অভিষেক ইনিংসে রান করেছেন ৭৬। তবে সাদমানের ঘরানায় রানের মতোই সমান গুরুত্বপূর্ণ আরও দুটি পরিসংখ্যান। বল কত খেলতে পারলেন; সময় কত কাটাতে পারলেন। ডাবল সেঞ্চুরি হাতছাড়া সেখানেই, খেলেছেন ১৯৯ বল। রেকর্ড একটি হয়েছে তাতেও। বাংলাদেশের হয়ে এত বেশি বল খেলতে পারেননি আর কোনো অভিষিক্ত ওপেনার। উইকেটে ছিলেন ২২০ মিনিট, এই স্থায়ীত্ব দিচ্ছে তৃপ্তির বার্তা।
সাদমানকে নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটের যাবতীয় কৌতুহল, সামগ্রিক বিনিয়োগ তার ঘরানার কারণেই। ধুমধাড়াক্কা ক্রিকেট আর ফ্র্যাঞ্চাইজি টি-টোয়েন্টি লিগের আলো ঝলমলে জগতের হাতছানি যে যুগের বাস্তবতা, সাদমানের বাস যেন তার বিপরীত সময়ে। যেখানে বল আটকানো কিংবা ছাড়ার তাড়না বেশি। সময় কাটানোর মূল্য বেশি।
বিশ্ব ক্রিকেটে এই ঘরানা বিরল হয়ে আসছে ক্রমেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটেও খুঁজে পাওয়া মুশকিল। এই ঘরানার হিসেবেই ঘরোয়া ক্রিকেটে তার পরিচিতি। বয়সভিত্তিক ক্রিকেটে সীমিত ওভারে অনেক রান করেছেন। ২০১৪ অনূর্ধ্ব-১৯ বিশ্বকাপে ছিলেন সর্বোচ্চ স্কোরার। তখনও তুমুল স্ট্রোকপ্রিয় নন, বরং ছিলেন নিজের সীমায় থেকে লম্বা ইনিংস খেলার অনুরাগী।
সাদমান এসেছেন সেই পথ ধরেই। এবার জাতীয় লিগে ছিলেন সর্বোচ্চ রান সংগ্রহকারী। বেশ কিছুদিন ধরেই রান করছেন ঘরোয়া ক্রিকেটের মোটামুটি সব পর্যায়ে। পারফর্ম করেছেন হাই পারফরম্যান্স ও ‘এ’ দলের হয়েও। তার পর বিসিবি একাদশ হয়ে টেস্ট স্কোয়াড, অবশেষে অভিষেক।
অভিষেকের দিনটিতেও সাদমানের ব্যাটিংয়ে তার ঘরানার জয়গান। ঘরোয়া ক্রিকেটে যেভাবে ব্যাট করেন, সর্বোচ্চ পর্যায়েও সেটিরই প্রতিচ্ছবি। চাপ নিশ্চয়ই ছিল, তবে সেটির প্রতিফলন পড়েনি তার ব্যাটিং বা শরীরী ভাষায়। মাথা নিচু করে ব্যাট করে গেছেন। বলের পর বল ছেড়েছেন বা আটকেছেন। সোজা ব্যাট জানান দিয়েছে তার মৌলিকত্বের ভিত শক্ত। টেকনিক ছিল যথেষ্ট আঁটসাঁট। টেম্পারামেন্ট দারুণ। শট খেলার সময় তার ব্যালান্স আর মাথার অবস্থান দুর্দান্ত। এক মুহূর্তের জন্যও ছিল না নিজের সীমা ছাড়ানোর অভিপ্রায়।
অবশ্যই এক ইনিংস দিয়ে সব বুঝিয়ে দেননি। তার টেকনিকের খুব বড় পরীক্ষাও হয়নি। সামনের পথচলায় আরও গতিময়, আরও বাউন্স ও মুভমেন্ট থাকা উইকেটে খেলতে হবে। আরও বড় টার্ন বা অসমান বাউন্স সামলাতে হবে। বাংলাদেশের পরের সিরিজই তো নিউ জিল্যান্ডে, অপেক্ষায় যেখানে শক্ত চ্যালেঞ্জ। তার ব্যাকফুট ডিফেন্স কিংবা শট খেলা, দুটিরই কঠিন পরীক্ষা হবে সেখানে।
ইনিংসের শুরুতে তামিম ইকবালের একজন উপযুক্ত সঙ্গী খুঁজে হাপিত্যেশ দলের অনেক দিনের। সাদমান এখনই সমাধান নয়, তবে সম্ভাবনার বাতি নিশ্চিতভাবেই। বাজির মূল কারণ তার মানসিকতা। তার টেম্পারামেন্ট। এই দুটি থাকলে ক্রিকেটের আঙিনায় জয় করা যায় অনেক বাধা। প্রথম দিন শেষে তার কথায়ও ফুটে উঠল সেই মানসিকতা।
“আমি যেরকম ব্যাটিং করি, আমি চিন্তা করেছি যে ঘরোয়া ক্রিকেটে যেভাবে খেলি, ঠিক সেভাবেই এখানে খেলব। বল আসবেই (সুযোগমতো)... আর কিছু চিন্তা করিনি।”
“উনারা (সতীর্থরা) তো আমার থেকে অনেক অভিজ্ঞ। আমাকে সবসময় বলছিলেন যে, ‘তুমি ঘরোয়া ক্রিকেটে যেভাবে ব্যাটিং করো, যেগুলো পারো, এখানেও সেভাবেই করো। বাড়তি কিছু করার দরকার নেই। নিজের ন্যাচারাল খেলাই খেলো।”
এরকম ঘরোয়া ক্রিকেটের স্বাদ সব দিন অবশ্যই পাবেন না সাদমান। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের কঠিন বাস্তবতা ছোবল দেবে শিগগিরই। তবে প্রথম পদক্ষেপে ২৩ বছর বয়সী ব্যাটসম্যান জানিয়ে দিয়েছেন, তা সামলানোর ঢাল তার আছে।