চতুর্থ আনঅফিসিয়াল ওয়ানডেতে আয়ারল্যান্ড উলভসকে ৮৪ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ ‘এ’ দল। ৫ ম্যাচের সিরিজে এগিয়ে গেছে ২-১ ব্যবধানে। সিরিজের প্রথম ম্যাচ ভেসে গিয়েছিল বৃষ্টিতে।
ডাবলিনের দা হিলস ক্রিকেট ক্লাব মাঠে বুধবার ১৩৩ বলে ১৮২ রানের দুর্দান্ত ইনিংস খেলেন মুমিনুল। বাংলাদেশ ‘এ’ ৫০ ওভারে তোলে ৪ উইকেটে ৩৮৫ রান। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের যা সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। আইরিশদের ‘এ’ দল করে ৩০১।
মুমিনুল এদিন ৮ রানের জন্য ছুঁতে পারেননি লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের রেকর্ড। গতবছর ঢাকা প্রিমিার লিগে মোহামেডানের হয়ে আবাহনীর বিপক্ষে ১৯০ রানের ইনিংস খেলে যে রেকর্ড রকিবুল হাসানের। তবে দেশের বাইরে সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড মুমিনুলেরই।
৩ ছক্কার পাশে মুমিনুল বাউন্ডারি মেরেছেন ২৭টি। পেছনে পড়ে গেছে নাফিস ইকবালের ২১ বাউন্ডারির রেকর্ড।
দ্বিতীয় উইকেটে এদিন ওপেনার জাকির হাসানের সঙ্গে ডাবল সেঞ্চুরি জুটি গড়েছেন মুমিনুল। দলকে রেকর্ড স্কোরে নিতে সহায়তা করেছে মোহাম্মদ মিঠুনের ৫১ বলে ৮৬ রানের ঝড়ো ইনিংসটিও।
টস জিতে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ এদিন পরিবর্তন এনেছিল ওপেনিংয়ে। আগের দুই ম্যাচে ভীষণ রকম মন্থর ব্যাট করা সাইফ হাসানের পরিবর্তে সুযোগ পান মিজানুর রহমান। তবে সুযোগের অপচয় করেন তিনি ৪ রানে আউট হয়ে।
প্রথম ৫ ওভারে দলের রান ছিল ১৫। ষষ্ঠ ওভারে টাইরন কেইনকে টানা দুই বলে ছক্কা ও চার মেরে মুমিনুলের ঝড়ের শুরু। পরের ওভারে পিটার চেইসকে মারেন দুটি বাউন্ডারি। কেইনের পরের ওভারে বাউন্ডারি টানা ৪ বলে। ডেভিড ডেলানিকে আরেকটি বাউন্ডারিতে ফিফটি ৩৯ বলেই।
ফিফটির পরও মুমিনুল ছুটতে থাকেন একই গতিতে। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে চতুর্থ সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ৮১ বলে।
ততক্ষণে ফিফটি পেরিয়ে গেছেন জাকির। মুমিনুলকে দারুণ সঙ্গ দিয়েছেন এই বাঁহাতি ওপেনার।
দুজনের ২১০ রানের জুটি ভাঙে জাকিরের বিদায়ে। দ্বিতীয় ম্যাচে ৮ রানের জন্য সেঞ্চুরি না পাওয়া ওপেনার এবারও হাতছাড়া করেছেন সেঞ্চুরির সুযোগ। ফিরেছেন ৯৩ বলে ৭৯ রানে।
দল তখন দাঁড়িয়ে শক্ত ভিতের ওপর। সময়ের সঙ্গে বাড়তে থাকে মুমিনুলের ব্যাটের তেজ। দলের রান বাড়তে থাকে বানের জলের মতো।
আইরিশদের জাতীয় দলের অভিজ্ঞ বাঁহাতি স্পিনার জর্জ ডকরেলের বলে বাউন্ডারিতে মুমিনুল দেড়শ করেন ১১৯ বলে। ছাড়িয়ে যান লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার আগের সর্বোচ্চ ১৫২ রানকে। মিঠুন ফিফটি করেন ৩৪ বলে। ডকরেলের পরের ওভারে দুজনে মিলে নেন ২০ রান।
মিঠুনের তাণ্ডব চলে শেষ পর্যন্ত। ১৪ চার ও ২ ছক্কায় ৫১ বলে করেন অপরাজিত ৮৬। আল আমিনের ব্যাট থেকে আসে ১৩ বলে ১৯।
শেষ ১০ ওভারে ১২৬ রান তুলে বাংলাদেশ থামে ৩৮৫ রানে। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের আগের সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ড ছিল ২০০৬ সালে জিম্বাবুয়ে ‘এ’ দলের বিপক্ষে ৩৩১।
ম্যাচের ভাগ্য অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যায় প্রথম ইনিংসের পরই। আইরিশরা অবশ্য লড়াইয়ের চেষ্টা করেছে। সেঞ্চুরি করেছেন অধিনায়ক অ্যান্ড্রু বালবার্নি।
শুরুতে ৪০ বলে ১৮ রান থাকলেও বালবার্নি পরে পুষিয়ে দিয়ে করেছেন ১১১ বলে ১০৬। ৩২ বলে ৫৩ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেছেন সিমি সিং। তবে জয়ের সম্ভাবনা তারা সেভাবে জাগাতে পারেননি কখনোই।
বাংলাদেশ ‘এ’ দলের সফলতম বোলার পার্ট টাইমার ফজলে মাহমুদ রাব্বি। নিয়েছেন ৩ উইকেট। এদিন খরুচে হলেও উইকেট শিকারের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে সৈয়দ খালেদ আহমেদ নিয়েছেন ৩ উইকেট। চোট কাটিয়ে চার মাস পর ম্যাচ খেলতে নামা তাসকিন আহমেদ ৫ ওভারে গুনেছেন ৪৫ রান।
সংক্ষিপ্ত স্কোর:
বাংলাদেশ ‘এ’: ৫০ ওভারে ৩৮৫/৪ (মিজানুর ৪, জাকির ৭৯, মুমিনুল ১৮২, মিঠুন ৮৬, আল আমিন ১৯, আফিফ ২*; ম্যাকব্রাইন ১/৪৫, কেইন ০/৮৭, চেইস ১/৮৪, ডেলানি ১/৭৫, টমসন ০/২৭, ডকরেল ০/৬৪)।
আয়ারল্যান্ড উলভস: ৪৬.১ ওভারে ৩০১ (শ্যানন ২, ম্যাককলাম ৪২, বালবার্নি ১০৬, টমসন ৪২, সিমি ৫৩, মাকব্রাইন ১২, ডকরেল ১০, টাকার ০, কেইন ৬, ডেলানি ৭, চেইস ৮*; খালেদ ১০-০-৭৩-৩, শরিফুল ৯-১-৫৩-২, সাইফ উদ্দিন ৮.১-১-৩৫-২, ফজলে রাব্বি ১০-০-৪৭-৩, তাসকিন ৫-০-৪৫-০, আফিফ ৪-০-৪৩-০)।
ফল: বাংলাদেশ ‘এ’ ৮৪ রানে জয়ী
সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ‘এ’ ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে