সদ্য ঘোষিত বিসিবির নতুন চুক্তিতে রাখা হয়েছে মাত্র ১০ জনকে। পরে অবশ্য ‘রুকি’ বা উঠতি ক্রিকেটার ক্যাটেগরিতে যোগ করা হবে তিন জনকে। গতবারের চুক্তি থেকে বাদ পড়া ছয়জনের অন্যতম মোসাদ্দেক।
বাদ পড়াদের মধ্যে সবচেয়ে বিস্ময়য়কর সম্ভবত মোসাদ্দেকের নামটিই। পারফরম্যান্স যে খুব খারাপ ছিল না তার!
চুক্তির ক্ষেত্রে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে গত বছরের পারফরম্যান্স। গত বছর একটি টেস্ট খেলেছেন মোসাদ্দেক। সেই টেস্টে নিজের অভিষেকে প্রথম ইনিংসে ৭৫ রানের দারুণ ইনিংস খেলেছিলেন শ্রীলঙ্কায়।
মে মাসে আয়ারল্যান্ডে ত্রিদেশীয় সিরিজে নিউ জিল্যান্ডের বিপক্ষে করেছিলেন ৪১ রান। পরের মাসে চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে কিউইদের বিপক্ষে বল হাতে তার স্পেলই ঘুরিয়ে দিয়েছিল ম্যাচের মোড়। রান তাড়ায় তার ব্যাট থেকে এসেছিল জয় এনে দেওয়া শট। এরপরই চোখের সংক্রমণ তাকে মাঠের বাইরে রাখে অনেকটা সময়।
কেন্দ্রীয় চুক্তির বিবেচনায় তার সেই অসুস্থতার সময়টাই গিলে ফেলেছে আগের সময়ের পারফরম্যান্সকে। চুক্তিবদ্ধ ক্রিকেটারদের নাম ঘোষণার সংবাদ সম্মেলনে বিসিবি পরিচালক জালাল ইউনুস জানিয়েছিলেন, ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগ ও নির্বাচকদের সুপারিশেই করা হয়েছে তালিকা।
ক্রিকেট পরিচালনা বিভাগের চেয়ারম্যান আকরাম খান ইঙ্গিত দিলেন মোসাদ্দেকের হারিয়ে ফেলা সময়টার দিকেই।
“অনেকটা সময় ও মাঠের বাইরে ছিল। যদিও সেটা তার দুর্ভাগ্য, এরপরও আমরা আসলে বিবেচনায় নিয়েছি কারা বেশি খেলেছে। আর ১০ জনের তালিকাটা নির্বাচকরাই করেছেন। মোসাদ্দেক অবশ্যই খুবই সম্ভাবনাময়। আশা করি ভালো খেলে আবার দ্রুতই চুক্তিতে জায়গা করে নেবে।”
আকরাম যাদের কোর্টে বল ঠেললেন, সেই নির্বাচক কমিটির প্রধান মিনহাজুল আবেদীনের কণ্ঠেও একই রকম সুর।
যেটুকু নিজের হাতে ছিল, সেটুকু ভালোই করেছেন মোসাদ্দেক। অসুস্থতায় তো তার হাত নেই! তাহলে তার কাছে ভুল বার্তা যাচ্ছে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছে। মিনহাজুল অবশ্য সেই শঙ্কা উড়িয়ে দিলেন।
“ভুল বার্তার সুযোগ নেই। আরও পরিষ্কার করেই বলছি, মোসাদ্দেক তিন সংস্করণের জন্যই আমাদের বিবেচনায় ভালোভাবে থাকবে। তার প্রতিভা বা সামর্থ্য নিয়ে আমাদের সংশয় নেই। ওর সম্ভাবনা অনেক উজ্জ্বল।”
“যদি জাতীয় দলে থাকে, তাহলে তো সিরিজের সময়টায় এমনিতেই চুক্তির আওতায় থাকে। এখনও রুকি তিনজন বাকি আছে। সেখানেও থাকতে পারে। না থাকলেও ভালো খেলে আবার যে কোনো সময় চুক্তিতে আসতে পারে। আজকেও তো বিসিএলে দারুণ সেঞ্চুরি করল। ভালো পারফরম্যান্স করতে থাকলে প্রতিদান পাবেই। আমরা যেটা বলতে চাই, ওর ওপর আস্থা হারাইনি।”
প্রশ্নবিদ্ধ ব্যাটিং পজিশন
চুক্তিতে না রাখা নিয়ে প্রশ্ন তো আছেই। তার চেয়েও বড় প্রশ্ন, এমন একজন প্রতিভাবান ব্যাটসম্যানকে ঘরোয়া ক্রিকেটে কতটা কাজে লাগাচ্ছে দলগুলি। চোখের সংক্রমণ কাটিয়ে গত বিপিএলে খেললেন। ঢাকা ডায়নামাইটসের হয়ে ব্যাটিং অর্ডার এত নিচে ছিল যে খেলার সুযোগই পেলেন কম।
সবচেয়ে বিস্ময়কর ঘটনা ঘটেছে শুক্রবার শেষ হওয়া বিসিএলের পঞ্চম রাউন্ডে। দক্ষিণাঞ্চলের হয়ে প্রথম ইনিংসে খেলানো হয়েছে সাতে, দ্বিতীয় ইনিংসে আটে! অথচ প্রথম শ্রেণির ক্রিকেটে তিনটি ডাবল সেঞ্চুরিসহ তার ব্যাটিং রেকর্ড চোখধাঁধানো। বড় ইনিংস খেলার সামর্থ্য নিয়ে এখানে প্রশ্নই নেই। শুক্রবার লোয়ার অর্ডারদের নিয়েও অবশ্য আটে নেমেই করেছেন ওয়ানডের গতিতে সেঞ্চুরি। ২৮ প্রথম শ্রেণির ম্যাচে তার সেঞ্চুরি ৯টি। ব্যাটিং গড় ৬৭.৯৪!
এমন একজন ব্যাটসম্যান কেন এত নিচে? একই প্রশ্ন প্রধান নির্বাচকেরও। মোসাদ্দেকের ব্যাটিং পজিশন নিয়ে বেশ ক্ষুব্ধ শোনাল তার কণ্ঠ।
“খুবই বিস্ময়কর। ওকে ঠিকভাবে কাজে লাগাতে পারছে না দলগুলি। আজকেও সুমনের (আরেক নির্বাচক হাবিবুল বাশার) সঙ্গে এটা নিয়েই কথা বলছিলাম। ওর মতো একজনকে কেন এত নিচে খেলাবে? কোনো দিক থেকেই এটা ঠিক হচ্ছে না।”
এই ক্ষেত্রে নির্বাচকদের করণীয়টুকু করবেন বলে জানালেন মিনহাজুল।
“ক্লাব বা এ রকম ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টে তো আমরা জোর করতে পারি না। দলগুলির ব্যাপার। তবে আমি আর সুমন তবু ঠিক করেছি যে বলব। কারণ জাতীয় স্বার্থ সবকিছুর আগে। মোসাদ্দেকের মত একজন প্রতিভাকে ঠিকভাবে ব্যবহার করতে না পারলে সেটা অন্যায়। পরের রাউন্ডের আগেই আমরা বলব।”