তাই বলে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষেও ১৪৩!

কেউ খোঁচা মারলেন বাইরের বলে, কেউ খেললেন শরীর থেকে দূরে। কারও কারও শটের আবার ব্যাখ্যা পাওয়াই কঠিন। ব্যাটসম্যানদের যেন প্রতিযোগিতা, কে বেশি দায়িত্বজ্ঞানহীন! গত বছরখানেক ধরে টেস্টে ধুঁকছে বাংলাদেশের ব্যাটিং। তাই বলে দেশের মাটিতে এমন নির্জীব উইকেটে জিম্বাবুয়ের নির্বিষ বোলিংয়েও এমন হাল! ব্যাটিং আরও একবার বাংলাদেশকে ডোবাল বিষাদের অন্ধকারে।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 4 Nov 2018, 11:50 AM
Updated : 4 Nov 2018, 03:49 PM

সিলেট টেস্টের প্রথম ইনিংসে জিম্বাবুয়েকে বড় লিড উপহার দিয়েছে বাংলাদেশ। জিম্বাবুয়ের ২৮২ রানের জবাবে রোববার বাংলাদেশ গুটিয়ে গেছে ১৪৩ রানেই। শেষ বিকেলে ব্যাটিংয়ে নেমে ২ ওভার জিম্বাবুয়ে কাটিয়ে দিয়েছে ১ রান তুলে। দ্বিতীয় দিন শেষে সফরকারীরা এগিয়ে ১৪০ রানে।

এ নিয়ে সবশেষ সাত টেস্ট ইনিংসে দুইশ করতে পারল না বাংলাদেশ। এর ছয়টিতেই ছুঁতে পারেনি দেড়শ। তবু জিম্বাবুয়ে বলেই এই ইনিংস যেন বেশি বিব্রতকর।

অথচ দিনের প্রথম সেশনটি ছিল বাংলাদেশের। তাইজুল হোসেনের স্পিন ঝলকে জিম্বাবুয়ে শেষ ৫ উইকেট হারায় ২১ রানের মধ্যে। কিন্তু বোলিংয়ের স্বস্তি লাঞ্চের পর রূপ নেয় ব্যাটিংয়ের হতাশায়। দুই সেশনে পাঁচটি করে উইকেট হারিয়ে বিধ্বস্ত দলের ব্যাটিং।

সবচেয়ে বড় হতাশা, ১০ উইকেটের একটিতেও উইকেট নেওয়ার মতো দারুণ কোনো ডেলিভারি করতে হয়নি জিম্বাবুয়ের বোলারদের। উইকেটে তেমন প্রাণ ছিল না, জিম্বাবুয়ের বোলিং আক্রমণও নয় খুব ধারাল। কিন্তু নিজেরা আত্মঘাতী হলে পতন ঠেকাবে কে! শুরুর ইমরুল কায়েস থেকে শেষের আবু জায়েদ চৌধুরী, সবাই ছিলেন একই পথের পথিক।

জিম্বাবুয়ের দুই পেসার মিলে নিয়েছেন পাঁচ উইকেট। এমনকি সিকান্দার রাজার সাদামাটা স্পিনেও বাংলাদেশ উপহার দিয়েছে তিন উইকেট।

লাঞ্চের পর প্রথম বলেই বাজে শট খেলেছিলেন ইমরুল। সেটিতে না পারলেও পরে সফল হয়েছেন উইকেট বিলিয়ে আসায়। টেন্ডাই চাটারার বাইরের বল টেনে এনেছেন স্টাম্পে।

স্রোতের সেই শুরু, পরের প্রায় সবাই বয়েছেন একই ধারায়। শরীর থেকে দূরে খেলেছেন লিটন দাস ও নাজমুল হোসেন শান্ত। অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ কি করতে চেয়েছিলেন, তিনি নিজেও মনে হয় জানেন না। মুমিনুল হকের আউটের ধরন আবারও জানান দিল, স্পিনে ক্রমেই তার ব্যাটে জাগছে সংশয়।

বিপর্যয়ে বরাবরের ত্রাতা মুশফিকুর রহিম লড়াই করছিলেন। দারুণ কিছু শটও খেলেছেন। চা-বিরতির পর শুরু করলেন দুর্দান্ত শটে চার মেরে। পরের বলে স্টাম্পের বাইরে বলে খোঁচা।

মেহেদী হাসান মিরাজের ব্যাটে ছিল আশার ইঙ্গিত। কিন্তু যে বলে শন উইলিয়ামসকে ফিরতি ক্যাচ দিলেন, সেটিতে অনেক চেষ্টা করেও আউট হওয়া কঠিন।

বিরুদ্ধ স্রোতে সাঁতরেছেন কেবল দলের নবীনতম সদস্য। অভিষিক্ত আরিফুল হক লড়াই করেছেন। ৪৯ রানে ৫ উইকেট পড়ার পর নেমেছিলেন, কিন্তু চাপে নুইয়ে পড়ার ছাপ ছিল না তার ব্যাটিংয়ে। ছিলেন যথেষ্ট আত্মবিশ্বাসী। কিন্তু যোগ্য একজন সঙ্গী যে পেলেন না! সিঙ্গেল নেওয়া, না নেওয়ার দোটানায় রান আউট শেষ ব্যাটসম্যান আবু জায়েদ। আরিফুল তখন অপরাজিত ৯৬ বলে ৪১ রান করে।

আরিফুল যখন ফিরছেন অভিষেকে ফিফটি না পাওয়ার হতাশা নিয়ে, বাংলাদেশের ড্রেসিং রুম তখন নিমজ্জিত আরও বড় হতাশায়। ব্যাট করতে হবে শেষ ইনিংসে, প্রথম ইনিংসেই ১৩৯ রানে পিছিয়ে থাকা মানে হারকে আলিঙ্গন করা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

জিম্বাবুয়ে ১ম ইনিংস: ২৮২

বাংলাদেশ ১ম ইনিংস: ৫১ ওভারে ১৪৩ (লিটন ৯, ইমরুল ৫, মুমিনুল ১১, শান্ত ৫, মাহমুদউল্লাহ ০, মুশফিকুর ৩১, আরিফুল ৪১*, মিরাজ ২১, তাইজুল ৮, অপু ৪, আবু জায়েদ ০; জার্ভিস ১১-২-২৮-২, চাটারা ১০-৪-১৯-৩, মাভুটা ৬-০-২৭-০, রাজা ১২-২-৩৫-৩, ওয়েলিংটন মাসাকাদজা ৮-২-২১-০, উইলিয়ামস ৪-০-৫-১)

জিম্বাবুয়ে ২য় ইনিংস: ২ ওভারে ১/০