মালিঙ্গার ৫ উইকেট ছাপিয়ে মর্গ্যানের ৯২

একের পর পর এক ইয়র্কার, স্লোয়ার, স্লোয়ার ইয়র্কার। বিভ্রান্ত, হতভম্ব প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানরা। লাসিথ মালিঙ্গা যেন ফিরে গেলে গেলেন ক্যারিয়ারের সেরা সময়টায়। কিন্তু শ্রীলঙ্কার অভিজ্ঞ পেসার পুরোনো বলে জ্বলে ওঠার আগেই ওয়েন মর্গ্যান খেলেছেন দুর্দান্ত এক ইনিংস। অধিনায়কের সেই ইনিংসই শেষ পর্যন্ত ইংল্যান্ডকে এগিয়ে নিয়েছে জয়ের পথে। 

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 13 Oct 2018, 12:50 PM
Updated : 13 Oct 2018, 01:14 PM

ডাম্বুলায় বৃষ্টিবিঘ্নিত দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে শ্রীলঙ্কাকে ৩১ রানে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। এগিয়ে গেছে ৫ ম্যাচ ওয়ানডে সিরিজে। প্রথম ওয়ানডে পরিত্যক্ত হয়েছিল বৃষ্টিতে।

রনগিরি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে শনিবার ৯১ বলে ৯২ রানের দারুণ ইনিংস খেলেছেন মর্গ্যান। ইংল্যান্ড সম্ভাবনা জাগিয়েছিল তিনশ ছাড়ানোর। কিন্তু মালিঙ্গার ৫ উইকেট ইংলিশদের আটকে রাখে ২৭৮ রানে। জয়ের জন্য যথেষ্ট হয়েছে সেটিই। টপ ও মিডল অর্ডারের ব্যর্থতায় ২৯ ওভারে শ্রীলঙ্কা ১৪০ করেছিল ৫ উইকেট। এরপর বৃষ্টিতে বন্ধ হয় খেলা, শুরু হতে পারেনি আর।

ম্যাচ শুরু হয়েছিল মালিঙ্গার ছোবল দিয়ে। বিপজ্জনক জেসন রয়কে ফেরান তিনি প্রথম ওভারেই। ৫ ওভারের প্রথম স্পেলে মালিঙ্গার উইকেট ওই একটিই।

দ্বিতীয় উইকেটে জনি বেয়ারস্টো ও জো রুট গড়েন ৭২ রানের জুটি। বেয়ারস্টো অবশ্য নিজের চেনা চেহারায় ছিলেন না। এমনিতে আক্রমণাত্মক হলেও ২৬ রান করতে এ দিন খেলেন ৪০ বল। তাকে বোল্ড করে জুটি ভাঙেন থিসারা পেরেরা।

তৃতীয় উইকেটে আরেকটি দারুণ জুটি পায় ইংল্যান্ড। রুটের সঙ্গে মর্গ্যান যোগ করেন ৬৮ রান। রুট খেলছিলেন তার মতোই। এক-দুই করে রান বাড়াচ্ছিলেন অনায়াসে। ৮৩ বলে ৭১ রান করা ব্যাটসম্যানকে থামান ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা, জুটি ভাঙায় যার জুড়ি নেই বরাবরই।

সেখান থেকে দায়িত্ব নিজের ব্যাটে তুলে নেন মর্গ্যান। চতুর্থ উইকেটে ৫০ রানের জুটিতে বেন স্টোকসের অবদান ছিল কেবল ১৫। মর্গ্যান দলকে এগিয়ে নেন স্টোকসের বিদায়ের পরও। ইংলিশ অধিনায়ককে ডাকছিল সেঞ্চুরি।

দৃশ্যপটে মালিঙ্গার আরেকবার আবির্ভাব তখনই। দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ওভারে উইকেট পাননি। দ্বিতীয় ওভারে ফিরতি ক্যাচ নিয়ে ফেরান ১১ চার ও ২ ছক্কায় ৯২ রান করা মর্গ্যানকে।

শেষ দিকে ঝড় তোলার মঞ্চ ইংলিশদের জন্য ছিল প্রস্তুত। কিন্তু তা হতে দেননি মালিঙ্গা। মর্গ্যানকে ফেরানোর পরের বলেই তার স্লোয়ার ইয়র্কারের জবাব পাননি মইন আলি। এরপর ক্রিস ওকসও ফিরেছেন স্লোয়ার ইয়র্কারে, লিয়াম ডসনকে ইয়র্কারে বোল্ড করে পূর্ণ করেন ৫ উইকেট।

সবশেষ ৫ উইকেটের স্বাদ পেয়েছিলেন তিনি ২০১৪ সালের মার্চে। অষ্টম ৫ উইকেটে ছাড়িয়ে গেলেন গ্লেন ম্যাকগ্রাকে। ওয়ানডেতে সবচেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ডে এককভাবে উঠেছেন চারে।

শেষ দিকে বিপজ্জনক হতে পারতেন যিনি, সেই জস বাটলারকে ২৮ রানে ফেরান নুয়ান প্রদিপ। দশে নামা আদিল রশিদের ১৯ রানে শেষ পর্যন্ত ২৭৮ করতে পারে ইংল্যান্ড।

এই রানকে লঙ্কানদের ধরাছোঁয়ার বাইরে নিয়ে যায় ইংল্যান্ডের নতুন বলের নতুন জুটি। নিরোশান ডিকভেলার ব্যাটে দুটি চার হজম করলেও প্রথম ওভারেই অভিজ্ঞ উপুল থারাঙ্গাকে ফেরান ক্রিস ওকস। আরেক পাশে নবীন ফাস্ট বোলার অলিভার স্টোন গতি ও অস্বস্তিকর লেংথে বিপাকে ফেলেন লঙ্কানদের। দুর্দান্ত প্রথম স্পেলে ৪ ওভারে ৮ রান দিয়ে নেন ডিকভেলার উইকেট।

ওকস আরেক পাশে তুলে নেন অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল ও মারমুখি দাসুন শানাকার উইকেট। চারে নেমে কুসল পেরেরা চেষ্টা করেছেন প্রতিআক্রমণের। বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে ৩০ রানে থামান বাঁহাতি স্পিনার লিয়াম ডসন। শ্রীলঙ্কার রান তখন ৫ উইকেটে ৭৪।

ষষ্ঠ উইকেটে ধনাঞ্জয়া ডি সিলভা ও থিসারা পেরেরা অবশ্য বেশ ভুগিয়েছেন ইংলিশদের। তবে লড়াই কতটা জমিয়ে তুলতে পারতেন তারা, জানতে দেয়নি বৃষ্টি। নিজের মতোই খেলে ৩ ছক্কায় ৪১ বলে ৪৪ রানে অপরাজিত ছিলেন থিসারা। বৃষ্টিতে যখন শেষ থামল খেলা, মর্গ্যানের ইনিংস ও নতুন বলের বোলারদের পারফরম্যান্স নিশ্চিত করে দিয়েছে ইংল্যান্ডের জয়।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ইংল্যান্ড: ৫০ ওভারে ২৭৮/৯ (রয় ০, বেয়ারস্টো ২৬, রুট ৭১, মর্গ্যান ৯২, স্টোকস ১৫, বাটলার ২৮, মইন ০, ওকস ৫, ডসন ৪, রশিদ ১৯*, স্টোন ৯*; মালিঙ্গা ৫/৪৪, প্রদিপ ১/৫২, দনাঞ্জয়া ১/৬৪, থিসারা ১/৩৭, সান্দাক্যান ০/৫৯, ধনাঞ্জয়া ১/১৯)।

শ্রীলঙ্কা: ২৯ ওভারে ১৪০/৫ (ডিকভেলা ৯, থারাঙ্গা ০, চান্দিমাল ৯, কুসল পেরেরা ৩০, শানাকা ৮, ধনাঞ্জয়া ৩৬*, থিসারা ৪৪*; ওকস ৩/২৬, স্টোন ১/২৩, ডসন ১/২৬, মইন ০/৪৭, রশিদ ০/১৫)।

ফল: ডাকওয়ার্থ-লুইস পদ্ধতিতে ইংল্যান্ড ৩১ রানে জয়ী

সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজের দুটি শেষে ইংল্যান্ড ১-০ তে এগিয়ে

ম্যান অব দা ম্যাচ: ওয়েন মর্গ্যান