এশিয়া কাপের গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বৃহস্পতিবার আবু ধাবিতে বাংলাদেশকে ১৩৬ রানে উড়িয়ে দিয়েছে আফগানিস্তান। আফগানদের বিপক্ষে ৬ ওয়ানডেতে বাংলাদেশের জয় ও হার এখন সমান তিনটি করে।
ম্যাচের আগে যাকে নিয়ে ছিল শঙ্কা, সেই রশিদ খানই মূল হন্তারক। তবে সেটি বল হাতে নেওয়ার আগেই! বাংলাদেশের বোলিং এদিন কচুকাটা করেছেন ব্যাটসম্যান রশিদ। টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা আফগানরা এক পর্যায়ে শঙ্কায় ছিল দুইশ করা নিয়েও। কিন্তু রশিদের ঝড়ো ফিফটি ও গুলবদিন নাইবের সঙ্গে জুটি তাদেরকে নিয়ে যায় ২৫৫ রানে।
এরপর বল হাতেও এই দুজন সফল। মুখ থুবড়ে পড়েছে বাংলাদেশের ব্যাটিং। গুটিয়ে গেছে মাত্র ১১৯ রানেই।
চোটের কারণে তামিম ইকবাল নেই, মুশফিকুর রহিমও ছিলেন বিশ্রামে। চাপহীন ম্যাচে অন্যদের জন্য এটি ছিল বড় সুযোগ। কিন্তু অভিষিক্ত নাজমুল হোসেন শান্ত কিংবা তিন বছর পর ওয়ানডেতে নামা মুমিনুল, ব্যর্থ দুজনই। ওপেনিংয়ে লিটন দাস হাতছাড়া করেছেন আরও একটি সুযোগ। বাংলাদেশের ব্যাটিং তাই ছিল হতশ্রী।
পাওয়ার প্লেতেও দারুণ নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে আফগানদের আরও চেপে ধরেন মেহেদী হাসান মিরাজ। এই অফ স্পিনারের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ে হাঁসফাঁস করতে থাকেন মোহাম্মদ শাহজাদ ও হাশমতউল্লাহ শাহিদি। তার প্রথম ৪ ওভারে আসে ৬ রান!
তবে উইকেট ধরে রেখে জুটি গড়ে তোলেন দুজন। আস্তে আস্তে বাড়াতে থাকেন রানের গতি। শেষ পর্যন্ত কাল হয়েছে সেই চেষ্টাই। সাকিবকে বাউন্ডারি মারার পর ছক্কা মারতে গিয়ে সীমানায় আবু হায়দারের দুর্দান্ত ক্যাচে ফেরেন শাহজাদ (৩৭)। ভাঙে ৫১ রানের জুটি।
বাঁহাতি শাহিদি এরপর আগলে রেখেছেন এক প্রান্ত। কিন্তু সাকিবের দারুণ বোলিংয়ে আরেক পাশে টিকতে পারেননি আসগর, সামিউল্লাহ শেনওয়ারিরা। দারুণ আর্ম বলে বোল্ড হন আফগান অধিনায়ক আসগর, সুইপ করে গিয়ে বোল্ড শেনওয়ারি।
দ্বিতীয় স্পেলে ফিরে রুবেল ফিরিয়ে দেন ৯২ বলে ৫৮ রান করা শাহিদিকে। বিপজ্জনক মোহাম্মদ নবিকে ফিরিয়ে সাকিব ধরেন চতুর্থ শিকার। ১৬০ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে তখন পথহারা আফগানরা। ক্যারিয়ারে অষ্টমবার ৪ উইকেট নেন সাকিব।
কিন্তু সাকিবের স্পেল শেষ হওয়ার পর জ্বলে ওঠেন গুলবদিন ও রশিদ। ৪৫তম ওভারে রুবেলের বলে ১৭ রান নিয়ে ঝড়ের শুরু। এরপর আর রুবেলকে বোলিংয়ে আনেননি মাশরাফি।
ওয়ানডে ক্যারিয়ারের তৃতীয় ফিফটিতে ৩২ বলে ৫৭ রানের দুর্দান্ত অপরাজিত ইনিংস খেলেছেন রশিদ। গুলবদিন অপরাজিত ছিলেন ৩৮ বলে ৪২ রানে। অষ্টম উইকেটে দুজনের অবিচ্ছিন্ন জুটিতে ৫৬ বলে এসেছে আফগান রেকর্ড ৯৫ রান!
শেষের ওই ঝড় ম্যাচের মোমেন্টাম এমন ভাবে বদলে দিয়েছে যে তাতে উড়ে গেছে বাংলাদেশ। তামিম-মুশফিকবিহীন ব্যাটিং লাইনআপে অন্যরা কতটা মেলে ধরতে পারেন, সেই কৌতুহল ছিল। বাংলাদেশের টপ অর্ডার জল ঢেলে দিয়েছে সেই রোমাঞ্চে।
অভিষিক্ত শান্ত উইকেট উপহার দিয়ে এসেছেন মুজিব উর রহমানকে। আফতাব আলমের ইনসুইঙ্গারে আউট হওয়ার পাশাপাশি রিভিউও নষ্ট করে এসেছেন লিটন। মুমিনুল উইকেটে বিলিয়ে এসেছেন গুলবদিনের লেগ স্টাম্পের বাইরের বলে। আরেকটা সুযোগের জন্য তাকে কতটা অপেক্ষা করতে হয়, কে জানে!
সাকিব ও মাহমুদউল্লাহ চেষ্টা করেছেন জুটি গড়ার। দুজনই আউট হয়েছেন থিতু হয়ে। তার আগে মোহাম্মদ মিঠুন বোল্ড বাজে শটে। শেষ দিকে মোসাদ্দেক হোসেন এক প্রান্ত আগলে রেখে অপরাজিত ২৬ করেছেন। তবে তার ব্যাটিংও ছিল না খুব বেশি সাবলীল।
বাংলাদেশের রান সংখ্যার চেয়েও দৃষ্টিকটু ও বিরক্তিকর ছিল ব্যাটিংয়ের ধরন। এতটা করুণ দশা দেখা যায়নি অনেক দিন। পাওয়ার প্লেতে কোনো বাউন্ডারি মারতে পারেনি দল। প্রথম বাউন্ডারি এসেছে ১৫তম ওভারে, সেটিও মাহমুদউল্লাহর ব্যাটের কানায় লেগে। ৪২ ওভারে মোসাদ্দেকের তিনটি আর মাহমুদউল্লাহর দুটি ছাড়া আর নেই কোনো বাউন্ডারি।
ছবি: আইসিসি
এই ম্যাচের ফলের কোনো প্রভাব নেই টুর্নামেন্টের পরের ধাপে। কিন্তু কে জানে, যেভাবে হারল দল, সেই মানসিকতার জন্য না আবার চড়া মূল্য দিতে হয় পরের ম্যাচগুলোয়!
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
আফগানিস্তান: ৫০ ওভারে ২৫৫/৭ (শাহজাদ ৩৭, ইহসানউল্লাহ ৮, রহমত ১০, শাহিদি ৫৮, আসগর ৮, শেনওয়ারি ১৮, নবি ১০, গুলবদিন ৪২*, রশিদ ৫৭*; রুবেল ১/৩২, আবু হায়দার ২/৫০, মিরাজ ০/২১, মাশরাফি ০/৬৭, সাকিব ৪/৪২, মোসাদ্দেক ০/১৮, মুমিনুল ০/১৫, মাহমুদউল্লাহ ০/৫)।
বাংলাদেশ: ৪২.১ ওভারে ১১৯ (লিটন ৬, শান্ত ৭, সাকিব ৩২, মুমিনুল ৯, মিঠুন ২, মাহমুদউল্লাহ ২৭, মোসাদ্দেক ২৬*, মিরাজ ৪, মাশরাফি ০, আবু হায়দার ১, রুবেল ০; আফতাব ১/১১, মুজিব ২/২২, গুলবদিন ২/৩০, নবি ১/২৪, শেনওয়ারি ০/১২, রশিদ ২/১৩, রহমত ১/৭)
ফল: আফগানিস্তান ১৩৬ রানে জয়ী
ম্যান অব দা ম্যাচ: রশিদ খান