মুস্তাফিজের জাদুকরী বোলিংয়েও সাকিবদের রুদ্ধশ্বাস জয়

জয়ের জন্য ১২ বলে প্রয়োজন তখন ১২ রান। অসাধারণ এক ওভারে মাত্র এক রান দিয়ে মুস্তাফিজুর রহমান নিলেন দুটি উইকেট। ধারাভাষ্য কক্ষে ইয়ান বিশপের রোমাঞ্চিত উচ্চারণ ‘ম্যাজিশিয়ান মুস্তাফিজ’। কিন্তু সেই জাদুকরী বোলিংয়েও শেষ রক্ষা হলো না মুম্বাইয়ের। শেষ বলের নাটকীয়তায় শেষ হাসি সাকিব আল হাসানদের। রুদ্ধশ্বাস জয় সানরাইজার্স হায়দরাবাদের।

স্পোর্টস ডেস্কবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 12 April 2018, 06:32 PM
Updated : 12 April 2018, 08:20 PM

মুখোমুখি সাকিব ও মুস্তাফিজের দল, বাংলাদেশের ক্রিকেট অনুসারীদের আগ্রহ ছিল তাই ম্যাচটিকে ঘিরে। বৃহস্পতিবার রাতে হায়দরাবাদে তুমুল উত্তেজনাপূর্ণ সেই ম্যাচে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্সকে ১ উইকেটে হারিয়েছে সানরাইজার্স হায়দরাবাদ।

মুস্তাফিজের দুর্দান্ত ওভারের পর শেষ ওভারে হায়দরাবাদের দরকার ছিল ১১ রান। বেন কাটিংয়ের করা প্রথম বলেই ছক্কা মেরে দেন দিপক হুডা। পরের বল ওয়াইড। পরের চার বলে আসে তিন রান। শেষ বলে দরকার ছিল এক রান। শেষ ব্যাটসম্যান বিলি স্ট্যানলেক উড়িয়ে বৃত্ত পার করে বল পাঠান বাউন্ডারিতে।

মুস্তাফিজের সাফল্য তাতে খুব একটা ম্লান হচ্ছে না। ৪ ওভারে ২৪ রান দিয়ে নিয়েছেন ৩ উইকেট। সাকিব তুলনায় ছিলেন বিবর্ণ। ৪ ওভারে ৩৪ রানে নিয়েছেন ১ উইকেট। ব্যাট হাতে সুযোগ ছিল দলকে জিতিয়ে ফেরার, ছিল না চাপ। তবে আউট হয়ে গেছেন ১২ বলে ১২ রানে।

বাংলাদেশের দুই ক্রিকেটারের মধ্যে দৃশ্যপটে প্রথম ছিলেন সাকিব। বল হাতে নেওয়ার আগেই সাকিব অবদান রাখেন দলের প্রথম উইকেটে। স্ট্যানলেকের বলে সামনে ডাইভ দিয়ে দারুণ ক্যাচে ফেরান মুম্বাই অধিনায়ক রোহিত শর্মাকে।

সাকিব বোলিংয়ে আসেন সপ্তম ওভারে। ততক্ষণে মুম্বাই হারিয়ে ফেলেছে আরেক ওপেনার এভিন লুইস (১৭ বলে ২৯) ও তিনে নামা ইশান কিশানকেও। প্রথম ওভারে সাকিব দেন মাত্র ১ রান।

দ্বিতীয় ওভারে সাকিবের ওপর খানিকটা চড়াও হন ক্রুনাল পান্ডিয়া। তবে প্রথম ৪ বলে ১৩ রান হজমের পর এই বাঁহাতি ব্যাটসম্যানকে ফেরান সাকিব। শর্ট এক্সট্রা কাভারে ক্যাচ নেন কেন উইলিয়ামসন।

পরের দুই ওভারে অবশ্য খুব বেশি সুবিধে করতে পারেননি সাকিব। স্পেল শেষ করেন ৪ ওভারে ৩৪ রানে ১ উইকেটে।

মুম্বাইয়ের হয়ে ৩ চার ও ২ ছক্কায় ২৩ বলে ২৮ করেন কাইরন পোলার্ড। ৪ ওভারে ১৮ ডট বলসহ মাত্র ১৩ রান দিয়ে ১ উইকেট নেন রশিদ খান। মুম্বাই করতে পারে ৮ উইকেটে ১৪৭।

রান তাড়ায় হায়দরাবাদকে দারুণ শুরু এনে দেন শিখর ধাওয়ান ও ঋদ্ধিমান সাহা। পাওয়ার প্লের ৬ ওভারে দুজন তোলেন ৫৬ রান।

একতরফা হতে থাকা ম্যাচে মুম্বাইকে লড়াইয়ে ফেরান এখনও পর্যন্ত এবারের আইপিএলের বড় চমক মায়াঙ্ক মারকান্ডে। ঋদ্ধিমানকে ফিরিয়ে ভাঙেন জুটি। এরপর ফিরিয়ে দেন ২৮ বলে ৪৫ রান করা ধাওয়ানকেও।

মাঝে মুস্তাফিজ ফেরান উইলিয়ামসনকে। অষ্টম ওভারে বল হাতে পেয়ে ধাওয়ান ও উইলিয়ামসনের কাছে দুটি চার হজম করেছিলেন। কিন্তু শেষ বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দেন উইলিয়ামসন।

মনীশ পান্ডে এরপর উইকেট বিলিয়ে আসেন মারকান্ডেকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে। পাঁচে নেমে সাকিব খেলছিলেন ধীরেসুস্থেই। মুস্তাফিজকে কাট করে বাউন্ডারিও মারেন। কিন্তু মারকান্ডের স্পেলের শেষ বলটি টেনে আনেন স্টাম্পে।

আগের ম্যাচে আইপিএল অভিষেকে ২৩ রানে ৩ উইকেট নিয়েছিলেন মারকান্ডে। ২০ বছর বয়সী আনকোরা লেগ স্পিনারের শিকার এবার ২৩ রানে চারটি।

শুরুটা ভালো ছিল বলে রান রেটের চাপ ছিল না হায়দরাবাদের। দিপক হুডা ও ইউসুফ পাঠান দলকে এগিয়ে নিচ্ছিলেন। কিন্তু জাসপ্রিত বুমরাহ পরপর দুই বলে পাঠান ও রশিদ খানকে ফিরিয়ে আবার জমিয়ে দেন ম্যাচ।

এরপর শেষ দুই ওভারের নাটকীয়তা। ১২ বলে ১২ রানের আপাত সহজ সমীকরণ পাল্টে দেন মুস্তাফিজ। প্রথম বলে এক রান নেন হুডা। পরের দুই বলে রান নেই। চতুর্থ বলে দুর্দান্ত ফিরতি ক্যাচে ফেরান সিদ্ধার্থ কাউলকে। পরের বলে আবার রান নেই। শেষ বলে আউট সন্দ্বিপ শর্মা।

মুস্তাফিজ তখন মুম্বাইয়ের জয়ের সম্ভাব্য নায়ক। শেষ পর্যন্ত পারলেন না কাটিং। ২৫ বলে ৩২ রানের অপরাজিত ইনিংসে হায়দরাবাদের নায়ক হুডা।

এই নিয়ে সাকিবের দল জিতল টানা দুই ম্যাচ, মুস্তাফিজরা হারল টানা দুটি।