ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিনে শুক্রবার বাংলাদেশ করেছে ৫ উইকেটে ২৫৯।
অভিষেক ইনিংসে ৭৬ রানের দারুণ ইনিংসে নিজের আগমণী বার্তা দিয়েছেন সাদমান। রানের চেয়েও বেশি নজর কেড়েছেন ব্যাটিংয়ের ধরনে। ঘরোয়া ক্রিকেটে যেভাবে পরিচিত সাদমান, সর্বোচ্চ পর্যায়ে প্রথম সুযোগেও দেখিয়েছেন সেই একই ব্যাটিং। ২২০ মিনিটের ইনিংসে অস্বস্তি দেখা যায়নি খুব একটা। ডিফেন্স ছিল মোটামুটি আঁটসাঁট। টেম্পারামেন্ট দারুণ। ব্যালান্স ছিল দুর্দান্ত। নিজের সীমার বাইরে শট খেলতে যাননি একবারও।
দিনের শুরুতে সবচেয়ে আলোচনায় ছিল বাংলাদেশের একাদশ। নিজেদের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো বিশেষজ্ঞ পেসার ছাড়া নেমেছে বাংলাদেশ। টস জয়টা তাই আসে বড় সৌভাগ্য হয়ে। দুই পেসার নিয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ অবশ্য চতুর্থ ওভার থেকেই স্পিন এনে বুঝিয়ে দেয়, উইকেট স্পিনারদেরই।
পরের জুটির গল্পও প্রায় একই। সাদমানের সঙ্গী এবার মুমিনুল। দুজনের কারও ব্যাটিংয়ে ছিল না অস্বস্তির ছাপ। এগিয়ে যাচ্ছিলেন অনায়াসেই। কিন্তু আবারও ফিফটির নিচেই জুটির থমকে যাওয়া। লাঞ্চের ঠিক আগে যেভাবে আউট হলেন মুমিনুল (২৯), সেটি একরকম অপরাধের পর্যায়ে পড়ে।
কেমার রোচের ওই ওভারে একটু নড়বড়েই ছিলেন মুমিনুল। ঠিকমতো খেলতে পারছিলেন না। কিন্তু কোনোরকমে ওভারটি কাটিয়ে দেওয়ার বদলে লাঞ্চের এক বল আগে পুল খেললেন সোজা ব্যাটে। সহজ ক্যাচ মিড অনে।
পরের সেশনে বাজে শটের প্রতিযোগিতায় মুমিনুলকে হারিয়ে দিতে চাইলেন মোহাম্মদ মিঠুন। তবে তার আগে সাদমানের সঙ্গে গড়েছেন দিনের প্রথম অর্ধশত জুটি। যথারীতি এই জুটির সময়ও ক্যারিবিয়ান বোলিংকে মনে হয়নি দারুণ কিছু। রান উঠছিল অনায়াসে।
কিন্তু মুমিনুলের মতো ২৯ রানেই আত্মঘাতী শট খেললেন মিঠুন। দেবেন্দ্র বিশুর বল পড়তে ভুল করে পুল শটে বোল্ড। থামল ৬৬ রানের জুটি।
টানা ১২ ইনিংসের খরা শেষে কোনো ওপেনারের কাছ থেকে ফিফটি পেল বাংলাদেশ। তামিম ইকবাল ছাড়া অন্য কোনো ওপেনার ফিফটির দেখা পেলেন গত বছরের মার্চের পর!
সাদমান এগিয়ে যাচ্ছিলেন আরও বড় কিছুর দিকে। কিন্তু ১৯৯ বলে ৭৬ রানের ঝকঝকে ইনিংসটি শেষ হলো দেবেন্দ্র বিশুর বলে লাইন মিস করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ এরপর দ্রুত ফেরায় মুশফিকুর রহিমকেও।
বাংলাদেশের দ্বিতীয় ব্যাটসম্যান হিসেবে মুশফিক স্পর্শ করেছেন ৪ হাজার রান। কিন্তু ইনিংস বড় করতে পারেননি। ক্যারিয়ারে আরও অনেকবারের মতো আউট হয়েছেন ব্যাট-প্যাডের ফাঁক গলে। বোলার এবার শারমন লুইস।
বাংলাদেশের রান তখন ৫ উইকেটে ১৯০। দুই দল সমতায় ভালোভাবেই। শেষ সেশনে দিনটি বাংলাদেশের দিকে হেলে পড়ল সাকিব ও মাহমুদউল্লাহর জুটিতে।
পরিস্থিতির ডাক শুনেছেন দুজনই। নিজেদের সহজাত ব্যাটিংয়ের সঙ্গে আপোস করে ব্যাট করেছেন যথেষ্ট নিয়ন্ত্রিত। শেষ সেশনে ২৭ ওভারে বাউন্ডারি হয়েছে কেবল একটি। সেটি এসেছে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে।
সাকিব ফিফটি করেছেন ৯৮ বলে, বাউন্ডারি ছিল কেবল একটি। অর্ধশতকে একটি মোটে বাউন্ডারি সাকিবের এই প্রথম।
দিনজুড়ে খুব ধারাবাহিক বোলিং করতে পারেননি ক্যারিবিয়ান স্পিনাররা। বরং দুই পেসারই ছিলেন বেশি উজ্জ্বল। আগের টেস্টেই নতুন বলে বেশি ভয়ঙ্কর ছিলেন স্পিনাররা, ওয়েস্ট ইন্ডিজের দ্বিতীয় নতুন বল না নেওয়াও তাই জাগিয়েছে প্রশ্ন।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ২৫৯/৫ (সাদমান ৭৬, সৌম্য ১৯, মুমিনুল ২৯, মিঠুন ২৯, সাকিব ৫৫*, মুশফিক ১৪, মাহমুদউল্লাহ ৩১*; রোচ ১৫-১-৩৮-১, লুইস ১২-১-৩৫-১, চেইস ২১-০-৬১-১, ওয়ারিক্যান ১৯-২-৪৬-০, বিশু ১৯-১-৬৯-২, ব্র্যাথওয়েট ৪-০-৮-০)।