কোহলির হ্যাটট্রিক সেঞ্চুরির দিনে জিতল ওয়েস্ট ইন্ডিজ

প্রায় প্রতিদিনই ছাপ রাখছেন রেকর্ড বইয়ের নানা পাতায়। এবার প্রথম ভারতীয় হিসেবে টানা তিন ওয়ানডেতে করলেন সেঞ্চুরি। তবে বিরল এক স্বাদও এ দিন পেলেন ভারতীয় অধিনায়ক। দেশের মাটিতে তার সেঞ্চুরির পরও মাত্র দ্বিতীয়বার হারল ভারত। দারুণ জয়ে সিরিজে সমতা ফেরাল ওয়েস্ট ইন্ডিজ।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Oct 2018, 05:29 PM
Updated : 27 Oct 2018, 05:29 PM

আগের ম্যাচে জয়ের কাছে গিয়েও হাতছাড়া করেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচ হয়েছিল টাই। তৃতীয় ম্যাচে শনিবার ব্যাটে-বলে দারুণ পারফরম্যান্সে ক্যারিবিয়ানরা জিতেছে ৪৩ রানে। ৫ ম্যাচ সিরিজে এখন ১-১ সমতা।

পুনেতে টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৫০ ওভারে তুলেছিল ২৮৩ রান। রান তাড়ায় কোহলি ছাড়া ভারতীয় ইনিংসে দাঁড়াতে পারেননি আর কেউ। গুটিয়ে গেছে তারা ২৪০ রানে।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের জয়টি ছিল দারুণ দলীয় পারফরম্যান্সের ফসল। এর মধ্যেও উজ্জ্বল ছিলেন তিনজন। টানা দুই ম্যাচে সেঞ্চুরি অল্পের জন্য না পেলেও হোপ খেলেছেন দুর্দান্ত ইনিংস। বলে হাতে দুই উইকেটের আগে ব্যাট হাতে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন অ্যাশলি নার্স। শেষ দিকে চমক জাগানিয়া বোলিংয়ে কোহলির উইকেট সহ তিনটি নিয়েছেন মারলন স্যামুয়েলস।

নতুন বলে জাসপ্রিত বুমরাহর জোড়া ছোবলে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ভালো শুরু পায়নি। ৫৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলকে টেনে নিয়ে গেছেন হোপ। সিরিজে বিস্ফোরক ব্যাটিংয়ে সাড়া জাগানো শিমরন হেটমায়ার এ দিনও শুরু করেছিলেন ঝড়। সেই ঝড় থেমেছে ৩ ছক্কায় ২১ বলে ৩৭ রান করে।

১২১ রানে ৫ উইকেট হারানো ক্যারিবিয়ানদের উদ্ধার করে হোপ ও জেসন হোল্ডারের জুটি। ষষ্ঠ উইকেটে ৭৬ রানের জুটি গড়েন দুজন। হোল্ডার ফেরেন ৩২ রানে।

অভিষিক্ত ফ্যাবিয়ান অ্যালেন ফেরেন ৫ রানেই। হোপ সেঞ্চুরি হাতছাড়া করেন ৫ রানের জন্য। ৬টি চার ও ৩ ছক্কায় ৯৫ রান করে বুমরাহর এমন এক ইয়র্কারে বোল্ড হয়েছেন হোপ, যেটিতে তার করার ছিল সামান্যই।

ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস তখন কেবল শেষের অপেক্ষা। কিন্তু নাটকীয়ভাবে নবম জুটিতে ৩৬ বলে ৫৬ রানের জুটি গড়েন নার্স ও কেমার রোচ। ম্যাচের মোড় দিয়েছে এই জুটিই। নার্স করেছেন ২২ বলে ৪০ রান। রোচ অপরাজিত ১৫।

রান তাড়ার শুরতেই ভারত হারায় রোহিত শর্মাকে। হোল্ডারের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড তিনি ৮ রানেই।

তুমুল ফর্মে থাকা কোহলির সৌজন্যে ধাক্কা তখনও লাগেনি। শিখর ধাওয়ানকে নিয়ে দ্বিতীয় উইকেটে গড়েন ৭৯ রানের জুটি। ৩৫ রান করে ধাওয়ান এলবিডব্লিউ হন নার্সের স্পিনে।

টপ অর্ডারের অসাধারণ পারফরম্যান্সে ভারতের মিডল অর্ডারকে যথেষ্ট পরীক্ষা দিতে হয় না বলে আলোচনা অনেক দিনের। এই ম্যাচে সুযোগটা এসেছিল আম্বাতি রায়ডু, মহেন্দ্র সিং ধোনি, রিশাভ পান্তদের জন্য। কিন্তু সুযোগটি তারা কাজে লাগাতে পারেননি। কোহলিই একাই আবার এগিয়ে নেন দলকে।

আগের দুই ম্যাচে ১৪০ ও ১৫৭ রানের ইনিংস খেলা কোহলি টানা তৃতীয় ও ক্যারিয়ারের ৩৮তম সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১১০ বলে। তার সামনে এখন কুমার সাঙ্গাকারার টানা চার সেঞ্চুরির রেকর্ড ছোঁয়ার হাতছানি।

কোহলি যতক্ষণ ছিলেন, টিকে ছিল ভারতের আশা। শেষ পর্যন্ত রান তোলার তাড়াতেই ১০৭ রান করে বোল্ড হয়ে যান স্যামুয়েলসের স্পিনে।

লম্বা লেজের ব্যাটিং অর্ডারে ভুবনেশ্বর কুমার ব্যাট করেছেন ৭ নম্বরে। লোয়ার অর্ডারে অন্যরা পারেননি তেমন কিছু করতে। ৪৬ রানে ভারত হারায় শেষ ৬ উইকেট।

কোহলির উইকেটের পর আরও দুটি উইকেট নিয়েছেন স্যামুয়েলস। ১২ রানে ৩ উইকেট তার ক্যারিয়ার সেরা বোলিং। ক্যারিয়ারে আগে ৩ বার ৩ উইকেট নিয়েছিলেন, ৩ বারই ছিল সেই ২০০১ সালে! অলরাউন্ড পারফরম্যান্সে ম্যাচ সেরা যদিও নার্স।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ওয়েস্ট ইন্ডিজ: ৫০ ওভারে ২৮৩/৯ (কাইরান পাওয়েল ২১, হেমরাজ ১৫, হোপ ৯৫, স্যামুয়েলস ৯, হেটমায়ার ৩৭, রভম্যান পাওয়েল ৪, হোল্ডার ৩২, অ্যালেন ৫, নার্স ৪০, রোচ ১৫*, ম্যাককয় ০*; ভুবনেশ্বর ১/৭০, বুমরাহ ৪/৩৫, খলিল ১/৬৫, চেহেল ১/৫৬, কুলদীপ ২/৫২)।

ভারত: ৪৭.৪ ওভারে ২৪০ (রোহিত ৮, শিখর ৩৫, কোহলি ১০৭, রায়ডু ২২, পান্ত ২৪, ধোনি ৭, ভুবনেশ্বর ১০, কুলদীপ ১৫*, চেহেল ৩, খলিল ৩, বুমরাহ ০; রোচ ১/৪৮, হোল্ডার ২/৪৬, ম্যাককয় ২/৩৮, নার্স ২/৪৩, অ্যালেন ০/৫২, স্যামুয়েলস ৩/১২)।

ফল: ওয়েস্ট ইন্ডিজ ৪৩ রানে জয়ী

সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে ১-১ সমতা

ম্যান অব দা ম্যাচ: অ্যাশলি নার্স