হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে ৬ মাসের জন্য মাঠের বাইরে নাসির

চোটের ধরন দেখে যে শঙ্কা করা হচ্ছিল, সেটিই সত্যি হলো এমআরআই রিপোর্টে। নাসির হোসেনের ডান হাঁটুর লিগামেন্ট ছিঁড়ে গেছে পুরোপুরি। দু-একদিনের মধ্যেই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কোথায় করানো হবে এই অলরাউন্ডারের অস্ত্রোপচার। অস্ত্রোপচারের পর সুস্থ হয়ে পুনর্বাসন শেষে আবার ক্রিকেটে ফিরতে তার সময় লাগবে অন্তত ছয় মাস।

ক্রীড়া প্রতিবেদকবিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকম
Published : 10 April 2018, 10:24 AM
Updated : 10 April 2018, 03:26 PM

ঢাকা প্রিমিয়ার লিগ শেষে ক্রিকেটাররা ছিলেন ছুটিতে। এর মধ্যেই সোমবার নাসিরকে দেখা যায় ক্রাচে ভর দিয়ে এসেছেন বিসিবির চিকিৎসের কাছে। জানা যায়, গুরুতর চোট পেয়েছেন হাঁটুতে। লিগামেন্ট ছিঁড়ে যাওয়ার শঙ্কা তখনই ছিল, অপেক্ষা ছিল এমআরই-এর ফল জানার।

মঙ্গলবার এমআরআই রিপোর্ট হাতে পাওয়ার পর নাসিরে চোটের অবস্থা জানালেন বিসিবির প্রধান চিকিৎসক দেবাশীষ চৌধুরী।

“নাসিরের ডান হাঁটুর লিগামেন্ট ইনজুরির আশঙ্কা করা হচ্ছিল। এমআরআই করার পর আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি। ওর অ্যান্টেরিওর ক্রুসিয়েট লিগামেন্ট বা এসিএল পুরোটাই ছিঁড়ে গেছে। যেহেতু পুরোটাই ছিঁড়ে গেছে লিগামেন্ট, এজন্য অস্ত্রোপচারের সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে আমাদের।”

“আমরা চেষ্টা করছি, বিভিন্ন জায়গায় যোগাযোগ করছি, কোথায় অস্ত্রোপচারের ব্যবস্থা করা যায়। অস্ত্রোপচার করানোর পর খেলায় ফিরতে ওর মাস ছয়েকের মত সময় লাগবে।”

দেবাশীষ চৌধুরী জানালেন, দ্রুতই সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে, কোথায় করানো হবে নাসিরের অস্ত্রোপচার।

“আমরা দু-তিন জায়গায় অ্যাপয়েনমেন্ট নিয়ে রাখছি। আমাদের সিইও দেশের বাইরে আছেন। উনি ফিরলে সিদ্ধান্ত হবে। আমাদের দেশেই এখন এসিএল রিকনস্ট্রাকশনের খুব ভালো অপারেশন হচ্ছে। তবে আমরা সাধারণত অস্ট্রেলিয়া, থাইল্যান্ড, এসব জায়গায় করানোর পরামর্শ দেই। সিদ্ধান্ত দু-একদিনের মধ্যেই হবে।”

“যত দ্রুত করা হবে অস্ত্রোপচার, তত দ্রুত খেলায় ফিরতে পারবে। তবে এটা কোনো জরুরি অস্ত্রোপচার না যে এখনই না করলে বড় কোনো ক্ষতি হবে। বিশ্রামে তো এমনিতেই থাকতে হবে। আর বাইরে পাঠালে ভিসা ও অ্যাপয়েনমেন্টের ব্যাপার আছে। কিছু সময় তো লাগবেই।”

লিগ শেষ হলো নির্বিঘ্নে, তার পর এমন গুরুতর চোট নাসির কিভাবে বাধালেন, সেটি নিয়ে আছে ধোঁয়াশা। বিসিবির প্রধান চিকিৎসকের অফিসিয়াল বক্তব্য, “শুনেছি ফিটনেস ট্রেনিংয়ের সময় হয়েছে।” তবে নাসিরের ঘনিষ্ঠ নানা সূত্র থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, ছুটিতে বন্ধুর আমন্ত্রণে সিরাজগঞ্জে ফুটবল খেলতে গিয়ে নিজের এই দুরাবস্থা ডেকে এনেছেন নাসির।

আনুষ্ঠানিক বক্তব্যে রাখঢাক রাখলেও ক্রিকেটারদের দায়িত্ববোধের প্রশ্নে দেবাশীষ চৌধুরী ঠিকই ইঙ্গিতটা দিয়ে রাখলেন। আগেও বেশ কবার বলা বার্তাটিও দিয়ে রাখলেন আরেকবার।

“ইনজুরি তো বলে-কয়ে আসে না। খেলতে গেলে হতেই পারে। তবে অনেক সময় ক্রিকেটাররা ক্রিকেট খেলার চেয়ে ফুটবল বা অন্যান্য খেলা খেলতে গিয়ে নিজেদের বেশি ইনজ্যুরড করে। এটার বেশ কিছু কারণ আছে। ওরা ক্রিকেটে স্কিলফুল, কিন্তু ফুটবলে তো স্কিলফুল না। স্কিলের অভাব থাকে। পাশাপাশি সবাই সমমানের ফুটবলার না। কাজেই ঘাটতির জায়গা আছে।”

“এছাড়া নিয়ম কানুনের ব্যাপারও আছে। গা গরমের যে ফুটবল খেলা হয়, সেখানে নিয়মকানুন তেমনভাবে মানা হয় না। এজন্য ইনজুরি বেশি হয়। ক্রিকেটারদের দেখা যায়, ফুটবল খেলাটাকে গা গরম হিসেবে না নিয়ে আরেকটা খেলা হিসেবে নেয়। এই মানসিকতা খারাপ। মনে রাখতে হবে, এই ফুটবল খেলাটা গা গরমের জন্য, গোল করার জন্য নয়। সবাইকে পাস দেওয়া, ছুটোছুটি করা এসবের জন্য খেলা উচিত। কিন্তু অনেক সময় প্রতিদ্বন্দ্বিতা চলে আসে। তখনই এসব ঘটে যায়।”

গত বছর দক্ষিণ আফ্রিকা সফরে ফুটবল খেলতে গিয়েই চোট পেয়েছিলেন মুস্তাফিজুর রহমান। ফুটবলের মতো খেলায় ভয়ের জায়গাটি আরও একবার তুলে ধরলেন বিসিবির প্রধান চিকিৎসক।

“আমরা অবশ্যই চাই মূল খেলা থেকে বের হয়ে ক্রিকেটটাররা অন্য খেলা খেলুক। সেটা টেনিস হতে পারে, গলফ বা ব্যাডমিন্টন হতে পারে, টেবিল টেনিস হতে পারে। কিন্তু শারীরিক সাংঘর্ষিক খেলা যেন না হয়। যেটা নিরাপদ ও স্কিল বাড়াতে সাহায্য করে। কিন্তু দ্বিতীয় স্পোর্টস হিসেবে ফুটবলের মতো শারীরিক সাংঘর্ষিক খেলা বেছে নিলে ইনজুরির শঙ্কা বাড়ে।”