মুমিনুল-মুশফিকের রেকর্ড জুটিতে বাংলাদেশের দিন

কুয়াশামাখা সকাল নিয়ে এসেছিল বিপদের বার্তা। উইকেটে ছিল আর্দ্রতা, জিম্বাবুয়ের পেসারদের বোলিংয়ে থাকল ঝাঁঝ, বাংলাদেশের টপ অর্ডার ব্যর্থ আবার। বাতাসে ভাসছিল শঙ্কার রেণু। কিন্তু সময়ের সঙ্গে দিনটি হয়ে উঠল রৌদ্রোজ্জ্বল, মুমিনুল হক ও মুশফিকুর রহিমের ব্যাটিং দীপ্তিতে দলের ইনিংসও হয়ে উঠল ঝলমলে। বারবার দুইশর নিচে গুটিয়ে যাওয়া দলের এক জুটিতেই এল দুইশর বেশি। অনেক দিন পর টেস্ট ক্রিকেটে বাংলাদেশ পেল আনন্দময় দিন।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 Nov 2018, 12:30 PM
Updated : 11 Nov 2018, 12:30 PM

শুরুর বিপর্যয় কাটিয়ে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে মিরপুর টেস্টের প্রথম দিন নিজেদের করে নিয়েছে বাংলাদেশ। মুমিনুল-মুশফিকের সেঞ্চুরি ও রেকর্ড জুটিতে প্রথম দিনে বাংলাদেশ তুলেছে ৯০ ওভারে ৫ উইকেটে ৩০৩ রান।

ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার দেড়শ ছাড়ানো ইনিংসে মুমিনুল ফিরেছেন ১৬১ রানে। ১১১ রানে অপরাজিত থেকে দিন শেষ করেছেন মুশফিক। আগের আট ইনিংসে দুইশর নিচে গুটিয়ে গেছে যে দল, এ দিন সেই দলই পেয়েছে ২৬৬ রানের জুটি। চতুর্থ জুটিতে যা বাংলাদেশের প্রথম দুইশ রানের জুটি।

এই জুটির রাজত্বের আগে বাংলোদেশের ব্যাটিংয়ে ছিল আত্মসমর্পণের পুরোনো গল্প। টস জিতেছেন মাহমুদউল্লাহ, আগে ব্যাট করার কাঙ্ক্ষিত সুযোগটি পেয়েছে বাংলাদেশ। শুরুর আর্দ্রতায় উইকেটে ছিল প্রাণ। জিম্বাবুয়ের পেসাররা তা কাজে লাগিয়েছে। চ্যালেঞ্জ ছিল প্রথম ঘণ্টা নিরাপদে কাটানো। কিন্তু মুখ থুবড়ে পড়েছে টপ অর্ডার।

ইমরুল কায়েস আউট হলেন কাইল জার্ভিসের দারুণ ডেলিভারিতে। উইকেটের পেছনে রেজিস চাকাভার ক্যাচটি ছিল আরও দুর্দান্ত। কিন্তু বলটি ছেড়ে দেওয়ার সুযোগও ছিল ইমরুলের। আউট হলেন ১৬ বলে শূন্য রানে, বাংলাদেশের কোনো ওপেনারের সবচেয়ে বেশি বল খেলে শূন্য রানে আউটের রেকর্ড।

লিটন দাস ক্যাচ দিলেন প্রিয় ফ্লিক শটে। নাজমুল হোসেন শান্তর জায়গায় সুযোগ পাওয়া মোহাম্মদ মিঠুন অভিষেকে যে শটে শূন্য রানে ফিরলেন, ওয়ানডেতে ইনিংসের শুরুতেও অমন বাইরের বল তাড়া করা অপরাধের সামিল।

স্কোরবোর্ডে রান তখন ৩ উইকেটে ২৬, চোখরাঙানি আরেকটি ব্যাটিং ব্যর্থতার। মুমিনুল ও মুশফিকের শুরুটাও আশ্বাস দিতে পারছিল না ভরসার। বিশেষ করে মুমিনুল ছিলেন নড়বড়ে। আগের ৮ ইনিংসে ৬৯ রান আত্মবিশ্বাসের যতটা কেড়ে নিয়েছিল, তার পুরোটাই প্রতিফলিত হচ্ছিল ব্যাটিংয়ে।

কঠিন সময়ে অনেক সময়ই লাগে ভাগ্যের ছোঁয়া। সেই সৌভাগ্যের ছোঁয়া পেলেন মুমিনুল। উইকেটে কাটানো সময় তাকে ফিরিয়ে দিল বিশ্বাস। সময়ের সঙ্গে ব্যাট ছড়াতে থাকল সৌরভ। পাল্টে যেতে থাকল স্কোরবোর্ডের রুগ্ন চেহারা।

লাঞ্চের আগে আর কোনো উইকেট হারায়নি বাংলাদেশ। তবে অবস্থান নিরাপদ ছিল না তখনও। দাপটের শুরু দ্বিতীয় সেশনে। প্রথম সেশনে ৯ রানে জীবন পাওয়া মুমিনুল পরের সেশনের শুরুতেই জীবন পেলেন ২৫ রানে। হয়তো বুঝে গেলেন, দিনটি তারই। বেড়ে গেল ব্যাটের ধার। বাড়ল রানের গতি।

লাঞ্চ আর চা বিরতির মাঝের সেশনে ৩২ ওভারে ১৫১ রান তুলেছে বাংলাদেশ। মুমিনুলের ব্যাট থেকেই এসেছে ১০০ বলে ৯০!

২৫ রানে সেশন শুরু করে ফিফটি পেরিয়ে মুমিনুল এই সেশনেই ছাড়িয়ে যান সেঞ্চুরি। ৯২ বলে করেছিলেন ফিফটি, ক্যারিয়ারের সপ্তম সেঞ্চুরি করেছেন ১৫০ বলে।

সেখানেই না থেমে এগিয়ে যান আরও। বাংলাদেশের হয়ে রেকর্ড তৃতীয়বার স্পর্শ করেন দেড়শ।

মুশফিকের ব্যাটিং তুলনায় ছিল আরও বেশি নিখুঁত, আরও আঁটসাঁট। আরেকপাশ থেকে মুমিনুলকে নির্ভরতা জুগিয়ে গেছেন ব্যাটিংয়ে ও মানসিক সমর্থনে।

দুজনের ২৬৬ রানের জুটি ছাড়িয়ে যায় চতুর্থ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের আগের রেকর্ড। যে রেকর্ডেও ছিলেন মুমিনুল, এই বছরের শুরুতে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে চট্টগ্রামে লিটন দাসের সঙ্গে ১৮০ রানের জুটি।

এই জুটি শেষ পর্যন্ত থামাতে পারে জিম্বাবুয়ে দ্বিতীয় নতুন বলে। বাইরের বল শরীর থেকে দূরে ড্রাইভ করে মুমিনল ক্যাচ দেন পয়েন্টে। ১৯ চারে ২৪৭ বলে ১৫১ রানের ইনিংস খেলে যখন ফিরছেন, অভিনন্দন জানাতে ড্রেসিং রুমের বাইরে দাঁড়িয়ে সব সতীর্থ।

মুমিনুলের সেঞ্চুরির সময় উচ্ছ্বাসটা বেশি ছিল মুশফিকের। নিজে সেঞ্চুরি ছোঁয়ার পর তার উদযাপন হলো আরও খ্যাপাটে। ষষ্ঠ টেস্ট সেঞ্চুরি করেছেন ১৮৭ বলে।

মুমিনুলের পর নাইটওয়াচম্যান তাইজুলকেও হারিয়েছে বাংলাদেশ। দিনের শেষ ওভারে সিঙ্গেল না নিয়ে স্ট্রাইক ধরে রেখে মাহমুদউল্লাহকে আড়াল করেছেন মুশফিক।

সব মিলিয়ে মুশফিকের ব্যাটে বার্তা আরও বড় কিছুর। রানে ফেরার জন্য এর চেয়ে আদর্শ ভিত্তি আর হয়তো পাবেন না মাহমুদউল্লাহও।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৯০ ওভারে ৩০৩/৫ (লিটন ৯, ইমরুল ০, মুমিনুল ১৬১, মিঠুন ০, মুশফিক ১১১*, তাইজুল ৪, মাহমুদউল্লাহ ০*; জার্ভিস ১৯-৫-৪৮-৩, চাটারা ১৮-১০-২৮-১, টিরিপানো ১৫-৩-৩৩-১, রাজা ১২-১-৬৩-০, উইলিয়ামস ৮-০-৩১-০, মাভুটা ১৬-০-৭৯-০, মাসাকাদজা ২-০-৭-০)