ইমরুলের থাকা, লিটনের না থাকা ‘ট্যাকটিক্যাল’

জিম্বাবুয়ে সিরিজ খারাপ গেছে দুজনেরই। তবে ইমরুল কায়েসের পারফরম্যান্সে ভাটার টান অনেক দিন ধরেই। লিটন দাসের কেবল শুরু। এরপরও ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম টেস্টের দলে টিকে গেছেন ইমরুল, বাদ পড়েছেন লিটন। হাবিবুল বাশার যেটিকে বলছেন ‘ট্যাকটিকাল’ সিদ্ধান্ত। সেটির ব্যাখ্যাও দিয়েছেন জাতীয় দলের এই নির্বাচক।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 17 Nov 2018, 11:51 AM
Updated : 17 Nov 2018, 01:24 PM

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে ইমরুল করেছিলেন ০ ও ৩। লিটন করেছেন ৯ ও ৬। তার আগে সিলেট টেস্টে ইমরুলের রান ছিল ৫ ও ৪৩, লিটনের ৯ ও ২৩। এই সিরিজের পারফরম্যান্সে কে কম খারাপ, সেটিও বের করা কঠিন। চার ইনিংসে ইমরুলের রান ৫১, লিটনের ৪৭।

তবে ইমরুলের এই খারাপের ধারা বয়ে এসেছে আরও অনেক পেছন থেকে। ২০১৬ সালের অক্টোবরে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে মিরপুরে ৭৮ রানের ইনিংসটির পর থেকে টানা ২০ ইনিংসে ফিফটি নেই। সেঞ্চুরি খরা আরও বেশি সময়ের। ক্যারিয়ারে তিন সেঞ্চুরির শেষটি করেছিলেন ২০১৫ সালের এপ্রিলে, খুলনায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ১৫০। এরপর পেরিয়ে গেছে ৩০ ইনিংস।

৩৬ টেস্টে ইমরুলের সেঞ্চুরি তিনটি, ফিফটি কেবল চারটি। ব্যাটিং গড় ২৫.৪৪। ক্যারিয়ার রেকর্ড সব মিলিয়ে ভীষণ ম্লান।

লিটন ক্যারিয়ারে টেস্টই খেলেছেন ১২টি। বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে ৯৪ রানের পর ফিফটি নেই তার ১০ ইনিংসে। তবে জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগে ভীষণ কঠিন ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজে তিনি ছিলেন খানিকটা মন্দের ভালো। চরম ব্যাটিং দুর্দশার সিরিজে ওপেনিংয়ে খানিকটা লড়াই করার চেষ্টা করেছিলেন দুটি ইনিংসে। ৪ ইনিংসে তার ৭২ রান অবিশ্বাস্যভাবে ছিল সিরিজে বাংলাদেশের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান।

বিবর্ণ দুজনের একজনকে বেছে নেওয়া কঠিন ছিল, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে জানালেন হাবিবুল। শেষ পর্যন্ত তারা ইমরুলকে বেছে নিয়েছেন মূলত অভিজ্ঞতার কথা ভেবে।

“দুজনের কেউই আমাদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেনি। তামিম যেহেতু নেই, একজনকে নিতেই হয়। শেষ পর্যন্ত সিদ্ধান্তটি ছিল ট্যাকটিক্যাল। ওয়ানডেতে এত ভালো খেলার পর টেস্টে ইমরুলের এই ব্যর্থতা বিস্ময়কর। এরপরও আমাদের মনে হয়েছে, ওপেনার হিসেবে ওর অভিজ্ঞতা বেশি। কঠিন সময় সামলেছে আগে। বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে এক সময় রান করেছে ওপেন করে। ওর দিকে তাই ভোট বেশি পড়েছে।”

“লিটনকে এই সিরিজে দেখে আমাদের প্রশ্ন জাগছে যে টেস্টে ওপেনিংই তার আসল জায়গা কিনা। আগেও যখন সে ভালো করেছে টেস্টে, মিডল অর্ডারে করেছে। এরপরও সে টপ অর্ডারে খেলতে স্বচ্ছন্দ বোধ করে এবং ঘরোয়া ক্রিকেটেও টপ অর্ডারে রান করেছে লংগার ভার্সনে, এজন্য আমরা দেখছিলাম। এখন মনে হয় অন্যভাবে ভাবতে হতে পারে।”

অন্যতম এই নির্বাচকের কথায় টেস্ট ওপেনার হিসেবে লিটনের ভবিষ্যৎ নিয়েই সংশয় জাগছে। টেস্টে তাকে ওপেনিংয়ে বিবেচনা না করা হলে, ঘরোয়া বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে তার কোন পজিশনে ব্যাট করা উচিত বা নির্বাচকদের পরামর্শ আছে কিনা, সেই প্রশ্নও উঠছে। হাবিবুল খোলা রাখলেন সব সম্ভাবনার দুয়ারই।

“যে ভাবনার কথা বলেছি, সেটি হলো এখনকার ভাবনা। মানে, আপাতত আমরা যা ভাবছি। পারফরম্যান্স দিয়ে সে ভাবনা বদলেও দিতে পারে। আর ঘরোয়া লঙ্গার ভার্সনে কোথায় খেলবে, সেটা ও নিজেই ঠিক করবে। তবে একটা ব্যাপার হলো, ওপেনিংয়ে ব্যাট করতে পারলে কেউ মিডল অর্ডারও সামলাতে পারে। ঘরোয়াতে ওপেন করেও ভবিষ্যতে টেস্টে মিডল অর্ডারে খেললে তাই মানিয়ে নিতে পারবে আশা করি।”

তবে চট্টগ্রাম টেস্টের জন্য মিডল অর্ডার হিসেবেও লিটনকে বিবেচনা করা হয়নি, নিশ্চিত করলেন হাবিবুল।

“মিডল অর্ডারে আরিফুল সিলেটে খুব ভালো খেলেছে। মিঠুন মিরপুরে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইনিংস খেলেছে। সাকিবও ফিরেছে। সেখানে তাই এবার জায়গা ছিল না। তবে শিগগিরই আবার লিটন ফিরতে পারে। ওর সম্ভাবনা শেষ হয়ে যায়নি।”

ইমরুলকে নিয়ে নির্বাচকদের ধৈর্য্যও যে শেষ সীমানায় আছে, সেই বার্তাও ইমরুলকে দেওয়া হয়েছে বলে জানালেন হাবিবুল।

“অভিজ্ঞতার কথা ভেবেই আরেকটি সুযোগ আমরা দিয়েছি ওকে। এরপর হয়তো সুযোগ দেওয়া কঠিন হবে।”

চট্টগ্রাম টেস্টের ১৩ সদস্যের দলের যা বাস্তবতা, তাতে ইমরুলের সঙ্গে ইনিংস শুরু করবেন দলে ফেরা সৌম্য সরকার। এবার জাতীয় লিগে ৬৭.২৮ গড়ে ৪৭১ রান করে এই বাঁহাতি ওপেনার ছিলেন তৃতীয় সর্বোচ্চ রান স্কোরার।

হাবিবুল জানালেন, সাম্প্রতিক ফর্ম আর পেস বোলিং খেলার সামর্থ্য পক্ষে গেছে সৌম্যর। জাতীয় লিগে যদিও বেশিরভাগ ইনিংসে সৌম্য ব্যাট করেছেন তিনে, শেষ রাউন্ডে সেঞ্চুরি করেছেন সাতে নেমে। তবে চট্টগ্রাম টেস্টে তাকে ওপেনিংয়েই দেখছে দল।

“এবার জাতীয় লিগে বেশ ভালো খেলেছে সৌম্য। সাম্প্রতিক ফর্মটাকে আমরা গুরুত্ব দিয়েছি। আর সে পেস বোলিং মোটামুটি ভালো সামলায় বলে বিশ্বাস আমাদের। ওয়েস্ট ইন্ডিজের তো পেস আক্রমণ ভালো। সব মিলিয়ে ওপেনিংয়েই বিবেচনা করা হয়েছে ওকে।”

চট্টগাম টেস্ট শুরু আগামী বৃহস্পতিবার। তার আগে রোববার থেকে শুরু হতে যাওয়া দুই দিনের প্রস্তুতি ম্যাচেও বিসিবি একাদশে খেলবেন সৌম্য।