়নি, বল লাগে প্যাডে। আম্পায়ার আউট দেওয়ার পর রিভিউ নিয়েও টিকতে পারেননি রোচ।

৮ বলে ৩ রানে আউট হলেন রোচ। ৪৬ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৯ উইকেটে ১৭৭। হোপ খেলছেন ৯৩ রানে।

মাশরাফির প্রথম

শেই হোপকে ফেরাতে না পারলেও আরেকপাশে নিয়মিত বিরতিতেই উইকেট নিচ্ছে বাংলাদেশ। সেই পালায় এবার অধিনায়ক মাশরাফির শিকার কিমো পল।

আগের ম্যাচে এই জুটির কাছেই হেরে গিয়েছিল বাংলাদেশ। এবারও জুটির শুরুটা খারাপ ছিল না। কিন্তু পল আউট হলেন মাশরাফিকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে। অফ কাটারে উপড়ে যায় তার স্টাম্প। বাংলাদেশ অধিনায়ক পেলেন ম্যাচে প্রথম উইকেট।

২২ বলে ১২ রানে আউট হলেন পল। ভাঙল ২৮ রানের জুটি। ৪৩.৫ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৮ উইকেটে ১৪৩।

ছক্কার পর অক্কা অ্যালেন

প্রথম রানের দেখা পেতে ১৫ বল লেগেছিল ফ্যাবিয়ান অ্যালেনের। ১৪ বলে রান না পাওয়ার পর সাকিবকে ওড়ান ছক্কায়। কিন্তু আউট হয়ে গেলেন এক বল পরই।

স্টাম্পের বাইরে ঝুলিয়ে দেওয়া বলে ছক্কা মেরেছিলেন লং অনের ওপর দিয়ে। এক বল পর আবারও ঝুলিয়ে দেওয়া বল, এবার স্টাম্পে। অ্যালেন খেললেন স্লগ সুইপ। মিড উইকেটে সামনের দিকে ছুটে সামনে ডাইভ দিয়ে দারুণ ক্যাচ নিলেন মিঠুন।

১৭ বলে ৬ করে ফিরলেন অ্যালেন। ৩৮ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৭ উইকেটে ১৪৩।

সাকিবের শিকার চেইস

শেই হোপের সঙ্গে রোস্টন চেইসের সম্ভাবনাময় জুটি থামালেন সাকিব। চেইসকে ফিরিয়ে নিলেন ম্যাচে নিজের প্রথম উইকেট।

নতুন স্পেলে বোলিংয়ে আসা সাকিবকে বেরিয়ে এসে উড়িয়ে মেরেছিলেন চেইস। কিন্তু বলের কাছে যেতে পারেননি, তাই টাইমিং হয়নি খুব ভালো। লং অফ সীমানায় ক্যাচ নেন সৌম্য সরকার।

ষষ্ঠ উইকেটে ৩৪ রানের জুটি থামল চেইসের বিদায়ে। আউট হলেন তিনি ২০ বলে ৮ রান করে। ৩৩.৩ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৬ উইকেটে ১৩৩। আরেক পাশে হোপ খেলছেন ৭২ রানে।

পেনাল্টি ৫

সাইফ উদ্দিনের অফ কাটারে পরাস্ত হয়েছিলেন রোস্টন চেইস। একটু নিচু হওয়া বলটি ডাইভ দিয়েও ঠেকাতে পারেননি উইকেটকিপার মুশফিকুর রহিম। বল লাগে তার ঠিক পেছনে মাটিতে পড়ে থাকা হেলমেটে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ পায় পেনাল্টি ৫ রান।

মিরাজের সেরা

২২তম ওয়ানডেতে এসে ক্যারিয়ারে প্রথমবার ৪ উইকেটের স্বাদ পেলেন মিরাজ। ১০ ওভারে ২৯ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ওয়ানডেতে তার আগের সেরা বোলিং ছিল ৪৬ রানে ৩ উইকেট। 

মিরাজের চতুর্থ শিকার পাওয়েল

নিজের শেষ স্পেলে টানা দুই ওভারে উইকেট পেলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ অধিনায়ক রভম্যান পাওয়েলকে দ্রুত ফিরিয়ে দিলেন এই অফ স্পিনার।

অফ স্টাম্পের বাইরের বল পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন পাওয়েল। স্পিন করে ব্যাটের কানা ছুঁয়ে বল জমা পড়ে মুশফিকুর রহিমের গ্লাভসে।

এই স্পেলে মিরাজের বোলিং ফিগার ২-১-১-২। সব মিলিয়ে ১০ ওভারে ২৯ রান দিয়ে পেলেন চার উইকেট।

৯ বলে ১ রান করে ফিরলেন পাওয়েল। ২৬ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্কোর ৯৯/৫।

মিরাজের বলে ষষ্ঠবার হেটমায়ার

যতবার শিমরন হেটমায়ারকে বল করেছেন ততবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁহাতি এই মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানকে আউট করেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ।

দ্বিতীয় ওয়ানডেতে হেটমায়ার ক্রিজে আসার পর পেস বোলারদেরই আক্রমণে রেখেছিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। সেবার হেটমায়ারের উইকেট নিয়েছিলেন রুবেল হোসেন।

এবার হেটমায়ার ব্যাটিংয়ে আসার পর মিরাজকে বোলিংয়ে ফেরান মাশরাফি। অফ স্পিনার দেন আস্থার প্রতিদান। এলবিডব্লিউ করে শূন্য রানে ফেরান ওয়েস্ট ইন্ডিজের বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে। সফরে ষষ্ঠবারের মতো হেটমায়ার আউট হলেন মিরাজের বলে।

স্কিড করে ভেতরে ঢোকা বল জায়গায় দাঁড়িয়ে খেলতে চেয়েছিলেন হেটমায়ার। ব্যাট ছোঁয়াতে পারেননি, বল আঘাত হানে প্যাডে।

২৩.৫ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ৯৭/৪।

সাইফের বলে বোল্ড স্যামুয়েলস

জমে উঠতে থাকা আরেকটি জুটি ভাঙল বাংলাদেশ। সাইফ উদ্দিনের বলে বোল্ড হলেন মারলন স্যামুয়েলস।

শুরু থেকেই ধুঁকছিলেন স্যামুয়েলস। লড়ছিলেন টাইমিং পেতে। যখন মনে হচ্ছিল, একটু ছন্দ খুঁজে পাচ্ছেন, তখনই বোল্ড হলেন বাজে খেলে। সাইফের অফ কাটারে একটুও পা নাড়াননি স্যামুয়েলস। জায়গায় দাঁড়িয়েই করতে চেয়েছিলেন ড্রাইভ মতো। বল তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে উপড়ে দেয় স্টাম্প।

৩২ বলে ১৯ রানে ফিরলেন স্যামুয়েলস। ভাঙল ৩৮ রানের তৃতীয় উইকেট জুটি। ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ২২.২ ওভারে ৩ উইকেটে ৯৬।

হোপের ফিফটি

আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়ের নায়ক শেই হোপ আবারও টেনে নিচ্ছেন দলকে। এক পাশে যখন সতীর্থরা এগোচ্ছে খুঁড়িয়ে, আরেক পাশে হোপ খেলে চলেছেন দুর্দান্ত। ফিফটি স্পর্শ করেছেন ৫৪ বলে।

রিভিউ হারাল বাংলাদেশ

মাশরাফির অফ কাটার একটু বেরিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন শেই হোপ। কিন্তু মিস করেন লাইন। বল লাগে পায়ে। বেশি কিছুক্ষণ সময় নিয়ে উইকেটের পেছনের ফিল্ডারদের পরামর্শে রিভিউ নেন মাশরাফি। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, বল বেরিয়ে যাচ্ছিল লেগ স্টাম্পের একটু বাইরে দিয়ে। বাংলাদেশ তাই হারাল একমাত্র রিভিউটি।

আম্পায়ার্স কলে স্যামুয়েলসের রক্ষা

মিরাজের বল ঠিকমতো খেলতে পারেননি মারলন স্যামুয়েলস। বল লেগেছিল তার পেছনের পায়ে। আম্পায়ার আউট না দিলে রিভিউ নেয় বাংলাদেশ। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায়, বল আঘাত করছিল বেলসে। স্যামুয়েলস বেঁচে যান আম্পায়ার্স কলে। টিকে থাকে বাংলাদেশের রিভিউ।

মিরাজের দ্বিতীয় শিকার

প্রথম উইকেটের মতো বাংলাদেশের দ্বিতীয় উইকেটও এলো মিরাজের হাত ধরে। ড্যারেন ব্রাভোকে বোল্ড করে ভাঙলেন জমে উঠতে থাকা জুটি।

বলটি অবশ্য দারুণ কিছু ছিল না। লেগ-মিডল স্টাম্পে ঝুলিয়ে দিয়েছিলেন মিরাজ। ব্রাভো চেয়েছিলেন উড়িয়ে মারতে। কিন্তু বেশি জোরে শট খেলতে গিয়েই হয়তো করতে পারেননি টাইমিং। বল উড়িয়ে দেয় বেলস।

২৬ বলে ১০ রান করে ফিরলেন ব্রাভো। ১৩.৪ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ২ উইকেটে ৫৭। দ্বিতীয় উইকেট জুটি ছিল ৪২ রানের।

উইন্ডিজের ফিফটি

শুরুতে উইকেট হারানোর ধাক্কা অনেকটা সামলে নিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ড্যারেন ব্রাভোকে নিয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন শেই হোপ। দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরি করা হোপ আবারও খেলছেন দারুণ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলীয় অর্ধশতক ছুঁয়েছে ১২.২ ওভারে।

মিরাজ এনে দিলেন প্রথম উইকেট
আগের ম্যাচের মতোই দলকে প্রথম উইকেট এনে দিলেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এবারও তার প্রথম শিকার চন্দ্রপল হেমরাজ।
আগের বলটিতেই স্টাম্পের বাইরের ডেলিভারিতে কাট করে পয়েন্ট দিয়ে চার মেরেছিলেন বাঁহাতি হেমরাজ। পরের বলটি একটু টেনে দিয়েছিলেন মিরাজ। লেংথ পড়তে একটু গড়বড় করে ফেলেন হেমরাজ। এবার ক্যাচ যায় সোজা পয়েন্টে মোহাম্মদ মিঠুনের হাতে।
১৭ বলে ৯ রান করে আউট হলেন হেমরাজ। ৩.৫ ওভারে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান ১ উইকেটে ১৫।

উইন্ডিজ দলে টমাসের জায়গায় অ্যালেন

গতির ঝড় তোলা ওশান টমাস নেই ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলে। খেলছেন স্পিনিং অলরাউন্ডার ফ্যাবিয়ান অ্যালেন 

ওয়েস্ট ইন্ডিজ একাদশ: রভম্যান পাওয়েল, মারলন স্যামুয়েলস, রোস্টন চেইস, দেবেন্দ্র বিশু, চন্দ্রপল হেমরাজ, শিমরন হেটমায়ার, ড্যারেন ব্রাভো, শেই হোপ, কিমো পল, কেমার রোচ, ফ্যাবিয়ান অ্যালেন।

বাংলাদেশ দলে দুই পরিবর্তন
 
তিন নম্বরে নেমে দুই ইনিংসেই ব্যর্থ ইমরুল কায়েস জায়গা হারিয়েছেন একাদশে। সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচে দলের বিশেষজ্ঞ বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে খরুচে বোলিং করা পেসার রুবেল হোসেনও নেই একাদশ। 
 
দলে ফিরেছেন মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ মিঠুন। তিনে ফিরে যাচ্ছেন বাঁহাতি ব্যাটসম্যান সৌম্য সরকার। রুবেলের জায়গায় দলে ফিরেছেন পেস বোলিং অলরাউন্ডার মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।
 
বাংলাদেশ একাদশ: মাশরাফি বিন মুর্তজা, তামিম ইকবাল, সৌম্য সরকার, লিটন কুমার দাস, সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিম, মাহমুদউল্লাহ, মুস্তাফিজুর রহমান, মেহেদী হাসান মিরাজ, মোহাম্মদ মিঠুন, সাইফ উদ্দিন।

টস জিতে ফিল্ডিংয়ে বাংলাদেশ

সিরিজে প্রথমবারের মতো টস জিতলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশ অধিনায়ক নিলেন ফিল্ডিং।
 
টানা তৃতীয় না অপেক্ষার অবসান?
 
টানা তৃতীয় সিরিজ জয়ের হাতছানি বাংলাদেশের সামনে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের সামনে সুযোগ ওয়ানডেতে চার বছরের জয় খরা অবসানের। সিরিজ নির্ধারণী ম্যাচে রোমাঞ্চকর ক্রিকেটের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে দুই দল।  
 
সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামের অভিষেক ওয়ানডে শুরু হবে শুক্রবার বেলা ১২টায়।
 
সিলেটে নিজেদের প্রথম জয় পেতে সতীর্থদের ইতিবাচক থাকতে বলেছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিং তিন বিভাগেই উন্নতিতে চোখ রেখে মাঠে নামতে চান বাংলাদেশ অধিনায়ক।
 
২০১৪ সালের পর থেকে কোনো ওয়ানডে সিরিজ জেতেনি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। অপেক্ষার অবসানের সুযোগে রোমাঞ্চিত রভম্যান পাওয়েল। সফরকারী অধিনায়কও ব্যাটিং-বোলিং-ফিল্ডিংয়ে উন্নতির দিকে তাকিয়ে আছেন।