ব্যাটিং ব্যর্থতায় বিব্রতকর হার

জিম্বাবুয়ের স্পিনের সামনে দাঁড়াতে পারল না বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনের সকালে সিকান্দার রাজা স্বাগতিকদের টপ অর্ডারকে কাঁপিয়ে দেওয়ার পর বাকিটা সারলেন দুই অভিষিক্ত ব্র্যান্ডন মাভুটা ও ওয়েলিংটন মাসাকাদজা। সিলেটের অভিষেক টেস্ট সফরকারীরা জিতল ১৫১ রনে।

অনীক মিশতাকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 Nov 2018, 03:37 AM
Updated : 6 Nov 2018, 03:34 PM

দেশের বাইরে ১৭ বছর পর জয়
 
দুই ইনিংসেই বাংলাদেশের ব্যাটিংকে গুঁড়িয়ে দিয়ে দেশের বাইরে ১৭ বছর পর টেস্ট জিতল জিম্বাবুয়ে। প্রতিপক্ষের মাঠে তাদের সবশেষ জয়টিও ছিল বাংলাদেশের বিপক্ষে। ২০০১ সালের নভেম্বরে চট্টগ্রাম টেস্টে জিম্বাবুয়ে জিতেছিল ৮ উইকেটে। 
 
দেশের বাইরে এটি তাদের তৃতীয় জয়। জিম্বাবুয়ের অন্য জয়টি পেশাওয়ারে, ১৯৯৮ সালে পাকিস্তানকে তারা হারিয়েছিল ৭ উইকেটে।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:
 
জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৮২
 
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৪৩
 
জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস: ১৮১ 
 
বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩২১) ৬৩.১ ওভারে ১৬৯ (লিটন ২৩, ইমরুল ৪৩, মুমিনুল ৯, মাহমুদউ্ল্লাহ ১৬, শান্ত ১৩, মুশফিক ১৩, আরিফুল ৩৮, মিরাজ ৭, তাইজুল ০, অপু ০, আবু জায়েদ ০*; জার্ভিস ১৪-৫-২৯-১, চাটারা ৯-২-২৫-০, রাজা ১৭-১-৪১-৩, উইলিয়ামস ৮-২-১৩-০, মাভুটা ১০-২-২১-৪, ওয়েলিংটন ৫.১-০-৩৩-২)
 
ফল: জিম্বাবুয়ে ১৫১ রানে জয়ী
 
ম্যান অব দা ম্যাচ: শন উইলিয়ামস

জিম্বাবুয়ের ১৫১ রানের জয়
 
ক্রিজে সঙ্গী শেষ ব্যাটসম্যান আবু জায়েদ চৌধুরী। তাই রান যতটা বাড়িয়ে নিতে মরিয়া ছিলেন আরিফুল হক। ওয়েলিংটন মাসাকাদজার আগের ওভারে হাকিয়েছিলেন এক ছক্কা আর দুই চার।  পরের ওভারে আবার বাঁহাতি স্পিনারকে উড়াতে চাইলেন ছক্কায়। টাইমিং করতে পারেননি অনেকটা উপরে উঠে যাওয়া ক্যাচ ছুটে এসে গ্লাভসে জমান রেজিস চাকাভা। জিম্বাবুয়ে পায় ১৫১ রানের জয়।
 
৩২১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় বাংলাদেশ গুটিয়ে যায় ১৬৯ রানে। টেস্টে এনিয়ে টানা আট ইনিংসে দুইশ রানের নিচে থামল তারা। 
 
৩৭ বলে চারটি চার আর দুটি ছক্কায় আরিফুল করেন ৩৮। অভিষিক্ত এই অলরাউন্ডার প্রথম ইনিংসে অপরাজিত ছিলেন ৪১ রানে।

মাভুটার চতুর্থ শিকার অপু
 
অভিষিক্ত নাজমুল ইসলাম অপুকে গোল্ডেন ডাকের স্বাদ দিলেন আরেক অভিষিক্ত ব্র্যান্ডন মাভুটা। দারুণ বোলিংয়ে তুলে নিলেন নিজের চতুর্থ উইকেট। 
 
লেগ স্পিন ব্যাটে খেলতে পারেননি অপু। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ দিলে রিভিউ নেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায় বল লাগতো বেলসে। পাল্টায়নি আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত। ১৫৫ রানে নবম উইকেট হারাল বাংলাদেশ।

তাইজুলকে ফিরিয়ে ওয়েলিংটনের প্রথম টেস্ট উইকেট

রানের খাতা খোলার আগেই তাইজুল ইসলামকে ফিরিয়ে নিজের প্রথম টেস্ট উইকেট নিয়েছেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা।

বাঁহাতি স্পিনারকে ছক্কায় উড়াতে চেয়েছিলেন তাইজুল। টাইমিং করতে পারেননি, লং অনে সহজ ক্যাচ মুঠোয় নেন ব্রেন্ডন টেইলর। ১৫১ রানে অষ্টম উইকেট হারাল বাংলাদেশ।

মাভুটার তৃতীয় শিকার মিরাজ

মেহেদী হাসান মিরাজকে ফিরিয়ে নিজের তৃতীয় টেস্ট উইকেট নিয়েছেন ব্র্যান্ডন মাভুটা। দ্বিতীয় সেশনের মধ্যে জয় তুলে নেওয়ার আশা জাগিয়েছে জিম্বাবুয়ে। 

লেগ স্পিন পা বাড়িয়ে ডিফেন্স করতে চেয়েছিলেন মিরাজ। স্পিন করে বেরিয়ে যাওয়া বল তার ব্যাটের কানা ছুঁয়ে জমা পড়ে রেজিস চাকাভার গ্লাভসে।

১৫ বলে ৭ রান করে ফিরেন মিরাজ। ১৫০ রানে সপ্তম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

মুশফিককে ফেরালেন মাভুটা

মুশফিকুর রহিমকে ফিরিয়ে জিম্বাবুয়েকে জয়ের আরও কাছে নিয়ে গেছেন ব্র্যান্ডন মাভুটা।

লেগ স্পিনারকে আগের ওভারে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাটে-বলে করতে পারেননি মুশফিক। পরের ওভারে ব্যাটে -বলে করতে পারলেন কিন্তু খেলতে পারলেন না ঠিক মতো। ব্যাটের কানায় লেগে ডিপ স্কয়ার লেগে যায় ক্যাচ। ঝাঁপিয়ে দুই হাতে ক্যাচ মুঠোয় নেন ওয়েলিংটন মাসাকাদজা।

৪৪ বলে ১৩ রান করে ফিরেন মুশফিক। ১৩২ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারাল বাংলাদেশ। ক্রিজে আরিফুল হকের সঙ্গী মেহেদী হাসান মিরাজ। 

প্রথম সেশনে ৫ উইকেট হারিয়ে ধুঁকছে বাংলাদেশ

ইমরুল কায়েস ও লিটন দাসের সতর্ক ব্যাটিংয়ে চতুর্থ দিনের শুরুটা ভালো করেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু সময় যত গড়িয়েছে ম্যাচে নিয়ন্ত্রণ তত দৃঢ় হয়েছে জিম্বাবুয়ের। প্রথম সেশনেই তুলে নিয়েছে স্বাগতিকদের পাঁচ উইকেট।

লাঞ্চে যাওয়ার সময় বাংলাদেশের স্কোর ১১১/৫। মুশফিকুর রহিম ব্যাট করছেন ৩ রানে। জয়ের জন্য স্বাগতিকদের চাই আরও ২১০ রান।

দুই ওপেনারের পর অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে ফেরান সিকান্দার রাজা। কাইল জার্ভিসের বল স্টাম্পে টেনে এনে বোল্ড হন মুমিনুল হক। লাঞ্চের আগে শেষ ওভারে ব্র্যান্ডন মাভুটাকে উইকেট উপহার দেন নাজমুল হোসেন শান্ত।

শান্তকে ফেরালেন মাভুটা

নাজমুল হোসেন শান্তকে ফিরিয়ে টেস্টে নিজের প্রথম উইকেট নিলেন ব্র্যান্ডন মাভুটা। জয়ের পথে আরেকটু এগিয়ে গেল জিম্বাবুয়ে।

বাজে বলে বাজে শটে ফিরেন তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান। ঠিক মতো গুগলি করতে পারেননি মাভুটা। সেই বলই তাকে এনে দেয় উইকেট। শর্ট বলে পয়েন্টে সিকান্দার রাজাকে ক্যাচ দেন শান্ত।

৩২ বলে ১৩ রান করেন এই তরুণ। ১১১ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। জয়ের জন্য স্বাগতিকদের প্রয়োজন আরও ২১০ রান।

রাজার তৃতীয় শিকার মাহমুদউল্লাহ

আবারও নিজের উইকেট ছুড়ে এলেন মাহমুদউল্লাহ। বাংলাদেশ অধিনায়ক ফিরলেন সিকান্দার রাজার অফ স্পিনে বাজে এক শটে।

সুইপ করবেন না ডিফেন্ড করবেন এ নিয়ে দ্বিধায় মাহমুদউল্লাহ খেলেন অদ্ভুত শট। বলে ছোঁয়াতে পারেননি ব্যাট। গ্লাভসে ছুঁয়ে শরীরে লেগে সহজ ক্যাচ যায় শর্ট লেগে বদলি ফিল্ডার ক্রেইগ আরভিনের কাছে।

৪৫ বলে ১৬ রান করে ফিরেন বাংলাদেশ অধিনায়ক। ১০২ রানে চতুর্থ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ক্রিজে নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গী মুশফিকুর রহিম।

রাজার বলে বোল্ড ইমরুল

সকাল থেকে টানা বোলিং করে যাওয়া সিকান্দার রাজা বোল্ড করে থামালেন ইমরুল কায়েসকে।

রাজাকে ভালো মতোই সামাল দিচ্ছিলেন বাঁহাতি এই ওপেনার। ফিরে গেলেন অফ স্পিনারকে অপপ্রয়োজনীয় প্যাডেল সুইপ করতে গিয়ে। লেগ স্টাম্পের ফুল লেংথ বলে ইমরুল ঠিক মতো সুইপ করতে পারেননি। গ্লাভসে লেগে বল উপড়ে ফেলে তার লেগ স্টাম্প।

১০৩ বলে ৪৩ রান করে ফিরেন ইমরুল। ৮৩ রানে তৃতীয় উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ক্রিজে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহর সঙ্গী তরুণ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান নাজমুল হোসেন শান্ত। 

মুমিনুল ব্যর্থ আবারও

ভালো কিছুর ইঙ্গিত দিয়ে মুমিনুল আবার আউট হলেন বাজে শটে। আরেকটু শঙ্কা ঘিরে ধরল বাংলাদেশকে।

প্রথম বলেই সিকান্দার রাজাকে চার মেরেছিলেন মুমিনুল। রাজাকেই পরে চার মেরেছেন মাথার ওপর দিয়ে। কিন্তু এবার আউট হলেন কাইল জার্ভিসের বলে, যে বলটি না খেলে ছাড়তে পারতেন অনায়াসেই।

লেংথ থেকে একটু বাড়তি লাফানো বল বেরিয়ে যাচ্ছিল। কিন্তু পজিশনে না গিয়েই ব্যাট পেতে দিলেন মুমিনুল। কানাল লেগে বল এল স্টাম্পে।

মুমিনুল ফিরলেন ৯ রানে। ৩২১ রান তাড়ায় বাংলাদেশ ২ উইকেটে ৬৭।

রিভিউ নিয়ে লিটনকে ফেরাল জিম্বাবুয়ে

লিটন দাসকে এলবিডব্লিউ করে বাংলাদেশের শুরুর জুটির প্রতিরোধ ভেঙেছেন সিকান্দার রাজা।

অফ স্পিনারের বলের লেংথ বুঝতে ভুল করেন লিটন। স্টাম্পের সাদামাটা বল পুল করতে গিয়ে লাইন মিস করে ব্যাটে খেলতে পারেননি ওই ওপেনার। আম্পায়ার এলবিডব্লিউ না দিলে রিভিউ নেন জিম্বাবুয়ে অধিনায়ক হ্যামিল্টন মাসাকাদজা। বল ট্র্যাকিংয়ে দেখা যায় বল লাগতো মিডল স্টাম্পে। পাল্টায় সিদ্ধান্ত, ৫৬ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ।

৭৫ বলে তিন চারে ২৩ রান করেন লিটন। ক্রিজে ইমরুল কায়েসের সঙ্গী আরেক বাঁহাতি ব্যাটসম্যান মুমিনুল হক। জয়ের জন্য বাংলাদেশের চাই আরও ২৬৫ রান।

জীবন পেয়ে ইমরুল-লিটন জুটির পঞ্চাশ

দ্বিতীয় ইনিংসে শুরুর জুটিতে বাংলাদেশ পেল সিলেট টেস্টে নিজেদের প্রথম পঞ্চাশ রানের জুটি। সতর্ক ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নিচ্ছেন ইমরুল কায়েস ও লিটন দাস।

২১তম ওভারের শেষ বলে ইমরুলের সিঙ্গেলে পঞ্চাশে যায় উদ্বোধনী জুটির রান। প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটি ছিল ৩০ রানের। 

জুটির রান পঞ্চাশ ছোঁয়ার আগে দুটি সুযোগ হাতছাড়া করে জিম্বাবুয়ে। পঞ্চদশ ওভারের শেষ বলে আসে প্রথম সুযোগ। সিকান্দার রাজার বল বাড়তি টার্ন করে লিটনের ব্যাটের কানা ছুঁয়ে ক্যাচ যায় শর্ট লেগে। কিন্তু ব্রায়ান চারি সেই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেননি। সে সময় ২১ রানে ব্যাট করছিলেন লিটন।

চার ওভার পর আবার আসে সুযোগ। কাইল জার্ভিসের বলে ঠিক মতো কাট করতে পারেননি ইমরুল কায়েস। প্রথম স্লিপে থাকা হ্যামিল্টন মাসাকাদজা মুঠোয় জমাতে পারেননি ক্যাচ। উল্টো বাউন্ডারি পেয়ে যান ইমরুল। বাঁহাতি এই ওপেনার তখন ছিল ২২ রানে।  

বাংলাদেশের সামনে রেকর্ড গড়ার চ্যালেঞ্জ

তৃতীয় দিন কিছু বল বাউন্স করেছে, কিছু বাড়তি টার্ন করেছে। কিছু বল গেছে সোজা, কিছু নিচু হয়েছে। চতুর্থ দিন বাংলাদেশের সামনে অপেক্ষা করছে বড় চ্যালেঞ্জ। স্বাগতিক কোচ স্টিভ রোডস মনে করেন, এই চ্যালেঞ্জে জেতার সামর্থ্য আছে তার শিষ্যদের। 

আগের দিন আলোকস্বল্পতায় ১৩.৫ ওভার খেলা কম হওয়ায় বুধবার সিলেট আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে খেলা শুরু হবে নির্ধারিত সময়ের আধ ঘণ্টা আগে সকাল সাড়ে নয়টায়।

৩২১ রানের লক্ষ্য তাড়ায় তৃতীয় দিন শেষে কোনো উইকেট না হারিয়ে ২৬ রান করে বাংলাদেশ। জয়ের জন্য শেষ দুই দিনে তাদের প্রয়োজন আরও ২৯৫ রান।

২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ২১৫ তাড়ায় জয় টেস্টে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় রান তাড়ার রেকর্ড। বাংলাদেশে সবচেয়ে বড় রান তাড়া ২০০৮ সালে ৩১৭ করে নিউ জিল্যান্ডের জয়। এবার জিততে পারলে তাই একইসঙ্গে দুটি রেকর্ড নতুন করে গড়বে বাংলাদেশ।

টানা সাত ইনিংসে দুইশ রানের নিচে অলআউট হওয়া দলের জন্য এটা যথেষ্ট কঠিন কাজ। তবে অসম্ভব নয়।

তৃতীয় দিন শেষে সংক্ষিপ্ত স্কোর:

জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৮২

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ১৪৩

জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস: ১৮১

বাংলাদেশ ২য় ইনিংস: (লক্ষ্য ৩২১) ১০.১ ওভারে ২৬/০ (লিটন ১৪*, ইমরুল ১২*; জার্ভিস ৫-২-১১-০, চাটারা ৫-১-১৫-০, রাজা ০.১-০-০-০)