৫৮৯ মিনিট ব্যাটিংয়ের পরও যে কারণে কিপিংয়ে মুশফিক

রেকর্ডময় ইনিংসটি নিয়ে মুগ্ধতার রেশ তখনও শেষ হয়নি, মুশফিকুর রহিম চমকে দিলেন নতুন করে। প্রায় ১০ ঘণ্টা ব্যাটিং করার পর যখন বিশ্রামই ছিল অনুমিত, জিম্বাবুয়ে ইনিংসের শুরু থেকেই আবার নেমে গেলেন কিপিংয়ে! দিন শেষে মুশফিক জানালেন, দলকে সাহায্য করতেই দাঁড়িয়েছেন উইকেটের পেছনে।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 Nov 2018, 02:50 PM
Updated : 12 Nov 2018, 04:03 PM

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টে এক ইনিংসেই মুশফিক গড়েছেন অনেক রেকর্ড। ২১৯ রানের অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন ৪২১ বল খেলে ও ৫৮৯ মিনিট উইকেটে কাটিয়ে। বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ডই শুধু নয়, বল খেলা ও সময় কাটানোর দিক থেকে বাংলাদেশের দীর্ঘতম টেস্ট ইনিংস।

এমন ম্যারাথন ইনিংসের পর শ্রান্তিতে তার নুইয়ে পড়ার কথা। বিকেলটুকু আর মাঠে না নেমে অনায়াসেই কিপিং করতে পারতেন পরদিন সকাল থেকে। কিন্তু ব্যাটিং শেষের মিনিট দশেক পরই কিপিং গ্লাভস হাতে দাঁড়িয়ে গেলেন উইকেটের পেছনে।

কিপিংয়ের প্রতি আকর্ষণ মুশফিক লুকাননি কখনোই। কিন্তু সেটিকে মাথায় রেখেও এবারের ঘটনাকে বলা যায় বিস্ময়কর। দিন শেষে মুশফিক জানালেন, দলের প্রয়োজনের কথা ভেবেই তার অমন সিদ্ধান্ত। সেটি কাজে লেগেছে, সেই উদাহরণও দিলেন।

“কিপিং করেছি কারণ, যেন আমি আমার বোলারদের ফিডব্যাক দিতে পারি। এত সময় উইকেটে ছিলাম, আমি যত সহজে উইকেট বুঝতে পারব, অন্যরা পারবে না। এরকম একটা হয়েছিল, তাইজুল যখন একটা প্রান্ত থেকে বল করছিল, আমি বললাম অন্যদিক থেকে করতে। কারণ আমার ব্যাটিংয়ের সময় শন উইলিয়ামস যখন ওই দিক থেকে বল করছিল, বল একটু উঠছিল-নামছিল। তো বললাম, ওই প্রান্ত থেকে বাঁহাতি স্পিন কঠিন হবে। ওই প্রান্ত থেকে তাইজুলের প্রথম বলেই কিন্তু মাসাকাদজা আউট হলো। এটা নাও হতে পারত, কিন্তু এই টেস্ট আমাদের যে কোনোভাবে জিততে হবে। সেটাই ভেবেছি আর কী।”

এই কিপিংয়ের প্রসঙ্গ ধরে চলে এসেছে বহুল আলোচিত পুরোনো প্রসঙ্গও। টেস্টে মুশফিকের কিপিং করা উচিত কি উচিত নয়। টেস্টে কিপিংয়ের ভারমুক্ত থাকলে যেখানে ব্যাটিং আরও ভালো হওয়ার কথা, মুশফিকের ক্ষেত্রে সেটি অবাক করার মতো ব্যতিক্রম। কিপার-ব্যাটসম্যান হিসেবে একাধিক ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়লেন এই টেস্টে। কিপিং করা ৫২ টেস্টে তার ব্যাটিং গড় ৩৮.৭৪, শুধু ব্যাটসম্যান হিসেবে খেলা ১২ টেস্টে গড় ২৪.৪৭।

মুশফিক বললেন সেই পুরোনো কথাগুলোই, তার ব্যাটিংয়ে সহায়তা করে কিপিং। জানালেন, মাঠের বাইরে থাকতে তার ভালো লাগে না।

“কিপিং আমাকে অনেক বেশি সাহায্য করে। এমন নয় কিপিং করলে আমি প্রতি ম্যাচেই একশ বা দুইশ করব। কিন্তু কিপিংটা একটা প্রক্রিয়া এবং আমি প্রক্রিয়ায় অনেক বেশি বিশ্বাসী। আমার মনে হয়, এটা অনেক সাহায্য করে। এখন টিম ম্যানেজমেন্ট যেটা চাইবে, সেটা তো তাদের ব্যাপার। সেভাবেই অবদান রাখতে চেষ্টা করি।”

“অনেক সময় কিপিং করে বা ব্যাটিং করে ওয়ার্কলোড বেশি হয়ে যায়। কিন্তু আমি এই চ্যালেঞ্জ উপভোগ করি। আমি এমন একজন মানুষ, চাই না ড্রেসিংরুমে বসে থাকতে। যতক্ষণ মাঠে থাকব, আমি যেন দলের জন্য কিছু করতে পারি, নইলে খারাপ লাগে। সামনে এই দায়িত্ব আমাকে দিলে আমার মনে হয় আমি আরও ভালো ফল দিতে পারব।”