২০০৯ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে গিয়ে প্রথম টেস্টে খেলার সময় চোট পান মাশরাফি। তারপর থেকে এই সংস্করণের বাইরে আছেন তিনি। টেস্টের প্রতি এখনও ভালোবাসা কমেনি তার। স্বপ্ন দেখেন আবার দেশের হয়ে টেস্ট খেলার। টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে তরুণদের ভাবনা নিয়ে অনিশ্চিত বাংলাদেশ ওয়ানডে অধিনায়ক।
“ওদের ইচ্ছাটা কী? ওরা টি-টোয়েন্টি আর ওয়ানডের গ্ল্যামারে আটকে থাকতে চায় না কি টেস্ট ক্রিকেটকে সার্ভিস দিতে চায়? ওদের প্যাশনটা কোন দিকে সেটাও কিন্তু খুব গুরুত্বপূর্ণ। আমাদের টেস্ট ক্রিকেটার তৈরি না হওয়ার পেছনে কিন্তু এটা সব থেকে বড় কারণ।”
“তামিম এখন টেস্ট সেঞ্চুরি অনেক বেশি উপভোগ করে। সাকিব টেস্ট ক্রিকেট বেশি উপভোগ করে। মুশফিকও তা-ই। ওদের পারফরমেন্সের দিকে তাকালেও বুঝবেন। (মাহমুদউল্লাহ) রিয়াদকে টেস্ট থেকে বাদ দেওয়ায় ওর কিন্তু খুব মন খারাপ ছিল। কারণ, ও টেস্ট খেলতে চায়।”
“আমার যখন অভিষেক হয়, তখন কিন্তু (মিনহাজুল আবেদীন) নান্নু ভাইয়ের কথা বলা হতো, উনি টেস্ট ক্রিকেট খেলেননি। ওনার কষ্টটা আমরা খেলেও অনুভব করতাম, এত বড় মাপের খেলোয়াড়, টেস্ট ক্রিকেট খেলতে পারেননি। আমরা যখন জুনিয়র, আমরা গর্ব অনুভব করতাম। এখন খেলতে না পারলেও আমি বাংলাদেশের টেস্ট খেলোয়াড়, এর জন্য আমি গর্ব অনুভব করি।
“শুধু গর্বিত হলেই তো হবে না। গর্বের জায়গাটা নিয়ে কাজ করতে হবে। ওদের যেহেতু ওই সুযোগ আছে, ওদের ওখানে মনোযোগ দেওয়া উচিত। ওদের ওই প্যাশনটা থাকতে হবে যে আমি টেস্ট খেলোয়াড় হতে চাই।”
মাশরাফি খুঁজছেন টেস্ট ক্রিকেটের প্রতি অনুরক্ত তরুণ ক্রিকেটার। বাংলাদেশ দল খুঁজছে টেস্টের জন্য নির্ভরযোগ্য একটি পেস ইউনিট। ২০১১ থেকে ২০১৭ পর্যন্ত দেশকে নেতৃত্ব দেওয়া মুশফিকুর রহিম অনেকবারই পেস বোলিং নিয়ে নিজের হতাশার কথা বলেছেন। পরিসংখ্যানেও পেস বোলারদের ব্যর্থতার ছাপ স্পষ্ট।
মাশরাফি নিজের ৩৬ টেস্টের শেষটি খেলার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৬ টেস্ট খেলেছে বাংলাদেশ। এর মধ্যে মাত্র ৫ বার পাঁচ উইকেট নিতে পেরেছেন পেসাররা। দুইবার করে রবিউল ইসলাম ও শাহাদাত হোসেন। একবার রুবেল হোসেন।
এই সময়ে পেসারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি উইকেট নিয়েছেন রুবেল। ৮২.৮৬ গড়ে ৩০ উইকেট নিতে খেলেছেন ২৪ টেস্ট।
১০ ম্যাচে মুস্তাফিজুর রহমানের উইকেট ২৬টি। চোটে হারিয়ে যাওয়া রবিউলের উইকেট ৯ ম্যাচে ২৫টি। এর বাইরে দুই অঙ্কের উইকেট আছে কেবল শাহাদাত (১৬ ম্যাচে ২১) ও শফিউল ইসলামের (১১ ম্যাচে ১৭)।
বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে এই সময়ে সবচেয়ে বেশি ১৪৮ উইকেট নিয়েছেন সাকিব আল হাসান। আরেক বাঁহাতি স্পিনার তাইজুল ইসলামের উইকেট ৬৬টি। মেহেদী হাসান মিরাজ, সোহাগ গাজী ও মাহমুদউল্লাহর উইকেটও পেসারদের চেয়ে বেশি।
মাশরাফি মনে করেন এই পরিস্থিতিতে পেসারদের আরও বেশি সমর্থন দেওয়া উচিত। বারবার বোলিং ইউনিটে পরিবর্তন এনে খুব একটা ফল পাওয়া যাবে না।
“আমার মনে হয়, রুবেল এখন টেস্টে অভিজ্ঞ। এর বাইরে যারা আছে তাদের কিন্তু মোটামুটি নতুনই বলা যায়। আমি মনে করি, ওদেরকে আরও সময় দেয়া উচিত। ওরা ঠিক হবে। ওদের প্যাশন থাকলে এটা সম্ভব আর না থাকলে সম্ভব নয়।”
“প্রতি সিরিজে বোলার না বদলে ওদের ওপর আস্থা রাখতে হবে। মুস্তাফিজ এখন আছে। ওর চোট শঙ্কাও আছে। তাসকিন, শফিউলের চোট সমস্যা আছে। ওদেরকে সেভাবে তৈরি করা আবার ওদেরও ইচ্ছা থাকা- এই দুইটার সমন্বয় খুব গুরুত্বপূর্ণ।”
বাংলাদেশের হয়ে খেলছে এমন সব বোলারের ভেতরেই দলে অবদান রাখার সামর্থ্য দেখেন মাশরাফি। তার বিশ্বাস, যথাযথভাবে সুযোগ দিলে ওদের ভেতর থেকে সেরাটা অবশ্যই বের হয়ে আসবে।
“টেস্টে উইকেট নেওয়ার পথ বের করতে সময় লাগবে। এর সমাধান একদিনে হয়ে যাবে না। এটা তো লম্বা একটা প্রক্রিয়ার ব্যাপার। আর কোথায়, কোন উইকেটে খেলা হচ্ছে সেটাই কিন্তু বড় একটা ব্যাপার।”
“আপনি উপমহাদেশে যে লাইন-লেংথে বোলিং করেন, অস্ট্রেলিয়া বা নিউ জিল্যান্ডে সেই লাইন-লেংথে বোলিং করতে পারবেন না। সব কিছু মিলিয়ে মানিয়ে নেওয়ার একটা ব্যাপারও কিন্তু আছে। ওদের পরিণত হওয়ার একটা ব্যাপার আছে।”
এবারের মৌসুমে এনসিএল, বিসিএল আর ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে নজর কেড়েছেন ইয়াসিন আরাফাত, শরিফুল ইসলামের মতো কিছু তরুণ পেসার। তাদের এখনই পরের ধাপের জন্য না ভেবে সময় নিয়ে সেই পর্যায়ের জন্য তৈরি করার ওপর জোর দিলেন মাশরাফি।
“ওদের এখন থেকে তৈরি করাটা খুব গুরুত্বপূর্ণ। এখন যে ক্যাম্পগুলো আছে, এইচপি বা পেস বোলিং ক্যাম্প সেখানে যদি অনুশীলন করে, ‘এ’ দলের সাথে যদি সফর করে আমার বিশ্বাস ওরাই তৈরি হবে। বিশ্বাস না এটাই বাস্তবতা।”
এমন তরুণদের জন্য আব্দুর রাজ্জাক, তুষার ইমরান, শাহরিয়ার নাফীস, নাঈম ইসলাম, এনামুল হক জুনিয়রদের আদর্শ মনে করেন মাশরাফি।
“আমরা যখন ডেসিং রুমে বসে থাকি, তখন কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট নিয়ে আলোচনা হয়। (রাজ্জাক) রাজ আছে, তুষার আছে। এর বাইরে নাঈম, এনামুল জুনিয়র আছে। এদের কাছ থেকে কিন্তু অনেক কিছু শিখতে পারে জুনিয়র ক্রিকেটাররা।”
“আপনি যদি চিন্তা করেন আপনি সাকিব বা তামিমের কাছ থেকেই শুধু শিখবেন, তাহলে তো কঠিন কাজ। তাদেরকে তো সব সময় পাবেন না। আমি মনে করি, তুষার, রাজ্জাক, নাঈম, শাহরিয়াররা টেস্ট ক্রিকেটারদের জন্য আদর্শ হতে পারে। কনফিডেন্স লেভেল বা ফিটনেস লেভেল নিয়ে যে খেলে যাচ্ছে, তরুণ ক্রিকেটারদের জন্য এটা আদর্শ হতে পারে।”