থিসারার ঝড়ো সেঞ্চুরিতে হারল বাংলাদেশ ‘এ’

নানা সময়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলকে কম ভোগাননি থিসারা পেরেরা। লঙ্কান অলরাউন্ডার এবার বাংলাদেশ ‘এ’ দলকেও উড়িয়ে দিলেন ব্যাটিং ঝড়ে। যখন উইকেটে গিয়েছিলেন, শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দল তখন ধুঁকছিল। সেখান থেকে পাল্টা আক্রমণে অসাধারণ এক সেঞ্চুরিতে দলকে যে স্কোরে নিয়ে যান থিসারা, সেই রানের নাগাল পায়নি বাংলাদেশ।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 19 July 2018, 12:43 PM
Updated : 19 July 2018, 01:42 PM

দ্বিতীয় আনঅফিসিয়াল ওয়ানডেতে বাংলাদেশ ‘এ’ দলকে ৬৭ রানে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা ‘এ’। সমতা ফিরিয়েছে তিন ম্যাচের সিরিজে। শনিবার শেষ ওয়ানডেতে হবে সিরিজের ফয়সালা।

সিলেট আন্তর্জতিক ক্রিকেট স্টেডিয়ামে বৃহস্পতিবার ১২৯ রানের মধ্যে ৭ উইকেট হারিয়েছিল লঙ্কানরা। কিন্তু সাতে নেমে থিসারা ৮৮ বলে করেন ১১১। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে ১০ বছর আর ২০৪ ম্যাচের ক্যারিয়ারে তার প্রথম সেঞ্চুরি।

শেষ ওভারে অলআউট হওয়া লঙ্কানরা তোলে ২৭৫ রান। বাংলাদেশ ‘এ’ গুটিয়ে গেছে ২০৮ রানে।

লঙ্কানরা ব্যাটিংয়ে নেমেছিল টস জিতে। ওপেনিংয়ে দুই বাঁহাতি উপুল থারাঙ্গা ও লাহিরু থিরিমান্নে। বাংলাদেশের অধিনায়ক মোহাম্মদ মিঠুন বোলিং শুরু করেন আল আমিনের অফ স্পিন দিয়ে। ফাটকা কাজে লেগে যায়। প্রথম ওভারেই অভিজ্ঞ থিরিমান্নেকে ফেরান আল আমিন।

বাংলাদেশের দুই পেসার খালেদ আহমেদ ও শরিফুল ইসালাম খুব ভালো করতে পারেননি শুরুতে। এই সুযোগে দ্বিতীয় উইকেটে ৫৮ রানের জুটি গড়েন থারাঙ্গা ও আশান প্রিয়াঞ্জন।

তবে দুই পাশ থেকে সানজামুল ইসলাম ও নাঈম ইসলামের স্পিন আক্রমণ শুরু হতেই নিয়মিত ধরা দিতে থাকে উইকেট। দারুণ স্পেলে তিনটি উইকেট নেন তরুণ অফ স্পিনার নাঈম। বাঁহাতি স্পিনার সানজামুল নিয়েছেন দুটি, যার মধ্যে ছিল ৫১ বলে ৪৪ রান করা থারাঙ্গার উইকেটও।

থারাঙ্গার বিদায়ে উইকেটে গিয়েছিলেন থিসারা। উইকেট ৫টি হারালেও রান তখন সবে একশ পেরিয়েছে, ইনিংসের পেরিয়েছে কেবল ২০ ওভার। থিসারাকে এক পাশে রেখে শেহান জয়াসুরিয়া ও মিনোদ ভানুকাও ফেরেন দ্রুত।

অবশেষে মালিন্দা পুস্পকুমারা ভরসা দেন থিসারাকে। আগলে রাখেন এক প্রান্ত। থিসারার ব্যাটে রান আসতে থাকে বানের জলের মতো। অষ্টম উইকেটে ৬১ বলে দুজনের ৭৭ রানের জুটিতে পুস্পকুমারার অবদান ছিল মোটে ৮!

পুস্পকুমারাকে ফিরিয়ে এই জুটি ভেঙেছেন শরিফুল। তবে নিস্তার মেলেনি বোলারদের। আগের দিন শেষ দিকে তিন ছক্কায় ম্যাচ জমিয়ে দেওয়া পেসার শেহান মাদুশঙ্কা এদিনও দেখান ব্যাটিং ঝলক। পেরেরার ব্যাট তো অপ্রতিরোধ্য ছিলই।

৯ চার ও ৫ ছক্কায় ১১১ রান করা পেরোকে শেষ পর্যন্ত থামান শরিফুল। লিস্ট ‘এ’ ক্রিকেটে তার আগের সর্বোচ্চ ছিল ৮০।

মাদুশঙ্কা দুটি করে চার ও ছক্কায় করেন ৩৬ বলে ৩৬। ৩০ ওভারের আগেই ৭ উইকেট হারিয়ে ফেলা লঙ্কানরা ততক্ষণে পৌঁছে গেছে অভাবনীয় স্কোরে।

বাংলাদেশ ‘এ’ দলের হয়ে এদিন ছিলেন না আগের ম্যাচে ফিফটি করা দুই ব্যাটসম্যান মিজানুর রহমান ও ফজলে মাহমুদ রাব্বি। আরও একটি ম্যাচে রানে ফেরার সুযোগ হারিয়েছেন সৌম্য সরকার। তিন বাউন্ডারিতে ১২ রান করে আউট দ্বিতীয় ওভারেই।

টপ ও মিডল অর্ডারের অন্যরা রান করেছেন, কিন্তু বড় ইনিংস খেলতে পারেননি কেউই। ওপেনিংয়ে সাইফ হাসান ২৮ করেছেন ৩০ বলে, তিনে নেমে জাকির হাসান ৩৭ বলে ৩২।

অধিনায়ক মিঠুন ফিরেছেন ২৫ রানে। সর্বোচ্চ ৪৬ এসেছে আল আমিনের ব্যাটে। আগের দিন ঝড় তোলার আরিফুল হক এদিন পরিস্থিতি বুঝে উইকেট ধরে খেলছিলেন। কিন্তু ৫৩ বলে ২৭ করে ফিরেছেন তিনিও। দল মুখ থুবড়ে পড়েছে দুইশ পেরিয়েই।

লঙ্কানদের দুই স্পিনার বাঁহাতি পুস্পকুমারা ও অফ স্পিনার নিশান পেইরিস নিয়েছেন তিনটি করে উইকেট। তবে ম্যাচ সেরার লড়াইয়ে থিসারা ছিলেন অপ্রতিদ্বন্দ্বী।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা ‘এ’: ৪৯.৪ ওভারে ২৭৫ (থিরিমান্নে ০, থারাঙ্গা ৪৪, প্রিয়াঞ্জন ২১, শাম্মু ১০, শানাকা ১৭, জয়াসুরিয়া ১২, থিসারা ১১১, ভানুকা ২, পুস্পকুমারা ৮, মাদুশঙ্কা ৩৬, পেইরিস ২*; আল আমিন ৫-০-২৬-১, খালেদ ৮.৪-০-৪২-১, শরিফুল ১০-০-৭৪-২, নাঈম ১০-০-৪২-৩, আরিফুল ৫-০-২০-০, সানজামুল ৪-০-২১-২, আফিফ ৪-০-২১-১, সৌম্য ৩-০-২৫-০)।

বাংলাদেশ ‘এ’: ৪৪.২ ওভারে ২০৮ (সাইফ ২৮, সৌম্য ১২, জাকির ৩২, মিঠুন ২৫, আল আমিন ৪৬, আরিফুল ২৭, আফিফ ১২, সানজামুল ২, নাঈম ২, শরিফুল ৯, খালেদ ০*; মাদুশাঙ্কা ১/৩১, জয়াসুরিয়া ১/৪১, শানাকা ১/২৪, পুস্পকুমারা ৩/৩২, পেইরিস ৩/৩৯, শাম্মু ০/১৪, প্রিয়াঞ্জন ১/২৩)।

ফল: শ্রীলঙ্কা ‘এ’ ৬৭ রানে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচের সিরিজে ১-১ সমতা

ম্যান অব দা ম্যাচ: থিসারা পেরেরা