ফিঞ্চের বিস্ফোরক ইনিংসে অস্ট্রেলিয়ার রেকর্ডময় জয়

আগের ম্যাচে ঝড় তুলেও থামতে হয়েছিল লক্ষ্য কম থাকায়। এবার আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেয়ে প্রায় ২০ ওভার জুড়েই অ্যারন ফিঞ্চ চালালেন তাণ্ডব। তাতে তছনছ জিম্বাবুয়ের বোলিং আর ওলট পালট রেকর্ডের পাতা। টি-টোয়েন্টিতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংসের নিজের রেকর্ডই নতুন করে গড়লেন ফিঞ্চ। অস্ট্রেলিয়া পেল নিজেদের সবচেয়ে বড় জয়।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 3 July 2018, 01:02 PM
Updated : 3 July 2018, 01:10 PM

ত্রিদেশীয় টি-টোয়েন্টি টুর্নামেন্টে স্বাগতিক জিম্বাবুয়েকে ১০০ রানে হারিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। টানা দ্বিতীয় জয়ে উঠে গেছে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে।

মঙ্গলবার হারারে স্পোর্টস ক্লাবে ফিঞ্চের ১৭২ রানের খুনে ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া তোলে ২২৯ রান। অস্ট্রেলিয়ার দলীয় সর্বোচ্চ এটি নয়, বিশ্বরেকর্ড ২৬৩ সহ বড় ইনিংস আছে আরও তিনটি। তবে সর্বোচ্চ রান না হলেও ধরা দিয়েছে সবচেয়ে বড় জয়। জিম্বাবুয়ে থমকে গেছে ১২৯ রানে।

টি-টোয়েন্টিতে অস্ট্রেলিয়ার এটি প্রথম শতরানের জয়। আগের সবচেয়ে বড় জয় ছিল ৯৫ রানের।

২০১৩ সালে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে সাউথ্যাম্পটনে ১৫৬ রানের ইনিংস খেলেছিলেন ফিঞ্চ। এবার ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকে। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে একটি দেড়শও নেই আর কারও।

আগের দিন ১১৭ রান তাড়ায় পাকিস্তানের বিপক্ষে ৩৩ বলে ৬৮ রানে অপরাজিত ছিলেন ফিঞ্চ। এদিন শুরু করেন যেন সেখান থেকেই। জিম্বাবুয়ের বোলারদের আছড়ে ফেলেছেন মাঠের নানা প্রান্তে।

আরেক পাশে ডার্চি শর্টের ব্যাটে ছিল উল্টো সুর। বাউন্ডারি পেতে ধুঁকছিলেন। তবে দ্রত রান তুলতে না পারলেও সঙ্গ দিয়ে যান ফিঞ্চকে। ২২ বলে ফিঞ্চের যখন ফিফটি হলো, শর্টের রান ১৩।

৫০ বলে ফিঞ্চ স্পর্শ করেছেন সেঞ্চুরি, শর্টের রান তখন ৩৭। তবে দুজনের এই যুগলবন্দীতেই ধরা দেয় রেকর্ড। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতে যে কোনো উইকেটেই প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি জুটি!

শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারের দ্বিতীয় বলে ভাঙে এই জুটি। ৪২ বলে ৪৬ করে আউট হন শর্ট।

দুজনের জুটির রান তখন ২২৩। নিউ জিল্যান্ডের কেন উইলিয়ামসন ও মার্টিন গাপটিলের গড়া ১৭১ রানের জুটির রেকর্ড পড়ে যায় অনেক পেছনে।

আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ব্যক্তিগত সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ডও ততক্ষণে নতুন করে গড়ে ফেলেছেন ফিঞ্চ। সামনে ছিল ক্রিস গেইলের ১৭৫ রান, সব ধরনের টি-টোয়েন্টিতেই যেটি সর্বোচ্চ ইনিংসের রেকর্ড। কিন্তু শেষ ওভারের পঞ্চম বলে কাট করতে গিয়ে ব্যাট চালিয়ে দেন স্টাম্পে। হিট উইকেট হয়ে থামেন ৭৬ বলে ১৭২ রান করে।

ইনিংসটায় রেকর্ড আছে আরও। চার মেরেছেন ১৬টি, এক ইনিংসে যেটি সর্বোচ্চ। এখানেও ভেঙেছেন নিজের রেকর্ড। ১৪ চারের আগের রেকর্ড যৌথভাবে ফিঞ্চের সঙ্গে ছিল গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও হার্শেল গিবসের।

ছক্কা মেরেছেন ১০টি, নিজের ১৪ ছক্কার রেকর্ড ভাঙতে পারেননি। তবে হয়েছে আরও একটি রেকর্ড। দলের ৭৫.১১ শতাংশ রান করেছেন একাই। আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি তো বটেই, সব ধরনের টি-টোয়েন্টিতেই এটি রেকর্ড।

জিম্বাবুয়ের বোলারদের এমন দুর্দশার দিনে উজ্জ্বল ব্যতিক্রম ছিলেন টেন্ডাই চিসোরো। ৪ ওভারে এই বাঁহাতি স্পিনার দিয়েছেন কেবল ১৯ রান। সলোমন মিরে এক ওভারেই ২১!

মিরে অবশ্য ব্যাট হাতে চেষ্টা করেছেন পুষিয়ে দিতে। ১৯ বলে করেছেন ২৮। ওপেনিংয়ে তার সঙ্গী চামু চিবাবা ১০ বলে ১৮।

পরের ব্যাটসম্যানরাও চেষ্টা করেছেন আগ্রাসী খেলতে। কিন্তু সেই চেষ্টায় উইকেটও পড়েছে নিয়মিত। ১০ ওভারে জিম্বাবুয়ের রান ছিল ৯৪, কিন্তু ততক্ষণে নেই চার উইকেট। পরের ১০ ওভারে এসেছে মাত্র ৩৬ রান।

আগের দিন ৪ ওভারে ৮ রানে ৪ উইকেট নেওয়া বিলি স্ট্যানলেক এদিন ৩ ওভারে গুনেছেন ৩৯ রান। ৪ ওভারে ১২ রানে ৩ উইকেট নিয়েছেন অ্যান্ড্রু টাই, ১৬ রানে দুটি অ্যাশটন অ্যাগার।

তবে নায়ক এদিন একজনই। স্টিভেন স্মিথের নিষেধাজ্ঞায় টি-টোয়েন্টির নিয়মিত নেতৃত্ব পাওয়ার পর তিন ইনিংসে ফিঞ্চের রান ৮৪, অপরাজিত ৬৮ ও ১৭২!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ২০ ওভারে ২২৯/২ (ফিঞ্চ ১৭২, শর্ট ৪৬, ম্যাক্সওয়েল ০*, স্টয়নিস ১*; নিয়ুম্বু ০/৪৪, মুজরাবানি ২/৩৮, এমপোফু ০/৫৩, চিসোরো ০/১৯, বার্ল ০/৩০, চিবাবা ০/১৯, মিরে ০/২১)

জিম্বাবুয়ে: ২০ ওভারে ১২৯/৯ (মিরে ২৮, চিবাবা ১৮, মাসাকাদজা ১২, মুসাকান্দা ১০, মুর ১৯, চিগুম্বুরা ৭, বার্ল ১০, চিসোরো ৬, এমপোফু ৩, মুজারাবানি ১**, নিয়ুম্বু ৬*; স্ট্যানলেক ১/৩৯, রিচার্ডসন ১/২৩, অ্যাগার ২/১৬, শর্ট ০/২০, টাই ৩/১২, ম্যাক্সওয়েল ১/৭, স্টয়নিস ১/১১)।

ফল: অস্ট্রেলিয়া ১০০ রানে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: অ্যারন ফিঞ্চ