ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের মেয়েদের অবিস্মরণীয় জয়

মেয়েদের এশিয়া কাপের ছয় আসরের সবকটির চ্যাম্পিয়ন ভারত। এবারও পরিষ্কার ফেভারিট। গত বছর ওয়ানডে বিশ্বকাপে হয়েছে রানার্স আপ। সেই পরাক্রমশালী ভারতকে অভাবনীয়ভাবে হারিয়ে দিয়েছে বাংলাদেশ। রুমানা আহমেদের দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফরম্যান্স ও ফারজানার দারুণ ব্যাটিংয়ে মেয়েদের ক্রিকেটের পথচলায় বাংলাদেশ পেয়েছে অবিস্মরণীয় এক জয়।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 6 June 2018, 09:32 AM
Updated : 6 June 2018, 01:42 PM

এশিয়া কাপে নিজেদের তৃতীয় ম্যাচে ভারতকে ৭ উইকেটে হারিয়েছে বাংলাদেশ। কুয়ালালামপুরে বুধবার ভারতের ১৪১ রান তাড়ায় সালমা খাতুনের দল জিতেছে ২ বল বাকি রেখে।

ভারতের বিপক্ষে ১০ টি-টোয়েন্টি ও ৪ ওয়ানডে খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে বাংলাদেশের মেয়েদের প্রথম জয় এটিই।

আর এশিয়া কাপের ইতিহাসে এটাই ভারতের প্রথম পরাজয়।

শ্রীলঙ্কার কাছে বাজে হার দিয়ে টুর্নামেন্ট শুরু করলেও পরের ম্যাচে বর্তমান রানার্স আপ পাকিস্তানকে হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ। এবার হারাল চ্যাম্পিয়ন ভারতকে। ফাইনালের স্বপ্ন পূরণের পথে সালমার দল নিল বড় এক পদক্ষেপ।

এত বড় রান তাড়া করা তো দূরের কথা, টি-টোয়েন্টিতে সব মিলিয়েই বাংলাদেশের আগের সর্বোচ্চ রান ছিল কেবল ১৩৭। সেই দলই এবার চমক জাগানিয়া পারফরম্যান্সে তাড়া করল ১৪২। রান তাড়ায় বাংলাদেশের আগের রেকর্ড ছিল আগের ম্যাচেই পাকিস্তানের ৯৫ রান তাড়ায় জয়।

এই ইতিহাস গড়া জয় সম্ভব হয়েছে রেকর্ড গড়া ইনিংস আর রেকর্ড গড়া জুটিতে। ফারজানা ও রুমানা অসাধারণ অবিচ্ছিন্ন চতুর্থ উইকেট জুটিতে তুলেছেন ৯৩ রান। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় জুটি এটিই।

ফারজানা অপরাজিত ছিলেন ৫২ রানে, টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস।

জয়ের মূল নায়িকা অবশ্য রুমানা। দুর্দান্ত বোলিংয়ে ৩ উইকেট নেওয়ার পর ব্যাট হাতে খেলেছেন ৪২ রানের অপরাজিত ইনিংস। ম্যাচ সেরার লড়াইয়ে তার ছিল না কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী।

বড় একটা কৃতিত্ব দিতে হবে ওপেনার শামিমা সুলতানাকেও। পাকিস্তানের বিপক্ষে জয়ের ম্যাচের মতো এদিনও রান তাড়ার ভিত গড়ে দেন শামিমা। তার ব্যাট এদিন ছিল আরও কার্যকর। বড় রান তাড়ায় দরকার ছিল দ্রুত শুরু। ২৩ বলে ৭ চারের শামিমার ৩৩ রানের ইনিংস দলকে এনে দেয় সেই কাঙ্ক্ষিত শুরু।

আরেক ওপেনার আয়েশা রহমান রান বেশি না করলেও বল অপচয় করেননি। একটি করে চার ও ছক্কায় ১০ বলে করেছেন ১২।

মাঝে নিগার সুলতানা ফেরেন ১ রানে। ৪৯ রানে বাংলাদেশ হারায় ৩ উইকেট। সেখান থেকেই ফারজানা ও রুমানার ম্যাচ জেতানো জুটি।

শেষ ৬ ওভারে বাংলাদেশের প্রয়োজন ছিল ৫৪ রান। দারুণ ব্যাটিংয়ে সেই সমীকরণ মিলিয়েছেন দুজন। ৫ চার ও ১ ছক্কায় ৪৬ বলে ৫২ রানে অপরাজিত ফারজানা। রুমানার ৩৪ বলে ৪২ রানের অপরাজিত ইনিংসে চার ৬টি।

বাংলাদেশের ঘুরে দাঁড়ানোর শুরুটা বোলিং ইনিংসের শেষ ভাগ থেকেই। শুরুতে ২০ রানে ২ উইকেট হারালেও ভারতের শক্তিশালী ব্যাটিং লাইন আপ সামলে নেয় চাপ। অধিনায়ক হারমানপ্রিত কৌর ও দিপ্তি শর্মার ৫০ রানের জুটিতে একসময় তারা ছিল বড় রানের পথেই।

মঞ্চে তখনই আবির্ভাব রুমানার। ৩৭ বলে ৪২ রান করা হারমানপ্রিতকে ফিরিয়ে জুটি ভাঙেন এই লেগ স্পিনার । পরে তুলে নেন ২৮ বলে ৩২ রান করা দিপ্তির উইকেটও।

রুমানার শেষ নয় সেখানেই। শেষ দিকে ফিরতি ক্যাচে ফেরান অনুজা পাতিলকে, রান আউট করেন ঝুলন গোস্বামিকে। শেষ ৪ ওভারে ভারত তুলতে পারে কেবল ২০ রান।

লক্ষ্যটা তারপরও ছিল বাংলাদেশের জন্য অনেক বড়। কিন্তু দিনটি ছিল রুমানার। দিনটি ছিল ফারজানার। দিনটি ছিল বাংলাদেশের মেয়েদের ইতিহাস গড়ার!

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

ভারত: ২০ ওভারে ১৪১/৭ (মিতালি ১৫, স্মৃতি ২, পূজা ২০, হারমানপ্রিত ৪২, দিপ্তি ৩২, মোনা ১৪*, অনুজা ১, ঝুলন ৪, তানিয়া ১*; জাহানারা ০/৩৪, সালমা ১/২১, নাহিদা ০/২১, খাদিজা ০/২৪, ফাহিমা ০/১৬, রুমানা ৩/২১)।

বাংলাদেশ: ১৯.৪ ওভারে ১৪২/৩ (শামিমা ৩৩, আয়েশা ১২, ফারজানা ৫২*, নিগার ১, রুমানা ৪২*; ঝুলন ০/২৬, পূজা ১/২১ অনুজা ০/১৭, রাজেশ্বরি ১/২৬, পুনম ১/২১, হারমানপ্রিত ০/১১, দিপ্তি ০/২১)।

ফল: বাংলাদেশ ৭ উইকেটে জয়ী

ম্যান অব দা ম্যাচ: রুমানা আহমেদ