সেরা বিশে ঢুকে, সেরা দশে তাকিয়ে মুশফিক

লম্বা অনুশীলন সেশন শেষ করে ড্রেসিং রুমে ফিরেছিলেন মুশফিকুর রহিম। এগিয়ে গিয়ে অভিনন্দন জানাতেই তাকালেন জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে। “প্রথমবারের মতো আইসিসি টেস্ট ব্যাটসম্যানদের র‌্যাঙ্কিংয়ের সেরা বিশে ঢুকলেন!” কারণ জানার পর মুশফিকের মুখে হাসি, “তাই নাকি? ভালো লাগছে। তবে ভালোর তো শেষ নেই। সেরা বিশ এমন কিছু নয়। সেরা দশে যেদিন ঢুকব, সেদিন বলার মতো কিছু হবে।”

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Nov 2018, 01:45 PM
Updated : 20 Nov 2018, 01:46 PM

মুশফিক যে স্বপ্নের কথা বলছেন, বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের কাছে তা এখনও অধরা। আইসিসি টেস্ট ব্যাটসম্যানদের র‌্যাঙ্কিংয়ে কখনও সেরা দশে থাকার স্বাদ পাননি কেউ। গত বছরের অগাস্টে ১৪ নম্বরে উঠেছিলেন তামিম ইকবাল, বাংলাদেশের কোনো ব্যাটসম্যানের সেরা সাফল্য সেটিই। সাকিব আল হাসানের ক্যারিয়ার সেরা র‌্যাঙ্কিং ১৬। মুশফিকের ক্যারিয়ার সেরা এখন ১৮।

সেরা দশ এখনও পর্যন্ত অধরা, তবে তা ধরাছোঁয়ার বাইরে নয়। মুশফিকের জন্য তো নয়-ই। তার ব্যাট থেকেই বাংলাদেশ পেয়েছিল টেস্ট ক্রিকেটে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। একাধিক ডাবল সেঞ্চুরি করা প্রথম ব্যাটসম্যানও তিনি। সেরা দশের প্রথম যাত্রী তিনি হলেও বিস্ময়কর কিছু হবে না। বাংলাদেশের ক্রিকেটে তিনি পরিশ্রম, নিষ্ঠা ও নিবেদনের মূর্ত প্রতীক।

কেন তিনি হতে পারেন সেরা দশের প্রথম ব্যাটসম্যান, কিভাবে তিনি নিজেকে নিতে পারেন পরের পর্যায়ে, সেটির একটি নমুনা দেখা গেল মঙ্গলবারও। এ দিন বাংলাদেশ দলের ছিল বিশ্রাম। কিন্তু বোলিং কোচ সুনিল যোশী ও টেস্ট স্কোয়াডে থাকা তরুণ অফ স্পিনার নাঈম হাসানকে নিয়ে মুশফিক ঠিকই চলে এসেছিলেন জহুর আহমদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে।

পরে অনুশীলনে এসেছিলেন অধিনায়ক সাকিব আল হাসান ও নতুন ডাক পাওয়া ওপেনার সাদমান ইসলামও। এমনিতে বিশ্রামের দিনে বা ঐচ্ছিক অনুশীলনের খুব নিয়মিত মুখ নন সাকিব। তবে চোট কাটিয়ে ফিরছেন বলেই হয়তো বাদ দিতে চাননি একটি দিনের অনুশীলনও।

তবে সবাইকে ছাপিয়ে গেল মুশফিকের অনুশীলনের পরিধি। রুটিনের বাইরের এই দিনগুলোর অনুশীলন যেন আরও বেশি করে উপভোগ করেন তিনি। দলীয় অনুশীলনে নেট সেশন থেকে শুরু করে সবকিছুই থাকে ছকবাঁধা ও সময় বেঁধে দেওয়া। কিন্তু এই ফাঁকা দিনগুলি তার মনের ক্ষুধা মেটানোর অবারিত সুযোগ।

নাঈম আর যোশীর সঙ্গে নেটে ছিলেন অনূর্ধ্ব-১৯ দলের সম্ভাবনাময় লেগ স্পিনার রিশাদ হোসেন। ছিলেন দুই নেট পেস বোলার। সাইড আর্ম বল থ্রোয়ারে বল ছুঁড়েছেন দলের অনুশীলন সহযোগী বুলবুল। নেটে এই ছয়জনকে ক্রমাগত খেলে গেলেন মুশফিক। নেট বোলাররা এক পর্যায়ে ক্লান্ত হয়ে গেলেন, মুশফিকের ক্লান্তি নেই। টানা এক ঘণ্টার বেশি ব্যাট করে তবেই ক্ষান্তি দিলেন।

তবে সেটি কেবল ক্ষনিকের জন্য। ১০ মিনিট জিরিয়ে নিয়েই আবার ছুটলেন মাঠের অন্যপাশের নেটে। সেখানে আগে থেকেই প্রস্তুত বোলিং মেশিন। উইকেটের মাঝখানে রাখা গ্রানাইটের স্লাব। কেমার রোচ, শ্যানন গ্যাব্রিয়েলদের বিপক্ষে বড় চ্যালেঞ্জ কোনটি হবে, সেটি তার জানা আছে। এবার টানা ২০ মিনিট চলল গতিময় শর্ট বল খেলার অনুশীলন। বাউন্সারে ‘ডাক’ করলেন যেমন, তেমনি পুল-হুক-কাটও চলল একের পর এক।

শেষ নয় সেখানেই। দলে আরেকটি গুরুদায়িত্বও পালন করেন তিনি, যে ভার নিজের কাঁধে বয়ে চলতে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ তারই। ব্যাটিং গ্লাভস খোলার পর একটুও বিশ্রাম নিলেন না। কিপিং গ্লাভস হাতে নেমে গেলেন অনুশীলনে। উইকেটকিপিং অনুশীলনে মজে থাকলেন টানা ২৫ মিনিট।

দীর্ঘ অনুশীলন শেষে যখন ফিরছেন ড্রেসিং রুমে, তখনও তাকে মনে হলো বেশ তরতাজা। অন্য অনেকের কাছে বাড়তি অনুশীলন হতে পারে চাপ, তার কাছে সেটির চেয়ে উপভোগ্য কিছু আর নেই।

মুশফিকের পরিশ্রম, নিজেকে আরও নিখুঁত করতে তার ক্রমাগত অনুশীলনের তেষ্টা নিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটে আলোচনা কম হয় না। এ দিনের অনুশীলন হতে পারে সেটির আদর্শ ডকুমেন্টারি। ক্লান্তিহীন কিন্তু আনন্দময় তার অনুশীলন। প্রতিটি ঘামের ফোটায় লেখা থাকে তার নিবেদনের গল্প। বারবার যেটি জানান দেয়, সেরা দশের স্বপ্নপূরণ সময়ের ব্যাপার মাত্র!