শেষ বিকেলে ঘুরে দাঁড়াল বাংলাদেশ

দিনের মাঝামাঝি জিম্বাবুয়ে ছিল ফলো ফনের শঙ্কায়। দিনের শেষে সত্যি হলো সেটিই। কিন্তু মাঝের সময়টায় গড়ল তারা দারুণ প্রতিরোধ। বাংলাদেশকে হতাশার আঁধারে ডুবিয়ে জিম্বাবুয়েকে আশার আলো দেখাল ব্রেন্ডন টেইলর ও পিটার মুরের ব্যাট। তবে শেষ বিকেলের মরে আসা আলোয় আবার উজ্জ্বল হলো বাংলাদেশের সম্ভাবনা।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Nov 2018, 12:03 PM
Updated : 13 Nov 2018, 01:09 PM

টেইলর ও মুরের দারুণ জুটির পরও মিরপুর টেস্টে ফলো অন এড়াতে পারেনি জিম্বাবুয়ে। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনে প্রথম ইনিংস শেষ হয়েছে তাদের ৩০৪ রানে। ২১৮ রানের লিড পাওয়া বাংলাদেশ প্রতিপক্ষকে ফলো অন করাবে কিনা, সেটি জানা যাবে চতুর্থ দিন সকালে।

জিম্বাবুয়ে ইনিংসের অর্ধেক হারিয়ে ফেলেছিল দ্বিতীয় সেশনের মাঝামাঝিই। কিন্তু ষষ্ঠ উইকেটে ৩৭.১ ওভারে ১৩৯ রানের দারুণ জুটি গড়েন টেইলর ও মুর। দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির স্বাদ পেয়েছেন টেইলর। ক্যারিয়ারের প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির সম্ভাবনা জাগিয়েও মুর ফিরেছেন ৮৩ রানে।

বাংলাদেশের বোলিংয়ের দুই নায়ক দুই স্পিনার তাইজুল ইসলাম ও মেহেদী হাসান মিরাজ। টানা তৃতীয় ইনিংসে ৫ উইকেট নিয়ে তাইজুল ছুঁয়েছেন বাংলাদেশের রেকর্ড। শেষ বেলায় দলকে ম্যাচে ফেরানো মিরাজ নিয়েছেন ৩ উইকেট।

দিনের শুরুটা বাংলাদেশ করেছিল টানা তিন মেডেন ওভারে। তবে ব্রায়ান চারি ও নাইটওয়াচম্যাচ ডোনাল্ড টিরিপানো প্রথম ১০ ওভার কাটিয়ে দেন উইকেট না হারিয়ে। ১৯ রানে সৈয়দ খালেদ আহমেদের বলে পয়েন্টে ব্রায়ান চারির ক্যাচ ছাড়েন তাইজুল।

শেষ পর্যন্ত দলকে প্রথম ব্রেক থ্রু এনে দেন তাইজুলই। তবে চারি নন, ফেরান তিনি টিরিপানোকে। তৃতীয় উইকেটে টেইলরকে নিয়ে চারি গড়েন ৫৬ রানের জুটি।

জীবন পেয়ে, খালেদের বাউন্সে দুইবার হেলমেটে বলের ছোবল হজম করে টিকে যান চারি। নড়বড়ে ব্যাটিংয়ের মাঝেই খেলেছেন আবার দারুণ কিছু শট। লাঞ্চের একটু আগে তাকে থামান মিরাজ। বাংলাদেশের দারুণ এক রিভিউয়ে চারি ফেরেন ৬ চার ও ২ ছক্কায় ৫৩ রানে।

লাঞ্চের পর তাইজুলের স্পিন ভেল্কিতে বিপাকে পড়ে যায় জিম্বাবুয়ে। বলের লাইন বুঝতে না পেরে বোল্ড হন শন উইলিয়ামস ও সিকান্দার রাজা। ১৩১ রানে নেই তখন ৫ উইকেট, বাংলাদেশ দারুণ উজ্জীবিত।

কিন্তু টেইলর ও মুরের জুটিতে ক্রমেই বাংলাদেশ হারাতে থাকে নিয়ন্ত্রণ। টেইলর শুরু থেকেই খেলে গেছেন দারুণ নির্ভরতায়। মুর উইকেটে গিয়ে স্পিনে কিছু শট খেলে চাপ ফিরিয়ে দেন বাংলাদেশকে।

দুজনের জুটি একসময় ভীষণভাবে হতাশ করে তোলে বাংলাদেশ দলকে। বলের ধার কমতে থাকে, ছাপ পড়তে থাকে ফিল্ডিংয়ে। বদলি ফিল্ডার নাজমুল ইসলাম অপু ৭৫ রানে জীবন দেন মুরকে। তাইজুলের বলে টেইলরকে ৯৪ রানে একই সঙ্গে ক্যাচ ও স্টাম্পিং করার সুযোগ হাতছাড়া করেন মুশফিক। বাজে শরীরী ভাষায় ফিল্ডিংয়েও গুনতে হয় বাড়তি রান।

দেড়শ, দুইশ ছাড়িয়ে, আড়াইশ পেরিয়ে এই জুটিতেই জিম্বাবুয়ের রান ছুটছিল তিনশর দিকে। নতুন বল নিয়েও লাভ হয়নি খুব একটা, দ্বিতীয় নতুন বলের প্রথম ৪ ওভারে আসে ২৪ রান।

সময় যখন ফুরিয়ে আসছিল, ত্রাতা হয়ে আসেন আরিফুল হক। ম্যাচে প্রথম বল হাতে পান ৯২তম ওভারে। প্রথম ওভারেই ভেতরে ঢোকা দারুণ ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ করে দেন মুরকে। টেস্টে নিজের আগের সেরা ৭৯ ছাড়িয়ে মুর ফিরেছেন ৮৩ রানে।

খানিক পরই টেইলর স্পর্শ করেন সেঞ্চুরি। ২৮ টেস্টের ক্যারিয়ারে তার পঞ্চম সেঞ্চুরি, দেশের বাইরে প্রথম। বিদেশের মাটিতে আগের ১২ টেস্টে তার ফিফটি ছিল কেবল একটি। দেশে যেখানে ব্যাটিং গড় ৪২, দেশের বাইরে গড় ছিল ১৯.৪৭। এবার ঘোচালেন খরা। পাঁচ সেঞ্চুরির চারটিই করলেন বাংলাদেশের বিপক্ষে।

টেইলর প্রাচীরে ফাটল ধরে শেষ পর্যন্ত মিরাজ-তাইজুল জুটিতেই। মিরাজকে সুইপ করেছিলেন টেইলর। দারুণ গতিতে ছুটতে থাকা বল স্কয়ার লেগে পুরো শরীর শূন্যে ভাসিয়ে চোখধাঁধানো ক্যাচে পরিণত করেন তাইজুল।

এক বল পরই মিরাজ ফেরান ব্র্যান্ডন মাভুটাকে। শেষ স্বীকৃত ব্যাটসম্যান রেজিস চাকাভাকে ফিরিয়ে তাইজুল পূর্ণ করেন ৫ উইকেট। চোট পাওয়া টেন্ডাই চাটারা নামেননি ব্যাটিংয়ে।

সিলেট টেস্টের দুই ইনিংসে ৬ ও ৫ উইকেটের পর তাইজুল আবারও নিয়েছেন ৫ উইকেট। স্পর্শ করেছেন বাংলাদেশের হয়ে টানা তিন ইনিংসে ৫ উইকেট নেওয়া সাকিব আল হাসান ও এনামুল হক জুনিয়রের রেকর্ড।

শেষটা স্বস্তিতে হলেও বাংলাদেশ ম্যাচে পেরিয়েছে কেবল লক্ষ্যের অর্ধেক। উইকেট খুব বোলিং সহায়ক হওয়ার নমুনা দেখা যায়নি তৃতীয় দিনেও। চ্যালেঞ্জের অনেক তাই এখনও বাকি।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫২২/৭ (ইনিংস ঘোষণা)

জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ১০৫.৩ ওভারে ৩০৪ (আগের দিন ২৫/১) (চারি ৫৩, টিরিপানো ৮, টেইলর ১১০, উইলিয়ামস ১১, রাজা ০, মুর ৮৩, চাকাভা ১০, মাভুটা ০, জার্ভিস ৯*, চাটারা আহত অনুপস্থিত; মুস্তাফিজ ২১-৮-৫৮-০, খালেদ ১৮-৭-৪৮-০, তাইজুল ৪০.৩-১০-১০৭-৫, মিরাজ ২০-৩-৬১-৩, মাহমুদউল্লাহ ২-০-১৪-০, আরিফুল ৪-২-১০-১)।