মনের জোরে ট্রফি ছোঁয়ার আশা

প্রচণ্ড গরমে টানা ম্যাচ খেলার শ্রান্তি। অবসন্ন শরীর। ব্যথা হাতে, পায়ে, কোমরে। এসবের মধ্যেই গত ম্যাচে চোট পেয়েছেন ডান হাতের কনিষ্ঠায়। সেই আঙুলে ব্যান্ডেজ। ‘শরীরের যা অবস্থা, ফাইনালে মাঠে নামবেন কিভাবে?’ দুবাইয়ে টিম হোটেলের লবিতে হাঁটতে হাঁটতে মাশরাফি বিন মুর্তজা হাত দিয়ে ইশারা করলেন নিজের বুকে, “এটা এখনও সুস্থ আছে। শরীর নিয়ে ভেবে লাভ নেই।” শরীর বিদ্রোহ করলেও দমে যায়নি হৃদয়। মনের জোরের ভরসাতেই ফাইনালের মহারণে নামছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক ও তার দল।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিদুবাই থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 27 Sept 2018, 05:26 PM
Updated : 28 Sept 2018, 05:55 AM

এশিয়া কাপের ফাইনাল খেলার আশা নিয়েই দুবাইয়ে পা রেখেছিল বাংলাদেশ দল। কিন্তু শুরু থেকেই এত প্রতিবন্ধকতা এসেছে যে পথচলা থমকে যাওয়ার শঙ্কা জেগেছে বারবার। কিন্তু সব প্রতিকূলতা জয় করে ঠিকই বাংলাদেশ জায়গা করে নিয়েছে ফাইনালে। শুক্রবার যেখানে ফাইনালে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত।

গত এশিয়া কাপের ফাইনালে এই ভারতের কাছেই হেরেছিল বাংলাদেশ। যদিও সেটি ছিল টি-টোয়েন্টি সংস্করণে। ২০১২ সালে এশিয়া কাপের ফাইনালে বাংলাদেশ হেরেছিল পাকিস্তানের বিপক্ষে। সবশেষ চার আসরে বাংলাদেশের তৃতীয় ফাইনাল এটি। তৃতীয়বার শিরোপা জয়ের হাতছানি। আগের দুইবার পারেনি বাংলাদেশ। এবার কাজটি আরও কঠিন!

ভারতীয় দলে বিরাট কোহলি নেই। এরপরও ধারে-ভারে তারা অনেক এগিয়ে। বাংলাদেশ এমনিতেই শক্তি-সামর্থ্যে পিছিয়ে। আরও খর্বশক্তির হয়ে গেছে দল তামিম ইকবাল ও সাকিব আল হাসানকে হারিয়ে। মাশরাফির পাশাপাশি চোট নিয়ে খেলছেন মুশফিকুর রহিম। মুস্তাফিজুর রহমানের শরীরেও আছে ব্যথা। প্রচণ্ড গরমে গোটা দলই ক্লান্ত। পাকিস্তানের বিপক্ষে সুপার ফোরের ম্যাচে নিজেদের উজাড় করে দেওয়ার রেশ না কাটতেই নামতে হচ্ছে ফাইনালে।

ভারতের জন্য তুলনামূলক ভাবে পরিস্থিতি একটু সহজ। সুপার ফোরে টানা ম্যাচ খেলতে হয়নি তাদের। দুবাই থেকে আবু ধাবি বাস ভ্রমণে যাওয়া-আসার ধকল নিতে হয়নি। সবশেষ ম্যাচটির গুরুত্ব ছিল না বলে বিশ্রাম দিয়েছিল তারা মূল একাদশের অন্তত পাঁচজনকে। ফাইনালের আগে দুই দিন বিশ্রামের সুযোগও মিলেছে তাদের।

তবে পারিপার্শ্বিকতা নিয়ে আপাতত আর ভাবছেন না মাশরাফি। মনের জোর দিয়েই একের পর এক বাধা পেরিয়ে এসেছে ফাইনাল পর্যন্ত এসেছে দল। শেষ লড়াইয়েও ঝাঁপিয়ে পড়তে চান একই মন্ত্রে।

“শারীরিকভাবে রিকভারির কথা ভেবে এখন আর লাভ নেই। গতকাল (বুধবার) আমরা খেলেছি, আবার আগামীকাল (শুক্রবার) খেলতে হচ্ছে। এখন সবচেয়ে বেশি দরকার মানসিকভাবে ফিট থাকা। সেটাই চেষ্টা করছি। মনের জোর নিয়েই নামতে হবে।”

ভারত টুর্নামেন্টে এখনও পর্যন্ত একমাত্র অপরাজিত দল। সাকিব-তামিমবিহীন বাংলাদেশ দলের চেয়ে অনেক এগিয়ে সামর্থ্যে। বাস্তবতা বিবেচনায়ই ভারতকে এগিয়ে রাখছেন মাশরাফি। তবে শক্তির বিচারে পিছিয়ে থাকলেও মানসিকতায় পেছনে থাকতে চান না বাংলাদেশ অধিনায়ক।

“তামিম ও সাকিবকে হারানো আমাদের জন্য ছিল বড় ধাক্কা। ওরা আমাদের সেরা দুই পারফরমার। তবে সবশেষ ম্যাচগুলো থেকে ছেলেরা অনেক শিখেছে। ওরা দুজন না থাকার পরও নিজেদের সবটুকু উজাড় করে দিয়ে লড়েছে। আমাদের ব্যাটিং নিয়ে দুর্ভাবনার জায়গা আছে অবশ্যই। মুশি ভালো খেলছে, রিয়াদ-মিঠুন ভালো করছে। টপ অর্ডার ক্লিক করলে খুব ভালো হয়।”

“তবে বলতেই হবে ভারত আমাদের চেয়ে অনেক ভালো দল। ফেভারিট হিসেবেই এখানে এসেছে। তবে নিজেদের দিনটি ভালো গেলে অনেক কিছুই হতে পারে। আমাদের মানসিকভাবে শক্ত থাকতে হবে, শেষ পর্যন্ত লড়ে যেতে হবে।”

টুর্নামেন্টে দুই দলের আগের ম্যাচে লড়াই করতেও পারেনি বাংলাদেশ। লড়াই করতে পারেনি এজবাস্টনে ২০১৭ চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমি-ফাইনালে। ফাইনালে লড়াইয়ের উপকরণ কম বাংলাদেশের হাতে। তাই চাপও কম। হারানোর নেই খুব বেশি কিছু। পাওয়ার আছে অনেক কিছু। এই নির্ভার মানসিকতার প্রতিফলন যদি পড়ে মাঠে, তবেই হয়তো কেবল বাংলাদেশ এগিয়ে যেতে পারে ট্রফির কাছে।