অবিশ্বাস্য জয়ে সিরিজে এগিয়ে নিউ জিল্যান্ড

জয়ের জন্য প্রয়োজন ৪৬ রান, উইকেট বাকি তখনও ৭টি। উইকেটে থিতু দুজন ব্যাটসম্যান। এমন ম্যাচও হারা যায়! বরাবরের অননুমেয় দল পাকিস্তান দেখিয়ে দিল, তাদের পক্ষে সবই সম্ভব। অভিষিক্ত বাঁহাতি স্পিনার এজাজ প্যাটেলের রেকর্ড গড়া বোলিংয়ে অবিশ্বাস্য জয়ে সিরিজে এগিয়ে গেল নিউ জিল্যান্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Nov 2018, 12:17 PM
Updated : 19 Nov 2018, 01:52 PM

রোমাঞ্চের পসরা সাজিয়ে আবু ধাবি টেস্টের চতুর্থ দিনে ক্রিকেট হাজির হলো তার চিরায়ত অনিশ্চিত রূপ নিয়ে। অনায়াস জয়ের পথে এগোতে থাকা পাকিস্তান ডুবল হারের যন্ত্রণায়। নিউ জিল্যান্ড জিতল ৪ রানে। কিউইদের টেস্ট ইতিহাসেই এটি সবচেয়ে কম রানের জয়।

চতুর্থ ইনিংসে ১৭৬ রানের লক্ষ্যে খেলতে নামা পাকিস্তানের রান এক পর্যায়ে ছিল ৩ উইকেটে ১৩০। সেখান থেকে গুটিয়ে গেছে তারা ১৭১ রানে।

৫৯ রানে ৫ উইকেট নিয়েছেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত এজাজ প্যাটেল। নিউ জিল্যান্ডের হয়ে অভিষেকে ৫ উইকেট নেওয়া প্রথম বাঁহাতি স্পিনার এই ৩০ বছর বয়সীই।

রান তাড়ায় আগের দিনই বিনা উইকেটে ৩৭ রান তুলে ফেলেছিল পাকিস্তান। এ দিন প্রয়োজন ছিল আর কেবল ১৩৯ রান। উইকেটে টার্ন ছিল, গ্রিপ করছিল। তবে খুব ভয়ঙ্কর ছিল না। লক্ষ্যও ছিল না খুব দূরের পথ।

দিনের শুরুতেই খানিকটা হোঁচট খেয়েছিল পাকিস্তান। ইমাম উল হককে ফিরিয়ে উদ্বোধনী জুটি ভাঙেন এজাজ। এরপর লেগ স্পিনার ইশ সোধি এক ওভারে ফেরান মোহাম্মদ হাফিজ ও হারিস সোহেলকে। পাকিস্তানের রান তখন ৩ উইকেটে ৪৮।

চতুর্থ উইকেটে আজহার আলি ও আসাদ শফিক দারুণ ব্যাটিংয়ে এগিয়ে নেন দলকে। দুই অভিজ্ঞ ব্যাটসম্যানের দৃঢ়তায় ব্যর্থ হতে থাকে কিউইদের সব প্রচেষ্টা। লক্ষ্য চলে আসে একদম নাগালে। এই জুটি ভাঙার পর থেকেই বদলে যেতে থাকে ম্যাচের রঙ।

শফিককে ফিরিয়ে ৮২ রানের জুটি ভাঙেন বাঁহাতি পেসার নিল ওয়াগনার। ৪৫ রান করা ব্যাটসম্যানকে বাউন্সারে নাড়িয়ে দেওয়ার পর আউট করেন বেরিয়ে যাওয়া ফুল লেংথ বলে।

তখনও বিপদ আঁচ করা যায়নি। আজহারের সঙ্গে দাঁড়িয়ে যাওয়ার ইঙ্গিত ছিল বাবর আজমের ব্যাটে। কিন্তু ১৩ রান করা বাবর ফিরলেন রান আউটে। এরপরই শুরু একের পর এক ব্যাটসম্যানের আসা যাওয়ার মিছিল। অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ ফিরলেন ৩ রানে। শেষ চার ব্যাটসম্যানের কেউ দেখতে পারেননি রানের মুখ।

এক প্রান্তে টানা ১৩ ওভারের স্পেলে পাকিস্তানকে আটকে রাখেন ওয়াগনার। আরেক প্রান্তে উইকেট তুলে নেন এজাজ। পাকিস্তান শেষ ৬ উইকেট হারায় ২৪ রানের মধ্যে।

এক প্রান্ত আগলে শেষ দিকে পাকিস্তানের আশা হয়ে ছিলেন আজহার। শেষ ব্যাটসম্যান মোহাম্মদ আব্বাস যখন উইকেটে গেলেন, পাকিস্তানের তখন প্রয়োজন ১২ রান। ভীষণ সাবধানী ব্যাটিংয়ে আজহার চেষ্টা করছিলেন এগোনোর। শেষ জুটিতে ৭ রান আসে ৭ ওভারে। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সেই আজহারকে ফিরিয়েই ম্যাচ জিতে নেয় নিউ জিল্যান্ড।

উত্তেজনাপূর্ণ ম্যাচের শেষটাও হলো নাটকীয়। এজাজের বলে আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দিলে রিভিউ নেন আজহার। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায় বল লাগছিল বেলসে, আম্পায়ার্স কলে টিকে যায় সিদ্ধান্ত। ৬৫ রানে আউট হয়ে মাথা নিচু করে ফেরেন আজহার। কিউইরা মেতে ওঠে বাঁধনহারা উল্লাসে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

নিউ জিল্যান্ড ১ম ইনিংস: ১৫৩

পাকিস্তান ১ম ইনিংস: ২২৭

নিউ জিল্যান্ড ২য় ইনিংস ২৪৯

পাকিস্তান: (লক্ষ্য ১৭৬) ৫৮.৪ ওভারে ১৭১ (আগের দিন ৩৭/০)(ইমাম ২৭, হাফিজ ১০, আজহার ৬৫, হারিস ৪, শফিক ৪৫, বাবর ১৩, সরফরাজ ৩, বিলাল ০, ইয়াসির ০, হাসান ০, আব্বাস ০*; বোল্ট ০/২৯, ডি গ্র্যান্ডহোম ০/১৫, এজাজ ৫/৫৯, সোধি ২/৩৭, ওয়াগনার ২/২৭)।

ফল: নিউ জিল্যান্ড ৪ রানে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে নিউ জিল্যান্ড ১-০তে এগিয়ে

ম্যান অব দা ম্যাচ: এজাজ প্যাটেল