শেষ ওভারে আফগানদের প্রয়োজন ছিল কেবল ৮ রান। প্রতিপক্ষের হাতের মুঠোয় থাকা সেই জয় ছিনিয়ে এনেছেন মুস্তাফিজ। ম্যান অব দা ম্যাচ হওয়া মাহমুদউল্লাহ পর্যন্ত জয়ের মূল নায়ক বলেছেন মুস্তাফিজকেই। সেটা শুধু শেষ ওভারের দুর্দান্ত বোলিংয়ের কারণে নয়। নিজের শরীরের সঙ্গে লড়াইয়ের কারণেও।
প্রচণ্ড গরমে ডিহাইড্রেশনে ক্র্যাম্প করেছিল পায়ের পেশিতে। অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজাকে এক পর্যায়ে বলেছিলেন যে আর পারছেন না বোলিং করতে। কিন্তু অধিনায়ক তাকে দারুণভাবে অনুপ্রাণিত করেন, কারণ দলের জন্য জরুরি ছিল তার বোলিং। মুস্তাফিজ ক্র্যাম্প সয়ে, ছোট রান আপেই বোলিং করে জেতান দলকে।
মাশরাফি ম্যাচ শেষে বলেছেন ‘জাদুকরী মুস্তাফিজ’। তার বোলিংয়ে মুগ্ধ ক্রিকেট দুনিয়ার অনেকেই। শেষ দিকে রুদ্ধশ্বাস উত্তেজনার প্রতিটি মুহূর্তই যেন মহাকাব্যিক। মুস্তাফিজের কণ্ঠে আবেগ অবশ্য বরাবরের মতোই খুব একটা ফুটে উঠল না!
পায়ের পেশিতে ক্র্যাম্প হওয়ার পরও বোলিং করে গেলেন কিভাবে?
যখন মাশরাফিকে বললেন যে আর পারছেন না, মাশরাফির কথা কি ছিল?
মুস্তাফিজ: ভাই আমাকে একটা কথা বলছিল যে, ‘তোর বোলিং করা লাগবেই’। মাঝখানে ৩ ওভার বোলিংয়ের সময় ভাইকে বলেছি যে পায়ে টান লাগছে। ভাই তখন বলেছেন যে ‘তুই রেস্ট নে। শেষে করবি আবার।’ আমি বলছি যে, ‘ভাই ঠিক আছে, যেভাবে পারি করব।’
শেষ ওভারে প্রতিপক্ষের লাগত কেবল ৮ রান, বিশ্বাস কতটা ছিল?
মুস্তাফিজ: গোল বলের কোনো বিশ্বাস নাই। ওপরওয়ালা সহায় থাকলে হবে। শেষ ওভারে কুড়ির ওপরে থাকলে ঠিক আছে। কিন্তু ২০ পর্যন্ত থাকলে কোনো গ্যারান্টি নেই। যে কোনো মুহূর্তে নিতে পারে। আমার চেষ্টা ছিল, নিজের ওপর বিশ্বাস ছিল। আর ভালো সময় গেছে। এই আর কী।
এই সব পরিস্থিতিতে আপনার আগের বোলিংয়ের অভিজ্ঞতা কি কাজে লেগেছে?
মুস্তাফিজ: এখানে অনেক অভিজ্ঞ বোলাররাও শেষ ওভারে ৮-১০ রান দিয়েই দেয়। এটা কপালের কাছে!
আপনি তো শতভাগ দিতে পারছিলেন না, রান আপ ছোট করেছিলেন...
মুস্তাফিজ: রান আপে বেশি জৌরে দৌড়ালে আমার পায়ে টান লাগছিল। আমি এজন্য এমনভাবে দৌড়ালাম যেন পায়ে না লাগে। ওভাবেই বোলিং করছি।
ম্যাচ জেতার পর নিজের অনুভূতি কেমন ছিল?
মুস্তাফিজ: ওরকম কিছু না, আমার সবসময় একই থাকে।
মুস্তাফিজ: নরম্যালি বোলিং করার দরকার, করছি। বেশি ভাবি নাই, এই কারণেই জিতছি।
ক্র্যাম্প নিয়েও বোলিং কিভাবে করলেন?
মুস্তাফিজ: পায়ে লাগছিল। কিন্তু বোলিং তো করা লাগবেই। আর কোনো অপশন নাই। বেশি লাগলে শর্ট রান আপে করতাম।
শেষ বলের আগে মাঠ সাজানো নিয়ে বা অন্য কিছু বলেছিলেন অধিনায়ক?
মুস্কাফিজ: ভাই আমাকে বলেছে, তুই যেটা ভালো মনে করিস সেটা কর। আমি জাতীয় দলে খেললে সব সময় সিনিয়রদের দেখি। কি করলে, কোনটা নিলে, কোন জায়গায় ফিল্ডার নিলে ভালো হয়। আমি বলেছিলাম। ভাইরা বলেছিল, এটাই ঠিক আছে।
আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয়ের পর দলের অবস্থা কি এখন?
মুস্তাফিজ: ভালো।
এই পরিস্থিতিতে অনেকবারই আমরা হেরেছি, এবার কি ভাগ্যের ছোঁয়া ছিল?
মুস্তাফিজ: সবসময়ই তো এটা লাগে বললাম, কপালে না থাকলে হতো না।
শেষ বলটা একটু বাইরে শর্ট বল মতো করেছিলেন, পরিকল্পনা কি ছিল?
মুস্তাফিজ: একটু সামনে করলে নাগালের বাইরে থাকে। পেছনে করলে, টানলেও পেছনের দিক থেকে বাদ দিলে মাঠ অনেক বড় ছিল। ছয় হলে হলো, কিন্তু চার যেন না হয়।
চার-ছক্কা হতে পারে, এসব মাথায় ঘুরছিল?
মুস্তাফিজ: আমি অত বেশি ভাবি না।
নার্ভাস লাগছিল?
মুস্তাফিজ: ভয় পেয়ে লাভ নাই।
মুস্তাফিজ: মনে নাই।
বাংলাদেশ আগেও শেষ ওভারে ৮-৯ রানের সমীকরণে হেরেছে। তবে প্রায় সবই ব্যাটিংয়ে। এবার ছিল বোলিং…
মুস্তাফিজ: শেষ ওভারে যথন ৮ রান বাকি ছিল, মাশরাফি ভাই এটাই বলছিল যে, ‘আমরা অনেকবার ৮-৯ রান করতে গিয়ে হেরেছি। আজকে তুই জিতিয়ে দে।’ ভাই বলার সময় ভালো লাগছিল। পারতেছিলাম না (ক্র্যাম্প নিয়ে) শরীর নিয়ে, তবুও চেষ্টা করলাম যে কপালে থাকলে হবে। পাশে অপু ভাই ছিল, ভাইও বলছিল যে পারবি। আমি বললাম যে, ‘কপালে থাকলে হবে, না হলে নাই।’
‘ভাইয়ের’ কথায় কতটা অনুপ্রেরণা পেয়েছিলেন?
মুস্তাফিজ: সবসময়ই মাশরাফি ভাই, সাকিব ভাই, তামিম ভাই, সিনিয়র যারা আছে, সবাই কিছু বললে আমার ভালো লাগে।
এখন শরীরের কি অবস্থা?
মুস্তাফিজ: ভালো, সব ভালো।