বাটলারের অসাধারণ সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডের ইতিহাস

কাভার ফিল্ডারের পাশ দিয়ে বল যখন ছুটছে সীমানায়, মাঝ উইকেটে মুষ্ঠিবদ্ধ হাত বাতাসে ছুঁড়ে লাফিয়ে উঠলেন জস বাটলার। যেন ছুঁতে চাইলেন আকাশ। তার ওই শট, তার ইনিংসে নতুন উচ্চতা স্পর্শ করল আসলে ইংল্যান্ডের ক্রিকেটই। ওয়ানডে ইতিহাসের অন্যতম সেরা এক ইনিংস খেলে দলকে জেতালেন বাটলার। অস্ট্রেলিয়াকে হোয়াইটওয়াশ করল ইংল্যান্ড।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 June 2018, 06:12 PM
Updated : 25 June 2018, 06:07 AM

রুদ্ধশ্বাস শেষ ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে ১ উইকেটে হারিয়েছে ইংল্যান্ড। এর আগে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের ৩-০, ৪-০ ব্যবধানে হারালেও এই প্রথম ৫-০তে হারাল ইংলিশরা।

ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে রোববার টস জিতে অস্ট্রেলিয়া গুটিয়ে গিয়েছিল ২০৫ রানে। রান তাড়ায় এক পর্যায়ে বড় হারের মুখে ছিল ইংল্যান্ড। কিন্তু বাটলারের বীরোচিত সেঞ্চুরিতে জিতেছে তারা ৯ বল বাকি রেখে।

ম্যাচের প্রথম ইনিংসের পর একটি ফলই মনে হচ্ছিল অবধারিত। তিনশ রান করা বা তাড়াকে ছেলেখেলা বানিয়ে ফেলেছে এখনকার ইংল্যান্ড। এই সিরিজেই ৪৮১ রানের বিশ্বরেকর্ড গড়েছে, অনায়াসে ৩১১ রান তাড়া করেছে। তাদের সামনে ২০৬ রানের লক্ষ্য হওয়ার কথা কেবল আনুষ্ঠানিকতা।

কিন্তু হোয়াইটওয়াশের ঘণ্টা শুনে বুঝি জেগে ওঠেছিল বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের অহম। নতুন বলে আগুন ঝরালেন বিলি স্ট্যানলেক। কেন রিচার্ডসনসহ অন্য বোলাররাও করলেন লড়াই। ইংল্যান্ড ৮ উইকেটে হারাল ১১৪ রানেই।

অস্ট্রেলিয়া তখন হোয়াইটওয়াশ এড়ানোর সান্ত্বনার আশায়। কিন্তু বাটলারের মনে ছিল অন্য ভাবনা।

২৭ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন বাটলার। আরেক পাশে উইকেট পড়লেও তিনি চালিয়ে গেছেন লড়াই। অপেক্ষায় ছিলেন একজন যোগ্য সঙ্গীর। সেই সঙ্গী হয়ে আসেন দশে নামা আদিল রশিদ।

নবম উইকেটে দুজনে গড়েন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ইংল্যান্ডের রেকর্ড ৮১ রানের জুটি। জুটিতে বাটলারের ব্যাট থেকে আসে ৫১ রান, রশিদের ২০।

হাতের মুঠো থেকে প্রায় ফসকে যাওয়া জয় আবার নাগালে নিয়ে আসে এই জুটি। শেষের কাছে গিয়ে আবার নাটকীয়তা। জয় থেকে ১১ রান দূরে মার্কাস স্টয়নিসের বলে আউট রশিদ।

ক্যাচের সময় প্রান্ত বদল হয়েছিল। স্ট্রাইকে ফিরে বাটলার পরের বলেই দারুণ ছক্কায় স্পর্শ করেন সেঞ্চুরি।

শেষ ব্যাটসম্যান জেইক বল পরের ওভারটি অ্যাশটন অ্যাগারকে মেডেন খেলে কাটিয়ে দেন নিরাপদে। কেন রিচার্ডসনের করা ৪৮তম ওভারও সাবধানে কাটিয়ে দেন দুজন। আসে তিন রান।

৪৯তম ওভারের তৃতীয় বলে বাটলারের সেই বাউন্ডারিতে ধরা দেয় জয়। উল্লাসে ফেটে পড়ে ওল্ড ট্র্যাফোর্ডের টইটম্বুর গ্যালারি।

চমক জাগানিয়া নানা উদ্ভাবনী শট, বিস্ফোরক সব ইনিংস খেলে এতদিন মাতিয়েছেন বাটলার। সেই ব্যাটসম্যানই এদিন দলের প্রয়োজনে দেখা দিলেন অন্য রূপে। ঠাণ্ডা মাথায়, পরিণত ব্যাটিংয়ে, সময় ও পরিস্থিতির দাবি মেটানো ব্যাটিংয়ে জেতালেন দলকে।

এ দিনের বাটলারের ব্যাটিং কতটা আলাদা, সেটি ফুটিয়ে তুলতে যথেষ্ট একটি তথ্যই। ওয়ানডে ক্যারিয়ারে এর আগে ৫টি সেঞ্চুরি ও ১৭টি ফিফটি করলেও এই প্রথমবার খেললেন ১০০ বল! শেষ পর্যন্ত ১২ চার ও ১ ছক্কায় ১২২ বলে অপরাজিত তিনি ১১০ রান।

বাটলারের ইনিংস ছাড়া দুই দলের স্কোর যেমন বোঝাচ্ছে, উইকেট কিন্তু ততটা ব্যাটিং দুরূহ ছিল না। খানিকটা বাড়তি বাউন্স অবশ্য মিলেছে, স্পিনারদের জন্য খানিকটা গ্রিপ করেছে। তবে এমনিতে ব্যাটিং সহায়কই ছিল। ধারাভাষ্যকাররা তো শুরুতে পিচ ব্যাটিং স্বর্গ বলেও রায় দিচ্ছিলেন। অস্ট্রেলিয়ার শুরুটা যে ছিল উড়ন্ত!

দুই ওপেনার ট্রাভিস হেড ও অ্যারন ফিঞ্চ ৬ ওভারেই অস্ট্রেলিয়াকে এনে দেন ৫৮ রান।

চিত্র বদলায় সপ্তম ওভারে মইন আলি আক্রমণে আসার পরপরই। এই অফ স্পিনারের তৃতীয় বলেই বোল্ড ১৭ বলে ২২ রান করা ফিঞ্চ। এক বল পর সুইপ খেলে বিদায় তিনে নামা মার্কাস স্টয়নিয়সও।

দারুণ খেলতে থাকা হেড ফিরেছেন টানা তৃতীয় ফিফটির পর। ৪২ বলে ৫৬ করে আউট হয়েছেন প্লাঙ্কেটের বাড়তি লাফানো বলে। সিরিজে দুটি সেঞ্চুরি করা শন মার্শকে ফিরিয়ে তৃতীয় শিকার ধরেন মইন।

১৫তম ওভারের প্রথম বলে যখন রান আউট টিম পেইন, বিনা উইকেটে ৬০ রান থেকে অস্ট্রেলিয়ার রান তখন ৫ উইকেটে ১০০!

সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়াকে উদ্ধারের চেষ্টা করেন তৃতীয় ওয়ানডে খেলতে নামা অ্যালেক্স কেয়ারি ও টপ অর্ডার থেকে সাতে নেমে আসা ডার্চি শর্ট। ষষ্ঠ উইকেটে ৫৯ রানের জুটি গড়েন দুই বাঁহাতি।

৪০ বলে ৪৪ রান করা কেয়ারিকে ফিরিয়ে প্রথম ওয়ানডে উইকেটের স্বাদ পান অভিষিক্ত পেসার স্যাম কারান।

এরপর দলকে যা একটু টেনেছেন শর্ট, অন্য পাশ পাননি সঙ্গী। অপরাজিত থাকেন ৫২ বলে ৪৭ রানে। অস্ট্রেলিয়া গুটিয়ে যায় ৩৫ ওভারের আগেই।

সেই স্কোরেই এরপর ওল্ড ট্র্যাফোর্ডে বয়ে গেল নাটকীয়তার ঢেউ। উত্তুঙ্গ স্রোতে শক্ত হাতে তরী বেয়ে দলকে জয়ের ঠিকানায় পৌঁছে দিলেন বাটলার। ম্যাচের সেরা তিনি, সিরিজেও সেরা।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

অস্ট্রেলিয়া: ৩৪.৪ ওভারে ২০৫ (ফিঞ্চ ২২, হেড ৫৬, স্টয়নিস ০, মার্শ ৮, কেয়ারি ৪৪, পেইন ১, শর্ট ৪৭*, অ্যাগার ০, রিচার্ডসন ১৪, লায়ন ১, স্ট্যানলেক ২; বল ০/২৯, কারান ২/৪৪, রুট ০/৩২, মইন ৪/৪৬, প্লাঙ্কেট ১/১৯, রশিদ ১/৩২)।

ইংল্যান্ড: ৪৮.৩ ওভারে ২০৮/৯ (রয় ১, বেয়ারস্টো ১২, হেলস ২০, রুট ১, মর্গ্যান ০, বাটলার ১১০*, মইন ১৬, কারান ১৫, প্লাঙ্কেট ০, রশিদ ২০, বল ১*; অ্যাগার ১/৩৪, স্ট্যানলেক ৩/৩৫, লায়ন ০/৩২, রিচার্ডসন ৩/৫১, স্টয়নিস ২/৩৭, শর্ট ০/১২)।

ফল: ইংল্যান্ড ১ উইকেটে জয়ী

সিরিজ: ৫ ম্যাচ সিরিজে ইংল্যান্ড ৫-০তে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: জস বাটলার

ম্যান অব দা সিরিজ: জস বাটলার