মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছে ৫০৮ রান। দেড়শর বেশি ওভার ফিল্ডিং করার পর ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের অর্ধেক হারিয়ে ফেলে ১২ ওভারের আগেই। খানিকটা প্রতিরোধে শেষ পর্যন্ত শনিবার দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে তারা ৫ উইকেটে ৭৫ রানে।
আগের দিন দুইশর নিচে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ এ দিন পাঁচশ ছাড়ায় মাহমুদউল্লাহর ব্যাটের নির্ভরতায়। সাত নম্বরে নেমে ৬ ঘণ্টা ১৬ মিনিট উইকেটে থেকে তিনি খেলেছেন ১৩৬ রানের ইনিংস।
শেষ সেশনে যখন ব্যাটিং পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, উইকেট খুব প্রতিকূল নয় তখনও। কিন্তু সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের স্পিনে যেন চোখে সর্ষে ফুল দেখল ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা। ২৯ রানেই নেই ৫ উইকেট। ৫ জনই বোল্ড। সবাই সোজা বলে আউট টার্নের জন্য খেলে কিংবা লাইন মিস করে।
বোলিংয়ে ইতিহাসের আগে ব্যাটিংয়েও নতুন উচ্চতায় উঠেছে বাংলাদেশ। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার ১১ ব্যাটসম্যানই ছুঁয়েছে দুই অঙ্ক।
দিনের শুরুটা ছিল বেশ খ্যাপাটে। আগের দিন শেষ সেশনে নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রেখে যিনি বাউন্ডারি মারেননি একটিও, সেই সাকিবের বাঁধ ভেঙে যায় এ দিন সকালে। দ্বিতীয় নতুন বলে দিনের শুরু করেছিলেন কেমার রোচ। প্রথম ওভারে বাউন্ডারিতে নিজের মনোভাবও জানিয়ে দেন সাকিব।
টেস্ট ক্যারিয়ারে এই নিয়ে ১১ বার ৮০ ছুঁয়েও সেঞ্চুরির আগে থমকে গেলেন সাকিব। তার বিদায়ে ভাঙে ১১১ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি।
সাকিব যখন ছটফট করছিলেন, আরেকপাশে মাহমুদউল্লাহও ছিলেন নড়বড়ে। তার ব্যাটেও ছিল শট খেলার তাড়া। কিন্তু সাকিবের বিদায়ের পর করণীয় বুঝে সামলে নেন নিজেকে। আরেক পাশে লিটন দাসের দুর্দান্ত সব শটের মহড়া মাহমুদউল্লাহকে সুযোগ করে দেয় ইনিংস ধরে রাখার।
লিটনের নান্দনিক ইনিংসটি শেষ হয় বাজে শটে। লাঞ্চের পরপরই ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড ৫৪ রানে।
বাংলাদেশের রান তখন ৭ উইকেটে ৩৯৩। মাহমুদউল্লাহর ব্যাটের ছায়ায় শেষ তিন জুটিতে দল যোগ করে আরও ১১৫ রান। নবম উইকেটে তাইজুল ইসলামের সঙ্গে জুটি ৫৬ রানের, শেষ জুটিতে নাঈম হাসানের সঙ্গে ৩৬।
৩২৭ মিনিট আর ২০৩ বলে মাহমুদউল্লাহ স্পর্শ করেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি। প্রথম ৪০ টেস্টে সেঞ্চুরি ছিল একটি। তিন টেস্টের মধ্যে করে ফেললেন দুটি।
সেঞ্চুরির পর দ্রুত দলের রান বাড়ান মাহমুদউল্লাহ। তার বিদায়েই শেষ হয়েছে ইনিংস।
দিনের বাকি তখন ২৪ ওভার। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলআউট হওয়ার জন্য তা যথেষ্ট!
সেই স্রোতে বাধ দিয়েছে শিমরন হেটমায়ার ও শেন ডাওরিচের জুটি। আর কোনো উইকেট হারায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে পাড়ি দিতে হবে তাদের আরও বহুদূর!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৫৪ ওভারে ৫০৮(আগের দিন ২৫৯/৫)(সাকিব ৮০, মাহমুদউল্লাহ ১৩৬, লিটন ৫৪, মিরাজ ১৮, তাইজুল ২৬, নাঈম ১২*; রোচ ২৫-৪-৬১-১, লুইস ২০-২-৬৯-১, চেইস ২৮-০-১১১-১, ওয়ারিক্যান ৩৮-৫-৯১-২, বিশু ২৮-১-১০৯-২, ব্র্যাথওয়েট ১৫-০-৫৭-২)।
ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৪ ওভারে ৭৫/৫ (ব্র্যাথওয়েট ০, পাওয়েল ৪, হোপ ১০, আমব্রিস ৭, চেইস ০, হেটমায়ার ৩২*, ডাওরিচ ১৭*; সাকিব ৯-৩-১৫-২, মিরাজ ১০-১-৩৬-৩, নাঈম ৩-০-৯-০, তাইজুল ১-০-১০-০, মাহমুদউল্লাহ ১-১-০-০)।