মিরপুরে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ, নিশ্চিত তামিম

মাঠের বাইরে থেকে দলের হার দেখা একটু বেশিই কঠিন। কিছু করতে না পারার অসহায়ত্ব কাজ করে। সঙ্গ দিতে না পারার অপরাধবোধ কাজ করে। তামিম ইকবালের সেই অভিজ্ঞতা হলো সিলেট টেস্টের সময়। তবে চোট নিয়ে দলের বাইরে থাকা ব্যাটসম্যানের নিশ্চিত বিশ্বাস, মিরপুর টেস্টে দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়াবে বাংলাদেশ দল।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 8 Nov 2018, 01:23 PM
Updated : 8 Nov 2018, 01:23 PM

চোটের কারণে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে নেই তামিম ও সাকিব আল হাসান। জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে দলের সেরা দুই পারফরমারকে লাগবে না, সিরিজ শুরুর আগে এটিই ছিল আলোচনা। কিন্তু সিলেট টেস্টে বাংলাদেশ উড়ে গেছে জিম্বাবুয়ের কাছে। দুই ইনিংসেই মুখ থুবড়ে পড়েছে ব্যাটিং।  

গত এশিয়া কাপের প্রথম ম্যাচে চোট পেয়ে ছিটকে যাওয়া তামিম এখন আছেন মাঠে ফেরার লড়াইয়ে। হালকা নেট সেশন শুরু করেছেন, পুরোপুরি নেট সেশন শুরু করবেন দিন তিনেকের মধ্যে। বৃহস্পতিবার মিরপুর একাডেমি মাঠে নেট সেশন শেষে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হলেন তামিম।

সিলেট টেস্টে দল বাজে ব্যাটিং করেছে, এটা অকপটে স্বীকার করলেন দেশের সফলতম ব্যাটসম্যান। তবে সতীর্থদের পারফরম্যান্স নিয়ে খুব বেশি কাঁটাছেড়া করতে চান না তিনি।

“আমার মনে হয় আমাদের উচিত ছিল প্রথম ইনিংসে ভাল ব্যাট করা। কোনো সন্দেহ নেই আমরা বাজে ব্যাট করেছি। তবে আমি ঐ ড্রেসিংরুমে ছিলাম, ১২ বছর ধরে আছি। আমি থাকা অবস্থাতেও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি অনেক হয়েছি। আমি এখন বাইরে বসে আলোচনা করব, আমার মতে এটি ভালো হবে না।”

“আমি অনেক কিছু দেখেছি, অনেক কিছু ভিন্ন মনে হয়েছে অথবা আমার কাছে মনে হয়েছে যে, এখানে আমরা ভালো করতে পারতাম, ওখানে খারাপ হয়েছে। তবে মন্তব্য করা কিংবা আলোচনা করাটা ঠিক হবে না। কারণ আমি ও সাকিব দলে এখন নেই, তবে আমরা থাকার সময়েও অনেক খারাপ পরিস্থিতির মুখোমুখি হয়েছিলাম। আমি বাইরের কেউ না, আমিও দলেরই অংশ। সুতরাং আমার ক্ষেত্রে মন্তব্য করাটা ভাল দেখায় না।”

সংবাদমাধ্যমে বলতে না চাইলেও তামিম জানালেন, টেস্ট চলার সময় এবং টেস্ট শেষেও দলের অনেকের সঙ্গে তার কথা হয়েছে। নিয়মিত যোগাযোগ হচ্ছে। খেলার বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনাও হয়েছে।

“আমি কিছু ক্রিকেটারের সাথে কথা বলেছি। এক-দুইজন আমাকেও ফোন করেছে, কি করলে ভালো হয় সেটি জানার জন্য। এটি আসলে অনেক বেশি ব্যক্তিগত বিষয়। এই সম্পর্কে আমার কথা বলা ঠিক হবে না। আমার তরফ থেকে যতটা সাহায্য করার দরকার, করেছি। আমি যেটি মনে করেছি, যে জিনিসটি ভালো হতে পারত, সেই বার্তাও আমি যাদেরকে দেওয়ার দরকার, অবশ্যই দিয়েছি।”

“দিন শেষে আমরা একটি দল। ওরা যদি এখন খারাপ খেলে, সেটি আমার দিকেও আসবে, কারণ আমিও দলেরই অংশ। এই মুহূর্তে আমি খেলছি না, তবে পরবর্তী টেস্ট সিরিজেই খেলব। তাই কোনো মন্তব্য করা ঠিক হবে না।”

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ থেকে বাংলাদেশের পাওয়ার ছিল সামান্যই। প্রথম টেস্টে হারের পর এখন আর প্রাপ্তির সামান্য কিছুও নেই। বরং পরের টেস্ট জিতে মান বাঁচানোই এখন চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জে বাংলাদেশ দারুণভাবে জিতবে, স্থির বিশ্বাস তামিমের।

“আমি পুরো শতভাগ নিশ্চিত যে মিরপুরে ওরা ফিরে আসবে। দলের ১৫ জনসহ আমি নিজেও নিশ্চিত যে আমরা সেরাটাই খেলব। যেভাবে খেলেছি, তার চেয়ে আমরা অনেক ভালো দল। এখানে অনেক আলোচনা হচ্ছে, আমরা ওয়ানডের মত টেস্ট সেভাবে খেলতে পারছি না। এটি সত্যি, আমাকে স্বীকার করতে হবে। তবে আমার কাছ থেকে এটাও কেউ নিয়ে যেতে পারবে না যে, আমরা ভাল টেস্ট খেলা শুরু করেছি।”

“আমরা এরই মধ্যে বিশ্বের সেরা দুটি টেস্ট দলকে হারিয়েছি। শুধু হারিয়েছি বলেই নয়, আমরা খেলেছি, সেটাও দেখতে হবে। হ্যাঁ, সম্প্রতি ওয়েস্ট ইন্ডিজ সিরিজ ভালো যায়নি একেবারেই। তবে আমরা টেস্ট ক্রিকেটে উন্নতি করছি। যতটুকু করা দরকার ছিল এতদিনে এসে এবং গ্রাফটি যতটুকু উপরে ওঠা দরকার ছিল, ততটা ওঠেনি। কিন্তু এটা যদি কেউ বলে যে আমরা কিছুই না, তাহলে আমি কখনোই মানব না।”

উন্নতির প্রসঙ্গেই চলে আসে সিলেট টেস্ট শেষে ভারপ্রাপ্ত টেস্ট অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর মন্তব্য। টানা আট টেস্ট ইনিংসে দুইশ করতে পারেনি বাংলাদেশ। এভাবে ব্যাটিং করে গেলে টেস্ট খেলার মানে হয় না, সিলেট টেস্টে হারের পর আক্ষেপ নিয়ে বলেছিলেন মাহমুদউল্লাহ।

ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক যেভাবে বলেছেন, সেটির সঙ্গে একমত নন তামিম। তবে কোন প্রেক্ষিতে, কোন জায়গা থেকে অমন মন্তব্য, সেটি উপলব্ধি করতে পারছেন বাংলাদেশকে একটি টেস্টে নেতৃত্ব দেওয়া ওপেনার।

“দেখুন, আমি এতে একমত নই। তবে বাস্তবতা বুঝি। আমরা কখনোই ভাবিনি যে জিম্বাবুয়ের কাছে আমাদের হারতে হবে। আমি নিশ্চিত যে ক্রিকেটাররা বলুন বা দর্শক, বোর্ড, সাংবাদিকরা বলুন, সবাই আশা করেছিল আমরা জিতব। এমন অবস্থায় উল্টো কিছু হলে মানুষ অনেক আঘাত পায়। তারা শকড হয়ে যায়। হতাশ হয়ে পরে পরস্পরকে দোষারোপ করতে থাকে। রিয়াদ ভাইয়ের ঐ মন্তব্যটি সম্ভবত সেখান থেকেই এসেছে। এটাই আমি বিশ্বাস করি।”

“আমার কথা বলুন বা উনি, আমরা সবাই জানি যে ক্রিকেটাররা কতটা কষ্ট করছে টেস্ট ফরম্যাটে ভাল করার জন্য। কারণ এটাই হল মূল ক্রিকেট, যে যাই বলুক না কেন। এত কষ্ট করার পরও যখন ফলাফল পাচ্ছি না, তখন কিছু সময় সেটি বেশ হতাশার। তবে এমন একটি সময় আসবে, যখন আমরা ঘুরে দাঁড়াব। একই প্রতিপক্ষ কিংবা অন্য প্রতিপক্ষের বিপক্ষে আরও ভালো করব। এখন খুবই সাধারণ বিষয় যে মানুষ সমালোচনা করবে, পেছনে কথা বলবে। খুব ভাল করে জানি যে আমরা যখন আবার একটি সিরিজে ভাল খেলব, তখন এই মানুষজনই আমাদের বাহবা দিবে। এটাই পেশাদার ক্রিকেটের একটি অংশ। এসব মেনে নেওয়ার জন্য এবং সামনে ভালভাবে এগিয়ে যাওয়ার ক্ষেত্রে মানসিক দিক থেকে আমরা যথেষ্ট শক্তিশালী।”