লিটনের চ্যালেঞ্জ, লিটনের সুযোগ

ওয়ানডের সমাধান মেলেনি এখনও। ধাঁধা কিন্তু আছে টেস্ট ক্রিকেটও। তামিম ইকবালের উদ্বোধনী জুটির সঙ্গী কে? জিম্বাবুয়ে সিরিজে তামিম নেই, তবে এই সিরিজ থেকে মিলতে পারে তার ভবিষ্যত সঙ্গীর খোঁজ। যে লড়াইয়ে থাকবেন লিটন দাস। তার সামনে চ্যালেঞ্জ যেমন আছে, তেমনি থাকছে বড় সুযোগও।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 Nov 2018, 11:55 AM
Updated : 2 Nov 2018, 02:52 PM

লিটনের লড়াইটি শুধু নিজের সঙ্গেই নয়, ইমরুল কায়েসের সঙ্গেও। তবে সবশেষ ১৬ টেস্ট ইনিংসে ৪০ ছাড়াতে পারেননি ইমরুল। টেস্ট ক্যারিয়ারের সামগ্রিক ছবিটিও খুব উজ্জ্বল নয়। এই সিরিজে জায়গা পেয়েছেন মূলত ওয়ানডে সিরিজের দুর্দান্ত পারফরম্যান্সে। কিন্তু ভবিষ্যতের পানে তাকিয়ে দলের আগ্রহ ও কৌতুহলের বেশি জায়গা জুড়ে থাকবেন হয়তো লিটনই।

সিরিজ শুরুর আগে লিটনকে নিয়ে অনেক প্রশ্নের ভিড়। তবে মূল চ্যালেঞ্জ তার দুটি। টেস্ট দলে জায়গা পাকা করা। ওপেনিংয়ে নিজের সামর্থ্য প্রমাণ করা। জিম্বাবুয়ে সিরিজে যেহেতু ইনিংস শুরু করবেন, একসঙ্গে তাই দুটি প্রশ্নের উত্তরই দিতে পারে লিটনের ব্যাট।

লিটনকে বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ের ভবিষ্যৎ মনে করা হচ্ছে অনেকদিন। কিন্তু তিন বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ধুঁকতেই হয়েছে বেশি সময়। কিছুদিন আগে এশিয়া কাপ ফাইনালে দুর্দান্ত সেঞ্চুরিতে ইঙ্গিত দিয়েছেন ওয়ানডে ক্যারিয়োরের মোড় পাল্টে দেওয়ার। টেস্টের শুরুটা একদম খারাপ ছিল না। তবে খেই হারিয়েছেন পরে। এখন টেস্ট ক্রিকেটেও অপেক্ষা নতুন মোড় পাওয়ার।

তার প্রতিভা নিয়ে সন্দেহ নেই। তবে টেস্ট ক্রিকেটে ওপেনিংয়ে কতটা সফল হতে পারবেন, সেটি নিয়ে আছে সংশয়। এমনিতেই ইনিংসের শুরুতে খানিকটা নড়বড়ে থাকেন লিটন। ওয়ানডেতে সেই সময় কখনো কখনো পার করে দেওয়া যায় দ্রুত। টেস্টে সেই তুলনায় অনেক কঠিন। সকালে শুরুর সময়টাতেই উইকেট থাকে সবচেয়ে প্রাণবন্ত। লাল বলে ধারও থাকে বেশি সময়। পেসারদের নেই কোটা পূরণের সীমাবদ্ধতা। ওপেনার লিটনের চ্যালেঞ্জ তাই এখানে অনেক বেশি।

এমনিতে ঘরোয়া বড় দৈর্ঘ্যের ক্রিকেটে ওপেনিংয়ে দারুণ সফল লিটন। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ৯১ ইনিংস খেলেছেন, ইনিংস শুরু করেছেন তার ৭০টিতেই। ৩ হাজার ৬৪৭ রান করেছেন ৫৬.৯৮ গড়ে। তিন নম্বরে তিনটি ইনিংস খেলেছেন, গড় ৭০.৩৩। আর মিডল অর্ডারে খেলা ১৮ ইনিংসে গড় কেবল ৩১.৮৮।

ওপেন করতে নেমে ২৭৪ রানের ইনিংস খেলেছেন। জিম্বাবুয়ে সিরিজের আগেই দেশের ব্যাটসম্যানদের মধ্যে দ্রুততম ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড গড়েছেনে ইনিংস শুরু করেই। প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে ১৩ সেঞ্চুরিই ১২টিই ওপেনার হিসেবে, বাকি একটি তিন নম্বরে।

কিন্তু ছোট্ট টেস্ট ক্যারিয়ারে এখনও পর্যন্ত দেখা গেছে উল্টো ছবি। ১০ টেস্টে ৩টি ফিফটি করতে পেরেছেন, সেই তিনটি ৫, ৬ ও ৭ নম্বরে। ওপেন করা ৫ ইনিংস মিলিয়ে রান ৯৭।

ওপেনিংয়ে এই ব্যর্থতার একটি ঢাল অবশ্য চাইলে বানাতে পারেন। ওই ৫ ইনিংসই ছিল দেশের বাইরে কঠিন কন্ডিশনে। বিশেষ করে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে উইকেট ও কন্ডিশন মিলিয়ে গোটা দলের ব্যাটিংয়ের এমন দুরবস্থা ছিল যে, লিটনের ২৫, ৩৩ রানের ইনিংসগুলোও অন্যদের তুলনায় ছিল বড় কিছু।

তবে এই বাস্তবতাগুলো অতীতের আক্ষেপে প্রলেপ দিলেও ভবিষ্যতের আশা পূরণের নিশ্চয়তা দিতে পারছে না। সেটি পারে কেবল ২২ গজের পারফরম্যান্স। জিম্বাবুয়ে সিরিজ সেটির খুব ভালো সুযোগ। দেশের মাটিতে তুলনামূলক অনেক দুর্বল বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে রান করে আত্মবিশ্বাস পাওয়া, রান করার অভ্যাস গড়ার সুযোগ।

একটি জায়গায় আবার জিম্বাবুয়ের চেয়েও লিটনের বড় প্রতিপক্ষ তিনি নিজে। তাকে বিপাকে ফেলার মতো বোলার প্রতিপক্ষে খুব একটা নেই। বিপদে ফেলতে পারে তার সহজাত প্রবৃত্তি। শুরুর নড়বড়ে ভাবটা একটি বড় দুশ্চিন্তার জায়গা যেমন, তেমনি অনেকবার থিতু হয়েও ভালো খেলতে খেলতেই বিলিয়ে এসেছেন উইকেট। অতি রোমাঞ্চের পেছনে ছুটে খেলেছেন আত্মঘাতী শট। ৯৪ রান করে রঙ্গনা হেরাথকে বেরিয়ে এসে মারতে গিয়ে বল আকাশ উড়িয়ে আউট হয়েছেন। ৭০ রান করে কাগিসো রাবাদাকে পুল করে উইকেট হারিয়েছেন।

বোলিংয়ের নিচু মান, ব্যাটিং স্বর্গ উইকেট আর চাপহীন খেলার সুযোগ মিলিয়ে ঘরোয়া ক্রিকেটে আগ্রাসী ব্যাটিং করেও বড় ইনিংস খেলে ফেলা সম্ভব। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে সেই কাজটা অনেক কঠিন। জরুরি আগ্রাসন ও রক্ষণের সমন্বয়।

জিম্বাবুয়ে সিরিজের অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অবশ্য কোনো শেকলেই আপাতত আটকাতে চান না লিটনকে। বরং স্বাধীনতা দিচ্ছেন নিজের মতো খেলার।

“লিটন ফ্রি ফ্লোইং স্ট্রোক মেকার। তাকে যদি স্বাধীনতা দিতে পারি, তাহলে সে বড় ইনিংস খেলতে পারবে। ঘরোয়া ক্রিকেটে দেখিয়েছে সে বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য রাখে। যদি খুব বেশি কিছু চিন্তা করে নিজের স্বাভাবিক খেলাটাই খেলে তাহলে, তার ভাল খেলার অনেক সম্ভাবনা আছে।”

আপাতত দল তাকিয়ে সেই সম্ভাবনার দিকে। জিম্বাবুয়ে সিরিজ পুরোপুরি সমাধান না দিলেও মিলতে পারে ইঙ্গিত। এই সিরিজে সাফল্য পেলে হয়তো ওপেনিংয়ে নিজের নাম খোদাই করা হয়ে যাবে না, তবে সেই সম্ভাবনার পথে এগিয়ে যাওয়া হবে এক ধাপ। আর এই সিরিজে ব্যর্থ হলে, হয়তো হারিয়ে ফেলবেন সামনের কঠিনতর সিরিজের জন্য ভরসার জায়গা। প্রতিটি চ্যালেঞ্জই একেকটি সুযোগ। জিম্বাবুয়ে সিরিজ লিটনকে দিচ্ছে সেই সুযোগ।