রাজ্জাকের রেকর্ডের পর এনামুল, ইমরুলের দৃঢ়তা

আব্দুর রাজ্জাকের চূড়ায় উঠার দিনে ব্যাটিংয়ে উজ্জ্বল এনামুল হক ও ইমরুল কায়েস। উত্তরাঞ্চলকে দুই সেশনে গুটিয়ে দেওয়া দক্ষিণাঞ্চলকে দৃঢ় ভিতরে ওপর দাঁড় করিয়েছেন দুই টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান।  

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 24 April 2018, 11:43 AM
Updated : 24 April 2018, 12:28 PM

এনামুল হক জুনিয়রকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড গড়েছেন বাঁহাতি স্পিনার রাজ্জাক। তার দারুণ বোলিংয়ের পর অপরাজিত দুই ফিফটিতে দলকে দারুণ শুরু এনে দিয়েছেন এনামুল ও ইমরুল।

বিসিএলের ষষ্ঠ ও শেষ রাউন্ডের প্রথম দিনের খেলা শেষে দক্ষিণাঞ্চলের সংগ্রহ ১ উইকেটে ১১৫ রান। এনামুল ৫২ ও ইমরুল ৫১ রানে ব্যাট করছেন। অবিচ্ছিন্ন দ্বিতীয় উইকেটে দুই জনে গড়েছেন ৯৩ রানের জুটি।

প্রথম ইনিংসে উত্তরাঞ্চলকে ১৮৭ রানে গুটিয়ে দেওয়া দক্ষিণাঞ্চল মাত্র ৭২ রানে পিছিয়ে। 

টাইফয়েডের জন্য উত্তরাঞ্চল দল নেই আগের ম্যাচের জয়ের নায়ক ইয়াসিন আরাফাত। সেই ম্যাচে তার সমান ৭ উইকেট নেওয়া আরেক পেসার ছিটকে গেছেন কুঁচকির চোটে। তাদের অভাব দারুণভাবে অনুভব করেছে জহুরুল ইসলামের দল।

শফিউল ইসলাম দ্রুত ভাঙেন দক্ষিণাঞ্চলের উদ্বোধনী জুটি। এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন একটি করে ছক্কা-চার হাঁকানো সৌম্য সরকারকে।

বাকি সময়ে আর কোনো সাফল্য মেলেনি। দারুণ ব্যাটিংয়ে দলকে এগিয়ে নেন এনামুল ও ইমরুল। দুই জনের ব্যাটিংয়ের শুরু ছিল দুই রকম। নিজেকে গুটিয়ে রেখেছিলেন এনামুল। শুরু থেকেই শট খেলেছিলেন ইমরুল।

ইমরুলের যখন ৪৪ রান তখন এনামুল ছিলেন ৩২ রানে। চার-ছক্কা হাঁকিয়ে তিনিই আগে পৌঁছান ফিফটিতে। খানিক পর পঞ্চাশ পেয়ে যান ইমরুলও।

৭৯ বলে খেলা এনামুলের ৫২ রানের ইনিংসে ৩টি চারের পাশে ছক্কা দুটি। সমান বলে ৫১ রান করতে ৭টি চার ও একটি ছক্কা হাঁকান ইমরুল।

এর আগে খুলনার শেখ আবু নাসের স্টেডিয়ামে মঙ্গলবার টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালো হয়নি উত্তরাঞ্চলের। চার বছর পর বিসিএলে খেলতে নেমে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই ছোবল দেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। ফিরিয়ে দেন জুনায়েদ সিদ্দিককে।

প্রথম ঘণ্টায় ৭ ওভারের স্পেলে ব্যাটসম্যানদের ভোগান মাশরাফি। ছোট রান আপেও নতুন বলে যথারীতি ভীতি ছড়ান অভিজ্ঞ এই পেসার।

শুরুতে এলোমেলো বোলিং করা কামরুল ইসলাম রাব্বির জায়গায় বোলিংয়ে এসে নিজের দ্বিতীয় ওভারেই উইকেট পান সাকলাইন সজীব। বাঁহাতি এই স্পিনারের লাফিয়ে উঠা বলে পুল করতে গিয়ে মিড অনে রাব্বির হাতে ধরা পড়েন মিজানুর।

১৯তম ওভারে আক্রমণে আসেন রাজ্জাক। বোলিংয়ে দেরিতে এলেও সাফল্য পেতে মোটেও দেরি হয়নি তার। জহুরুল ইসলামকে বোল্ড করে উইকেট মেডেন দিয়ে শুরু করেন। পরের ওভারে এলবিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন ধীমান ঘোষকে।

দুই বাঁহাতি স্পিনার রাজ্জাক ও সাকলাইনের দারুণ বোলিংয়ে ৭৬ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে ফেলে উত্তরাঞ্চল। সেখান থেকে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারেনি তারা।

দ্বিতীয় সেশনের প্রথম ওভারেই আঘাত হানেন রাজ্জাক। ছক্কা হাঁকিয়ে রানের খাতা খোলা আরিফুল হককে বোল্ড করে দেন তিনি।

এক প্রান্তে আগলে রাখা নাজমুল হোসেন শান্ত পঞ্চাশ স্পর্শ করেন রাব্বির বলে চারে। তরুণ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান পরের বলেই কট বিহাইন্ড হয়ে ফিরে যান।

এরপর দলকে প্রায় একাই টানেন সোহরাওয়ার্দী শুভ। তাকে খানিকটা সহায়তা করেন ১১ নম্বর ব্যাটসম্যান শফিউল ইসলাম। দশম উইকেট দুই জনে গড়েন ৪২ রানের জুটি। প্রথম ইনিংসে এটাই উত্তরাঞ্চলের সেরা জুটি।

মাথা ব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ানো এই জুটি ভাঙেন এক প্রান্তে টানা ২০.৩ ওভারের স্পেল করা রাজ্জাক। শফিউলকে ফিরিয়ে নেন নিজের পঞ্চম উইকেট। এই উইকেটে নিয়ে এনামুল হক জুনিয়রকে পিছনে ফেলেন তিনি। একার করে নেন বাংলাদেশের বোলার হিসেবে প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে সবচেয়ে বেশিবার ৫ উইকেট নেওয়ার রেকর্ড।

৫৩ রানে ৫ উইকেট নিয়ে দক্ষিণাঞ্চলের সেরা বোলার রাজ্জাক। এ নিয়ে ৩৩ বার পাঁচ উইকেট নিলেন তিনি। এনামুল জুনিয়র নিয়েছেন ৩২ বার।

সংক্ষিপ্ত স্কোর:

উত্তরাঞ্চল ১ম ইনিংস: ৫৮.৩ ওভারে ১৮৭ (মিজানুর ২২, জুনায়েদ ৭, শান্ত ৫০, ফরহাদ ১২, জহুরুল ১, ধীমান ১, আরিফুল ৬, শুভ ৫৯*, রেজা ৭, তাইজুল ০, শফিউল ১৪; মাশরাফি ১/৪৯, রাব্বি ১/৪৩, সাকলাইন ২/২০, সৌম্য ০/২, রাজ্জাক ৫/৫৩, নাহিদুল ০/১৯)

দক্ষিণাঞ্চল ১ম ইনিংস: ২৯ ওভারে ১১৫/১ (এনামুল ৫২*, সৌম্য ১২, ইমরুল ৫১*; শফিউল ১/২৮, আরিফুল ০/১৬, রেজা ০/১৭, তাইজুল ০/৪৩, শুভ ০/৯, ফরহাদ ০/২)