সেই ওভারের আগে রুবেলকে যা বলেছিলেন মাশরাফি

২ ওভারে প্রতিপক্ষের প্রয়োজন ৩৪ রান, কাজটা যথেষ্টই কঠিন। তার পরও রুবেল হোসেনের হাতে বল তুলে দেওয়ার সময় বুক কাঁপার কথা অধিনায়কের। কিছুদিন আগেই যে দুইবার পরিস্থিতি থেকেও দলকে হারার পথে ঠেলে দিয়েছিল রুবেলের বোলিং। তবে এ দিন রুবেলকে মাশরাফি বিন মুর্তজা শুনিয়েছিলেন একটি মন্ত্র, বাংলাদেশ অধিনায়ক যা শুনেছিলেন পেস কিংবদন্তি ওয়াসিম আকরামের কাছ থেকে। ফল মিলেছে তাতে।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 31 July 2018, 06:59 AM
Updated : 31 July 2018, 06:59 AM

মার্চে শ্রীলঙ্কা নিদাহাস ট্রফির ফাইনালেও ২ ওভারে প্রয়োজন ছিল ঠিক ৩৪ রান। রুবেল ১ ওভারেই দিয়েছিলেন ২২ রান। জুনে দেরাদুনে টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের প্রয়োজন ছিল ২ ওভারে ২০ রান। রুবেলের ৫ বলেই জিতেছিল আফগানরা।

শনিবার ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে শেষের আগের ওভারে তবু সেই রুবেলের ওপরই ভরসা রাখেন অধিনায়ক। এবার রুবেলের ওভার থেকে আসে মাত্র ৬ রান।

আগের ম্যাচগুলোয় রুবেল মার খেয়েছিলেন এলোমেলো লেংথে বল করায়। এদিন তার ৫টি বল ছিল ফুল লেংথ, একটি লো ফুল টস। খুনে মেজাজে ব্যাট করতে থাকা রোভম্যান পাওয়েল তিন বল খেলে নিতে পারেন তিনটি সিঙ্গেল। অপর পাশ থেকেও আসে তিনটি সিঙ্গেল। পরে বাংলাদেশ ১৮ রানে ম্যাচ জিতে নিশ্চিত করে সিরিজ জয়ও।

ওয়ানডে সিরিজ শেষে ছুটি কাটাতে মাশরাফি এখন যুক্তরাষ্ট্রে। সেখান থেকে ফোনে বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বললেন, সাম্প্রতিক ব্যর্থতার স্মৃতি থাকলেও রুবেলের ওপর আস্থা ছিল তার।

"নিদাহাস ট্রফির ফাইনালে ২ ওভারে ঠিক ৩৪ রানই দরকার ছিল, তখনই মাথায় এসেছে আমার। তবু রুবেল ছাড়া অন্য কারও কথা ভাবিনি। সত্যি বলতে, ডেথ ওভারে তো আমার হাতে খুব বিকল্প আর নেই। এই ম্যাচে যেমন, তেমনি সামনেও আমার কাজ চালাতে হবে রুবেলকে দিয়ে। ওর আত্মবিশ্বাস ফেরানোটা জরুরি ছিল।"

"রুবেল কয়েকটি ম্যাচে রান দিয়েছে ঠিক, তবে আগে জিতিয়েছেও আমাদের। মানে, কাজটা সে পারে। আমার বিশ্বাস ছিল, ওর সেরাটা আমি বের করে আনতে পারব। সেদিন সেরাটা না পারলেও কাছাকাছি করতে পেরেছে। আরও ভালো সে করতে পারে।"

ওই ওভারের আগে রুবেলের সঙ্গে কথা বলতে দেখা গেছে মাশরাফিকে। কথা বলেছেন ওভারের মাঝেও। কি বলেছিলেন, সেটিও শোনালেন বাংলাদেশ অধিনায়ক।

"ওয়াসিম আকরাম একবার একটি কথা বলেছিল আমাকে শেষের দিকের বোলিং নিয়ে। বলেছিল, ডেথ ওভারে সাফল্যের প্রথম শর্ত, তাড়াহুড়ো না করা ও প্যানিকড না হওয়া। প্রতিটি বল সময় নিয়ে করা। গভীর ও লম্বা শ্বাস নেওয়া, প্রতিটি বলের আগে ফোকাস ঠিক করে নেওয়া। ওই সময় ব্যাটসম্যানও একটু অস্থির থাকে। বিশেষ করে সেট কোনো ব্যাটসম্যান থাকলে সে চায় রিদমে থাকতে থাকতেই দ্রুত একটির পর একটি বল খেলতে। তখন সময় নিয়ে বোলিং করলে ব্যাটসম্যান অস্থির হয়, বিরক্ত হয়। শট খেলতে গিয়ে ভুল করে ফেলে।"

"রুবেলের গত কিছুদিনের রান দেওয়া ওভারগুলোতে আমার মনে হয়েছে সে তাড়াহুড়ো করেছে। শুরুতে বাউন্ডারি খাওয়ার পর আরও এলোমেলো হয়ে গেছে। এদিন তাই আমি ওকে বারবারই শুধু আকরামের কথাই মনে করিয়ে দিয়ে বলেছি সময় নিয়ে প্রতিটি বল করতে।"

মাশরাফির আশা, ওই দাওয়াই শুধু সাময়িক নয়, ভবিষতেও কাজে লাগবে রুবেলের।

"দেখুন, ডেথ ওভারে বোলিং করলে এই যুগে মার খাবেই। অনেক দিনই খাবে। তবে ব্যর্থতার চেয়ে সাফল্য যেন বেশি আসে, সেটা নিশ্চিত করতে হবে। লেংথ নিয়ে আমি ওকে সেদিন কিছু বলিনি। শুধু বলেছিলাম, 'তুই জানিস কোথায় বল করতে হবে।’ সময় নেওয়ার কথাই বারবার বলেছি।”

"ও যথেষ্ট অভিজ্ঞ। ভালো করেই জানে কখন কোন লেংথে বল ফেলতে হবে। এই ম্যাচের পর আশা করি ওর বিশ্বাস ফিরবে, এই অভিজ্ঞতা সামনে কাজে লাগাবে।”