এশিয়া কাপের সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে ভারত। শ্রীলঙ্কাকে উড়িয়ে দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করা বাংলাদেশ টানা দুটি হারে নেমে গেল আত্মবিশ্বাসের তলানিতে। ফেভারিট ভারত জিতল টানা তিন ম্যাচ।
দুবাই আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে শুক্রবার বাংলাদেশ করতে পেরেছিল কেবল ১৭৩ রান। ভারত জিতেছে ৮২ বল বাকি রেখে।
ভারতের নতুন বলের দুই বোলার আর পরে দুই রিস্ট স্পিনারকে নিয়ে ভাবনা ছিল বেশি। কিন্তু এক রকম উড়ে এসে বাংলাদেশের সর্বনাশ করেছেন রবীন্দ্র জাদেজা। আগের ম্যাচে পাওয়া আকসার প্যাটেলের চোটে জায়গা পেয়েছিলেন স্কোয়াডে। একাদশে ঢুকে যান চোট পাওয়া আরেকজন, হার্দিক পান্ডিয়ার জায়গায়। এক বছর পর ওয়ানডে খেলতে নামা বাঁহাতি স্পিনারের ফেরাটা স্মরণীয় হয়ে থাকল বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানদের দেওয়া উপহারে। চার বছর পর পেয়েছেন ওয়ানডেতে চার উইকেট নেওয়ার স্বাদ।
আগের রাতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে রান তাড়ায় বাংলাদেশের ব্যাটিং ছিল ভীষণ ম্রিয়মান। নতুন দিনে নতুন মাঠেও দেখা গেল না খুব আলাদা কিছু। বাংলাদেশের ব্যাটিংয়ে ছিল আত্মহত্যার প্রতিযোগিতা। কিভাবে খেলা উচিত নয়, সেটির আদর্শ ডকুমেন্টারি!
শুরুটা লিটন দাসকে দিয়ে। ওপেনিংয়ে জায়গা নিজের করে নেওয়ার সুযোগ কাজে লাগাতে আবারও ব্যর্থ এই ওপেনার। ভুবনেশ্বরের শর্ট বলে যে পুল খেলে ক্যাচ দিলেন, শটটি একদমই ছিল না তার নিয়ন্ত্রণে।
তরুণ নাজমুল হোসেন শান্তকে এখনই শূলে চড়ানো হয়ত উচিত নয়। তবে স্টাম্পের অনেক বাইরের বলে খেলা আলগা শটটিতে তাকে নিয়ে ভবিষ্যতের বাজি ধরাও কঠিন।
সাকিব আল হাসান ও মুশফিকুর রহিমের আউট দুটিই সবচেয়ে হতাশাজনক। দুজন ইঙ্গিত দিয়েছিলেন ভালো কিছুর। দুজনই ফিরেছেন যাচ্ছেতাই ভাবে।
প্রথম ম্যাচের নায়ক মুশফিক এক ম্যাচের বিশ্রাম শেষে আবার চেষ্টা করছিলেন লড়াইয়ের। নিজেই পরে ক্ষান্তি দিয়েছেন লড়াইয়ে। উইকেট বিলিয়ে এসেছেন রিভার্স সুইপে।
মিঠুন ডিফেন্স করতে পারেননি ঠিকমতো। রিভিউ নিয়েও আম্পায়ারের এলবিডব্লিউর সিদ্ধান্ত পাল্টায়নি। যেটির খেসারত দলকে দিতে হয়েছে পরে। মাহমুদউল্লাহ লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন। কিন্তু আম্পায়ার দিলেন বাজে আউট। তখন আর টিকে নেই রিভিউ!
সবচেয়ে হতাশার ছিল সম্ভবত মোসাদ্দেকের ব্যাটিং। ঘরোয়া ক্রিকেটে স্পিন দারুণ খেলার জন্য পরিচিতি তার। অথচ এ দিন ভারতের স্পিনারদের সামনে ছিলে ভীষণ নড়বড়ে। ৪৩ বলে ১২ রানের ইনিংসটায় একটি মুহূর্তও খেলতে পারেননি স্বস্তিতে। আউট হয়েছেন বাজেভাবে।
মিরাজ আরও একবার জানান দিয়েছেন তার ব্যাটিং সামর্থ্যের। খেলেছেন দারুণ কয়েকটি শট। ব্যাটিংয়ে ছিল আত্মবিশ্বাসের ছাপ। লেগ স্পিনার যুজবেন্দ্র চেহেলকে মারা দুটি ছক্কাই ছিল দেখার মতো। মাশরাফি সঙ্গ দিয়ে গেছেন তাকে।
শেষ দিকে মাশরাফি টানা দুই বলে ছক্কা মেরেছেন ভুবনেশ্বরকে। পরের বলে প্যাডল খেলে আউট হয়েছেন মাশরাফি। ২৬ করেছেন ৩২ বলে। এরপর মিরাজও টিকতে পারেননি শেষ পর্যন্ত। দুটি করে চার ও ছক্কায় ৫০ বলে করেছেন ৪২।
দুই রিস্ট স্পিনার কুলদীপ ও চেহেলকে কোনো উইকেট দেয়নি বাংলাদেশ। জাদেজার চার উইকেটের পাশে দুই পেসার ভুবনেশ্বর ও জাসপ্রিত বুমরাহ নিয়েছেন তিনটি করে।
মাশরাফি-মিরাজের লড়াইয়ে ম্যাচের দৈর্ঘ্য একটু বেড়েছে, সম্ভাব্য ফলে প্রভাব পড়েছে সামান্যই। রোহিত শর্মা ও শিখর ধাওয়ানের উদ্বোধনী জুটিতেই আসে ৬১ রান। এরপর থেকে কেবল ম্যাচ শেষের অপেক্ষা।
সব মিলিয়ে ভারত খেলেছে প্রায় নিখুঁত ম্যাচ। বাংলাদেশ ডুবেছে আরেকটু অমানিশায়। আলোর দেখা পেতে সামনে পেরোতে হবে কঠিন পথ!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ: ৪৯.১ ওভারে ১৭৩ (লিটন ৭, শান্ত ৭, সাকিব ১৭, মুশফিক ২১, মিঠুন ৯, মাহমুদউল্লাহ ২৫, মোসাদ্দেক ১২, মাশরাফি ২৬, মিরাজ ৪২, মুস্তাফিজ ১, রুবেল ০; ভুবনেশ্বর ৩/৩২, বুমরাহ ২/৩৭ , চেহেল ০/৪০, জাদেজা ৪/২৯, কুলদীপ ০/৩৪)।
ভারত: ৩৬.২ ওভারে ১৭৪/৩ (রোহিত ৮৩*, ধাওয়ান ৪০, রায়ডু ১৩, ধোনি ৩৩, কার্তিক ১*; মাশরাফি ১/৩০, মিরাজ ০/৩৮, মুস্তাফিজ ০/৪০, সাকিব ১/৪৪, রুবেল ১/২১)।
ফল: ভারত ৭ উইকেটে জয়ী
ম্যাচ সেরা: রবীন্দ্র জাদেজা