সূচির আচমকা বদলে ক্ষুব্ধ মাশরাফি

দুই দলেরই সুপার ফোর নিশ্চিত হয়ে গেছে। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ম্যাচটি গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন আর রানার্সআপ নির্ধারণের লড়াই। কিন্তু বুধবার সকালে অনুশীলনে এসে মাশরাফি বিন মুর্তজা জানতে পারলেন, গ্রুপ পর্বের অবস্থানের কোনো প্রভাব সুপার ফোর পর্বে থাকবে না। হুট করেই টুর্নামেন্টের মাঝপথে এই বদল আনায় বিস্মিত মাশরাফি বিন মুর্তজা। বাংলাদেশ অধিনায়ক জানিয়েছেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।

ক্রীড়া প্রতিবেদক দুবাই থেকেবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 Sept 2018, 12:23 PM
Updated : 19 Sept 2018, 02:55 PM

দুবাইয়ে আইসিসি ক্রিকেট একাডেমি মাঠে অনুশীলনে আসার পর বাংলাদেশ দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ দলকে জানান, সুপার ফোরে ওঠা চারটি দলের পরিচয় ‘ট্যাগ’ করে দেওয়া হয়েছে। গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন আর রানার্সআপের ওপর আর সূচি নির্ভর করছে না। মঙ্গলবার হংকংকে হারিয়ে ভারতের সুপার ফোর নিশ্চিত হওয়ার পর আনা হয় এই পরিবর্তন।

যেমন বাংলাদেশ যদি ‘বি’ গ্রুপে চ্যাম্পিয়নও হয়, তবু তাদের পরিচয় ‘বি ২’। এটিই ট্যাগ করে দেওয়া হয়েছে। আফগানিস্তানের ট্যাগ ‘বি ১’। তেমনি ‘এ’ গ্রুপে ভারত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হোক বা রানার্স আপ, ট্যাগ হয়ে গেছে ‘এ ১’; পাকিস্তানের ‘এ ২’।

ম্যাচের তারিখ তাতে বদলাচ্ছে না। বাংলাদেশকে দুটি ম্যাচ পরপর খেলতে হচ্ছেই। বৃহস্পতিবার আফগানিস্তানের সঙ্গে কার্যত মূল্যহীন ম্যাচের পর দিনই সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচ ভারতের বিপক্ষে। একদিক থেকে খানিকটা সুবিধাও হয়েছে। ‘বি’ গ্রুপ থেকে বাংলাদেশ যদি চ্যাম্পিয়ন হতো, পরপর দুই দিন দুবাই থেকে আবু ধাবিতে গিয়ে খেলতে হতো। এখন নিশ্চিত হয়ে গেছে, সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচটি খেলতে শুক্রবার বাংলাদেশকে আবু ধাবিতে যেতে হবে না। দুবাইয়ে সেদিন বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ ভারত।

কিন্তু মাশরাফি মূলত ক্ষুব্ধ টুর্নামেন্টের মাঝপথে আচমকা এমন বদল আনায়। জোর গুঞ্জন, ভারতকে বাড়তি সুবিধা দিতেই এই পরিবর্তন আনা হয়েছে। গত কয়েকদিন ধরেই বাতাসে ভাসছিল, এমন কিছু করা হতে পারে যেন ভারত সবকটি ম্যাচ দুবাইয়ে খেলতে পারে। সেটি নিশ্চিত করতেই নাকি দলগুলোকে এভাবে ট্যাগ দিয়ে দেওয়া হয়েছে। টুর্নামেন্টের বাকি সব দল একই হোটেলে থাকলেও ভারত থাকছে আলাদা হোটেলে, এটি নিয়ে এমনিতেই কথা হয়েছে বেশ। তার ওপর হুট করে এই বদল। এই পরিবর্তন যে আনা হচ্ছেই, মঙ্গলবার সেটি অনেকটা নিশ্চিত হওয়ার পরই পাকিস্তান অধিনায়ক সরফরাজ আহমেদ তীব্র সমালোচনা করেছেন ভারতকে বাড়তি সুবিধা দেওয়ার।

বুধবার অনুশীলনের পর মাশরাফির সংবাদ সম্মেলনের বেশিরভাগ জুড়েই থাকল সূচি নিয়ে কথা। বাংলাদেশ অধিনায়ক জানালেন ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া।

টুর্নামেন্টের মাঝপথে এভাবে সূচিতে পরিবর্তন আনা নিয়ে বাংলাদেশ দলের অবস্থান কি?

মাশরাফি: সূচি বদল নিয়ে চিন্তা করার সুযোগই পাইনি। তবে অবশ্যই এটা হতাশার। প্রথম থেকেই আমাদের পরিকল্পনায় ছিল যে শ্রীলঙ্কাকে প্রথম ম্যাচে হারাতে পারলে আমরা হয়ত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পথে এগিয়ে যাব। এরপর গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হলে ‘এ’ গ্রুপের রানার্সআপ দলের সঙ্গে প্রথম ম্যাচ খেলব সুপার ফোরে। কিন্তু আজকে সকালে জানতে পেরেছি, আমরা আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতি আর হারি, আমরা ‘বি ২’ হয়ে গেছি। এটা অবশ্যই হতাশার।

আফগানিস্তানের সঙ্গে ম্যাচটি এখন…অবশ্যই আন্তর্জাতিক ম্যাচের মূল্য আছে। কিন্তু গ্রুপ ম্যাচ বলেন বা যা বলেন, একটা নিয়ম থাকে টুর্নামেন্টের। সেই নিয়মের বাইরে চলে যাচ্ছি আমরা। এটাই হতাশার।

আফগানিস্তান ম্যাচের যেহেতু মূল্য নেই, একটু নির্ভার হয়ে মাঠে নামার সুযোগ থাকছে?

মাশরাফি: রিল্যাক্সড হওয়ার সুযোগ নেই। কিন্তু আমার কথা হলো, এই ম্যাচে যারা জিতবে, তারা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা ছিল। মানে ‘বি ১’। কিন্তু সেটা আর হচ্ছে না। আমরা আগে থেকেই জানছি যে আমরা কার্যত এই গ্রুপের দ্বিতীয় দল, জিতি বা হারি। এটা নিয়মের বাইরে চলে গেছে। এটাই মূল কথা।

যারা খেলবে, দুই দলের কেউ রিল্যাক্সড হয়ত থাকবে না। কিন্তু পরিস্থিতিটা এমন করে তোলা হলো যে ব্যাখ্যা করা কঠিন।

সূচি বদলে যে বিরূপ অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ, এতে কি ভালো করার জেদ বাড়ছে?

মাশরাফি: জেদ নয়, কিন্তু কাজটা কঠিন। দেখুন ব্যাক টু ব্যাক ম্যাচ খেলছি আমরা কখন? একটা গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচ খেলে মূল ম্যাচে যখন ঢুকছি, তখন এই গরমে আমরা ব্যাক টু ব্যাক খেলছি। আমাদের তো ২৪ জন ক্রিকেটার নেই যে কালকে মূল ১১ জনকে বিশ্রাম যদি অন্য ১১ জন খেলাব।

আমাদের জন্য কাজটা আগে থেকেই কঠিন ছিল, ২০ তারিখ ম্যাচ খেলেই ২১ তারিখ সুপার ফোরের প্রথম ম্যাচ খেলা। রিকভারির সময়ই তো নেই। ধরুন যে কাল পরে ফিল্ডিং করলাম, তার পর ২১ তারিখের ম্যাচে আগে ফিল্ডিং করলাম, তাহলে মাঝে ১০ ঘণ্টাও রিকভারির সময় নেই। এটা তো সত্যি, শরীরের সঙ্গে জোর করা চলে না। এই কন্ডিশনে যতটা ঘাম ঝরে, সেটা পুষিয়ে নিতেই ২৪ থেকে ৪৮ ঘণ্টা লাগে অনেক সময়।

আমি অজুহাত দিতে চাই না। কিন্তু ব্যাপারটা হলো, আগে তবু একটা ব্যাপার ছিল, গ্রুপ পর্যায়ে চ্যাম্পিয়ন হলে পরের ম্যাচে আমরা দেখতে পেতাম কোন প্রতিপক্ষ পাই বা কেমন হয়। কিন্তু এই সমীকরণের কোনো সুযোগই নেই এখন। আমরা ‘বি ২’ হয়ে গেছি। খারাপ জিনিসটিই আমাদের দিকে এসেছে। এটা কতটা প্রভাব ফেলছে আমাদের মানসিকতায়, সেটি নিয়ে কাজ করতে হবে।

আজকে হুট করে শোনার পর দল এটিকে কিভাবে নিয়েছে?

মাশরাফি: একজন পাগলও এটায় ভালোভাবে রিঅ্যাক্ট করবে না। এটা অবশ্যই ঠিক না আন্তর্জাতিক পর্যায়ের টুর্নামেন্টে ম্যাচের আগের দিন আপনি শুনছেন যে গ্রুপ পর্যায়ের শেষ ম্যাচের আগেই আমরা ‘বি ২’। সবাই হতাশা প্রকাশ না করলেও প্রতিক্রিয়া হওয়া স্বাভাবিক।

আবু ধাবিতে কাল ম্যাচ খেলে দুবাই ফিরে পরদিনই আবার আবু ধাবিতে যেতে হচ্ছে না খেলতে, এই স্বস্তি তো অন্তত আছে?

মাশরাফি: এখান থেকে দেড়-দুই ঘণ্টা লাগে যেতে। সেটা সমস্যা নয়। সব দলের জন্যই সমান। মেনে নেওয়া যায়। আমরা কখনও ওই মাঠে খেলিনি, সেটাকেও মেনে নেওয়া যায়। অজুহাত দিচ্ছি না। সব দলের জন্যই এটা সমান। পাকিস্তান-আফগানিস্তান এখানে অনেক খেলেছে, তার মানে নয় আমরা এখানে লড়াই করতে পারব না। এখন যেটা হচ্ছে, কালকে আমাদের সম্ভব সেরা চেষ্টা যেটা করতে হবে, যেভাবেই খেলি, ২১ তারিখের ম্যাচের জন্য যতটা ধরে রাখা যায়, যতটা ফিট থাকা যায়, এটা নিয়েও ভাবা জরুরি।

এখন সত্যি বলতে আফগানিস্তান ম্যাচ নিয়ে ভাবনা যতটুকু ছিল, সেটি তো আর নেই। ২১ তারিখের ম্যাচের পরিকল্পনাই বেশি করতে হচ্ছে। আবার একটা আন্তর্জাতিক ম্যাচ নিয়ে চিন্তা করব না, সেটাও হয় না। সব মিলিয়ে অস্থির অবস্থায় আছি আমরা। এখন ৫০-৫০ অবস্থায় আছি। ২১ তারিখের ম্যাচই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু কালকেও খেলতে হবে। যতটুকু পারা যায়, চেষ্টা করব ম্যানেজ করতে।

দলের আপত্তি কি টুর্নামেন্ট কমিটিকে জানানো হয়েছে?

মাশরাফি: জানি না। আমি তো মাঠে এসেই জানলাম। একটু আগেই ম্যানেজারের কাছে শুনেছি। এটা নিয়ে আর দ্বিতীয় প্রশ্ন করিনি।

আফগানিস্তান ম্যাচটা এখন তাহলে বাড়তি একটা ঝামেলা হয়ে গেল?

মাশরাফি: ঝামেলা বলব না। তবে সবকিছু মিলিয়ে কঠিন পরিস্থিতি। এটা যদি বাংলাদেশে হতো, ওখানেও অনেক গরম, তবু ম্যানেজ করা যেত। কিন্তু এখানে শরীর থেকে যে পরিমাণ ঘাম বের হয়, যতটা শক্তি ক্ষয় হয়, সেটা রিকভারির জন্য নির্দিষ্ট একটা সময় দরকার। যেটা হবে না, ২১ তারিখের ম্যাচে অনেক প্রভাব পড়তে পারে। আমি নিশ্চিত যে এখন মেন্টাল ফিটনেসের ওপর অনেক কিছু নির্ভর করবে।

এমন ঠাসা সূচি করা হয়েছে, টুর্নামেন্ট কি একটু তাড়াহুড়ো করে আয়োজন করা হচ্ছে বলে মনে হয়?

মাশরাফি: অন্তত দ্বিতীয় পর্ব যেভাবে হচ্ছে, বলতেই হবে তাড়াহুড়ো। ২১ তারিখে এমন গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, তার আগের রাতে গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচ খেলতে হবে। সুপার ফোরে প্রথম ম্যাচটিই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। সেই ম্যাচে আমরা সবাই শারীরিকভাবে শতভাগ থাকতে না পারলে কাজটা কঠিন হয়ে যায়।

সুপার ফোরের সূচি:

২১ সেপ্টেম্বর: বাংলাদেশ-ভারত, দুবাই; পাকিস্তান-আফগানিস্তান, আবু ধাবি

২৩ সেপ্টেম্বর: বাংলাদেশ-আফগানিস্তান, আবু ধাবি; ভারত-পাকিস্তান, দুবাই

২৫ সেপ্টেম্বর: ভারত-আফগানিস্তান, দুবাই

২৬ সেপ্টেম্বর: বাংলাদেশ-পাকিস্তান, আবু ধাবি