সাধারণ পথে অসাধারণ নাঈম

তার কীর্তিটি অসাধারণ। তবে সেই অর্জন ধরা দিয়েছে সাধারণ পথে হেঁটেই। অভিষেকে সবচেয়ে কম বয়সে টেস্টের এই ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়ে নাঈম হাসান জানালেন, তিনি কেবল নিজের স্বাভাবিক বোলিংই করেছেন।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 23 Nov 2018, 02:20 PM
Updated : 23 Nov 2018, 03:45 PM

১৭ বছর ৩৫৫ দিন, টেস্ট ক্যাপ পাওয়ার দিন নাঈমের বয়স। পরদিনই বল হাতে নিলেন ৬১ রানে ৫ উইকেট। বাংলাদেশ তো বটেই, এই উপমহাদেশের বাস্তবতায় বয়স সংক্রান্ত যে কোনো রেকর্ডে সংশয়ের সুযোগ থাকে বরাবরই। তবে রেকর্ড বই তো ভরসা করে আনুষ্ঠানিক তথ্যে। নাঈমের বিশ্বরেকর্ড তাই এখন সবচেয়ে বড় সত্যি। যেমন সত্যি, তার পরিণত পারফরম্যান্সও।

টেস্ট আঙিনায় প্রথম দুই দিনের পারফরম্যান্স ফুটিয়ে তুলছে তার পরিণত মানসিকতাকেই। একাদশে এসেছেন চতুর্থ স্পিনার হিসেবে। কিন্তু বল হাতে নেওয়ার আগেই তাক লাগিয়েছেন ব্যাট হাতে। রান খুব বেশি করেননি, তবে নবম উইকেটে তার সঙ্গে তাইজুলের ৬৫ রানের জুটিই এখনও ম্যাচে টিকিয়ে রেখেছে বাংলাদেশকে। নাঈমের ২৬ রানের ইনিংসটায় ছিল আঁটসাঁট ডিফেন্স, টেম্পারামেন্ট ও ভয়ডরহীন মানসিকতার প্রতিফলন।

বল হাতে নেওয়ার পরও স্নায়ুর চাপ দেখা যায়নি খুব একটা। নিজের তৃতীয় ওভারেই নিয়েছেন প্রথম উইকেট, পরের ওভারে আরেকটি। সেই ধারাবাহিকতায়ই পরে ধরা দিয়েছে ৫ উইকেট।

টেস্ট অভিষেকের দ্বিতীয় দিনে আরেকটি জায়গায়ও অভিষেক হয়েছে নাঈমের। মাঠের ক্রিকেটই মূল জায়গা, তবে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হওয়াও আধুনিক ক্রিকেটে নিয়মিত অংশ। হলরুম ভরা সংবাদকর্মী, ক্যামেরা-রেকর্ডার আর মাইেক্রাফোনের সামনে কথা বলার অভিজ্ঞতাও হলো। পারফরম্যান্সই তাকে বড় সংবাদ সম্মেলনে নিয়ে এলো প্রথমবার।

মাঠের পারফরম্যান্সে প্রথম ম্যাচে নিজেকে মেলে ধরলেও ক্যামেরার সামনে দেখা গেল একটু জড়তা। কিংবা হতে পারে, তার ধরনটিই এমন। বেশিরভাগ প্রশ্নেরই উত্তর দিলেন এক-দুই কথায়। নিচু কণ্ঠে। উইকেটের সহায়তার প্রশ্নে তার উত্তর, “উইকেটে বল ঘুরছিল, ওটাই কাজে লাগিয়েছি।” প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বাদ? “ভালোই লাগছে।” চট্টগ্রামেরই ছেলে তিনি, ঘরের মাঠে পারফরম্যান্সের প্রতিক্রিয়া? “ঘরের মাঠ আর বাইরের মাঠ বলে তো কথা নেই, সব মাঠ একই।”

এই সাধারণ কথায়ই নাঈম জানালেন, তার সাফল্যের রাস্তাও সাধারণ। স্রেফ নিজের কাজটা করে গেছেন।

“আমি এমন কিছু চিন্তা করিনি। নরমালি যেরকম খেলি, যে রকম বল করি, সেভাবেই বল করেছি।”

‘নরমাল’ শব্দটি তার কথায় উঠে এল বারবার। জানালেন, অভিষেক নিয়ে ছিল না বাড়তি ভাবনা।

“তেমন কোন চাপ ছিল না। নরমালি যে ক্রিকেট খেলে এসেছি, সেই ক্রিকেটই খেলেছি। সিনিয়র প্লেয়াররা সবাই খুব সাহায্য করেছেন।”

অভিষেকে বল হাতে রেকর্ড গড়েছেন বটে, তবে ম্যাচের প্রেক্ষাপটে তার ব্যাটিংও ছিল মহামূল্য। তবে ব্যাট হাতে সবাইকে চমকে দিলেও তার কাছে সেটি খুবই স্বাভাবিক।

“যখন ব্যাট হাতে নিয়ে নামব, তখন তো দায়িত্ব আমার। ব্যাটিং করতেও ভালো লেগেছে। আবার যখন বল হাতে দিয়েছে, তখন বোলিংয়ের দায়িত্বও আমার। দুটিই উপভোগ করেছি।”  

অভিষেকের দিন শ্যানন গ্যাব্রিয়েল, কেমার রোচদের মতো ফাস্ট বোলারদের সামলেছেন দারুণ নির্ভরতায়। এতটা গতিময় পেসারদের খেললেন প্রথমবার। কিন্তু তার ব্যাটিং দেখে সেটি বোঝার উপায় ছিল না। খেলেছেন দারুণ আত্মবিশ্বাসে। সেটির ব্যাখ্যাও দিলেন নিজের মতো করে, “আমি নরমালি যেভাবে খেলি, ওদেরকেও সেভাবেই খেলেছি।”

এমনকি খুব একটা রোমাঞ্চিত মনে হলো না রেকর্ডের প্রসঙ্গেও। নিজের রেকর্ডের কথা জানতেন না। জানার পরও তার মনে খুব একটা দোলা লেগেছে বলে মনে হলো না। নির্লিপ্ত কণ্ঠেই জানালেন প্রতিক্রিয়া।

“আমি তো আমার নরমাল ক্রিকেট খেলেছি। আমার কোন লক্ষ্য ছিল না ৫ উইকেট, ১০ উইকেট নিতে হবে। আমি চেষ্টা করেছি প্রক্রিয়াটা ধরে রাখতে।”