‘ছোট’ সিরিজ, বড় চ্যালেঞ্জ

ধারে-ভারে, গুরুত্বে-তাৎপর্যে এশিয়া কাপের কাছাকাছিও নয় জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ। তবে সেসব কেবলই বাইরের অনুরণন। মাঠে লড়বেন যে কজন, তাদের মনে এই সিরিজও ঝংকারও তুলবে একই তীব্রতায়। ড্রেসিং রুমে সেই বার্তাই দিয়েছেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। প্রতিপক্ষ হোক যেমন-তেমন, বাংলাদেশের চ্যালেঞ্জ নিজেদের পারফরম্যান্সের চূড়ায় থাকা।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 20 Oct 2018, 01:45 PM
Updated : 20 Oct 2018, 02:59 PM

জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে এই ওয়ানডে সিরিজ দিয়ে শুরু হচ্ছে বাংলাদেশের নতুন আন্তর্জাতিক মৌসুম। তিন ম্যাচ সিরিজের প্রথমটি মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে, শুরু হবে রোববার দুপুর আড়াইটায়।

মাত্র সপ্তাহ তিনেক আগে এশিয়া কাপ খেলে ফিরেছে বাংলাদেশ। এই দলের শক্তি-সামর্থ্য, মানসিক দৃঢ়তার বড় একটা পরীক্ষা ছিল এবারের এশিয়া কাপ। টুর্নামেন্টের প্রথম ম্যাচের পর থেকে দল পায়নি সেরা ব্যাটসম্যান তামিম ইকবালকে। সাকিব আল হাসান খেলেছেন চোট নিয়ে, শেষ দিকে ছিটকে যান তিনিও।

গোটা টুর্নামেন্টই পাঁজরের চোট নিয়ে খেলেছেন মুশফিকুর রহিম। চোটের সঙ্গে লড়াই করে খেলতে হয়েছে মাশরাফিসহ আরও কয়েকজনকে। চোট জর্জর সেই দলই কঠিন কন্ডিশনের সঙ্গে যুদ্ধ করে খেলেছেন ফাইনালে। ভারতের সঙ্গে সেই ফাইনালে বাংলাদেশ তীব্র লড়াই করে হেরেছে শেষ বলে।

এশিয়া শ্রেষ্ঠত্বের লড়াইয়ে, বিশেষ করে সেই টুর্নামেন্টে যতটা বাধার দেয়াল টপকে ফাইনালের মঞ্চে উঠেছিল বাংলাদেশ, সেটির তুলনায় এই সময়ের জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজ হওয়ার কথা অনেকটাই সহজ।

তবে সহজ কিছুর ভাবনাকে মনে প্রশ্রয় দিতে চান না মাশরাফি। ম্যাচের আগের দিন বাংলাদেশ অধিনায়ক জানিয়ে দিলেন, এশিয়া কাপের গুরুত্ব দিয়েই এই সিরিজ খেলবে তার দল।

“চ্যালেঞ্জ প্রতি ম্যাচে যেটি থাকে, এবারও সেটিই। সবার প্রত্যাশা, আমরা জিতব এবং জেতার আশা করছে সবাই। সেটিই স্বাভাবিক। কিন্তু আমার কাছে মনে হয়, অন্য দলের বিপক্ষে যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে খেলেছি, যেভাবে এশিয়া কাপে খেলেছি, সেটি থাকবে এখানেও।”

“ওদের প্রায় সব সিনিয়র ক্রিকেটার ফিরে এসেছে। আর নিজেদের দেশের বাইরে জিম্বাবুয়ের রেকর্ড সবচেয়ে ভালো বাংলাদেশেই। আমাদের শতভাগ দিয়েই খেলতে হবে। জিতলে সবাই বলবে, এটিই হওয়ার কথা ছিল। হারলে কিন্তু ভিন্ন কথা হবে।”

দেশের মাটিতে সবশেষ গত ১৩টি ওয়ানডেতে জিম্বাবুয়ের কাছে হারেনি বাংলাদেশ। সিরিজে তাই বাংলাদেশ পরিষ্কার ফেবারিট। তবে কোনো ম্যাচ হারা যাবে না, এই বাস্তবতা জেনে সিরিজ শুরু করা একটি চ্যালেঞ্জও বটে। তার চেয়েও বড় চ্যালেঞ্জ, এশিয়া কাপের পারফরম্যান্স ধরে রাখা।

কাজটি কঠিন অধিনায়কের জন্যও। এশিয়া কাপে বাস্তবতা এত কঠিন ছিল, হাতছানি এত বড় কিছুর ছিল যে, এক দিক থেকে দলকে অনুপ্রাণিত করা ছিল তুলনামূলক সহজ। কিন্তু জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে সিরিজে দলকে একইরকম অনুপ্রাণিত করা, পারফরম্যান্সের সেরাটা বের করে আনা কঠিন।

সেই বাস্তবতা জানেন মাশরাফিও। জানেন বলেই অধিনায়ক সতর্ক। দলকে উজ্জীবিত করার চেষ্টা করছেন তিনি অনেকভাবেই।

“এশিয়া কাপে ওদের দুজনকে (সাকিব ও তামিম) ছাড়াও যে ধরনের ক্রিকেট খেলে এসেছি, তার পর এই সিরিজে হারলে অনেক কথা উঠবে। ব্যাক অব দা মাইন্ডে এটা থাকবেই। জিম্বাবুয়ের কাছে কখনও হারিনি বা আর হারতে পারব না, ব্যাপারটি এমন নয়। হারলে কথাও হবে।”

“এটাও একটি আন্তর্জাতিক সিরিজ। কেউ সেঞ্চুরি করলে বা ৫ উইকেট নিলে, তা ক্যারিয়ারে যোগ হবে। ক্রিকেটারদের নিজেদের সমৃদ্ধ করা জরুরি। তাছাড়া, বিশ্বকাপের আগে এমন আর চারটি সিরিজ আছে আমাদের। প্রতিটিই গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের প্রস্তুত হতে হবে। ওরা সেরা দলটা পাঠিয়েছে, এটা আমাদের জন্য ভালো হবে।”

জিম্বাবুয়ের সেরা দলও বাংলাদেশের পরীক্ষা কতটা নিতে পারবে, সেই সংশয় থাকছে। বিশেষ করে, প্রস্তুতি ম্যাচে বিসিবি একাদশের কাছেই যখন তারা উড়ে গেছে। তবে বেশ কজন অভিজ্ঞ ক্রিকেটারও আছে তাদের, যারা জ্বলে উঠলে অসম্ভব নয় বাংলাদেশকে হারানো।

আর বাংলাদেশের মূল চ্যালেঞ্জ তো প্রতিপক্ষ নয়। মাশরাফি যেমন বললেন, এশিয়া কাপের ধারাবাহিকতা ধরে রাখা। প্রতিপক্ষ না ভেবে নিজেদের সেরাটা উজার করে দেওয়া। সেই চ্যালেঞ্জ জিততে পারলে সিরিজ জয় যেমন দেবে ধরা, বিশ্বকাপের প্রস্তুতিতেও দল থাকবে ঠিক পথে।