জানতাম পুরো দেশ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে: সালমা

কোনো সিরিজ বা টুর্নামেন্টে খেলে সালমা খাতুন, রুমানা আহমেদ, জাহানারা আলমদের ফেরা হয় অনেকটা নিভৃতে। ফুলের তোড়া নিয়ে তাদের জন্য অপেক্ষার চিত্রটা বিরল। মহিলা এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতকে হারানোর পর থেকে সালমারা জানতেন, এবার ফেরাটা হবে অন্যরকম। এবার অধীর আগ্রহে অপেক্ষায় থাকবে পুরো দেশ। 

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 11 June 2018, 07:50 PM
Updated : 11 June 2018, 07:50 PM

ভারতের মেয়েদের হারিয়ে দেশকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে প্রথম শিরোপা এনে দেওয়া সালমা-রুমানারা সোমবার ঢাকায় ফিরেন বিকালে। একই দিন ঢাকার একটি হোটেলে ছিল বিসিবির ইফতার। শিরোপাজয়ী মেয়েরা ফেরায় ইফতারের পর তাদের সংবর্ধনার আয়োজন করে বিসিবি। 

বিমানবন্দরে নেমে সরাসরি হোটেলে চলে আসেন ক্রিকেটাররা। তারা তৈরি হয়ে বলরুমে আসার আগেই দলকে দুই কোটি টাকা আর্থিক পুরষ্কারের ঘোষণা দেন বিসিবি প্রধান নাজমুল হাসান। সালমা জানান, ফাইনালে জেতার পর এই সবই প্রত্যাশিত তাদের।

“আমরা অনেক বড় একটি দলকে হারিয়ে এশিয়ার সেরা হয়েছি। আমরা জানতাম, পুরো বাংলাদেশ আমাদের জন্য অপেক্ষা করছে যে, আমরা কখন পৌঁছাব। দেশে পৌঁছানোর পর এই পর্যন্ত আসার পথে পেয়েছি অসংখ্য উপহার। অনেক আনন্দ লাগছে।”

সাকিব আল হাসান, মুশফিকুর রহিমসহ জাতীয় ক্রিকেট দলের অনেক সদস্য উপস্থিত ছিলেন বিসিবির আয়োজনে।  

মেয়েদের ক্রিকেটের উন্নতির জন্য কি কি করা যায় দুই দিনের মধ্যে তার একটি প্রতিবেদন দিতে এনায়েত হোসেন সিরাজকে প্রধান করে একটি কমিটি করেছে বিসিবি। এই ব্যাপারে বিসিবির সিদ্ধান্তই মেনে নেবেন সালমারা।

“যেহেতু আমরা ভালো একটা ফল করেছি, এখন বোর্ড চিন্তা করবে আমাদের জন্য কি করা যায়। তারাই চিন্তা করবেন আমাদের জন্য কি করা উচিত, কি করা উচিত নয়। আমাদের কিছু বলার নেই। সিদ্ধান্ত নেবে বোর্ড।”

মাঝে ১৪ মাস কোনো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ছিল না মেয়েদের। দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের আগে দেড় বছর খেলেনি কোনো টি-টোয়েন্টি। নিয়মিত খেলার সুযোগ পাওয়ার দাবি বরাবরই জানিয়ে আসছেন সালমা-রুমানারা।

সংবর্ধনা শেষে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেন সালমা। বরাবরের নির্লিপ্ত অলরাউন্ডারকে দেখা গেল ফুরফুরে মেজাজে। জানালেন, শ্রীলঙ্কার কাছে প্রথম ম্যাচে হারের পর ঠিক উল্টো পরিস্থিতিতে ছিলেন তারা।

“প্রথম ম্যাচটায় আমরা শ্রীলঙ্কার কাছে হেরে যাই। টুর্নামেন্টের বেশি দিন আগে আমরা সেখানে যাইনি, কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে একটু সময় লেগেছে। সেই ম্যাচ হারলেও আমরা আত্মবিশ্বাস হারাইনি।”

“আমি আমাদের সব খেলোয়াড়দের সঙ্গে কথা বলেছি যে, কোনোভাবেই আত্মবিশ্বাস হারানো যাবে না। এখনও অনেক ম্যাচ আছে, আমরা ঘুরে দাঁড়াতে পারি। আমরা কিন্তু তা প্রমাণ করেও দেখিয়েছি। আমরা যে কিছু করতে পারব, এই আত্মবিশ্বাস আমাদের সবার মাঝেই ছিল।”

হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরুর পর ভুলের আর কোনো সুযোগ ছিল না বাংলাদেশের। পরের প্রতিটি ম্যাচ ছিল তাদের জন্য বাঁচা-মরার। অধিনায়ককে হতাশ করেননি সতীর্থরা।

“পাকিস্তান ম্যাচটা আমাদের জন্য খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। সেটা যদি হেরে যেতাম আমাদের সব আশাই শেষ হয়ে যেত। সেই ম্যাচের আগে আমাদের সবার মধ্যে কিছু করে দেখানোর আত্মবিশ্বাস ছিল।”

প্রাথমিক পর্বে ভারতকে হারানোর পর ফাইনালে তার পুনরাবৃত্তি। সব মিলিয়ে টুর্নামেন্টে ৬ ম্যাচের পাঁচটিতেই জয়। ফাইনালে জেতার পর চোখের জল ধরে রাখতে পারেননি সালমা। তবে ড্রেসিং রুমে তাদের উদযাপন ছিল উন্মাতাল।

“জেতার পর ড্রেসিং রুমে সবাই অনেক মজা করেছি। নেচে-গেয়ে জয় উদযাপন করেছি। সবাই মিলে অনেক উল্লাস করেছি। সেই সময়টা এখন বলে বোঝানো যাবে না।”

দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের পর এশিয়া কাপ, সামনের আয়ারল্যান্ড সফর- সবই সালমাদের প্রস্তুতির অংশ। নেদারল্যান্ডসে মহিলা টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের বাছাই পর্ব পার হতে নিজেদের সম্ভাব্য সেরা প্রস্তুতির দিকে মনোযোগ সালমার। তবে তার আগে এবার মনভরে কাটাতে চান ঈদের ছুটি।

“এখন আমরা ঈদের ছুটিতে বাড়িতে যাব। ঈদের পরদিনই হয়তো চলে আসবো। এরপর আমাদের আবার আয়ারল্যান্ড সফর আছে। এরপর নেদারল্যান্ডসে যাব। আমরা ধীরে ধীরে সব কিছু নিয়ে পরিকল্পনা করছি।”