বাংলাদেশ থেকে ফিরে রেকর্ড বইয়ে করুনারত্নে

সতীর্থরা যখন ওয়েস্ট ইন্ডিজে, দিমুথ করুনারত্নে তখন বাংলাদেশে। এই তো সপ্তাহ দুয়েক আগেই। চোট কাটিয়ে ফেরার লড়াইয়ে ছিলেন, ছন্দ ফিরে পেতে তাকে পাঠানো হয় শ্রীলঙ্কা ‘এ’ দলের সফরে। বাংলাদেশ ‘এ’ দলের বিপক্ষে প্রথম আনঅফিসিয়াল টেস্টে চট্টগ্রামে করলেন ৬০ ও ১৬১। ফিরে পেলেন জাতীয় দলে জায়গা। দলে ফিরেই প্রথম দিনটি রাঙালেন অসাধারণ সেঞ্চুরিতে। নাম লেখালেন রেকর্ড বইয়ে।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 July 2018, 02:52 PM
Updated : 12 July 2018, 02:53 PM

দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে গল টেস্টের প্রথম দিনে বৃহস্পতিবার প্রথম ইনিংসে ২৮৭ রানে অলআউট হয়েছে শ্রীলঙ্কা।

ক্যারিয়ারের ৫০তম টেস্টে ইনিংস শুরু করতে নেমে করুনারত্নে অপরাজিত ছিলেন ১৫৮ রানে। মাত্র চতুর্থ শ্রীলঙ্কান ব্যাটসম্যান হিসেবে নাম লিখিয়েছেন ‘ক্যারিং দা ব্যাট থ্রু আ কমপ্লিটেড ইনিংস’ কীর্তিতে।

১৯৮৩ সালে প্রথম লঙ্কান হিসেবে এই কীর্তি গড়েছিলেন সিদাথ ওয়েতিমুনি। ১৯৯৯ সালে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে একই সিরিজে গড়েছিলেন দুজন। বুলাওয়ায়ো টেস্টে মারভান আতাপাত্তু, হারারে টেস্টে রাসেল আর্নল্ড।

শুধু আদ্যন্ত ব্যাটিংয়ের রেকর্ড দিয়েই বোঝানো যাবে না করুনারত্নের ইনিংসকে। দলকে ভালো শুরু এনে দিয়েছেন। মাঝে উইকেট পতনের স্রোতেও উল্টো সাঁতারে প্রায় একা টেনেছেন দলকে। এরপর লোয়ার অর্ডারে শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে সঙ্গে নিয়ে উদ্ধার করেছেন দলকে। হার মানেননি তার পরও।

নিষেধাজ্ঞার খাঁড়ায় টেস্ট সিরিজ থেকে ছিটকে গেছেন নিয়মিত অধিনায়ক দিনেশ চান্দিমাল। টস জিতে ভারপ্রাপ্ত অধিনায়ক সুরাঙ্গা লাকমল নেন ব্যাটিং।

তিন পেসার আর দুই স্পিনার নিয়ে একাদশ সাজায় দক্ষিণ আফ্রিকা। শ্রীলঙ্কানদের একাদশে স্পিনার তিনজন, পেসার কেবল অধিনায়ক লাকমল।

তিন পেসার খেলানোর সিদ্ধান্ত যৌক্তিক প্রমাণ করেন প্রোটিয়া পেসাররা। উইকেট পেয়েছেন তিন জনই।

প্রথম ১০ ওভার যদিও বেশ নির্বিঘ্নে কাটিয়ে দিয়েছিলেন করুনারত্নে ও দানুশকা গুনাথিলাকা। রান উঠেছিল ৪৪।

এই জুটি ভাঙেন কাগিসো রাবাদা। তার বাড়তি লাফিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে ২৬ রানে ফেরেন গুনাথিলাকা। তিনে নামা ধনঞ্জয়া ডি সিলভাকে বোল্ড করে দেন চায়নাম্যান তাবরাইজ শামসি।

প্রথম সেশনে তবু হয়ত একটু এগিয়ে ছিল লঙ্কানরাই। লাঞ্চে গিয়েছিল তারা ২ উইকেটে ৯৩ রান নিয়ে।

পরের সেশনেই বদলে যায় ম্যাচের রঙ। ভালো শুরু করলেও বাজে শটে ফেরেন কুসল মেন্ডিস। ৬ মাস পর টেস্ট খেলতে নামা ডেল স্টেইন পান ৪২০তম টেস্ট উইকেট।

এরপর আবার রাবাদার ছোবল। চোট কাটিয়ে ফেরা অ্যাঞ্জেলা ম্যাথিউস আর রোশেন সিলভাকে ফিরিয়ে দেন তিন বলের মধ্যেই। আরেক পাশ থেকে শামসি ও ফিল্যান্ডারও যোগ দেন উইকেট শিকারে। ১৭৬ রানে শ্রীলঙ্কা হারায় ৮ উইকেট।

অন্য প্রান্তে তখন লড়াই চালিয়ে যাচ্ছেন করুনারত্নে। পৌঁছে গেছেন ততক্ষণে সেঞ্চুরির দুয়ারে। শামসিকে বাউন্ডারি মেরে অষ্টম টেস্ট সেঞ্চুরি স্পর্শ করেন ১৫৯ বলে।

শেষ দুই ব্যাটসম্যানকে নিয়ে দলের রানে করুনারত্নে যোগ করেন ১১১ রান। অবিশ্বাস্য শ্রীলঙ্কান ইনিংসের সেরা দুই জুটি গড়ে ওঠে শেষ দুই জুটিতে। নবম উইকেটে করুনারত্নের সঙ্গে লাকমনের জুটি ৪৮ রানের।

লাকমলকে ফিরিয়ে রাবাদা নেন চতুর্থ উইকেট। কিন্তু শেষ জুটিতেও প্রোটিয়াদের হতাশ করেন করুনারত্নে। লাকশান সান্দাক্যানকে নিয়ে তোলেন ৬৩ রান!

শেষ পর্যন্ত সান্দাক্যানকে ফিরিয়ে লঙ্কানদের থামান শামসি। ১৩ চার ও ১ ছক্কায় ২২২ বলে ১৫৮ রানে অপরাজিত করুনারত্নে।

শেষ দুই জুটির প্রতিরোধে উজ্জীবিত লঙ্কানরা শেষ বিকেলে তুলে নেয় প্রোটিয়াদের একটি উইকেট। দু্ই পাশেই স্পিন দিয়ে আক্রমণ শুরু করেন লাকমল। অভিজ্ঞ রঙ্গনা হেরাথ ফিরিয়ে দেন এইডেন মারক্রামকে।

প্রথম দিনেই যেভাবে টার্ন করেছে বল, তাতে দ্বিতীয় দিনে তিন লঙ্কান স্পিনারের সামনে প্রোটিয়াদের অপেক্ষায় কঠিন চ্যালেঞ্জ।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস: ৭৮.৪ ওভারে ২৮৭ (গুনাথিলাকা ২৬, করুনারত্নে ১৫৮*, ধনঞ্জয়া ১১, মেন্ডিস ২৪, ম্যাথিউস ১, রোশেন ০, ডিকভেলা ১৮, দিলরুয়ান ১, হেরাথ ১, লাকমল ১০, সান্দাক্যান ২৫; ফিল্যান্ডার ১/২৮, স্টেইন ১/৫৪, রাবাদা ৪/৫০, মহারাজ ০/৪৯, শামসি ৩/৯১, এলগার ০/৭)।

দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস: ৪ ওভারে ৪/১ (এলগার ৪*, মারক্রাম ০, মহারাজ ০*; হেরাথ ১/১, দিলরুয়ান ০/৩)।