সেঞ্চুরিতে নিজেকে চেনালেন লিটন

ফিফটি করে তখন ড্রেসিং রুমের দিকে ব্যাট উঁচিয়ে ধরেছেন লিটন দাস। তালিতে মুখর গ্যালারি। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা দাঁড়িয়ে বাইরেই। হাত দিয়ে ইশারায় দেখালেন, বড় করতে হবে ইনিংস। এক বল পরই বাজে এক শটে লিটন তুলে দিলেন ক্যাচ। কিন্তু হাতে জমাতে পারলেন না যুজবেন্দ্র চেহেল। ধাক্কা খেয়ে বুঝি ফিরল সম্বিত। বুঝলেন নিজের করণীয়। এবার সত্যিই বড় করলেন ইনিংস।

ক্রীড়া প্রতিবেদক দুবাই থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 28 Sept 2018, 02:38 PM
Updated : 28 Sept 2018, 09:15 PM

নিজের প্রতিভা, দৃষ্টিনন্দন ব্যাটিং আর দারুণ সব শট খেলার সামর্থ্যটা আগেও জানান দিয়েছেন লিটন। তবে সেসব কেবলই ছিল ঝলক। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মানে তো কেবল ঝলকই নয়, প্রয়োজন লম্বা সময় রোশনাই ছড়ানো। অনেক আক্ষেপ ও হতাশার প্রহরের পর অবশেষে লিটন জানাতে পারলেন, এই পর্যায়ের ক্রিকেটেও খেলতে পারেন বড় ইনিংস। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরির জন্য বেছে নিলেন বড় মঞ্চ। তিন অঙ্কের অচেনা স্বাদ প্রথম পেলেন ভারতের বিপক্ষে এশিয়া কাপ ফাইনালে।

এক ম্যাচ আগেই, আফগানিস্তানের বিপক্ষে আবু ধাবিতে ৪১ রানের ইনিংসটার পথে দারুণ খেলছিলেন লিটন। কিন্তু রশিদ খানকে দারুণ একটি বাউন্ডারির পরের বলেই আত্মঘাতী এক শটে বিলিয়ে এসেছিলেন উইকেট। ফাইনালেও ছিল সেটির পুনরাবৃত্তি। বোলিংয়ে আসা রবীন্দ্র জাদেজার প্রথম বলে চোখধাঁধানো এক শটে স্পর্শ করেন ফিফটি। তখনই মাশরাফির সেই ইশারা। অথচ এক বল পরই আত্মহত্যার চেষ্টা! ভাগ্য এবার পক্ষে ছিল। ক্যাচ জমেনি। এরপর থেকে লিটন খেলেছেন দারুণ।

এ দিন ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন উদ্বোধনী জুটিতে নতুন সঙ্গী নিয়ে। ওপেনিং জুটির টানা ব্যর্থতায় জুয়া খেলেছিলেন অধিনায়ক মাশরাফি। লিটনের সঙ্গে ওপেন করতে পাঠানো হয় ওয়ানডেতে কখনোই আগে ছয়ের ওপরে না খেলা মেহেদী হাসান মিরাজকে। জুয়ায় জিতে যায় দল। মিরাজকে নিয়ে দলকে ১২০ রানের জুটি এনে দেন লিটন। ভারতের বিপক্ষে উদ্বোধনী জুটিতে যেটি রেকর্ড।

জুটিতে মিরাজের দায়িত্ব ছিল স্রেফ এক পাশ আগলে রাখা। আরেক পাশে লিটনের ব্যাট ছিল উত্তাল। ওয়ানডে ক্যারিয়ারের প্রথম ফিফটি করেন ৩৩ বলে। জীবন পাওয়ার পর আর ঝুঁকির পথে হাঁটেননি। রান এর পরও করেছেন অনায়াসেই। পরের পঞ্চাশে লেগেছে ৫৪ বল। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি ৮৭ বলে।

সেঞ্চুরির পরও খেলছিলেন আস্থার সঙ্গে। আরেকপাশে একের পর এক দ্রুত উইকেটের পতনেও ছিলেন অবিচল। পথ দেখাচ্ছিলেন দলকে। কিন্তু ৪১তম ওভারে কুলদীপ যাদবের বলে স্টাম্পড হয়ে গেলেন ১১৭ বলে ১২১ রানে।

সিদ্ধান্তটি নিয়ে প্রশ্ন জাগতে পারে। তৃতীয় আম্পায়ার নানা অ্যাঙ্গেল থেকে অনেকবার দেখে, জুম করেও সিদ্ধান্তে আসতে পারছিলেন না। অবশেষে প্রায় তিন মিনিট পর সিদ্ধান্ত দেওয়া হলো ‘আউট’। ব্যাটসম্যান ‘বেনিফিট অব ডাউট’ পেতে পারতেন কিনা, সেই প্রশ্ন থাকল।

তবে লিটন ততক্ষণে দিয়েছেন অনেক প্রশ্নের উত্তর। এই ইনিংসের পর তার ওপর আরও বিনিয়োগ করার সাহস পাবে দল। সবচেয়ে বড় করা, লিটন এরপর হয়তো আস্থা রাখতে পারবেন নিজের সামর্থ্যে। এখান থেকেই শুরু হতে পারে তার দিশাহারা ক্যারিয়ারের নতুন যাত্রা।