বাংলাদেশের পাঁচশর পর কোণঠাসা ওয়েস্ট ইন্ডিজ

মাহমুদউল্লাহর সেঞ্চুরিটি ছিল যেন ‘স্লো পয়জন’। একটু একটু করে নির্জীব করে দিল ক্যারিবিয়ান বোলিং। এরপর বাংলাদেশের স্পিন বিষের প্রতিক্রিয়া হলো তাৎক্ষনিক। একের পর এক ছোবলে ঝরে পড়ল ক্যারিবিয়ান টপ অর্ডার। ব্যাটে-বলে ভয়ংকর বাংলাদেশের সামনে দুই দিনেই কোণঠাসা ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 Dec 2018, 12:15 PM
Updated : 1 Dec 2018, 03:48 PM

মাহমুদউল্লাহর ক্যারিয়ার সেরা ইনিংসে মিরপুর টেস্টের প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করেছে ৫০৮ রান। দেড়শর বেশি ওভার ফিল্ডিং করার পর ব্যাটিংয়ে নেমে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের অর্ধেক হারিয়ে ফেলে ১২ ওভারের আগেই। খানিকটা প্রতিরোধে শেষ পর্যন্ত শনিবার দ্বিতীয় দিন শেষ করেছে তারা ৫ উইকেটে ৭৫ রানে।

আগের দিন দুইশর নিচে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলা বাংলাদেশ এ দিন পাঁচশ ছাড়ায় মাহমুদউল্লাহর ব্যাটের নির্ভরতায়। সাত নম্বরে নেমে ৬ ঘণ্টা ১৬ মিনিট উইকেটে থেকে তিনি খেলেছেন ১৩৬ রানের ইনিংস।

শেষ সেশনে যখন ব্যাটিং পেল ওয়েস্ট ইন্ডিজ, উইকেট খুব প্রতিকূল নয় তখনও। কিন্তু সাকিব আল হাসান ও মেহেদী হাসান মিরাজের স্পিনে যেন চোখে সর্ষে ফুল দেখল ক্যারিবিয়ান ব্যাটসম্যানরা। ২৯ রানেই নেই ৫ উইকেট। ৫ জনই বোল্ড। সবাই সোজা বলে আউট টার্নের জন্য খেলে কিংবা লাইন মিস করে।

এত কম রানে প্রতিপক্ষের পাঁচ উইকেট আগে নেয়নি বাংলাদেশ। প্রথম ৫ ব্যাটসম্যানই স্পিনে বোল্ড টেস্ট ইতিহাসেই প্রথম!

বোলিংয়ে ইতিহাসের আগে ব্যাটিংয়েও নতুন উচ্চতায় উঠেছে বাংলাদেশ। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবার ১১ ব্যাটসম্যানই ছুঁয়েছে দুই অঙ্ক।

দিনের শুরুটা ছিল বেশ খ্যাপাটে। আগের দিন শেষ সেশনে নিজেকে নিয়ন্ত্রিত রেখে যিনি বাউন্ডারি মারেননি একটিও, সেই সাকিবের বাঁধ ভেঙে যায় এ দিন সকালে। দ্বিতীয় নতুন বলে দিনের শুরু করেছিলেন কেমার রোচ। প্রথম ওভারে বাউন্ডারিতে নিজের মনোভাবও জানিয়ে দেন সাকিব।

সেই বাউন্ডারি ছিল একশ বল পর সাকিবের প্রথম বাউন্ডারি। সেটি কেবলই শুরু। ১৭ বলের মধ্যে মারেন ৫টি বাউন্ডারি। শুরু থেকে হেঁটেছেন ঝুঁকির পথে। সেটিই হয়েছে কাল। রোচের বেশ বাইরের বল তাড়া করে গালিতে ক্যাচ দিয়েছেন ৮০ রানে।

টেস্ট ক্যারিয়ারে এই নিয়ে ১১ বার ৮০ ছুঁয়েও সেঞ্চুরির আগে থমকে গেলেন সাকিব। তার বিদায়ে ভাঙে ১১১ রানের ষষ্ঠ উইকেট জুটি।

সাকিব যখন ছটফট করছিলেন, আরেকপাশে মাহমুদউল্লাহও ছিলেন নড়বড়ে। তার ব্যাটেও ছিল শট খেলার তাড়া। কিন্তু সাকিবের বিদায়ের পর করণীয় বুঝে সামলে নেন নিজেকে। আরেক পাশে লিটন দাসের দুর্দান্ত সব শটের মহড়া মাহমুদউল্লাহকে সুযোগ করে দেয় ইনিংস ধরে রাখার।

দৃষ্টিনন্দন সব শটে স্পিনারদের নাকাল করে ছাড়েন লিটন। ৮ চার ও ১ ছক্কায় ৫০ করে ফেলেন ৫০ বলেই। প্রথম সেশনে ২৫ ওভারে বাংলাদেশ তুলে ফেলে ১২৮ রান।

লিটনের নান্দনিক ইনিংসটি শেষ হয় বাজে শটে। লাঞ্চের পরপরই ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে বোল্ড ৫৪ রানে।

বাংলাদেশের রান তখন ৭ উইকেটে ৩৯৩। মাহমুদউল্লাহর ব্যাটের ছায়ায় শেষ তিন জুটিতে দল যোগ করে আরও ১১৫ রান। নবম উইকেটে তাইজুল ইসলামের সঙ্গে জুটি ৫৬ রানের, শেষ জুটিতে নাঈম হাসানের সঙ্গে ৩৬।

৩২৭ মিনিট আর ২০৩ বলে মাহমুদউল্লাহ স্পর্শ করেন ক্যারিয়ারের তৃতীয় সেঞ্চুরি। প্রথম ৪০ টেস্টে সেঞ্চুরি ছিল একটি। তিন টেস্টের মধ্যে করে ফেললেন দুটি।

সেঞ্চুরির পর দ্রুত দলের রান বাড়ান মাহমুদউল্লাহ। তার বিদায়েই শেষ হয়েছে ইনিংস।

দিনের বাকি তখন ২৪ ওভার। এক পর্যায়ে মনে হচ্ছিল, ওয়েস্ট ইন্ডিজের অলআউট হওয়ার জন্য তা যথেষ্ট!

সাকিবের দারুণ ডেলিভারি আর ব্র্যাথওয়েটের বাজে শট মিলিয়ে প্রথম উইকেট প্রথম ওভারেই। এরপর শুধু টার্ন না করা ডেলিভারিতেই একের পর এক ব্যাটসম্যানের খাবি খাওয়া। টার্নের জন্য খেলে বোল্ড কাইরান পাওয়েল। বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে সোজা বলে বোল্ড সুনিল আমব্রিস। নিচু হওয়া সোজা বলে পেছনে খেলে বোল্ড শেই হোপ। বাজেভাবে লাইন মিস করে বোল্ড রোস্টন চেইস।

সেই স্রোতে বাধ দিয়েছে শিমরন হেটমায়ার ও শেন ডাওরিচের জুটি। আর কোনো উইকেট হারায়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে পাড়ি দিতে হবে তাদের আরও বহুদূর!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৫৪ ওভারে ৫০৮(আগের দিন ২৫৯/৫)(সাকিব ৮০, মাহমুদউল্লাহ ১৩৬, লিটন ৫৪, মিরাজ ১৮, তাইজুল ২৬, নাঈম ১২*; রোচ ২৫-৪-৬১-১, লুইস ২০-২-৬৯-১, চেইস ২৮-০-১১১-১, ওয়ারিক্যান ৩৮-৫-৯১-২, বিশু ২৮-১-১০৯-২, ব্র্যাথওয়েট ১৫-০-৫৭-২)।

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ২৪ ওভারে ৭৫/৫ (ব্র্যাথওয়েট ০, পাওয়েল ৪, হোপ ১০, আমব্রিস ৭, চেইস ০, হেটমায়ার ৩২*, ডাওরিচ ১৭*; সাকিব ৯-৩-১৫-২, মিরাজ ১০-১-৩৬-৩, নাঈম ৩-০-৯-০, তাইজুল ১-০-১০-০, মাহমুদউল্লাহ ১-১-০-০)।