অতীতের প্রেরণায় মৌলিকত্বের আশ্রয়ে বাংলাদেশ

‘আঙুলের কি অবস্থা?’ পাশ থেকে প্রশ্ন শুনে নিজের চোট পাওয়া আঙুলের দিকে তাকালেন সাকিব আল হাসান, ‘অস্বস্তি তো আছেই, তবে আপত্তি নেই। ম্যানেজ করেই তো খেলতে পারছি।’ আঙুলের ব্যথাকে না হয় ইনকেজশনে বশ করা যায়, মনের দাওয়াই কি? টানা দুটি বাজে হারে তো মনোবল থাকার কথা তলানিতে। সাকিবের মুখে ফুটে উঠল হাসি। সুখস্মৃতির চেয়ে বড় ব্যথানাশক আর কী আছে! অতীতেও অনেকবার দুঃসময়কে পাল্টা জবাব দিয়েছে বাংলাদেশ। সাকিবরা অনুপ্রেরণা খুঁজছেন সেই মুহূর্তগুলো থেকেই।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিদুবাই থেকে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 22 Sept 2018, 04:26 PM
Updated : 22 Sept 2018, 04:35 PM

আফগানিস্তানের কাছে বিধ্বস্ত হওয়ার ধাক্কা না সামলে উঠতেই ভারতের কাছে গুঁড়িয়ে যাওয়া। পরপর দুই দিন দুই ম্যাচের পারফরম্যান্স বাংলাদেশকে ঠেলে দিয়েছে খাদের কিনারায়। পরের ম্যাচে পা হড়কালেই পতন। সেখান থেকে উঠে দাঁড়ানো নির্ভর করবে অনেক হিসাব-নিকাশের ওপর।

তবে চিত্র পাল্টাতে যে খুব সময় লাগে না, বাংলাদেশের জন্য সেটির প্রমাণ তো এই টুর্নামেন্টই। প্রথম ম্যাচে শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে উড়ছিল বাংলাদেশও। আত্মবিশ্বাসে ছিল টইটম্বুর। সেই দলই পরের দুই ম্যাচে করতে পারল না একটুও লড়াই। মাঠে শরীরী ভাষা বলছিল, আত্মবিশ্বাস হয়তো তলানিতে!

চূড়ায় থেকে পতন যদি হতে পারে এত দ্রুত, সেখান থেকে পুনরুত্থানও হতে পারে আবার একই গতিতে। স্রেফ কারও তাত্ত্বিক কথা কিংবা দৈববাণী এটি নয়, বাস্তব উদাহরণ থেকেই পাওয়া ধারণা। বাংলাদেশের সেরা পারফরম্যান্সগুলোর বেশ কটি আগেও দেখা গেছে দেয়ালে পিঠ থেকে যাওয়ার পর। যখন দলকে নিয়ে আশার চেয়ে হতাশার পাল্লা বেশি ভারী, যখন ছুঁড়ে ফেলা হয় বিবেচনার বাইরে, তখনই দল ঘুরে দাঁড়িয়েছে প্রবলভাবে। এগিয়ে গেছে দৃঢ় পায়ে।

এমনিতে সাকিবের বিচরণ বেশিরভাগ সময় বাস্তবেই। অতীত বা ভবিষ্যতে তাকাতে খুব একটা আগ্রহী নন কখনোই। তবে বাস্তবতা যখন কঠিন, তখন অতীত থেকে প্রেরণা নিতে সমস্যা নেই! আফগানিস্তানের বিপক্ষে কার্যত বাঁচা-মরার ম্যাচের আগের দিন সাকিব তাকালেন সুখস্মৃতির ছবিগুলোয়।

“এর আগেও আমরা এমন পরিস্থিতিতে পড়েছি এবং ওভারকাম করতে সক্ষম হয়েছি। আমি বিশ্বাস করি আমাদের মধ্যে সেই সামর্থ্য আছে। চেষ্টা করতে হবে যেন আমরা নরম্যাল যে ক্রিকেট খেলে অভ্যস্ত সেটা খেলতে পারি। যদিও কাজটা কঠিন, এমন অবস্থান থেকে স্বাভাবিক ক্রিকেট খেলা। তবে আমার কাছে মনে হয় যে, না হওয়ার মতো তেমন কোনো পরিস্থিতিতে নেই আমরা।”

প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান বলেই দুর্ভাবনার ব্যাপার থাকে একটু বেশি। গত জুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ, এবার এশিয়া কাপে দু্‌ই দলের প্রথম লড়াইয়ে স্বাভাবিক খেলাটাই থেলতে পারেনি বাংলাদেশ। অনেক সময়ই মনে হয়েছে, হারের ভয়টাই হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশকে। সহজাত খেলাটা উধাও হয়ে গেছে।

সেই শঙ্কাটা থাকছে আবারও। বিশেষ করে ম্যাচটি যেখানে এতটা গুরুত্বপূর্ণ। তবে সাকিব মনে করিয়ে দিলেন মৌলিকত্বে ফেরার কথাই। নিজের স্বাভাবিক খেলাটা খেলতে পারলে শুধু আফগানিস্তান নয়, সব প্রতিপক্ষকেই বাংলাদেশ হারাতে পারে বলে বিশ্বাস দলের সহঅধিনায়কের।

“গভীরভাবে চিন্তা করার মতো পরিস্থিতি এখন নয়। এখন ফোকাস করা উচিত, আমরা কোন ধরনের ক্রিকেট খেলে অভ্যস্ত এবং আমাদের কোন ধরনের ক্রিকেট আমাদের খেলা উচিত। কাদের বিপক্ষে খেলছি, এগুলো আমাদের চিন্তা করার বিষয় মনে হয় না। আমাদের কাজগুলো যদি আমরা ঠিক রাখতে পারি, আমাদের দিনে পৃথিবীর যে কোনো দলকে বিশেষ করে ওয়ানডেতে হারানোর সামর্থ্য আমাদের আছে। আমাদের এখন লক্ষ্য মাঠের কাজগুলো ঠিকভাবে করা।”

ঠিকঠাক করার সময় ফুরিয়ে আসছে দ্রুত। রোববারের ম্যাচে না পারলে পরে আর ফেরার সুযোগ নাও থাকতে পারে। আফগানদের কাছে হেরে পেছনে হাঁটার শুরুর, আফগানদের হারিয়েই দেওয়া যায় ফেরার বার্তা।