সাকিবের চোখে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতি ওয়ানডের চেয়েও বড় অর্জন

একের পর এক ম্যাচ, অনুশীলন সেশন, এক শহর থেকে আরেক শহর আর বিমানবন্দর-হোটেল-মাঠ ছুটোছুটি, মাঠের বাইরে আরও হরেক আয়োজন - আইপিএল নামক মহাযজ্ঞে অন্য কিছু ভাবার ফুরসতও মেলে কম। পুরোপুরি বুঁদ হয়ে থাকতে হয় এই অভিযানে। তবে তুমুল ব্যস্ততার প্রহরেও মঙ্গলবার সাকিব আল হাসান ডুবেছিলেন অন্যরকম এক ভালোলাগায়। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে পেছনে ফেলে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের আটে উঠেছে বাংলাদেশ। সাকিব এটিকে এগিয়ে রাখছেন ওয়ানডে র‌্যাঙ্কিংয়ে ছয়-সাতে ওঠার সাফল্যের চেয়েও।

আরিফুল ইসলাম রনিআরিফুল ইসলাম রনিবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 2 May 2018, 11:34 AM
Updated : 2 May 2018, 01:01 PM

এই দফায় টেস্ট অধিনায়কত্ব পাওয়ার পর এখনও টেস্ট খেলা হয়নি সাকিবের। গত জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারিতে শ্রীলঙ্কা সিরিজে চোট নিয়ে ছিলেন মাঠের বাইরে। সব ঠিক থাকলে জুন-জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ফিরবেন সাদা পোশাকে। টস করতে নামবেন র‌্যাঙ্কিংয়ের আট নম্বর দলের অধিনায়ক হিসেবে। ভাবতেই দারুণ রোমাঞ্চ খেলে যাচ্ছে সাকিবের মনে।

সেই ভালোলাগার কথা সাকিব শোনালেন বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে। ফোনে টেস্ট অধিনায়কের কণ্ঠের স্বতস্ফূর্ততা ফুটিয়ে তুলছিল যেন ভেতরের উচ্ছ্বাসটুকু।

“সামগ্রিকভাবে আমাদের ক্রিকেটের অন্যতম সেরা অর্জন এটি। অনেক বড় অর্জন। আমি তো বলব, ওয়ানডেতে ছয় বা সাতে ওঠার চেয়েও বড় সাফল্য এটি। কারণ টেস্ট ক্রিকেট আমরা ওভাবে ভালো খেলতে পারতাম না। ধারাবাহিকভাবে ভালো করতে তো পারতামই না। র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতিটা বলছে আমরা একটু হলেও ধারাবাহিক হতে পেরেছি।”

“আরেকটা ব্যাপার হলো, টেস্টে উন্নতি করা বা র‌্যাঙ্কিংয়ে ওপরে ওঠার কাজটা অনেক কঠিন। নয় নম্বর থেকে আটে উঠতে আমাদের যতটা সময় লাগল, সেটিই কিন্তু বলে দিচ্ছে কাজটা কতটা কঠিন। আমরা এগোতে শুরু করেছি, এটি দারুণ ব্যাপার।”

টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি দেশের ক্রিকেটের দৃষ্টিভঙ্গি, টেস্টের সাফল্যকে এগিয়ে রাখায় সাকিব বিবেচনায় রাখছেন সেটিকেও।

“আমাদের দেশের বাস্তবতায় বিশ্বকাপই দেখা যায় চূড়ান্ত কিছু। ওয়ানডে, টি-টোয়েন্টিতে বিশ্বকাপ আছে বলে সেটি নিয়ে সবাই সিরিয়াস। টেস্টে যেহেতু বিশ্বকাপ নেই, কেউ এটাকে অতটা গুরুত্ব দেয় না। সাধারণ ক্রিকেট দর্শক থেকে শুরু করে প্রায় সবাই, টেস্ট র‌্যাঙ্কিং নিয়ে ভাবনা কম।”

“সেদিক থেকে ভাবতে গেলেও র‌্যাঙ্কিংয়ে উন্নতির কাজটা কঠিন। বাংলাদেশের বাস্তবতা মাথায় রাখলে তাই টেস্টের এই উন্নতিকে বলতে হয় দারুণ কিছু।”

সাকিবের ক্যারিয়ার যখন শুরু, তখনও টেস্ট ম্যাচে বাংলাদেশের লক্ষ্য থাকত পাঁচদিন খেলতে পারা। দল সেটি করতে পারত কম সময়ই। সেখান থেকে আজ দেশের মাটিতে নিয়মিত টেস্ট জিততে শুরু করেছে বাংলাদেশ। সাকিব মূল বদলটা দেখছেন টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে দৃষ্টিভঙ্গিতে।

“সবচেয়ে বড় বদল মানসিকতায়। ক্রিকেটারদের থেকে শুরু করে ক্রিকেট সংশ্লিষ্ট সবার। টেস্টের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গির কথা বলছিলাম। সেটা বদলাতে শুরু করেছে মাঠের ভেতরে-বাইরে। আর মাঠের ক্রিকেটে ফল পক্ষে আসতে থাকলে সাধারণ ক্রিকেট প্রেমিরাও টেস্টে আরও বেশি আগ্রহী হবে, সেটিই স্বাভাবিক।”

দলের এই সাফল্যে বরাবরের মতোই বড় অবদান সাকিবের। দেশের মাটিতে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে টেস্ট জয়, শ্রীলঙ্কার মাটিতে টেস্ট জয়, সব সাফল্যেই সাকিবের পারফরম্যান্স ছিল দুর্দান্ত। এবার আইসিসির বার্ষিক হালনাগাদে বিবেচনায় নেওয়া সময়ে ১৭ টেস্ট খেলে দেশের সর্বোচ্চ ৬৬ উইকেট নিয়েছেন সাকিব, রান করেছেন দলের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ১ হাজার ৩১৬। তবে সাফল্যের কৃতিত্ব সাকিব ছড়িয়ে দিতে চাইলেন সব সতীর্থের মাঝে।

“আমি একা তো দলকে জেতাতে পারতাম না। দলীয় খেলায় প্রতিটি খেলোয়াড়ের অবদান গুরুত্বপূর্ণ। র‌্যাঙ্কিংয়ে আমাদের উন্নতির পেছনে মূল কৃতিত্ব আমি ক্রিকেটরদেরই দেব। ছেলেরা এখন টেস্টেও আগের চেয়ে অনেক বেশি আগ্রাসী, অনেক ইতিবাচক। অনেক সময়ই টেস্টে লম্বা বিরতি পড়েছে আমাদের। আরও অনেক প্রতিবন্ধকতা এসেছে। এরপরও ছেলেরা উন্নতি করেছে। কৃতিত্ব ওদেরকেই দেওয়া উচিত।” 

গত ডিসেম্বরে নতুন করে টেস্ট নেতৃত্ব পাওয়ার পর সাকিব মূল লক্ষ্য বলেছিলেন দেশের বাইরে উন্নতি করাকে। র‌্যাঙ্কিংয়ের এবারের উন্নতি টেস্ট অধিনায়ককে আরও অনুপ্রাণিত করছে সেই লক্ষ্যপূরণের পথে ছুটতে।

“আট থেকে ওপরে ওঠার কাজটা আরও কঠিন হবে। সেটির জন্য দেশের বাইরে জয়ের বিকল্প নেই। শুধু হুটহাট জয় নয়, দেশের মাটির সাফল্য ধরে রাখতে হবে, দেশের বাইরেও ধারাবাহিক হতে হবে। আমরা এখন আটে উঠেছি, নয় নম্বরের সঙ্গে ব্যবধানও বেশ। এখন আর পেছনে না তাকিয়ে নতুন উদ্যমে সামনে এগিয়ে যেতে হবে।”

লক্ষ্য ছোঁয়ার পথচলায় একটি স্বপ্নের কথাও জানালেন টেস্ট অধিনায়ক।

“টেস্টের উন্নতি হলেই একটি দেশের ক্রিকেট সামগ্রিকভাবে এগিয়ে যায়। ক্যারিয়ার শেষে আমি বাংলাদেশকে টেস্ট র‌্যাঙ্কিংয়ের পাঁচ-ছয়ে দেখতে চাই। অলৌকিক কিছুর স্বপ্ন দেখে লাভ নেই। বাস্তবতা ভাবলে, দলকে ছয়ে দেখতে পেলেই আমি খুশি হব।”