রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার ম্যাচটি ২ রানে হেরেছে যুবারা। ১৭৩ রানের লক্ষ্য তাড়ায় ৪৬ ওভার ২ বলে ১৭০ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ।
শেষ ১৫ ওভারে ৩৪ রান দরকার ছিল, হাতে ছিল ৫ উইকেট। শেষের বাজে ব্যাটিংয়ে সহজ এই সমীকরণ মেলাতে পারেনি বাংলাদেশ।
রান তাড়ায় শুরুটা ভালো হয়নি বাংলাদেশের। দুই ওপেনার প্রান্তিক নওরোজ নাবিল ও সাজিদ হোসেনকে দ্রুত বিদায় করেন মোহিত জাংরা।
উইকেট ছুড়ে আসেন দুই ব্যাটিং ভরসা মাহমুদুল হাসান ও তৌহিদ হৃদয়। বাঁহাতি স্পিনার সিদ্ধার্থ দেশাইকে সুইপ করে সীমানায় ধরা পড়েন তিন চার ও এক ছক্কায় ২৫ রান করা মাহমুদুল। দেশাইকে স্লগ করতে গিয়ে কিপার সিমরান সিংয়ের হাতে ধরা পড়েন অধিনায়ক তৌহিদ।
প্রমোশন পেয়ে ছয়ে নেমে সুবিধা করতে পারেননি রিশাদ হোসেন। লেগ স্পিনিং অলরাউন্ডার বোল্ড হয়ে যান দেশাইকে ভুল লাইনে খেলে। ২০তম ওভারে ৬৫ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে বিপদে পড়া বাংলাদেশকে লড়াইয়ে ফেরান শামিম-আকবর।
এক-দুই করে নিয়ে সচল রেখেছিলেন স্কোর বোর্ড। বাউন্ডারির জন্য অপেক্ষায় ছিলেন বাজে বলের। ষষ্ঠ উইকেটে দুই জনে গড়েন ৭৪ রানের দারুণ জুটি।
৬৩ বলে তিন চার ও এক ছক্কায় ৪৫ রান করা কিপার ব্যাটসম্যান আকবরকে ফিরিয়ে বাংলাদেশের প্রতিরোধ ভাঙেন হার্শ তিয়াগী। খানিক পর ফিরতি ক্যাচ নিয়ে মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীকে বিদায় করেন এই বাঁহাতি স্পিনার।
মৃত্যুঞ্জয়ের আউটের পর ভারতের বোলারদের ওপর চড়াও হন শামিম। আয়ুশ বাদোনিকে ডিপ মিডউইকেট দিয়ে ছক্কায় উড়িয়ে ৬৯ বলে পৌঁছান ফিফটিতে। পরের ওভারে লংঅন দিয়ে হার্শকে ছক্কায় উড়ান বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান।
৮০ বলে ৫ চার ও দুই ছক্কায় ৫৯ রান করা শামিমকে ফিরিয়ে আবার ম্যাচ নিজেদের দিকে ঘুরিয়ে দেন অজয় গঙ্গাপুরাম। দশম উইকেটে রকিবুল হাসানের সঙ্গে মিনহাজুর রহমান যখন জুটি বাঁধেন বাংলাদেশ তখন জয় থেকে ১২ রান দূরে।
দলকে জয়ের খুব কাছে নিয়ে গিয়েছিলেন তারা। হাতে যথেষ্ট বল, রান রেটের কোনো চাপ ছিল না। রকিবুল বল শর্ট থার্ড ম্যানে খেললে ঝুঁকি নিয়ে একটি রান নিতে চেয়েছিলেন মিনহাজুর। বেশি কিছুটা এগিয়ে যাওয়া এই ব্যাটসম্যান ফেরার চেষ্টা করেন তবে তার আগেই স্টাম্প ভেঙে দেন বোলার গঙ্গাপুরাম। নাটকীয় জয়ে ফাইনালে পৌঁছায় ভারত।
এর আগে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার টস জিতে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি ভারতেরও। ওপেনার দেবদত্ত পাদিক্কালকে কট বিহাইন্ড করে ফেরান শরিফুল।
সতর্ক ব্যাটিংয়ে শুরুর ধাক্কা সামাল দেন যশ্বসী জয়সওয়াল ও অনুজ রাওয়াত। সুইপ করে তৌহিদকে উড়ানোর চেষ্টায় শরিফুলের হাতে ধরা পড়ে শেষ হয় ৬১ বলে খেলা অনুজের ৩৫ রানের ইনিংস। সর্বোচ্চ ৩৭ রান করা ওপেনার যশস্বীকে বোল্ড করে দেন লেগ স্পিনার রিশাদ।
অফ স্পিনে তৌহিদ দ্রুত ফেরান যশ রাঠোরকে, রিশাদ বিদায় করেন অধিনায়ক সিমরানকে। ১ উইকেটে ৬৯ থেকে ভারতের স্কোর পরিণত হয় ৭৭/৫-এ।
ষষ্ঠ উইকেটে আয়ুশ বাদোনি ও সমীর চৌধুরীর ব্যাটে প্রতিরোধ গড়ে ভারত। দুই জনের ৫৯ রানের জুটি ভাঙেন মিনহাজুর। দুই ছক্কায় ৩৯ বলে ২৮ রান করে ফিরেন বাদোনি।
শেষের দিকে ফিরে বড় বাধা হয়ে থাকা সমীরকে (৩৬) বোল্ড করে দেন শরিফুল। এরপর বেশি দূর এগোয়নি ভারতের ইনিংস। অতিথিদের ইনিংসের লেজ দ্রুত ছেটে দেন শরিফুল ও মৃত্যুঞ্জয়।
আঁটসাঁট বোলিংয়ে ১৬ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন শরিফুল। তৌহিদ ২ উইকেটে নেন ৪ রানে। দুটি করে উইকেট নেন মৃত্যুঞ্জয় ও রিশাদও।
শুক্রবার দ্বিতীয় সেমি-ফাইনালে মুখোমুখি হবে শ্রীলঙ্কা ও আফগানিস্তান। জয়ী দলের সঙ্গে রোববার ফাইনালে খেলবে ভারত।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৪৯.৩ ওভারে ১৭২ (যশস্বী ৩৭, পাদিক্কাল ১, রাওয়াত ৩৫, সিমরান ২, রাঠোর ২, বাদোনি ২৮, সমীর ৩৬, গঙ্গাপুরাম ১৭, হার্শ ৮, মোহিত ১, দেশাই ২*; শরিফুল ৩/১৬, মৃত্যুঞ্জয় ২/২৭, শামিম ০/২৫, মাহমুদুল ০/১৫, রিশাদ ২/৩৬, তৌহিদ ২/৪, রকিবুল ০/২৮, মিনহাজুল ১/১৯)
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৯ দল: ৪৬.২ ওভারে ১৭০ (প্রান্তিক ৬, সাজিদ ২, মাহমুদুল ২৫, তৌহিদ ৮, শামিম ৫৯, রিশাদ ২, আকবর ৪৫, মৃত্যুঞ্জয় ২, রকিবুল ৪*, শরিফুল ০, মিনহাজুর ৬; মোহিত ৩/২৫, গঙ্গাপুরাম ১/২৬, দেশাই ৩/৩৫, বাদোনি ০/৩৩, হার্শ ২/২৯, সমীর ০/২১)
ফল: ভারত অনূর্ধ্ব-১৯ দল ২ রানে জয়ী