এবার শেষ বলে হেরে গেল বাংলাদেশের মেয়েরা

আরও একটি রোমাঞ্চকর লড়াই, আরও একবার শেষ বলের সমাপ্তি। তবে এবার শেষের অভিজ্ঞতা ভিন্ন। এশিয়া কাপ ফাইনাল ও আয়ারল্যান্ড সিরিজের প্রথম ম্যাচ শেষ বলে জিতলেও এবার বাংলাদেশের মেয়েরা পেল পরাজয়ের তেতো স্বাদ। জয় ধরা দিল না নিজেদের রেকর্ড রান তুলেও। অসাধারণ রান তাড়ায় হোয়াইটওয়াশ এড়াল আয়ারল্যান্ড।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 1 July 2018, 04:45 PM
Updated : 1 July 2018, 05:27 PM

টি-টোয়েন্টি সিরিজের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশকে ৬ উইকেটে হারিয়েছে আয়ারল্যান্ড। আগের দুই ম্যাচ জিতে সিরিজ জয় আগেই নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ।

ডাবলিনে রোববার বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে সর্বো্চ ব্যক্তিগত রানের নিজের রেকর্ড নতুন করে লেখান ফারজানা হক। অপরাজিত থাকেন ৬৬ রানে। টি-টোয়েন্টিতে প্রথমবার দেড়শ ছুঁয়ে বাংলাদেশ তোলে ২০ ওভারে তোলে ১৫১ রান।

প্রথম ১০ ওভারে ধুঁকলেও পরের ১০ ওভারে দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ে আইরিশরা ম্যাচ জিতে নেয় শেষ বলে।

শেষ ওভারে জয়ের জন্য প্রয়োজন ছিল ১১ রান। জাহানারা আলমের করা প্রথম তিন বলে আসে তিনটি সিঙ্গেল।

চতুর্থ বল ওয়াইড, তবে রান চুরি করতে গিয়ে রান আউট বাংলাদেশের মূল বাধা হয়ে থাকা লরা ডেলানি।

তার পরও শেষ রক্ষা হয়নি। পরের বলে দুই রান নেন ইসোবেল জয়েস, অভিজ্ঞ ব্যাটার পঞ্চম বলে সুইপে মেরে দেন বাউন্ডারি। শেষ বলে জয়ের জন্য ১ রান নিতে সমস্যা হয়নি তার।

আগের দুই ম্যাচে দুর্দান্ত বোলিং করা জাহানারা দেখলেন মুদ্রার উল্টোপিঠ। শেষ ওভার ছাড়াও এদিন ছিলেন বেশ খরুচে। ৪ ওভারে দিয়েছেন ৩৯ রান।

আইরিশদের রান তাড়ার মাঝপথের স্কোর বলছিল, বাংলাদেশের অপেক্ষায় বড় জয়! ১০ ওভারে তাদের রান ছিল ২ উইকেটে ৫১। শেষ ১০ ওভারে ১০১ রান করা মেয়েদের ক্রিকেটে ভীষণ কঠিন চ্যালেঞ্জ।

সেই প্রায় অসম্ভবকেই সম্ভবের পথে এগিয়ে নিয়েছে গ্যাবি লুইস ও ডেলানির জুটি। যে কোনো উইকেটেই আইরিশদের রেকর্ড ৯৩ রানের জুটি গড়েছেন দুজন মাত্র ৫৭ বলে।

৭ চার ও ১ ছক্কায় ৩০ বলেই ফিফটি করেন ১৭ বছর বয়সী লুইস।

বাংলাদেশ এই জুটি ভাঙতে পেরেছে সৌভাগ্যের ছোঁয়ায়। ডেলানির শট বোলার নাহিদার হাতে লেগে নন স্ট্রাইক প্রান্তে রান আউট হয়েছেন লুইস।

৩৮ বলে ৪৬ রান করা অধিনায়ক লুইসও রান আউট হয়েছেন শেষ ওভারে। তার পরও পারেনি বাংলাদেশ। ১৪ বলে অপরাজিত ২২ রানে দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন ইসোবেল জয়েস।

ম্যাচের প্রথম ভাগে উজ্জ্বল ছিল বাংলাদেশই। আগের দুই ম্যাচে আগে ব্যাট করে হারতে হয়েছে, এদিন টস জিতে আইরিশরা ব্যাটিংয়ে পাঠায় বাংলাদেশকে। সিদ্ধান্ত হয়ে ওঠে বুমেরাং। শামিমা সুলতানা ও আয়েশা রহমান বাংলাদেশকে এনে দেন উড়ন্ত সূচনা।

আগের ম্যাচে ফিফটি করা শামিমা শুরু করেন প্রথম ওভারেই তিনটি বাউন্ডারিতে। পরের ওভারে দুটি চার আসে আয়েশার ব্যাট থেকে।

৭ ওভারে ৪৭ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন দুজন। ২৭ বলে ৩০ করে শামিম স্টাম্পড হলে ভাঙে এই জুটি।

দ্বিতীয় উইকেটে আয়েশা ও শামিমার জুটি ছিল ৩০ রানের। ২৬ বলে ২৭ রানে আয়েশার রান আউটে শেষ হয় এই জুটি।

ইনিংসের বাকিটা শুধু ফারাজানাময়। একাই টেনেছেন দলকে। খেলেছেন দারুণ সব শট। শেষ পর্যন্ত ৬৬ রানে অপরাজিত থাকেন ৪৭ বলে।

বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে আগের বক্তিগত সর্বোচ্চ ৫২ রান ছিল ফারজানারই। এবার ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকে। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশর চারটি ফিফটির দুটি ফারজানার, দুটি শামিমার।

ইনিংসে ফারজানা মেরেছেন ৬ চার, ২ ছক্কা। বাংলাদেশের হয়ে টি-টোয়েন্টিতে এক ইনিংসে দুটি ছক্কা আগে মারতে পেরেছিলেন কেবল আয়েশা, ২০১৩ সালে।

দলীয় ১৫১ রান তুলে বাংলাদেশ ছাড়িয়ে যায় এশিয়া কাপে ভারতের বিপক্ষে করা ১৪২ রানকে।

এত এত রেকর্ড, তার পরও পাওয়া হলো না জয়। শেষ পর্যন্ত দিনটি হয়েছে আইরিশদের।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

বাংলাদেশ: ২০ ওভারে ১৫১/৪ (শামিমা ৩০, আয়েশা ২৭, ফারজানা ৬৬*, নিগার ৮, সানজিদা ৯, ফাহিমা ৩*; ডেলানি ১/১৯, রিচার্ডসন ১/৩১, ম্যাটকাল্ফ ১/৩২)।

আয়ারল্যান্ড: ২০ ওভারে ১৫২/৪ (শিলিংটন ২১, সিসিলিয়া ৭, লুইস ৫০, ডেলানি ৪৬, ইসোবেল ২২*, রিচার্ডসন ০*; জাহানারা ৪-০-৩৯-০, সালমা ৪-০-২৬-০, নাহিদা ৪-০-২০-১, পান্না ৪-০-২৯-১, রুমানা ৩-০-২৪-০, ফাহিমা ১-০-১২-০)।

ফল: আয়ারল্যান্ড ৬ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: ৩ ম্যাচ সিরিজে বাংলাদেশ ২-১ ব্যবধানে জয়ী