সাব্বিরের সামনে আবারও নিষেধাজ্ঞার খড়গ

শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে ঘরোয়া ক্রিকেটে ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞা শেষ হয়েছে গত জুনে। এবার সাব্বির রহমানের সামনে ঝুলছে আরও বড় শাস্তির খড়গ। শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৬ মাসের জন্য নিষিদ্ধ হতে পারেন এই ব্যাটসম্যান।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 30 August 2018, 12:56 PM
Updated : 30 August 2018, 02:06 PM

শনিবার সাব্বিরকে ডেকেছে বিসিবির ডিসিপ্লিনারি কমিটি। তবে বিসিবির নানা সূত্র থেকে জানা গেছে, এটি কেবলই আনুষ্ঠানিকতা। ৬ মাসের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত একরকম চূড়ান্ত হয়ে গেছে।

বিসিবি সভাপতিসহ বোর্ডের অন্য কর্তারা সাব্বিরকে আরও বড় শাস্তি দিতে চেয়েছিলেন বলে জানা গেছে। তিন বছরের জন্য নিষিদ্ধ করার সিদ্ধান্ত প্রায় হয়েই গিয়েছিল। কিন্তু টিম ম্যানেজমেন্টের বিশেষ অনুরোধে শেষ পর্যন্ত ৬ মাসে তা কমিয়ে আনা হয়।

ক্যারিয়ারের বিভিন্ন সময়ে বিতর্কে জড়ানো সাব্বির সম্প্রতি আলোচনায় উঠে আসেন ফেইসবুকে গালিগালাজ করে। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে দ্বিতীয় ওয়ানডের পর সাব্বিরের বাজে ফর্ম নিয়ে ফেইসবুকে মন্তব্য করায় সাব্বির ব্যক্তিগত অ্যাকাউন্ট থেকে ম্যাসেজে গালিগালাজ ও মারধরের হুমকি দিয়েছিলেন বলে অভিযোগ করেন দুই ব্যক্তি। ম্যাসেজের স্ক্রিনশটও দেখিয়েছিলেন তারা।

সাব্বির অবশ্য তার পর দাবি করেছিলেন, তার অ্যাকাউন্ট হ্যাকড হয়েছিল। তবে বিসিবি বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে নিয়েছে। আগেও সাব্বিরের বিরুদ্ধে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগ ছিল। ঘরোয়া ক্রিকেটের ম্যাচে এক কিশোর দর্শককে পেটানোয় গত জানুয়ারিতেই ৬ মাসের জন্য ঘরোয়া ক্রিকেটে নিষিদ্ধ করা হয়েছিল সাব্বিরকে। সঙ্গে জরিমানা করা হয়েছিল ২০ লাখ টাকা। বাদ দেওয়া হয় বোর্ডের কেন্দ্রীয় চুক্তি থেকে।

এর আগে ২০১৬ বিপিএলে বড় অঙ্কের আর্থিক জরিমানা করা হয়েছিল তাকে, বিসিবি তখন অপরাধ সুনির্দিষ্ট করে না জানালেও বলেছিল ‘গুরুতর শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে শাস্তি।’

গত জুনে আফগানিস্তানের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজের সময় দেরাদুনে ড্রেসিং রুমে বিতণ্ডার এক পর্যায়ে সতীর্থ মেহেদী হাসান মিরাজের গায়ে সাব্বির হাত তুলেছিলেন বলে অভিযোগ উঠেছিল। এছাড়াও নানা সময়ে উঠেছে টুকটাক আরও অভিযোগ।

বৃহস্পতিবার বোর্ড পরিচালকদের অনেকের সঙ্গে বিসিবিতে আলোচনায় বসেছিলেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান। ছিলেন ওয়ানডে অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা, কোচ স্টিভ রোডসও। এশিয়া কাপের প্রস্তুতি থেকে শুরু করে অনেক বিষয়ের সঙ্গে আলোচনায় আসে সাব্বিরের প্রসঙ্গ।

সাব্বিরের অতীতের সব শৃঙ্খলাভঙ্গের ঘটনা তুলে এনে কড়া শাস্তির পক্ষে ছিলেন বোর্ড কর্তারা। তবে ২০১৯ বিশ্বকাপে তাকে দলের প্রয়োজন হতে পারে ভেবে শাস্তি কমানোর অনুরোধ করা হয় টিম ম্যানেজমেন্টের পক্ষ থেকে। অনুরোধ করা হয় শেষবারের মতো সাব্বিরকে শোধরানোর সুযোগ দেওয়ার। বিসিবি প্রধান রাজি না থাকলেও শেষ পর্যন্ত টিম ম্যানেজমেন্টের অনুরোধ মেনে নিয়ে শাস্তি ৬ মাসে রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছে বিসিবি সূত্র।

শনিবার ডিসিপ্লিনারি কমিটির সামনে হাজিরা দিতে হবে এশিয়া কাপের দলে থাকা মোসাদ্দেক হোসেন ও চোট নিয়ে বাইরে থাকা নাসির হোসেনকেও।

১০ লাখ টাকা যৌতুক দাবি করেছেন বলে কদিন আগে মোসাদ্দেকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন তার স্ত্রী। মোসাদ্দেক যদিও সংবাদমাধ্যমে দাবি করেছেন, কিছুদিন আগেই ডিভোর্স দিয়েছেন স্ত্রীকে। নাসিরের বিরুদ্ধে কিছুদিন আগে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে নানা অভিযোগ করেছেন এক নারী। এই দুই ক্রিকেটারকে ডাকা হয়েছে তাদের বক্তব্য শোনার জন্য।

মাঠের বাইরে ক্রিকেটারদের শৃঙ্খলাভঙ্গের নানা ঘটনা ভাবাচ্ছে বিসিবিকেও। বিসিবি প্রধান জানালেন, একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপারে বোর্ড হস্তক্ষেপ করবে না। তবে কোনো কিছু ব্যক্তি জীবনের সীমানা ছাড়িয়ে ক্রিকেটকে স্পর্শ করলে বোর্ড কঠোর হবে।

“একটা ব্যাপার হলো, সব কিছুর মধ্যে বিসিবিকে জড়ালে হবে না। সবকিছু বিসিবির পক্ষে করাও সম্ভব না। যেমন, ডিভোর্স হয় না বাংলাদেশে? কেউ যদি কাউকে ডিভোর্স দিতে চায়, এটা নিয়ে আমরা কি করব! কেউ যদি একাধিক বিয়ে করে, আমাদের কিছু করার নেই। আমরা তো বলতে পারি না, ক্রিকেট যারা খেলে তারা একাধিক বিয়ে করতে পারবে না!”

“তবে আমরা মনে করি, ক্রিকেটাররা আইডল। অনেকে তাদের অনুসরণ করে। অবশ্যই তাদের ভালো মানুষ হতে হবে। এটার জন্য যা যা করা দরকার, করতে হবে। কয়েকজনকে আমরা শাস্তি দিয়েছি, দিচ্ছি। যদি দেখি তা দিয়েও কাজ হচ্ছে না, তখন তো আমাদের কড়া শাস্তি দিতেই হবে। যদি আমরা মনে করি একটা জিনিস করা উচিত না কোনো খেলোয়াড়ের, সে যদি বারবার তা করতে থাকে, তখন কড়া সিদ্ধান্ত নিতেই হবে।”